১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

ইংরেজির ভীতি কাটিয়ে পাসের হার ৮৩.০৪

রাজউক স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীদের উল্লাস : নয়া দিগন্ত -

এসএসসি ও সমমানের ফল প্রকাশ

- জিপিএ ৫ পেয়েছে এক লাখ ৮২ হাজার ১২৯ জন
- পাসের হার ও জিপিএ ৫ প্রাপ্তিতে মেয়েরা এগিয়ে

ইংরেজির ভীতি দূর হয়েছে। এ বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ইংরেজিতে ভালো ফলাফল করেছে শিক্ষার্থীরা। পাসের হার ৮৩.০৪ শতাংশ, যা গত বছর ছিল ৮০.৩৯ শতাংশ। যদিও করোনা এবং করোনা-পরবর্তী বছরগুলোতে কম বিষয়ে এবং কম সময়ে পরীক্ষা হওয়ার কারণে অটোপাস কিংবা পাসের হারের শতকরা হিসাবও সেভাবে ধরা হয়নি। এ বছর মোট জিপিএ ৫ পেয়েছে এক লাখ ৮২ হাজার ১২৯ জন। পাসের হারে এগিয়ে আছে যশোর শিক্ষা বোর্ড আর পিছিয়েছে সিলেট বোর্ড। এদিকে বরাবরের মতো এবারো পাসের হার এবং জিপিএ ৫ প্রাপ্তিতে ছেলেদের পেছনে ফেলে মেয়েরাই রয়েছে এগিয়ে।

শিক্ষাসংশ্লিষ্টরা বলছেন কয়েক বছর আগেও ইংরেজি এবং গণিতে অতিরিক্ত ভীতির কারণে ভালো ফল করতে পারত না শিক্ষার্থীরা। কিন্তু এ বছর বিষয়ভিত্তিক ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে ইংরেজির ভীতি অনেকটাই কেটে গেছে। বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ড থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে এ বছর ইংরেজিতে পাসের হার বেশি। তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা গেছে অধিকাংশ শিক্ষা বোর্ডে প্রায় শতভাগ শিক্ষার্থীই ইংরেজিতে পাস করেছে। ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড এবং মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে রাজশাহী, ময়মনসিংহ এবং মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডে ইংরেজিতে পাসের হার প্রায় শতভাগ। এর মধ্যে রাজশাহী বোর্ডের ইংরেজিতে পাসের হার ৯৯ দশমিক ৮৩ শতাংশ, ময়মনসিংহ বোর্ডে ৯৯ দশমিক ০৩ শতাংশ এবং মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডে ইংরেজিতে পাসের হার ৯৯ দশমিক ০২ শতাংশ। এ ছাড়া অন্যান্য শিক্ষা বোর্ডেও ইংরেজিতে পাসের হার অন্যান্য বিষয়ের তুলনায় অনেক ভালো। ঢাকা বোর্ডে ৯৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ, কুমিল্লা বোর্ডে ৯৮ দশমিক ৮৩ শতাংশ, যশোর বোর্ডে ৯৮ দশমিক ০৭ শতাংশ, চট্টগ্রাম বোর্ডে ৯৮ দশমিক ৯২ শতাংশ, বরিশাল বোর্ডে ৯৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ, সিলেট বোর্ডে ৯৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ এবং দিনাজপুর বোর্ডে ৯৪ দশমিক ৬৮ শতাংশ।

এবারো এগিয়ে মেয়েরা : এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলে এবারো এগিয়ে আছে মেয়েরা। চলতি বছর উত্তীর্ণ ১৬ লাখ ৭২ হাজার ১৫৩ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্রী ৮ লাখ ৬৫ হাজার ও ছাত্র ৮ লাখ ৬ হাজার ৫৫৩ জন। ফেল করেছে তিন লাখ ৪১ হাজার ৪৪৪ জন। এর মধ্যে ছাত্রী এক লাখ ৫৯ হাজার ২০৩ জন এবং ছাত্র এক লাখ ৮২ হাজার ২৪১ জন। জিপিএ ৫ পাওয়া ছাত্রীর সংখ্যা ৯৮ হাজার ৭৭৬ জন। আর ছাত্রের সংখ্যা ৮৩ হাজার ৩৫৩ জন। এর আগে গতকাল রোববার সকালে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে তুলে দেয়া হয়। গণভবনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী ও প্রতিমন্ত্রী বেগম শামসুন নাহারসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা বোর্ডগুলোর কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য চলতি বছরের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় গড় পাস করেছে ৮৩ দশমিক ০৪ শতাংশ শিক্ষার্থী। ছাত্রদের পাসের হার ৮১ দশমিক ৫৭ শতাংশ। ছাত্রীদের পাসের হার ৮৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ। বিদেশী কেন্দ্র থেকে পাস করেছে ২৯৮ শিক্ষার্থী।

বিভিন্ন বোর্ডের পাসের হার : এদিকে প্রাপ্ত ফলাফল অনুযায়ী, ঢাকা বোর্ডে পাসের হার ৮৩ দশমিক ৯২ শতাংশ, বরিশালে ৮৯ দশমিক ১৩ শতাংশ, চট্টগ্রামে ৮২ দশমিক ৮০ শতাংশ, কুমিল্লায় ৭৯ দশমিক ২৩ শতাংশ, দিনাজপুরে ৭৮ দশমিক ৪০ শতাংশ, রাজশাহীতে ৮৯ দশমিক ২৬ শতাংশ, সিলেটে ৭৩ দশমিক ০৪ শতাংশ, ময়মনসিংহ ৮৪ দশমিক ৯৭ শতাংশ ও যশোরে ৯২ দশমিক ৩২ শতাংশ। আর মাদরাসা বোর্ডে পাসের হার ৭৯ দশমিক ৬৬ শতাংশ এবং কারিগরিতে পাসের হার ৮১.৩৮ শতাংশ।
৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ১৬ লাখ ৬ হাজার ৩৯৪ জন। এর মধ্যে পাস করেছে ১৩ লাখ ৪৫ হাজার ৬৭৮ জন। মোট জিপিএ ৫ পেয়েছে এক লাখ ৬৩ হাজার ৮৪৫। মাদরাসা বোর্ডের অধীনে দাখিল পরীক্ষার্থী ছিল ২ লাখ ৮৪ হাজার ৬৬৫ জন। এর মধ্যে পাস করেছে ২ লাখ ২৬ হাজার ৭৫৪ জন। জিপিএ ৫ পেয়েছে ১৪ হাজার ২০৬ জন। কারিগরি বোর্ডের মোট পরীক্ষার্থী ছিল এক লাখ ২২ হাজার ৫৩৮ জন। এর মধ্যে পাস করেছে ৯৯ হাজার ৭২১ জন। জিপিএ ৫ পেয়েছে ৪ হাজার ৭৮ জন।

শতভাগ পাস ও শতভাগ ফেল প্রতিষ্ঠান : এ বছর ৫১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনো পরীক্ষার্থীই পাস করতে পারেনি। আর দুই হাজার ৯৬৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাসের হার শতভাগ। এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় মোট পাস করেছে ১৬ লাখ ৭২ হাজার ১৫৩ জন শিক্ষার্থী, যার মধ্যে ছাত্র ৮ লাখ ৬ হাজার ৫৫৩ জন ও ছাত্রী ৮ লাখ ৬৫ হাজার ৬০০ জন। ফেল করেছে তিন লাখ ৪১ হাজার ৪৪৪ জন। এর মধ্যে ছাত্রী এক লাখ ৫৯ হাজার ২০৩ জন ও ছাত্র এক লাখ ৮২ হাজার ২৪১ জন। পরীক্ষায় মোট অংশ নিয়েছিল ২০ লাখ ১৩ হাজার ৫৯৭ শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ছাত্র ৯ লাখ ৮৮ হাজার ৭৯৪ জন ও ছাত্রী ১০ লাখ ২৪ হাজার ৮০৩ জন। অনুপস্থিত ছিল ২৩ হাজার ৬৪৫ জন। যার মধ্যে ছাত্র ১০ হাজার ৬২৩ জন ও ছাত্রী ১৩ হাজার ২২ জন। এছাড়া ফরম পূরণ করেছিল ২০ লাখ ৩৭ হাজার ২৪২ জন শিক্ষার্থী, যার মধ্যে ছাত্র ৯ লাখ ৯৯ হাজার ৪১৭ জন ও ছাত্রী ১০ লাখ ৩৭ হাজার ৮২৫। এবার তিন হাজার ৭৯৯ কেন্দ্রে ২৯ হাজার ৮৬১ প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষার্থীরা এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি সারা দেশে একযোগে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়। লিখিত পরীক্ষা শেষ হয় গত ১২ মার্চ। ব্যবহারিক পরীক্ষা ১৩ মার্চ থেকে ২০ মার্চের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়।
আজ থেকে উত্তরপত্র পুনঃনিরীক্ষার আবেদন : এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ হয়েছে। ফলে সন্তুষ্ট না হওয়া শিক্ষার্থীরা প্রতিবারের মতো এবারো খাতা চ্যালেঞ্জ বা ফল পুনঃনিরীক্ষার আবেদনের সুযোগ পাবে। আজ সোমবার থেকে ফল পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন শুরু হচ্ছে। ১৯ মে পর্যন্ত এসএমএসের মাধ্যমে ফল পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন করা যাবে। ফল পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতিপত্রের জন্য ১৫০ টাকা। গতকাল রোববার ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড থেকে এসএসসির ফল পুনঃনিরীক্ষার প্রক্রিয়া জানিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে।

জানা গেছে, এসএমএসের মাধ্যমে ফল পুনঃনিরীক্ষার আবেদন করতে পারবেন শিক্ষার্থীরা। টেলিটক প্রিপেইড ফোন থেকে জঝঈ <স্পেস> বোর্ডের নামের প্রথম তিন অক্ষর <স্পেস> রোল নম্বর <স্পেস> বিষয় কোড লিখে ১৬২২২ নম্বরে এসএমএস পাঠিয়ে পুনঃনিরীক্ষার আবেদন করা যাবে। একই এসএমএসে একাধিক বিষয়ের জন্য আবেদন করা যাবে, এ ক্ষেত্রে বিষয় কোড পর্যায়ক্রমে ‘কমা’ দিয়ে লিখতে হবে।
ফিরতি এসএমএসে ফি বাবদ কত টাকা কেটে নেয়া হবে তা জানিয়ে একটি পিন নম্বর (পার্সোনাল আইডেন্টিফিকেশন নম্বর) দেয়া হবে। এতে সম্মত থাকলে জঝঈ <স্পেস> ণঊঝ <স্পেস> পিন নম্বর <স্পেস> যোগাযোগের জন্য একটি মোবাইল নম্বর লিখে (যেকোনো) ১৬২২২ নম্বরে এসএমএস পাঠাতে হবে। প্রতিটি বিষয় ও প্রতি পত্রের জন্য ১৫০ টাকা হারে চার্জ কাটা হবে।
কারিগরি বোর্ডের ফল : চলতি বছরের প্রকাশিত ফলাফল অনুযায়ী কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৮১ দশমিক ৩৮ শতাংশ। জিপিএ ৫ পেয়েছেন ৪ হাজার ৭৮ জন শিক্ষার্থী। এবার এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে ২০ লাখ ২৪ হাজার ১৯২ জন পরীক্ষার্থী। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি এই পরীক্ষা শুরু হয়ে শেষ হয় গত ১২ মার্চ।

ঢাকার সেরা ১০ স্কুল : এবারের প্রকাশিত ফলাফলে দেশসেরা হয়েছে নরসিংদীর নাছিমা কাদির মোল্লা হাইস্কুল। স্কুলটির শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করেছে। একই সাথে ২৮৫ জন শিক্ষার্থীর ২৮৪ জনই জিপিএ ৫ পেয়েছে। তালিকার দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ঢাকার রাজউক উত্তরা মডেল স্কুল। প্রতিষ্ঠানটির শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করেছে। ৭৮০ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৭৫৮ জনই জিপিএ ৫ পেয়েছে। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে রাজধানীর হলি ক্রস গার্লস হাইস্কুল। ২৩১ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১৮৫ জনই জিপিএ ৫ পেয়েছে। তবে স্কুলটির সবাই পাস করতে পারেনি। পাসের হার ৯৯ দশমিক ৫৭ শতাংশ।

চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে শহীদ বীর উত্তম আনোয়ার গার্লস স্কুল। শতভাগ পাসের পাশাপাশি স্কুলটির ৬৭৯ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে জিপিএ ৫ পেয়েছে ৪৯৯ জন। পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে আদমজী ক্যান্টনমেন্ট স্কুল। ৭৩৩ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে জিপিএ ৫ পেয়েছে ৬২২ জন এবং স্কুলটির পাসের হার শতভাগ। ষষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল। ৫৬১ জন পরিক্ষার্থীর মধ্যে জিপিএ ৫ পেয়েছে ৪০৫ জন এবং স্কুলটির শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করেছে। সপ্তম অবস্থানে রয়েছে ভিকাররুননিসা নূন স্কুল। দুই হাজার ১৯৫ পরীক্ষার্থীর মধ্যে জিপিএ ৫ পেয়েছে এক হাজার ৫ শত ২৮ জন। অকৃতকার্য হয়েছে ৩৪ জন, পাসের হার ৯৮ দশমিক ৪৫ শতাংশ। অষ্টম অবস্থানে রয়েছে সেন্ট জোসেফ হাইস্কুল। ১৬৪ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে জিপিএ ৫ পেয়েছে ১৩৮ জন এবং স্কুলটির পাসের হার শতভাগ। নবম অবস্থানে রয়েছে সেন্ট গ্রেগরি হাইস্কুল। ২৫১ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে জিপিএ ৫ পেয়েছে ১৫৯ জন এবং প্রতিষ্ঠানটির পাসের হার শতভাগ। দশম অবস্থানে রয়েছে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল। দুই হাজার ৪ শত ১১ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে জিপিএ ৫ পেয়েছে এক হাজার ৯ শত ৫৬ জন এবং স্কুলটির পাসের হার ৯৯ দশমিক ৫৯ শতাংশ।

মাদারাসা বোর্ডের শীর্ষে তা’মীরুল মিল্লাত : বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের প্রকাশিত ফলাফলে দাখিলে রেকর্ড সংখ্যক ৮৫৭ জন জিপিএ ৫ পেয়ে সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসা। মাদরাসার তিনটি ক্যাম্পাস হলো- তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসা (বালক ও বালিকা) টঙ্গী ক্যাম্পাস, যাত্রাবাড়ী ক্যাম্পাস এবং তা’মীরুল মিল্লাত মহিলা কামিল মাদরাসা মাতুয়াইল-ডেমরা। গতকাল ফলাফল প্রকাশের পর মাদরাসার ছাত্র, শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে আনন্দের জোয়ার বইছে। চলতি বছর সারা দেশে দাখিল ও সমমান পরীক্ষায় অংশ নেয় ২০ লাখ ২৪ হাজার ১৯২ জন পরীক্ষার্থী। এর মধ্যে পাস করেছে ১৬ লাখ ৭২ হাজার ১৫৩ জন। মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটের ফলাফল বিশ্লেষণে দেখা যায়, তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসা টঙ্গী ক্যাম্পাস থেকে অংশ নেয়া ৭৬২ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৫৫৭ জন জিপিএ ৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। এর মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগে ৪৫৫ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে জিপিএ ৫ পেয়েছে ৩৯৪ জন। সাধারণ বিভাগে ২৯০ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে জিপিএ ৫ পেয়েছে ১৬৩ জন।

মাদরাসায় ঢাকার মিরহাজিরবাগ ক্যাম্পাস থেকে এবার ৩৬৯ জন অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীর মধ্যে ১৯৯ জন জিপিএ ৫ পেয়েছে। এদের মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগে ১৮৮ পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১৫৯ জন জিপিএ ৫ পেয়েছে। সাধারণ বিভাগে ১৮১ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে জিপিএ ৫ পেয়েছে ৪০ জন। আর তা’মীরুল মিল্লাত মহিলা কামিল মাদরাসা ঢাকার মাতুয়াইল থেকে এ বছর ২১০ জন অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীর মধ্যে ১০১ জন ছাত্রী জিপিএ ৫ পেয়েছে। এর মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগে ১৩৩ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে জিপিএ ৫ পেয়েছে ৬৭ জন। সাধারণ বিভাগে ৭৭ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে জিপিএ ৫ পেয়েছে ৩৪ জন।
মাদরাসার ভালো ফলাফল অর্জনের প্রতিক্রিয়ায় টঙ্গীর অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) মাওলানা মো: মিজানুর রহমান মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করেন। তিনি গণমাধ্যমকে জানান, পরিচালনা পর্ষদের নিবিড় পরিচর্যা, শিক্ষকদের আন্তরিকতা, ছাত্রদের কঠোর পরিশ্রম এবং অভিভাবকদের সহযোগিতা ও দোয়া এই ফলাফলের পেছনে মুখ্য ভূমিকা রেখেছে। আগামীতে আরো ভালো করার জন্য শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের জোর প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। দেশ ও জাতির ক্রান্তিলগ্নে তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসার শিক্ষার্থীরা আদর্শিক ও নৈতিকতার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলেও তিনি আশা ব্যক্ত করেন।

চট্টগ্রামে বেড়েছে পাসের হার : কমেছে জিপিএ ৫
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায় শিক্ষাবোর্ডের অধীনে অনুষ্ঠিত ২০২৪ সালের এসএসসি পরীক্ষায় পাসের হার ৮২.৮০ শতাংশ। গতবারেরর চেয়ে এবার পাসের হার প্রায় ৪ শতাংশ বেড়েছে। এবার জিপিএ ৫ পেয়েছেন ১০ হাজার ৮২৩ জন পরীক্ষার্থী। তবে জিপিএ ফাইভ গতবারের চেয়ে কমেছে। গতবার জিপিএ ফাইভ ছিল ১১ হাজার ৪৫০ জন। এবার জিপিএ ফাইভ কমেছে ৬২৭ জন।
রোববার বেলা সাড়ে ১২টায় চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এ এম এম মুজিবুর রহমান পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করেন। ঘোষিত ফলাফলে, বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ ৫ পেয়েছে ৯ হাজার ৫৮৯, ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে জিপিএ ৫ পেয়েছে এক হাজার ৯৭ জন আর মানবিকে ১৩৭ জন। এ বছর জিপিএ ৫ পাওয়া পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাঁচ হাজার ৭৩ জন ছাত্র ও পাঁচ হাজার ৭৫০ জন ছাত্রী।
এবার ছাত্র পাসের হার ৮২ দশমিক ২৯ শতাংশ এবং ছাত্রী পাসের হার ৮৩ দশমিক ২১ শতাংশ। বিজ্ঞান বিভাগে পাসের হার সবচেয়ে বেশি, ৯৪.৫২ শতাংশ। মানবিকে পাসের হার সবচেয়ে কম, ৭৩.৪১ শতাংশ। ব্যবসায় শিক্ষায় পাসের হার ৮৪.১১।

কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডে পাসের হার ৭৯.২৩
কুমিল্লা প্রতিনিধি জানান, এ বছরের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফলে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডে পাসের ৭৯.২৩ শতাংশ। জিপিএ ৫ পেয়েেেছ ১২ হাজার ১০০। গত বছর পাসের হার ছিল ৭৮.৪২ শতাংশ। এ বছর বোর্ডের অধীন ছয় জেলার এক হাজার ৭৮০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে এক লাখ ৭৯ হাজার ৩২৫ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে এক লাখ ৪২ হাজার ৮১ জন। জিপিএ ৫ এবং পাসের হারে এগিয়ে আছে মেয়েরা। মেয়েদের গড় পাসের হার ৭৯.৬৪ শতাংশ এবং ছেলেদের ৭৮.৬৬ শতাংশ।

পাসের হারে শীর্ষে যশোর
যশোর অফিস জানায়, যশোর শিক্ষাবোর্ডে এ বছর এসএসসি পরীক্ষায় পাসের হার ৯২.৩৩। আর জিপিএ ৫ পেয়েছে ২০ হাজার ৭৬১ জন। পাসের হারের দিক থেকে সারা দেশে যশোর বোর্ড শীর্ষে রয়েছে। এ বছর যশোর বোর্ডে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিতে এক লাখ ৬২ হাজার ৭০০ পরীক্ষার্থী ফরম পূরণ করে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত এক হাজার ১৩৩ পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দেয়নি।
এ বছর সর্বমোট জিপিএ ৫ পেয়েছে ২০ হাজার ৭৬১ জন। এর মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগে ১৭ হাজার ৪৭৬, মানবিক বিভাগে দুই হাজার ২৩৭ ও বাণিজ্য বিভাগে এক হাজার ৪৮ জন। তার মধ্যে ছেলে ৯ হাজার ৩৩০ ও মেয়ে ১১ হাজার ৪৩১ জন রয়েছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, জিপিএ ৪ থেকে ৫ এর মধ্যে ৫০ হাজার ৮১২, জিপিএ-৩.৫ থেকে ৪ এর মধ্যে ৩১ হাজার ৬২৩, জিপিএ ৩ থেকে ৩.৫ এর মধ্যে ২৫ হাজার ৪৫০, জিপিএ ২ থেকে ৩ এর মধ্যে ১৯ হাজার ২১৭ এবং জিপিএ ১ থেকে ২ এর মধ্যে ৭১৪ জন রয়েছে।

দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডে এবারো এগিয়ে রংপুরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো
রংপুর অফিস জানায়, এবারো দিনাজপুর বোর্ডে এগিয়ে রংপুরের স্কুলগুলো। প্রথম হয়েছে পুলিশ লাইন স্কুল এন্ড কলেজ। এই বোর্ডে এবারো মেয়েরা এগিয়ে।
দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, এবার রংপুর পুলিশ লাইন স্কুল এন্ড কলেজ থেকে ৫৫৮ জন পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছে ৫৭ জন। এই প্রতিষ্ঠান থেকে এ প্লাস পেয়েছে ২৭২ জন। দিনাজপুর বোর্ডে এবার দ্বিতীয় হয়েছে রংপুর ক্যান্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ। এখান থেকে ৫১৬ জন পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছে ৫১৩ জন। জিপিএ ৫ পেয়েছে ৩৬৭ জন। তৃতীয় হয়েছে সেনাবাহিনী পরিচালিত দ্য মিলিনিয়াম স্টারস স্কুল। এখান থেকে ১৩১ জন পরীক্ষা দিয়ে ১৩০ জন পাস করেছে।এ প্লাস পেয়েছে ১১২ জন। রংপুর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় থেকে ২৫৬ জন পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছে ২৫৪। এখান থেকে জিপিএ ৫ পেয়েছে ১৭৭ জন। রংপুর জেলা স্কুল থেকে ২৪৪ জন পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছে ২৪২ জন, জিপিএ ৫ পেয়েছে ১৭৮ জন। বর্ডার গার্ড স্কুল এন্ড কলেজ থেকে ১১৭ জন পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছে ১১৬ জন, জিপিএ ৫ পেয়েছে ৫১ জন। লায়ন্স স্কুল এন্ড কলেজ থেকে ২৯৮ জন পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছে ২৯৫ জন, জিপিএ ৫ পেয়েছে ১০৪ জন। কালেক্টরেট স্কুল এন্ড কলেজ থেকে ২৬৬ জন পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছে ২৬২ জন। এখান থেকে এ প্লাস পেয়েছে ১৪১ জন।
এ ছাড়াও শতভাগ পাস ও জিপিএ ফাইভ পেয়েছে রংপুর করে ক্যাডেট কলেজে। এই কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগ হতে ৪৭ জন, মানবিক বিভাগ হতে দুইজনসহ মোট ৪৯ জন পরীক্ষার্থী জিপিএ ৫ পেয়েছে। এবার এসএসসি পরীক্ষায় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড দিনাজপুরে বেড়েছে পাসের হার ও জিপিএ ৫। এ বোর্ডে পাস করেছে ৭৮ দশমিক ৪৩ ভাগ শিক্ষার্থী। ২০২৩ সালে এই হার ছিল ৭৬ দশমিক ৮৭ ভাগ। চলতি বছরে জিপিএ ৫ পেয়েছে ১৮ হাজার ১০৫ জন। গত বছর পেয়েছিল ১৭ হাজার ৪১০ জন।

বরিশাল শিক্ষাবোর্ডে পাসের হার ও জিপিএ ৫ কমেছে
বরিশাল ব্যুরো জানায়, ২০২৪ সালের এসএসসি পরীক্ষায় বরিশাল বোর্ডে ৮৯ দশমিক ১৩ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে। যা গত বছর ছিল ৯০ দশমিক ১৮ শতাংশ। এবার মোট জিপিএ ৫ পেয়েছে ছয় হাজার ১৪৫ জন। গত বছর পেয়েছিল ছয় হাজার ৩১১ জন।
গতকাল দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বরিশাল বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অরুন কুমার গাইন। তিনি বলেন, বরিশালে এবার মোট পরীক্ষার্থী ছিল ৮৮ হাজার ৮৪৫ জন। এর মধ্যে অংশ নিয়েছিল ৮৭ হাজার ৭৩৪ জন। এতে পাস করেছে ৭৮ হাজার ১৯৭ জন। আর বহিষ্কার হয়েছে ৫১ জন। তিনি আরো বলেন, বিভাগের ছয় জেলায় এ বছর এক হাজার ৪৮৯টি বিদ্যালয় পরীক্ষায় অংশ নেয়। এর মধ্যে ২২২টি স্কুলের শিক্ষার্থী শতভাগ পাস করেছে। তবে পাসের হারের সাথে এ বছর জিপিএ ৫ এর সংখ্যাও কমেছে।

ময়মনসিংহ বোর্ডে পাসের হার কমেছে
ময়মনসিংহ অফিস জানায়, শিক্ষা বোর্ডের এসএসসি পরীক্ষায় পাসের হার শতকরা ৮৫ শতাংশ। যা গত বছরের চেয়ে কিছুটা কম। গত বছর এ বোর্ডে পাসের হার ছিল ৮৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ। শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক শামসুল ইসলাম ই-মেইলে প্রেরিত ফলাফলে জানান, এক হাজার ৩১৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এক লাখ ১৯ হাজার ২৩৮ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে এক লাখ এক হাজার ৩৫৮ জন। জিপিএ ৫ পেয়েছে ১৩ হাজার ১৭৬ জন। যা গত বছরের চেয়ে একজন কম। বিজ্ঞান বিভাগের পাসের হার ৯২ দশমিক ৭৩ শতাংশ, মানবিক বিভাগে ৮০ দশমিক ২১ শতাংশ এবং ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ৮৫ দশমিক ১৬ শতাংশ। এবারো ছেলে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা এক হাজার ৯৮৬ জন বেশি হলেও জিপিএ ৫ প্রাপ্তিতে মেয়েরাই এগিয়ে রয়েছে। পাঁচ হাজার ৯৫২ জন ছেলে (৪৫.১৭%) ও সাত হাজার ২২৪ জন (৫৪.৮৩%) মেয়ে জিপিএ ৫ পেয়েছে।

সিলেট শিক্ষাবোর্ডে পাসের হার ৭৩.৩৫
বাসস জানায়, ২০২৪ সালের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমানের পরীক্ষায় সিলেট শিক্ষাবোর্ড পাসের হার ৭৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ। রোববার দুপুর সাড়ে ১২টায় সংবাদ সম্মেলন করে আনুষ্ঠানিকভাবে এ ফলাফল ঘোষণা করেন সিলেট শিক্ষাবোর্ড কর্তৃপক্ষ।
জিপিএ ৫ পেয়েছে পাঁচ হাজার ৪৭১ জন। গত বছরের তুলনায় এবার পাসের হার কমেছে তবে গত বছরের চেয়ে জিপিএ ৫ বেড়েছে ১৯টি। গত বছর পাসের হার ছিল ৭৬ দশমিক ০৬ শতাংশ। আর জিপিএ ৫ পেয়েছিল পাঁচ হাজার ৪৫২ জন। এ বছর সিলেট শিক্ষাবোর্ডের অধীনে পরীক্ষার্থী ছিল এক লাখ ৯ হাজার ৭৩ জন। এর মধ্যে পাস করেছে ৮০ হাজার জন।
সিলেটের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষাবোর্ড সূত্র জানায়, সিলেট শিক্ষা বোর্ডে এ বছর পরীক্ষার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে ভালো করেছে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা। বিজ্ঞান বিভাগে পাসের হার ৮৮ দশমিক ১৪। আর সবচেয়ে খারাপ করেছে মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীর। মানবিক বিভাগে পাসের হার ৬৮.৫০।

 


আরো সংবাদ



premium cement