আমদানি করা খাদ্যপণ্য যথাযথ পরীক্ষা-নিরীক্ষার দাবি বিএনপির
- বিশেষ সংবাদদাতা
- ১৩ মে ২০২৪, ০১:০৩
জনগণের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে আমদানি করা প্রতিটি পণ্য বাজারে ছাড়ার আগে যথাযথভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার দাবি জানিয়েছে বিএনপি। গতকাল দলের গুলশান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ দাবি জানান।
জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় সরকার উদাসীন উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশে মোট মৃত্যুর প্রায় ৭০ শতাংশই ঘটে হার্টঅ্যাটাক, স্ট্রোক কিংবা ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন ধরনের অসংক্রামক রোগে। অথচ এসব রোগ মোকাবেলায় সরকারের অর্থ বরাদ্দের পরিমাণ মাত্র মোট স্বাস্থ্য বাজেটের ৪ দশমিক ২ শতাংশ। গত মার্চ মাসে সিপিডির একটি রিপোর্টেও জনস্বাস্থ্যের এক ভয়ঙ্কর চিত্র ফুটে উঠেছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, দেশের প্রায় ১৩ কোটি মানুষ প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করতে পারছেন না। গত মার্চ মাসেই বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ-বিএফএসএর শীর্ষ কর্মকর্তা বলেছেন, দেশে প্রতি বছর এক লাখ ১৪ হাজার মানুষ ক্যান্সারে মৃত্যুবরণ করছে। এই ক্যান্সারের মূল কারণ অনিরাপদ খাদ্য।
নাগরিকদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা বিধানে আমদানি পণ্যের বিভিন্ন ক্ষতিকর উপাদান শনাক্ত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন দেশ ও জোট বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ (ইইউ) রাষ্ট্রসংঘের গৃহীত নানা ভূমিকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, জনগণের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশেরও উচিত দেশে আমদানি করা প্রতিটি পণ্য বাজারে ছাড়ার আগে যথাযথভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে পণ্যের মান যাচাই করে নেয়া। কিন্তু বর্তমান তাঁবেদার সরকার আমদানি করার খাদ্যপণ্য যথাযথ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে কি না এ ব্যাপারে দেশের জনগণ যথেষ্ট সন্দিহান। এ সময় আমদানি করা পণ্য যথাযথ পরীক্ষার ব্যাপারে নিশ্চিত না হওয়া গেলে প্রতিটি নাগরিককে নিজের এবং নিজেদের পরিবারের সদস্যদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় নিজ উদ্যোগেই সতর্কতা অবলম্বন করার আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি ভারতীয় খাদ্যদ্রব্যে ‘ক্যান্সারের বিষ’ পাওয়ার অভিযোগ তুলেছে ইইউ খাদ্য নিরাপত্তা বিভাগ। তাদের অভিযোগ, ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে ২০২৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ভারত থেকে রফতানি করা অন্তত ৫২৭টি খাদ্যপণ্যে ‘বিষ’ পেয়েছে তারা। জনস্বাস্থ্য সম্পর্কিত এ বিষয়টি নিয়ে গত বুধবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা হয়। গতকাল সেই বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানাতেই সংবাদ সম্মেলন করেন মির্জা ফখরুল।
দ্বাদশ নির্বাচনের পর দেশের সঙ্কট আরো গভীর হয়েছে : দ্বাদশ নির্বাচনের পর দেশের সঙ্কট আরো গভীর হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার যদি এখনো সেটা উপলব্ধি না করেন, সঙ্কট নিরসনের চেষ্টা না করেন তাহলে ভবিষ্যৎ তাদের জন্য খুব ভালো না।
খালেদা জিয়া জীবনের জন্য লড়াই করছেন : সাংবাদিকরা বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, তিনি (খালেদা জিয়া) শুধু বিএনপির মা নয়, বাংলাদেশের গণতন্ত্রের মা। এই মহীয়সী নেত্রী সারাটা জীবন গণতন্ত্রের জন্য লড়াই-সংগ্রাম করে যাচ্ছেন। দুর্ভাগ্য তার সঠিক মূল্যায়নটা এদেশের অনেকে করতে পারছেন না। খালেদা জিয়া এখন লড়াই করছেন তার জীবনের জন্য। তার স্বাস্থ্যের অবস্থা খুবই খারাপ। প্রায়ই তিনি হাসপাতালে যাচ্ছেন, আবার বাসায় ফিরে আসছেন। ২৪ ঘণ্টাই তিনি মেডিক্যাল কেয়ারের মধ্যে আছেন।
ওরা লুটের বিশেষ গোত্র তৈরি করেছে : মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে দেশে একটা লুটের ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। এর সাথে সরকারের লোকজন জড়িত এবং তাদের সুবিধাভোগী লোকজনরাও জড়িত। দুর্নীতি-অনিয়মের ওপর ভিত্তি করে এই রাষ্ট্রকে কিভাবে পরনির্ভরশীল করা যায় সেই লক্ষ্যে তারা কাজ করছে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যে একটা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। সরকার পরিকল্পিতভাবে এটা করেছে। জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার শাসনামলে দেশের অর্থনীতির ভিত তৈরি হয়েছে বলে উল্লেখ করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, ১৯৯১ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত যে উন্নয়ন হয়েছে সেই উন্নয়নই অর্থনীতির ভিত্তি তৈরি করেছে। আজকে যেগুলো দেখা যাচ্ছে সেগুলো হচ্ছে লুট, মেগা লুট।
বিচারব্যবস্থাকে দলীয়করণ করে সরকার মিথ্যা মামলায় বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের দ্রুত সাজা দেয়ার যে প্রক্রিয়া শুরু করেছে তা অবিলম্বে বন্ধের দাবিও জানান বিএনপি মহাসচিব।
যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশীয় বিষয়ক সহকারী সচিব ডোনাল্ড লুর ঢাকা সফর প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এসব আমাদেরকে জিজ্ঞাসা না করে উনাদের (আওয়ামী লীগ সরকার) জিজ্ঞাসা করুন। এসব নিয়ে আমরা ইন্টারেস্টেড না। আমরা মনে করি, বাংলাদেশের জনগণের ওপরই আমাদের ভরসা, আমাদের পুরো আস্থা, সেই আস্থার ওপরে আমরা দাঁড়িয়ে থাকি। রাজনীতিও আমাদের জনগণকে নিয়ে।’
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা