১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
নায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা

আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ ৩ জনের যাবজ্জীবন

-


নব্বই দশকের জনপ্রিয় চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলায় তিনজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক অরুনাভ চক্রবর্তী এ রায় ঘোষণা করেন।
রায়ে আদালত তিনজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন। দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই ওরফে আব্দুল আজিজ, ট্রাম্পস ক্লাবের মালিক আফাকুল ইসলাম ওরফে বান্টি ইসলাম ও আদনান সিদ্দিকী। এ ছাড়া তাদের দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে এক মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়। দণ্ডপ্রাপ্ত তিনজনই পলাতক।

এ ছাড়া খালাস পেয়েছেন সেলিম খান, দুই শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমন ও আশিষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরী, তারিক সাঈদ মামুন, হারুন অর রশীদ ওরফে লেদার লিটন ওরফে বস লিটন ও ফারুক আব্বাসী। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদেরকে খালাস দেয়া হয়েছে।
আসামিদের মধ্যে শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমনকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়।
চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যাকাণ্ডের ঘটনার ২৫ বছর পর দেয়া রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছেন, সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলায় অধিকাংশ সাক্ষী মারা গেছেন। যারা সাক্ষ্য দিয়েছেন তারা ছিলেন পক্ষপাতদুষ্ট ও সত্য গোপন করেছেন। এত বছর ধরে মামলার বিচার না হওয়ায় মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রভাব পড়ে। প্রতিটি মৃতের আত্মা বিচার চায়।

রায়ে আদালত বলেছেন, এ মামলার সিডি (কেইস ডকেট) পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হয় সিডি গায়েব করা হয়েছে। আসামি আদনান সিদ্দিকী ঘটনাস্থল থেকে ধরা পড়েন। তিনি যে সাক্ষ্য দিয়েছেন তা অনেকটা গা বাঁচিয়ে দেয়ার মতো। সোহেল চৌধুরী কোনো অখ্যাত ব্যক্তি ছিলেন না। অথচ তিনি খুন হলেন আর ট্রাম্পস ক্লাবের ম্যানেজার বলেছেন জেনেছি সোহেল চৌধুরী নামে একজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তবে এ ঘটনায় আহত অপর একজনকে হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়।
রায়ে আরো বলা হয়, যারা পুলিশের কাছে সাক্ষ্য দিয়েছেন তাদের অনেকেই মারা গেছেন। তাই তাদেরকে পরীক্ষা করা সম্ভব হয়নি। জবানবন্দী গ্রহণ করা ম্যাজিস্ট্রেটও আদালতে সাক্ষ্য দেননি। যারা সাক্ষ্য দিয়েছেন তারাও পক্ষপাতদুষ্ট ছিলেন ও সত্য গোপনের চেষ্টা করেছেন। এত বছর ধরে মামলার বিচার না হওয়ায় মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রভাব পড়ে।

সাক্ষ্য পর্যালোচনায় আরো বলা হয়, আদনান সিদ্দিকী কয়েকজনের নাম বলেছেন নিজের গা বাঁচিয়ে। যে নিজের গা বাঁচিয়ে সাক্ষ্য দিতে পারে সে অন্যের নামও অসত্য বলতে পারে। যাদের নাম বলেছেন তাদের কাছ থেকে কোনো রিকোভারি হয় নাই। তারা যে সেখানে ছিল সেটা বিশ্বাস করার কারণ থাকা সত্ত্বেও যাদের নাম বলছেন আদনান সিদ্দিকী তাদের মধ্যে একজনও যদি সেখানে না থাকে বা একজনের নাম অন্তর্ভুক্ত করে থাকে, তাহলে তার ভাষ্য অনুযায়ী আসামিদের গুরুদণ্ড দেয়া ঠিক হবে না।
তাই আসামি আফাকুল ইসলাম ওরফে বান্টি ইসলাম, আজিজ মোহাম্মদ ভাই ওরফে আব্দুল আজিজ ও আদনান সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগপ্রাপ্ত সাক্ষ্য ও পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্যে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়। তবে বান্টির বক্তব্যে ইমন ও আশীষ রায় চৌধুরীর নাম এলেও ঘটনাস্থলে তাদের উপস্থিতি প্রমাণিত হয়নি বিধায় তাদের খালাস দেয়া হলো। জামিনে থাকা অন্য দুই আসামি ফারুক আব্বাসী ও তারিক সাঈদ মামুন রায়ের দিন না এলেও তাদের বিরুদ্ধে ঘটনা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত না হওয়ায় তাদেরও খালাস দেয়া হলো।
জামিনে থাকা আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী আশিষ রায় চৌধুরী ওরফে বোতল চৌধুরী, তারিক সাঈদ মামুন ও ফারুক আব্বাসী হাজিরা দেন। তবে রায়ের সময়ে বোতল চৌধুরী ছাড়া অন্য দু’জন অনুপস্থিত ছিলেন।
রায়ের পর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু বলেন, পূর্ণাঙ্গ রায় পাওয়ার পর সেটি আমরা পর্যালোচনা করব। রায়ে আইনের কোনো ব্যত্যয় ঘটেছে কি না সার্বিক বিষয়ে দেখে আমরা আপিল করা হবে কি না সেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে খালাস পাওয়া সানজিদুল ইসলাম ইমনের আইনজীবী ফারুক আহমেদ সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, এ রায়ে আমার মক্কেল খালাস পেয়েছেন, আমরা খুশি।

এর আগে গত ২৯ এপ্রিল রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে একই আদালত রায় ঘোষণার জন্য এ দিন ধার্য করেন।
চলতি বছর ২৮ জানুয়ারি এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। মামলাটির প্রায় ৩৮ জন সাক্ষীর মধ্যে ১০ জনের সাক্ষ্য নিয়ে তা গ্রহণ করেন আদালত। ওই আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সাদিয়া আফরিন শিল্পী বলেন, মামলাটির বেশির ভাগ সাক্ষী মারা গেছেন। এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনও আদালতে এসেছে। এ জন্য আদালতে যারা এসেছেন তাদের সাক্ষ্যগ্রহণের মাধ্যমেই প্রক্রিয়া সমাপ্ত করা হয়।
বনানীর ১৭ নম্বর রোডের আবেদীন টাওয়ারে ট্রাম্পস ক্লাবের নিচে ১৯৯৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর সন্ত্রাসীদের গুলিতে মারা যান নায়ক সোহেল চৌধুরী। ওই ঘটনায় সোহেল চৌধুরীর ভাই তৌহিদুল ইসলাম চৌধুরী রাজধানীর গুলশান থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটির তদন্ত শেষে ১৯৯৯ সালের ৩০ জুলাই গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার আবুল কাশেম ব্যাপারী ৯ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন।


আরো সংবাদ



premium cement