দুই ম্যাচ আগেই বাংলাদেশের সিরিজ জয়
- ক্রীড়া প্রতিবেদক
- ০৮ মে ২০২৪, ০০:৫২
যে দলটি আসন্ন টি-২০ বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করতে পারেনি, সেই দলের বিপক্ষে প্রস্তুতি হিসেবে সিরিজ খেলছে বাংলাদেশ। শুধু তা-ই নয়, সেই কোয়ালিফাই না করা জিম্বাবুয়ে দলের সাথে ঘরের মাঠে জিততেই টাইগারদের ঝরছে ঘাম। আর এতে বোঝার বাকি থাকছে না যে কেমন হতে পারে টাইগারদের এবারের টি-২০ বিশ্বকাপ। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ঘাম ঝরানো মানে তো বিশ্বকাপের আগে অশনি সঙ্কেত। এটা দ্বিতীয় ও তৃতীয় ম্যাচ দেখে বোঝাই যাচ্ছে বাংলাদেশের বিশ্বকাপের আসল প্রস্তুতি। পাঁচ ম্যাচ সিরিজের প্রথমটি হেসেখেলেই হারিয়েছিল টাইগাররা। তবে দ্বিতীয় ম্যাচে জয় পেতে রীতিমতো ঘাম ছুটেছে টাইগারদের। গতকাল তৃতীয় ম্যাচে ৯ রানে হারিয়ে সিরিজ জিতলেও বাংলাদেশ শিবিরে টেনশান দিয়ে ছেড়েছে সফরকারীরা।
তৌহিদ হৃদয় ও জাকের আলীর ব্যাটিং নৈপুণ্যে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় টি-২০ টস হেরে প্রথমে ব্যাট করে ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ১৬৫ রান করেছে স্বাগতিক বাংলাদেশ। চতুর্থ উইকেটে ৫৮ বলে ৮৭ রানের জুটি গড়েন হৃদয় ও জাকের। হৃদয় ৩৮ বলে সংক্ষিপ্ত ভার্সনে প্রথম হাফ সেঞ্চুরি তুলে ৫৭ এবং জাকের ৩৪ বলে ৪৪ রান করেন। জবাবে জিম্বাবুয়ে লড়েছে শেষ বল পর্যন্ত। শেষ দুই ওভারে জয়ের কাছাকাছিই চলে এসেছিল। নবম উইকেটে মাসাকাদজা ও ফারাজ আকরামের রেকর্ড ৫৪ রানের জুটিতে হারের শঙ্কাতেই ছিল বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত ৯ উইকেটে ১৫৬ রানে থামে জিম্বাবুয়ে। তাতে ৯ রানের জয়ের পাশাপাশি সিরিজও জিতে নেয় টাইগাররা। সিরিজের চতুর্থ ম্যাচটি হবে আগামী শুক্রবার ১০ মে সন্ধ্যা ৬টায় ঢাকায় শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে। পঞ্চম ম্যাচটি ১২ মে।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে তৃতীয় টি-২০তে টস হেরে প্রথমে ব্যাটিং করতে নামে বাংলাদেশ। চতুর্থ ওভারে দলীয় ২২ রানে বিচ্ছিন্ন তানজিদ-লিটন। ওভারে জিম্বাবুয়ের পেসার ব্লেসিং মুজারাবানির দ্বিতীয় ও তৃতীয় ডেলিভারিতে স্কুপ শট খেলতে গিয়ে বল ব্যাটে লাগাতে পারেননি লিটন। কিন্তু চতুর্থ বল ব্যাটে লাগিয়ে বোল্ড হন ১৫ বলে ২টি চারে ১২ রান করা লিটন।
এরপর ক্রিজে এসে সুবিধা করতে পারেনি বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। পঞ্চম ওভারে জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক সিকান্দার রাজার বলে বোল্ড হন নাজমুল (৬)। লিটন-নাজমুলকে হারিয়ে পাওয়ার প্লেতে ৪২ রান তুলে বাংলাদেশ। তৃতীয় উইকেটে জুটি গড়ার চেষ্টা করেও ৩১ রানের বেশি যোগ করতে পারেননি তানজিদ ও হৃদয়। নবম ওভারের শেষ বলে ছক্কা মারার চেষ্টায় ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচ আউট হন তানজিদ (২১)। হৃদয়-জাকেরের সাবধানী ব্যাটিংয়ে ১২ ওভার শেষে ৩ উইকেটে বাংলাদেশের স্কোর ৭৫।
এরপর জিম্বাবুয়ের বোলারদের ওপর চড়াও হন হৃদয় ও জাকের। ১৩ থেকে ১৮তম ওভারে ৬৭ রান যোগ করেন তারা। এর মধ্যে ১৮তম ওভারের প্রথম বলে ১৭ ম্যাচের টি-২০ ক্যারিয়ারে ৩৪ বলে প্রথম হাফ সেঞ্চুরির দেখা পান হৃদয়। ১৯তম ওভারের তৃতীয় বলে মুজারাবানির বলে বোল্ড হওয়ার আগে তিনটি চার ও দুইটি ছক্কায় ৩৮ বলে ৫৭ রান করেন হৃদয়। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে চতুর্থ উইকেটে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ৮৭ রানের জুটি গড়েন হৃদয়-জাকের। আগেরটি ছিল ২০১৯ সালে মুশফিকুর রহীম ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের ৭৮ রান।
হৃদয় ফেরার এক বল পর জাকেরকেও বোল্ড করেন মুজারাবানি। তিনটি চার ও দুইটি ছক্কায় ৩৪ বলে ৪৪ রান করেন তিনি। এরপর ইনিংসের শেষ ৭ বলে অবিচ্ছিন্ন ১৭ রান তোলেন মাহমুদুল্লাহ (৯*) ও রিশাদ হোসেন (৬*)। এতে ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ১৬৫ রানের সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। শেষ ৭ ওভারে ৯০ রান তুলেছে টাইগাররা। মুজারাবানি ক্যারিয়ার সেরা ১৪ রানে ৩ উইকেট নেন।
১৬৬ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে তৃতীয় ওভারে ওপেনার জয়লর্ড গাম্বিকে (৯) রানে ফেরান সাইফউদ্দিন। পঞ্চম ওভারে তানজিম হাসান সাকিব নিজের বলে নিজে ক্যাচ নিয়ে ব্রায়ান বেনেটকে ৫ রানে আউট করেন। পাওয়ার প্লের শেষ বলে ৭ রান করা ক্রেইগ আরভিনের উইকেট উপড়ে ফেলেন সাইফুদ্দিন। পাওয়ার প্লেতে ৩৩ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে জিম্বাবুয়ে। দলীয় ৪৮ রানে জিম্বাবুয়ের চতুর্থ উইকেট তুলে নেন স্পিনার রিশাদ। অধিনায়ক সিকান্দার রাজা থামেন ১ রানে।
পঞ্চম উইকেটে জুটি গড়ার চেষ্টা করেন তাদিওয়ানাশে মারুমানি ও ক্লাইভ মাদান্দে। ২১ মাস পর আন্তর্জাতিক টি-২০তে বোলিংয়ে এসে ৩১ রান করা মারুমানিকে শিকার করেন মাহমুদুল্লাহ। এরপর মাদান্দেকে ১১ রানে ফেরান তাসকিন। ৭৩ রানে ষষ্ঠ উইকেট পতনের পর বাংলাদেশ বোলারদের ওপর চড়াও হন জোনাথন ক্যাম্পবেল। ১০ বলে ২১ রান তুলে স্পিনার তানভীরের শিকার হন তিনি। লুক জংউইকে ২ রানে আউট করে জিম্বাবুয়েকে হারের মুখে ফেলেন রিশাদ। ৯১ রানে ৮ উইকেট হারায় জিম্বাবুয়ে। তবে নবম উইকেটে ৩০ বলে ৫৪ রান তুলে জিম্বাবুয়েকে লড়াইয়ে ফেরান মাসাকাদজা ও ফারাজ। শেষ ওভারে ২১ রানের প্রয়োজন পূরণ করতে না পারলে ম্যাচ হারে জিম্বাবুয়ে। ২০ ওভারে ৯ উইকেটে ১৫৬ রান করে জিম্বাবুয়ে। মাসাকাদজা ১৩, ফারাজ ২টি করে চার-ছক্কায় ১৯ বলে অপরাজিত ৩৪ রান করেন। সাইফউদ্দিন ৪২ রানে ৩ ও রিশাদ ৩৮ রানে ২ উইকেট নেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
বাংলাদেশ ব্যাটিং : ১৬৫/৫ (লিটন ১২, তানজিদ ২১, শান্ত ৬, হৃদয় ৫৭, জাকের ৪৪, মাহমুদুল্লাহ ৯*, রিশাদ ৬*, ফারাজ ১/৪৪, মুজারাবানি ৩/১৪, সিকান্দার ১/৩৮)।
জিম্বাবুয়ে ব্যাটিং : ১৫৬/৯ (মারুমানি ৩১, মাদান্দে ১১, ক্যাম্পবেল ২১, মাসাকাদজা ১৩, ফারাজ ৩৪*, মুজারাবানি ৯*, তানভীর ১/২৬, তাসকিন ১/২১), সাইফউদ্দিন ৩/৪২, তানজিম ১/২৬, রিশাদ ২/৩৮, মাহমুদুল্লাহ ১/১)।
ফল : বাংলাদেশ ৯ রানে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : তৌহিদ হৃদয় (বাংলাদেশ)।
সিরিজ : পাঁচ ম্যাচ সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে এগিয়ে বাংলাদেশ।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা