১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

উপজেলা নির্বাচনে ভোট দিতে না যাওয়ার আহ্বান বিএনপির

-

উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপের ভোট হচ্ছে আজ। জাতীয় নির্বাচনের মতো এ নির্বাচনও বর্জন করছে বিএনপি। বর্জনের পাশাপাশি গত দুই সপ্তাহ ধরে ‘একতরফা’ এ নির্বাচনের বিরুদ্ধে ভোটারদের মাঝে প্রচারণাও চালানো হচ্ছে। দলটি আজকের নির্বাচনে ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে না যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, উপজেলা নির্বাচনে চার দফায় ভোট হবে। এই ভোট হচ্ছে ডামি ভোট, প্রহসনের ভোট। এই ভোটে জনগণ অংশগ্রহণ করবে না। রিজভী ভোট কেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে না যেতে উৎসাহিত করতে নেতাকর্মীদের মাঠে থাকার নির্দেশনা দিয়েছে বিএনপি। দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে যারা মাঠে থাকবে না অথবা যারা ভোটে থাকা প্রার্থীদের পক্ষ হয়ে কাজ করবেন তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ারও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
বিএনপি মনে করছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ভোট বর্জনের আহ্বানে ৭ জানুয়ারি সাড়া দিয়েছিল ভোটাররা। সেই ধারাবাহিকতায় উপজেলার নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে বিএনপি বিভিন্ন সভা সমাবেশ, কর্মী সভা, লিফলেট বিতরণ করছে জনগণকে ভোট কেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য। এবারো ভোটাররা সাড়া দিবে বলে দলটির আশা। এই পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট উপজেলার নেতারা তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব কিভাবে পালন করেন বা দলের কোনো পর্যায়ের নেতা অন্য কোনো প্রার্থীর পক্ষে মাঠে কাজ করেন কি-না তা পর্যবেক্ষণ করতে কেন্দ্র থেকে মনিটরিং করার জন্য সেল খোলা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদের ওই সেলের দায়িত্বে রাখা হয়েছে।

বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ এ বিষয়ে বলেন, ভোটের দিন দলীয় নেতাকর্মীদের মূল কাজ হবে ভোটদানে ভোটারদের নিরুৎসাহিত করা। বিএনপির শান্তিপূর্ণ এ আহ্বানে জাতীয় নির্বাচনেও জনগণ ভোট বর্জন করেছে, এবারো তারা বর্জন করবে বলে আমাদের বিশ্বাস। ভোটের দিন নেতাকর্মীদের ওপর কেন্দ্রের পর্যবেক্ষণ থাকবে জানিয়ে তিনি আরো বলেন, যারা কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত না মেনে ভোট প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত থাকবে দল তাদের ব্যাপারে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবে।
গত সোমবার বিকেলে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে পল্টনে ঢাকা জেলা বিএনপি, অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের যৌথ জরুরি সভা হয়। বৈঠকে থাকা একাধিক নেতা জানান, ভোটের দিন করণীয় সম্পর্কে একাধিক নির্দেশনা দেয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে- শান্তিপূর্ণভাবে ভোটের দিন ভোটবিরোধী প্রচারণা চালানো, নেতাকর্মীদের কেউ কারো পক্ষে কাজ করলে তাকে নিবৃত করা এবং ভোট নিয়ে কারো সাথে কোনো রকম সংঘর্ষে না জড়ানো।

দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করায় ইতোমধ্যে প্রথম ধাপে ৭২ ও দ্বিতীয় ধাপে ৬১ জনকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। দলের সিদ্ধান্ত মেনে সরে দাঁড়িয়েছেন যথাক্রমে ১৬ ও ১২ জন প্রার্থী। নির্বাচনের তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপেও বিএনপি নেতাদের অনেকে প্রার্থী হতে মাঠে তৎপর।
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নির্বাচন ব্যবস্থাপনা ও সমন্বয়-২ শাখা থেকে জানা গেছে, প্রথম ধাপে ১০টি জেলায় ১৫০টি উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। তবে সব পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পাঁচটি উপজেলা (হাতিয়া, মুন্সীগঞ্জ সদর, বাগেরহাট সদর, পরশুরাম ও শিবচর) প্রার্থীরা নির্বাচিত হওয়ায় এবং মৃত্যুজনিত/ মামলার কারণও ধাপ পরিবর্তন হওয়ায় ছয়টি উপজেলায় (নারায়ণগঞ্জ সদর, কুমারখালী, থানচি, রোয়াংছড়ি, গোপালপুর ও মহাদেবপুর) ভোট হবে না।
এদিকে গতকাল মঙ্গলবার দুপুরেও রাজধানীর বনানী এলাকায় পথচারী, যানবাহন চালক ও যাত্রীদের হাতে উপজেলা নির্বাচনের ভোট বর্জন সম্বলিত লিফলেট বিতরণ করেছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।
এ সময় দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ সময় বলেন, দেশের জনগণ যেভাবে ৭ জানুয়ারির ডামি নির্বাচন বর্জন করেছে ঠিক একইভাবে আজ থেকে শুরু হওয়া উপজেলা নির্বাচনও বর্জন করবে। কারণ জনগণের ভোট যারা কেড়ে নিয়েছে তাদের অধীনে নির্বাচনগুলো হচ্ছে প্রহসনের ডামি নির্বাচন। এই ডামি নির্বাচনে জনগণ অংশ নিবে না।

বিএনপির এই নেতা বলেন, পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে-আওয়ামী লীগের একজন উপজেলা চেয়ারম্যান ১০০ বিঘার উপরে জমি কিনেছে মাত্র ২ বার ক্ষমতায় থেকে। অনেকেই ১২ হাজার গুণ ১৮ হাজার গুণ সম্পত্তি করেছে। এ কারণে তারা জনগণ ও বিরোধী দলের অংশগ্রহণকে বাদ দিয়ে পাতানো নির্বাচন করতে চাচ্ছে। জনগণ এই নির্বাচন মানে না।
এ সময় অন্যদের মধ্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা মাহমুদুর রহমান সুমন, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।


আরো সংবাদ



premium cement