তাপপ্রবাহে কী করতে হবে, জানিয়ে জাতীয় নির্দেশিকা
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ০৬ মে ২০২৪, ০০:০৫
তাপপ্রবাহ থেকে সুরক্ষার জন্য কী কী করতে হবে, তা জানিয়ে প্রথমবারের মতো জাতীয় গাইডলাইন বা নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে সরকার। গতকাল রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে আনুষ্ঠানিকভাবে এই নির্দেশিকা প্রকাশ করা হয়েছে।
অতিরিক্ত গরমে মাথা ঘোরানো, দুশ্চিন্তা, স্ট্রোক, মুখের ভেতর শুকিয়ে যাওয়া, অ্যাজমা, মাংসপেশিতে খিঁচুনি, চামড়ায় ফুসকুড়ি, কিডনি অকার্যকর হওয়ার মতো অসুস্থতা দেখা দিতে পারে। এ ধরনের গরমে বয়স্ক, শিশু, অন্তঃসত্ত্বা নারী, শ্রমজীবী মানুষেরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। তাই তাপপ্রবাহ থেকে সুরক্ষার জন্য কী কী করতে হবে, তা জানিয়ে প্রথমবারের মতো জাতীয় গাইডলাইন বা নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে সরকার।
ইউনিসেফের সহযোগিতায় স্বাস্থ্য অধিদফতর গতকাল রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে গরমজনিত অসুস্থতা মোকাবেলায় প্রথমবারের মতো জাতীয় গাইডলাইন প্রকাশ করেছে। এতে ১৭টি অধ্যায়ের মাধ্যমে গরম থেকে কিভাবে নিজেদের সুরক্ষিত রাখতে হবে, কেউ গরমজনিত অসুস্থতার শিকার হলে প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে কী করতে হবে, সে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। অসুস্থ হয়ে কেউ হাসপাতালে ভর্তি হলে কোন বয়সীদের জন্য চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীরা কী ধরনের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা নেবেন, সেটাও তুলে ধরা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে জাতীয় গাইডলাইনের মোড়ক উন্মোচন করেন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, এই গরমের মধ্যে রোগী ব্যবস্থাপনায় হাসপাতালগুলো ফাঁকা রাখতে হবে। যেসব অস্ত্রোপচার পরে করলেও চলবে, সেগুলো যেন এখন না করা হয়। ভবিষ্যতে এ ধরনের তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। তাই গরমে কী করা যাবে, তা নিয়ে চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। তিনি গরমের তীব্রতা কমাতে গাছপালা রোপণের দিকে নজর বাড়াতে বলেছেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ইউনিসেফ বাংলাদেশের উপপ্রতিনিধি এম্মা ব্রিগহাম বলেন, তাপপ্রবাহের সময়ে অপরিণত শিশু জন্মের ঝুঁকি বেশি। তাপমাত্রা প্রতি ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধিতে অপরিণত শিশু জন্মের ঝুঁকি ৫ শতাংশ বাড়ে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের কারণে ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের সাড়ে তিন কোটির বেশি শিশু তীব্র তাপপ্রবাহের সম্মুখীন হবে। ২০২০ সালে ২৬ লাখ শিশু এই ঝুঁকির সম্মুখীন হয়েছিল।
অনুষ্ঠানে গাইডলাইনটির বিভিন্ন তথ্য উপস্থাপন করেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। তিনি বলেন, ২০২৩ সাল থেকেই তাপমাত্রা নিয়মিতভাবে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকছে। তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি হলে শরীর অনেক সময় পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়াতে পারে না। ফলে বিভিন্ন অসুস্থতা দেখা দেয়। এ সময় কলেরা, আমাশয়, ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, জন্ডিস, পানিশূন্যতা ও ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্যহীনতা দেখা দিতে পারে। দিনের যে সময়ে তাপমাত্রা বেশি থাকে, সে সময়ে তিনি বাইরে বের না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (পরিকল্পনা ও গবেষণা) আফরিনা মাহমুদ বলেন, করণীয় সম্পর্কে সচেতন হলে তাপপ্রবাহের হুমকি মোকাবেলা করা সম্ভব।
স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো: জাহাঙ্গীর আলম বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর অন্যতম বাংলাদেশ। তাপপ্রবাহের মধ্যে কিভাবে টিকে থাকতে হয়, তা নিয়ে কোনো গাইডলাইন ছিল না দেশে। এখন এটি নিয়ে মাঠপর্যায়ে কাজ করা হবে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রীর ‘কথা কম ও কাজ বেশি করার’ পরামর্শ তুলে ধরে এক লাইনে বক্তব্য শেষ করেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক আহমেদুল কবীর এবং সভাপতির বক্তব্যে বাংলা ও ইংরেজিতে ছয়বার ধন্যবাদ দেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম।
অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের মেডিক্যাল অফিসার (পরিকল্পনা ও গবেষণা) মানসী সাহা।
গাইডলাইনে গরম মোকাবেলায় জনসাধারণেরও সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করতে ‘বিইএটি দ্য হিট’ কাঠামো অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ইংরেজি কিছু শব্দে ‘বিইএটি’ লেখা হয়েছে। যেটাকে ভেঙে লিখলে বলা যায়, গরমজনিত চাপ সম্পর্কে সচেতন থাকুন (ইব অধিৎব); লক্ষণগুলো সহজে শনাক্ত করুন (ঊধংরষু ওফবহঃরভু); নিজের ও অন্যের সুরক্ষায় দ্রুত পদক্ষেপ নিন (অপঃ ওসসবফরধঃবষু) এবং কারো গুরুতর লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যান (ঞধশব)।
গাইডলাইনে বলা হয়েছে, গরম থেকে দূরে থাকতে হবে ও মাঝে মধ্যে ছায়ায় বিশ্রাম নিতে হবে। সারা দিনে আড়াই থেকে তিন লিটার পানি পান করতে হবে। প্রয়োজনে একবারের বেশি গোসল করতে হবে। ঢিলেঢালা পাতলা কাপড় পরতে হবে ও সম্ভব হলে রঙিন পোশাক এড়িয়ে যেতে হবে। অন্যান্য স্বাস্থ্যগত সমস্যা, যেমন ডায়াবেটিস, কিডনি রোগ, উচ্চরক্তচাপ থাকলে গরমের আগেই করণীয় সম্পর্কে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। প্রচণ্ড গরমে প্রয়োজন না হলে বয়স্ক, শিশু ও অন্তঃসত্ত্বা নারীদের বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। শিশুদের তরল খাবার খাওয়ানো ও নবজাতকদের নিয়মিত মায়ের দুধ পান করানোর পরামর্শ দেয়া হয়েছে। অন্তঃসত্ত্বা নারীদের চিকিৎসকদের সাথে সাক্ষাতের সময় দিনের প্রথম দিকে অথবা বিকেলে যখন তাপমাত্রা কম থাকে, তখন নির্ধারণ করতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
গাইডলাইনে উল্লেখ করা হয়, ৩৬ থেকে ৩৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে মৃদু, ৩৮ থেকে ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে মাঝারি, ৪০ থেকে ৪১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে তীব্র এবং ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার চেয়ে বেশি তাপমাত্রাকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বলা হয়।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা