গাজীপুরে দুই ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ
- মোহাম্মদ আলী ঝিলন ও মো: আজিজুল হক গাজীপুর থেকে
- ০৪ মে ২০২৪, ০২:২৮
- দুই ট্রেনের আহত ৬
- ৩ তদন্ত কমিটি গঠন
- ২ ঘণ্টা পর ট্রেন চলাচল শুরু
গাজীপুরে যাত্রীবাহী টাঙ্গাইল কমিউটার ট্রেনের সঙ্গে তেলের কন্টেইনারবাহী ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়েছে। এতে উভয় ট্রেনের ১১টি বগি লাইনচ্যুত হয়ে ইঞ্জিনসহ মোট ১২টি বগি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ঘটনায় উভয় ট্রেনের চালকসহ (লোকো মাস্টার) ছয়জন আহত হয়েছেন। এ দুর্ঘটনার পর জয়দেবপুর জংশন হয়ে ময়মনসিংহ ও উত্তরবঙ্গগামী ট্রেন চলাচল প্রায় ২ ঘণ্টা বন্ধ থাকে। লাইনচ্যুত বগিগুলো উদ্ধারের পর দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটে উভয় রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। গতকাল শুক্রবার বেলা ১১টায় ঢাকা-ময়মনসিংহ রুটের জয়দেবপুর রেলওয়ে জংশন স্টেশনের পার্শ্ববর্তী ছোটদেওড়া কাজীবাড়ী এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। ঘটনা তদন্তের জন্য ৩টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ঘটনায় রেলওয়ের স্টেশন মাস্টারসহ তিনজনকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
জয়দেবপুর রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার হানিফ মিয়া জানান, শুক্রবার বেলা ১১টায় টাঙ্গাইল থেকে ছেড়ে আসা যাত্রীবাহী ট্রেন টাঙ্গাইল কমিউটার ঢাকা যাচ্ছিল। পথে জয়দেবপুর জংশন স্টেশনে যাত্রা বিরতি শেষে ১০টা ৫০ মিনিটের দিকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ওই স্টেশন ত্যাগ করে। ট্রেনটি আপলাইন দিয়ে যাওয়ার পথে ওই স্টেশনের পার্শ্ববর্তী আউটার সিগন্যালের ছোটদেওড়া কাজীবাড়ী এলাকায় ক্রসিং পয়েন্টে পৌঁছলে একই লাইন দিয়ে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা সৈয়দপুরগামী জ্বালানি তেলের কনটেইনারবাহী অপর একটি ট্রেনের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে যাত্রীবাহী ট্রেনের ইঞ্জিনসহ ৫টি বগি এবং কনটেইনারবাহী ট্রেনের ইঞ্জিনসহ ৭টি বগি দুমড়ে মুচড়ে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর মধ্যে যাত্রীবাহী ট্রেনের ৪টি ও কনটেইনারবাহী ট্রেনের ৬টি বগি লাইনচ্যুত হয়। এ ঘটনায় উভয় ট্রেনের চালকসহ (লোকো মাস্টার) ছয়জন আহত হয়েছেন। স্থানীয়দের সহায়তায় পুলিশ আহতদের উদ্ধার করে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করে। খবর পেয়ে গাজীপুর মেট্র্রোপলিটন পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস এবং প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছেন।
তিনি আরো জানান, যাত্রীবাহী ট্রেনে কোনে যাত্রী আটকা পড়েনি। গতকাল শুক্রবার বন্ধের দিন থাকায় টাঙ্গাইল কমিউটার ট্রেনে তেমন যাত্রী ছিল না। ট্রেন দু’টি আউটার সিগনালে পৌঁছানোর পর লাইন ক্রসিং করার সময় এই সংঘর্ষ হয়। ওই ক্রসিং পয়েন্টে ম্যানুয়ালি লাইন পরিবর্তন করতে হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, লাইনম্যানের অবহেলা ও সঠিক ক্লিয়ারেন্স না থাকার কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।
এ দিকে দুর্ঘটনার খবর পেয়ে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ঘটনাস্থলে মোতায়েন করা হয়।
গাজীপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম বলেন, দুর্ঘটনাটি কি কারণে ঘটেছে, কারও গাফিলতি আছে কি না, এসব বিষয়ে জানতে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মতিউর রহমানকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমটিকে আগামী দুই দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক বলেন, ভুল সিগনালের কারণে এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। তেলবাহী ট্রেনটি যাচ্ছিল রংপুরে এবং গতকাল শুক্রবার থাকায় টাঙ্গাইল কমিউটার ট্রেনে যাত্রীর সংখ্যা কম ছিল। এ ট্রেনটি ঢাকায় ফিরছিল। যাত্রীবাহী ট্রেনটি তেলবাহী ট্রেনের লাইনে প্রবেশ করলে সংঘর্ষে দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। দ্রুত উদ্ধার প্রক্রিয়া শুরু করতে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপরে সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গতকাল শুক্রবার সরকারি ছুটির দিন বলে টাঙ্গাইল কমিউটার ট্রেনটি অনেকটা খালি অবস্থায় ঢাকার দিকে যাচ্ছিল। এ কারণে হতাহতের ঘটনা কম হয়েছে। দু’টি ট্রেন বিকট শব্দে মুখোমুখি সংঘর্ষ হলে তেলের কনটেইনারের ঢাকনা খুলে তেল ছিটকে পড়ে। সংঘর্ষে তেলের একটি বগি লিকেজ হয়ে তেল ঝরে পড়তে থাকে।
স্থানীয় বাসিন্দা লতিবুর রহমান ও রেজাউল করিম বলেন, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা তেলবাহী ট্রেনটি আউটার সিগন্যালের দক্ষিণে আপলাইনে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর চলতে শুরু করে। এ সময় বিপরীত দিক আসা টাঙ্গাইল কমিউটার ট্রেনটি একই লাইনে ঢুকে পড়লে সংঘর্ষ হয়। এতে বিকট শব্দে পুরো এলাকা প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। খবর পেয়ে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস এবং রেলওয়ের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন।
আহত ৬ : জয়দেবপুর জংশনের স্টেশনমাস্টার মো: হানিফ মিয়া জানান, দুই ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষে দুই ট্রেনের ছয়জন আহত হয়েছেন।
আহতরা হলেন- তেলবাহী ট্রেনের লোকোমাস্টার মো: দেলোয়ার হোসেন (এল এম) ও সহকারী লোকোমাস্টার রিপন চন্দ্র (এএলএম) এবং টাঙ্গাইল কমিউটারের লোকো মাস্টার হাবিবুর রহমান খান (এল এম) ও সহকারী লোকোমাস্টার সবুজ হাসান (এএলএম)। ঘটনার পর পর এলাকাবাসী তাদের উদ্ধার করে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তবে এ ঘটনায় ট্রেনের অপর কয়েক যাত্রী সামান্য আহত হয়েছেন। তারা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।
৩ জন বরখাস্ত : অপর দিকে গাজীপুরে দুই ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনায় দায়িত্ব অবহেলার প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়ার পর একজন স্টেশন মাস্টারসহ তিনজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বরখাস্তকৃতরা হলেন : আপগুন্টি স্টেশন মাস্টার মো: আবুল হাসেম, পয়েন্টস ম্যান সাদ্দাম হোসেন ও মোস্তাফিজুর রহমান।
ঘটনা তদন্তে তিন কমিটি : গাজীপুর জয়দেবপুর রেলওয়ে জংশন এলাকায় মালবাহী ট্রেনের সাথে যাত্রীবাহী ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা তদন্তে গাজীপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি এবং রেলওয়ের দুইটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো: মতিউর রহমানকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হযয়েছে বলে জানিয়েছেন গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মো: সফিকুল ইসলাম।
দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে জেলা প্রশাসক বলেন, এ দুর্ঘটনায় কারো অবহেলা বা গাফিলতি আছে কি না তদন্ত করে দেখা হবে। তদন্ত কমিটিকে দুই কার্য দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
অন্য দিকে রেলওয়ের পক্ষ থেকে দুইটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। এর মধ্যে সিওপিএস মো: শহীদুল ইসলামকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের আঞ্চলিক কমিটি করা হয়েছে। আর রেলেওয়ের ঢাকা বিভাগীয় প্রকৌশলী (সিগন্যাল ও টেলিকমিউনিকেশন) সৌমিক শাওন কবিরকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের আরেকটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি গঠনের বিষয়টি নিশ্চিত করে ঢাকা বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ শফিকুর রহমান বলেন, দুই কমিটিকেই তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
দুর্ঘটনার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হিউম্যান ফেইলিওর অথবা টেকনিক্যাল প্রবলেমের কারণে ঘটে থাকতে পারে। তবে তদন্তের পর সঠিক কারণ জানা যাবে।
দুপুরে এক লাইনে ট্রেন চলাচল শুরু : স্টেশনমাস্টার মো: হানিফ মিয়া আরো জানান, ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গগামী অপলাইনে দুর্ঘটনার পর ওই লাইনে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকলেও পাশের ডাউন লাইন ব্যবহার করে ঢাকার সাথে উত্তর উত্তরবঙ্গের ট্রেন চলাচল করছে। দুর্ঘটনার পর থেকে ডাউন লাইনেও ট্রেন চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ ছিল। পরে দুপুর একটার দিকে ডাউন লাইনটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর দুপুর দেড়টার দিকে ঢাকা থেকে পঞ্চগড়গামী একতা এক্সপ্রেস ট্রেনটি দুর্ঘটনাস্থল অতিক্রম করে চলে যায়। এর পর থেকে রেশনিং পদ্ধতিতে ওই পথে অন্যান্য ট্রেন চলাচল শুরু করে। তবে সন্ধ্যা পর্যন্ত দুর্ঘটনা কবলিত ট্রেন দু’টি উদ্ধারের কাজ করছিল রেলওয়ের উদ্ধার কর্মীরা।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা