মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রমাণ পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র
ইসরাইলের হামলায় আরো ৪০ ফিলিস্তিনি নিহত- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ০১ মে ২০২৪, ০২:২৯
ইসরাইলি সেনাবাহিনী মানবাধিকার লঙ্ঘনের সাথে জড়িত বলে প্রমাণ পেয়েও ইসরাইলি বাহিনীকে সামরিক সমর্থন দিয়ে যাবে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ দিকে গাজায় হামাসের সাথে যুদ্ধবিরতির চুক্তি হোক বা না হোক, ইসরাইলি বাহিনী রাফাহে স্থল অভিযান চালাবে বলে জানিয়েছেন নেতানিয়াহু। গাজায় ইসরাইলের বিমান হামলায় আরো ৪০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। গাজায় ইসরাইলের বিমান হামলায় ধসে পড়া শত শত ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচে পড়ে পচছে প্রায় ১০ হাজার লাশ। বিবিসি, আলজাজিরা ও রয়টার্স।
ইসরাইলি সেনাবাহিনীর পাঁচটি ইউনিট ব্যাপকভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সাথে জড়িত বলে প্রমাণ পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, তার পরও ইসরাইলি বাহিনীকে সামরিক সমর্থন দিয়ে যাবে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যেসব স্বতন্ত্র ঘটনায় ইসরাইলি বাহিনীর বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রমাণ পাওয়া গেছে, তার সব ক’টিই ঘটেছে ফিলিস্তিনের গাজার বাইরে; চলমান যুদ্ধ শুরুর আগেই। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অধিকৃত পশ্চিমতীর ও জেরুসালেমে সব ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অভিযুক্ত চারটি সেনা ইউনিটের বিরুদ্ধে সংশোধনমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে ইসরাইল। পঞ্চম ইউনিটের বিষয়ে অতিরিক্ত তথ্য দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল। এর অর্থ হলো ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর সবগুলো ইউনিটই মার্কিন সামরিক সহায়তা পাওয়ার যোগ্য থাকবে। যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলের প্রধান সামরিক সাহায্যকারী দেশ। প্রতি বছর ইসরাইলকে ৩৮০ কোটি ডলারের অস্ত্র ও প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সরবরাহ করে যুক্তরাষ্ট্র।
মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় সেনাদের কোনো জবাবদিহিতা ছিল কি না তা বলতে অপারগ থাকা সত্ত্বেও ইসরাইলের সব ইউনিটকে সামরিক সহায়তা অব্যাহত রাখায় রাজনৈতিক চাপের বিষয়টি অস্বীকার করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বেদান্ত বলেছেন, আমরা একটি প্রক্রিয়ায় তাদের সাথে জড়িত আছি। যখন সেই প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হবে তখন আমরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেব।
১৯৯৭ সালে তৎকালীন সিনেটর প্যাট্রিক লেহি একটি আইন করেছিলেন, যা লেহি আইন নামে পরিচিত। এই আইন অনুসারে কোন বিদেশী সেনা ইউনিট যদি মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িত থাকে, তাহলে সেই ইউনিটকে মার্কিন সামরিক সহায়তা থেকে বাদ দেয়া হবে। লেহি আইনে নির্যাতন, বিচারবহির্ভূত হত্যা, জোরপূর্বক গুম ও ধর্ষণকে মানবাধিকার লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল। মানবাধিকার লঙ্ঘনে অভিযুক্ত পঞ্চম ইউনিটটি ইসরাইলি সেনাবাহিনীর নেতজাহ ইয়েহুদা ব্যাটালিয়ন। ১৯৯৯ সালে শুধু পুরুষ সেনাদের নিয়ে এ ইউনিট গঠন করা হয়েছিল। আল্ট্রা-অর্থোডক্স ইহুদিরা এ ইউনিটের সদস্য।
এই ইউনিটের বিরুদ্ধে আগেও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছিল। সেই সময় এই ইউনিটের বিরুদ্ধে পুঙ্খানুপুঙ্খ অপরাধ তদন্ত এবং সম্পূর্ণ জবাবদিহিতার আহ্বান জানিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। এবারে এ অভিযোগে ইউনিটটি মার্কিন সহায়তা পাওয়ার যোগ্যতা হারাবে কি না, সে প্রশ্ন উঠেছে। তবে ইউনিটটি সম্পর্কে অতিরিক্ত তথ্য দেয়ায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বিলম্ব হতে পারে বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
যুদ্ধবিরতি চুক্তি হলেও রাফাতে হামলা চালাবেন নেতানিয়াহু : এ দিকে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেছেন, গাজায় হামাসের সাথে যুদ্ধবিরতির চুক্তি হোক বা না হোক, ইসরাইলি সামরিক বাহিনী রাফাতে স্থল অভিযান চালাবে। গতকাল মঙ্গলবার নেতানিয়াহু এ ঘোষণা দেন। হামাসের হাতে বন্দীদের পরিবারগুলোর উদ্দেশে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে জারি করা এক বিবৃতিতে নেতানিয়াহু এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘যুদ্ধের সব লক্ষ্য অর্জনের আগেই যুদ্ধ বন্ধ করে দেবো- এ ধারণা প্রশ্নাতীত। গাজায় হামাসের সাথে যুদ্ধবিরতির চুক্তি হোক বা না হোক, আমরা রাফাতে প্রবেশ করব এবং সম্পূর্ণ বিজয় অর্জনের জন্য সেখানে হামাসের ব্যাটালিয়নগুলো নির্মূল করব। হামাসের পক্ষে ইসরাইলের প্রস্তাব গ্রহণ করার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। হামাসের এক সিনিয়র নেতা গত রোববার জানিয়েছেন, ইসরাইল প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতি ও বন্দিবিনিময়ের বিষয়টির সাথে হামাসের উল্লেখযোগ্য কোনো বিরোধ নেই। রাফাতে ইসরাইলের সামরিক অভিযান শুরু করার আগেই একটি চুক্তিতে আসার জন্য ইসরাইল ও হামাসের ওপর চাপ বাড়ছে। অঞ্চলটিতে ইসরাইলি আগ্রাসন এড়াতে বন্দিবিনিময় চুক্তির বিষয়ে সর্বশেষ প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার জন্য বিভিন্ন পক্ষ মিসরের রাজধানী কায়রোতে বৈঠক করছে।
গাজায় ইসরাইলের হামলায় আরো ৪০ ফিলিস্তিনি নিহত : গাজায় ইসরাইলের বিমান হামলায় আরো অন্তত ৪০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি নিহত হয়েছে গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফাহে। সোমবার ইসরাইলি যুদ্ধবিমানগুলো রাফাহর তিনটি বাড়িতে আর উত্তরে গাজা সিটির দু’টি বাড়িতে বোমাবর্ষণ করে। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, হামলায় অন্তত ছয়জন নিহত হয়েছে আর বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। সোমবার রাতে গাজার মধ্যাঞ্চলে আল-নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে ইসরাইলের বিমান হামলায় তিন ফিলিস্তিনি নিহত হয়। নিহতদের মধ্যে একজন সাংবাদিক আছেন বলে চিকিৎসাকর্মীরা ও হামাসের গণমাধ্যম জানিয়েছে। গাজার অন্যান্য অঞ্চলে ইসরাইলের পৃথক বিমান হামলায় আরো ছয়জন নিহত হয়। সোমবার ইসরাইলের সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, গাজার মধ্যাঞ্চলে রোববার দুই ইসরাইলি সেনা নিহত হয়েছে।
হামাসের মিত্র ইসলামী জিহাদ জানিয়েছে, সোমবার তারা ইসরাইলকে লক্ষ করে রকেট ছুড়েছে। এর মাধ্যমে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে গাজায় প্রায় সাত মাস ধরে চলা ইসরাইলের অবিরাম আকাশ ও স্থল হামলা সত্ত্বেও তাদের রকেট ছোড়ার সক্ষমতা এখনো বজায় আছে। গাজার ২৩ লাখ বাসিন্দার মধ্যে প্রায় অর্ধেক রাফাতে আশ্রয় নিয়ে আছে। এ শহরটিকে এক সময় ‘নিরাপদ স্থান’ বলে ঘোষণা করেছিল ইসরাইলি বাহিনী। শহরটিতে আক্রমণ না চালাতে বিশ্ব নেতারা ইসরাইলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
গাজায় ধ্বংসস্তূপের নিচে পচছে ১০ হাজার লাশ : গাজায় ইসরাইলের চালানো বিমান হামলায় শত শত ভবন ধসে পড়েছে। এসব ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচে পড়ে পচছে প্রায় ১০ হাজার লাশ। প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম না থাকায় ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে এসব লাশ উদ্ধার করা যাচ্ছে না। ফলে এগুলো সেখানে থেকেই পচছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গতকাল মঙ্গলবার জানিয়েছে, গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ৩৪ হাজার ৫৩৫ জনে পৌঁছেছে।
ধ্বংসস্তূপের নিচে পচা এসব লাশের কারণে রোগ বালাই ছড়াচ্ছে বলেও জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তারা মাইক্রো ব্লগিং সাইট এক্সে এক পোস্টে বলেছে, ‘ধ্বংসস্তূপের নিচে অব্যাহতভাবে জমা হওয়া কয়েক হাজার লাশ রোগবালাই ছড়ানো শুরু করেছে। বিশেষ করে গ্রীষ্মের গরমের তীব্রতা বাড়ার কারণে লাশগুলো দ্রুতগতিতে পচছে।’
জার্মান রাষ্ট্রদূতকে ধাওয়া : গাজায় চলমান যুদ্ধে ইসরাইলের পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় ফিলিস্তিনে নিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূতকে ধাওয়া দিয়েছেন ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার পশ্চিমতীরের ফিলিস্তিন জাদুঘরে এ ঘটনা ঘটে। এ দিন জাদুঘরটি পরিদর্শনে যান ফিলিস্তিনে নিযুক্ত জার্মান দূত ওলিভার ওকজা। জাদুঘরটি অবস্থিত পশ্চিমতীরের বিরজেত বিশ্ববিদ্যালয়ে, যা রামাল্লাহ থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। মাইক্রো ব্লগিং সাইট এক্সে প্রকাশিত কয়েকটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, জার্মান দূতকে ধাওয়া দিচ্ছেন ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীরা। ওই সময় তারা ‘বের হয়ে যাও, বের হয়ে যাও’ এমন স্লোগান দিতে থাকেন। তাদের ধাওয়া খেয়ে জার্মান দূত দৌড়ে গিয়ে তার গাড়িতে উঠে পড়েন। জার্মান দূত তার গাড়িতে ওঠার পর সেটিকে লক্ষ্য করে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তখন গুলির শব্দও শোনা যায়। ইউরোপে ইসরাইলের যেসব মিত্র রয়েছে সেগুলোর মধ্যে জার্মানি তাদের সবচেয়ে বড় ও শক্তিশালী মিত্র।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা