১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

যুদ্ধবিরতি আলোচনায় মিসরে হামাস, সৌদিতে ব্লিনকেন

-

- ইসরাইলের প্রস্তাবে বড় আপত্তি নেই হামাসের
- যুদ্ধ বন্ধের ইঙ্গিত ইসরাইলের
- হার্ভার্ডে ফিলিস্তিনি পতাকা
- রাফায় ইসরাইলি হামলায় নিহত ২৭

গাজায় যুদ্ধবিরতির আলোচনায় বসতে গতকাল সোমবার আবার মিসরের কায়রোতে গেছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের প্রতিনিধিদল। বন্দী চুক্তি ও গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে ইসরাইলের সর্বশেষ প্রস্তাবের উত্তর দেবে দলটি। এ দিকে গাজার বর্তমান যে পরিস্থিতি এতে যুদ্ধবিরতিই সবচেয়ে সেরা উপায় বলে মনে করেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্তনি ব্লিনকেন। গাজা ইস্যুতে আলোচনা করতে গতকাল সোমবার সৌদি আরবে পৌঁছে তিনি এ মন্তব্য করেন। রয়টার্স, আলজাজিরা, বিবিসি ও এএফপি।

গাজায় বিগত প্রায় সাত মাস ধরে চলমান যুদ্ধে বিরতি টানতে মধ্যস্থতার চেষ্টা করে চলেছে মিসর, কাতার ও যুক্তরাষ্ট্র। যুদ্ধবিরতি, হামাসের হাতে থাকা বন্দীদের মুক্তি এবং গাজায় ত্রাণ পৌঁছানোর জন্য বৈশ্বিক চাপ সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত হামাস ও ইসরাইলের একটি কার্যকরী যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে আসতে পারেনি। বারবারই তাদের আলোচনা ভেঙে গেছে বিভিন্ন কারণে। এই আলোচনায় হামাস স্থায়ী যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছিল, যা মেনে নিতে অস্বীকার করে ইসরাইল। তবে এবার হয়তো এই আলোচনা আলোর মুখ দেখতে পারে। কারণ হামাস ও ইসরাইল উভয় পক্ষ থেকেই ইতিবাচক সাড়া পাওয়া গেছে। রোববার হামাস জানিয়েছে, ইসরাইলের সর্বশেষ প্রস্তাব নিয়ে তাদের বড় কোনো আপত্তি নেই। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদ সংস্থা এএফপিকে এক হামাস কর্মকর্তা জানান, ইসরাইলের পক্ষ থেকে নতুন কোনো বাধা না এলে পরিবেশ অনুকূল মনে হচ্ছে।
এ দিকে ইসরাইলের দুই কর্মকর্তার বরাত দিয়ে সংবাদ মাধ্যম অ্যাক্সিওস জানিয়েছে, ইসরাইলের ওই প্রস্তাবে গাজায় শান্তি ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে আলোচনা করা হবে, তবে অবশ্যই সব বন্দীর মুক্তির পর। গাজায় চলমান যুদ্ধ শেষ করার ব্যাপারে এই প্রথম ইঙ্গিত দিলো ইসরাইল। এ ছাড়া যুদ্ধবিরতি আলোচনার সাথে সম্পৃক্ত এক হামাস সূত্র এএফপিকে জানিয়েছে, ইসরাইলের নতুন এই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করতে ইতিবাচক হামাস। স্থায়ী যুদ্ধবিরতি, বাস্তচ্যুত মানুষের পুনর্বাসন, বন্দী মুক্তি এবং গাজার মুক্তি নিয়ে ইসরাইলের সাথে একটি সমঝোতায় পৌঁছতে চায় তারা।

হামাসের রকেট হামলা : ইসরাইলে রকেট হামলা চালিয়েছে হামাস। লেবানন থেকে এই হামলা চালানো হয়েছে। এক বিবৃতিতে হামাসের লেবানন শাখা জানিয়েছে, কিরিয়াত শমোনা এলাকায় ইসরাইলি সেনাবাহিনীর একটি ঘাঁটিতে রকেট হামলা চালানো হয়েছে। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছে ইসরাইলের ডিফেন্স ফোর্স। বলা হয়েছে, লেবানন থেকে ২০টি রকেট নিক্ষেপ করা হয়েছে। আইডিএফ জানিয়েছে, হামাসের ছোড়া বেশির ভাগ রকেট আকাশেই ধ্বংস করা হয়েছে। কিছু রকেট খোলা জায়গায় পড়েছে। তাছাড়া পাল্টা হামলা চালানো হচ্ছে বলেও জানায় ইসরাইলি বাহিনী। এতে এখন পর্যন্ত কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
রাফাহতে ২৭ ফিলিস্তিনি নিহত : গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফাহ শহরে নতুন করে তিনটি বাড়িতে ইসরাইলি বিমান হামলায় নারী ও শিশুসহ অন্তত ২৭ জন নিহত হয়েছে। সোমবার গাজার চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এ ঘটনায় অনেকে আহত হয়েছে। গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের মতে, শেষ ২৪ ঘণ্টায় নতুন এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত ৩৪ হাজার ৪৫৪ ফিলিস্তিনির মৃত্যু হলো। আহত কমপক্ষে ৭৭ হাজার ৫৭৫ জন। রাতভর গাজা ও রাফাহ শহরে নতুন করে হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। অবরুদ্ধ রাফাহ শহরে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার বেশির ভাগ মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। ফলে শহরটিতে হামলা না চালানোর আহ্বান জানিয়ে আসছে পশ্চিমারা। ইসরাইলের সাথে যুদ্ধবিরতি চুক্তির সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করতে মিসর হামাস নেতাদের আমন্ত্রণ জানানোর কয়েক ঘণ্টা আগে নতুন এই হামলার ঘটনা ঘটে। তবে রাফাহ শহরে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে ইসরাইলি সেনাপ্রধান। কারণ কট্টরপন্থী মন্ত্রীরা প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে সতর্ক করেছেন যে, যুদ্ধবিরতিতে রাজি হলে তার সরকার ভেঙে পড়বে।

সৌদি আরবে বৈঠক : গাজাযুদ্ধ অবসানে কূটনৈতিকভাবে চাপ প্রয়োগ করতে সৌদি আরবে আলোচনায় বসতে চলেছেন যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সসহ পশ্চিমা আরো কয়েক দেশ এবং আরব দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। গতকাল সোমবার সৌদি আরবে পৌঁছান যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্তনি ব্লিনকেন। সেখান থেকে মধ্যপ্রাচ্যের আরো কয়েকটি দেশে যাবেন তিনি।
রিয়াদে সৌদি আরবের সিনিয়র নেতাদের সাথে বৈঠক করার কথা রয়েছে ব্লিনকেনের। এ ছাড়ও কাতার, মিসর, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও জর্দানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সাথেও বৈঠক করবেন তিনি। বৈঠকে ইসরাইল-হামাস যুদ্ধ অবসানের পর গাজা ভূখণ্ড কিভাবে পরিচালিত হবে তা নিয়ে বৃহৎ পরিসরে আলোচনা হবে বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা। গাজা পুনর্গঠনের কাজে ইউরোপ কিভাবে সহায়তা করতে পারে তা নিয়ে আলোচনার জন্যও আরব ও ইউরোপের দেশগুলোকে ব্লিনকেন একজোট করার চেষ্টা করবেন বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
হার্ভার্ডে উড়ল ফিলিস্তিনি পতাকা : গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে শুরু হওয়া শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ এখন যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছড়িয়ে পড়েছে। ক্রমবর্ধমান এই বিক্ষোভ সামাল দিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কর্মকর্তারা রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন। বিক্ষোভে উত্তাল মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ক্রমেই বিক্ষোভ আরো তীব্র হচ্ছে। আর মধ্যেই বিশ্ববিখ্যাত হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনি পতাকা উত্তোলন করেছেন বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা। সোমবার নিউ ইয়র্ক পোস্ট জানায়, চলমান প্রতিবাদ-বিক্ষোভের মধ্যেই হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষোভকারীরা ক্যাম্পাসের ভেতরেই ফিলিস্তিনি পতাকা উত্তোলন করেছেন। ক্যাম্পাসের আইভি লিগ স্কুলের সামনে যেখানে এই পতাকা উত্তোলন করা হয় সেই জায়গাটি সাধারণত যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় পতাকার জন্য সংরক্ষিত। এ ছাড়া তারা ওয়াশিংটন হিলটন হোটেলের ওপরের ফ্লোরের জানালা থেকেও একটি বিশালকার ফিলিস্তিনি পতাকা উত্তোলন করেছিল। এটি মূলত হোয়াইট হাউজ সংবাদদাতা সমিতির বার্ষিক নৈশভোজের স্থান।

খাবার সরবরাহ করবে ডব্লিউসিকে : সম্প্রতি ইসরাইলি বাহিনীর বিমান হামলায় নিজেদের সাত কর্মী নিহত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ত্রাণকার্যক্রম বন্ধ করে দেয় ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেন (ডব্লিউসিকে)। তবে এক মাস বন্ধ থাকার পর তাদের কার্যক্রম আবার শুরু হচ্ছে বলে বিবিসির এক খবরে জানানো হয়। ডব্লিউসিকের সাথে কাজ করা অন্য একটি দাতব্য সংস্থা আনেরাও নিজেদের স্টাফ এবং তাদের পরিবারের লোকজনের জীবনের ঝুঁকি বাড়তে থাকায় তাদের কার্যক্রম বন্ধ রাখে। ত্রাণকার্যক্রম স্থগিত করার আগে ফিলিস্তিনজুড়ে সপ্তাহে ২০ লাখ মানুষের খাবারের ব্যবস্থা করছিল এই দুই সংস্থা। সে সময় গাজায় ত্রাণ সংস্থার কর্মীদের প্রতিটি গাড়িকে পরিকল্পিতভাবে লক্ষ্যবস্তু করার জন্য ইসরাইলি বাহিনীকে অভিযুক্ত করেছেন ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেনের (ডব্লিউসিকে) প্রতিষ্ঠাতা হোসে আন্দ্রেজ। অপর দিকে ইসরাইল এই হামলার ঘটনাকে ‘মারাত্মক ভুল’ বলে উল্লেখ করেছে। ডব্লিউসিকে জানিয়েছে, তারা ২৭৬টি ট্রাকে ত্রাণসহায়তা নিয়ে রাফা ক্রসিং দিয়ে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছেন। রোববার এই দাতব্য সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়, শেষ পর্যন্ত আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, আমাদের অবশ্যই গাজায় অনাহারে থাকা লোকজনের খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে।
গাজায় সৈন্য পাঠাবে ব্রিটেন : ব্রিটেন দাবি করেছে, ত্রাণ বিতরণে সহায়তার জন্য তারা গাজায় ব্রিটিশ সৈন্য মোতায়েন করতে পারে। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, তারা নিজস্ব কোনো স্থল বাহিনী সেখানে পাঠাবে না। যুক্তরাষ্ট্র আগে বলেছিল, গাজার সমুদ্র সৈকতে একটি তৃতীয় পক্ষ ভাসমান করিডোরে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। বিবিসি ধারণা করছে যে এই ভূমিকাটি ব্রিটিশ বাহিনী পূরণ করতে পারে। শনিবার বিবিসি হোয়াইটহলকে উদ্ধৃত করে বলেছে, এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। এমনকি বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের কাছেও উত্থাপন করা হয়নি। গত মার্চ মাসে সর্বপ্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ত্রাণ বিতরণের জন্য গাজায় একটি ভাসমান জেটি নির্মাণের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছিলেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, তারা ইসরাইলের সাথে অস্থায়ী জেটির নিরাপত্তার বিষয়টি সমন্বয় করবে। অস্থায়ী বন্দরটি যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজায় ফিলিস্তিনিদের মানবিক সহায়তার পরিমাণ প্রতিদিন শত শত ট্রাক বাড়াতে সহযোগিতা করবে।


আরো সংবাদ



premium cement
টানা জয়ে শীর্ষে রংপুর, প্রত্যাবর্তনের ম্যাচে শান্তর ৮০ ইনসাফভিত্তিক নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে চায় জামায়াত : রেজাউল করিম টি-টোয়েন্টি সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারাতে চান সৌম্য ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংকটে দ্বি-রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানে সমর্থন ইতালির আবাহনীকে হারিয়ে শীর্ষে মোহামেডান ভারতকে ‘অসহযোগী’ দেশ ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন : ডিএমপিতে ২ দিনে ১৭৯৯ মামলা কোরআনের সমাজ প্রতিষ্ঠায় আমরা কাজ করে যাচ্ছি : নূরুল ইসলাম বুলবুল বিআরটি করিডোরে বিআরটিসির এসি বাস সার্ভিস চালু হচ্ছে রোববার বাংলাদেশে বিজেপির হিন্দুত্ববাদের বিকাশ ঘটছে! আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসরে আমির

সকল