সিদ্ধান্ত গ্রহণে বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা আছে কি না জানতে চেয়েছে আইএমএফ
- বিশেষ সংবাদদাতা
- ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০১:১৮
বাংলাদেশ ব্যাংক স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। আর স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান নিজেরাই তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকার কথা। কিন্তু স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে কতটুকু স্বাধীনতা ভোগ করে সে বিষয়ে জানতে চেয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফ। গতকাল সফররত প্রতিনিধিরা বাংলাদেশ ব্যাংকের সচিব বিভাগের সাথে বৈঠকে এ বিষয়ে জানতে চেয়েছেন। একই সাথে বাংলাদেশ ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ অডিট কার্যক্রম নিয়েও জানতে চাওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন খাতে ঝুঁকি মাকাবেলার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক কিভাবে সিন্ধান্ত নেয় সে বিষয়টিও আলোচনায় এনেছে আইএমএফ।
গতকাল রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন বিভাগের সাথে একাধিক বৈঠকে তারা এসব বিষয়ে জানতে চেয়েছে। এ ছাড়া আইএমএফ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাথে বৈঠক করেছে।
গতকাল জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাথে বৈঠকে আইএমএফ প্রতিনিধি দল আগামী অর্থবছরের বাজেটের আকার নিয়ে জানতে চেয়েছেন। তাদের পরামর্শ আকার ও ঘাটতি কমিয়ে রাজস্ব সংগ্রহ বাড়ানোর। পাশাপাশি তারা ভর্তুকির পরিমাণ কমানোর তাগিদ দিয়েছে। আইএমএফের পরামর্শ আগামী বাজেটে দরিদ্রদের ভাতা বাড়ানো। বর্তমানে ভাতার পরিমাণ কোনোটা ৫০০, আবার কোনোটা ৫৫০ ও ৬০০ টাকা। আইএমএফের পরামর্শ এ ভাতার পরিমাণ আরো বৃদ্ধি করা হোক। এ সময় অর্থ বিভাগের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি দলকে জানানো হয়েছে, বাজেট বাজেটের মতো চলবে। এটি যেহেতু রাজনৈতিক সরকারের বাজেট, তাই বাজেট প্রণয়নের সময় ক্ষমতাসীন দলের নির্বাচনী ইশতেহার ও পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাকেও বিবেচনায় রাখতে হচ্ছে। বৈঠক বাজেটের আকারের পাশাপাশি বাজেট ঘাটতি ও রাজস্ব সংগ্রহ নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে।
এ দিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে বৈঠকে আইএমএফ জানতে চায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক অর্থনীতি ও ব্যাংক খাতের বিষয়ে সিন্ধান্ত কিভাবে নেয়। এ খাতে তারা কেমন স্বাধীনতা ভোগ করে। সরকার থেকে কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়া হয় কি না- এ বিষয়ে জানতে চেয়েছে। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন খাতে ঝুঁকি মোকাবেলার বিষয়ে কিভাবে নীতি প্রণয়ন করে। ঝুঁকি মোকাবেলার পদক্ষেপগুলোর কার্যকারিতা সম্পর্কেও জানতে চেয়েছে।
জবাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বাংলাদেশ ব্যাংক অধ্যাদেশের আলোকে তারা কিভাবে ব্যাংক খাত পরিচালনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে সে বিষয়ে জানিয়েছে। একইসাথে অর্থনীতিসহ ব্যাংক খাতের ঝুঁকি মোকাবেলার নীতি সম্পর্কে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড এ খাতে অনুস্মরণ করা হয়। এর মধ্যে ব্যাসেল ৩ বাস্তবায়ন করা এখন ব্যাংকগুলোর জন্য বাধ্যতামূলক। কোনো কোনো খাতে এর চেয়ে আড়াই শতাংশ বেশি মূলধন রাখার শর্ত দেয়া হয় ব্যাংকগুলোকে। ব্যাসেল ৩ নীতিমালা অনুযায়ী ব্যাংকগুলোকে এখন ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের বিপরীতে কমপক্ষে ১০ শতাংশ মূলধন রাখতে হয়। ব্যাংক খাত তদারকি করার নীতিমালা রয়েছে। এর আলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তদারকি করে।
ব্যাংক খাতের দুর্বলতা প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সবল করতে তদারকি জোরদার করা হয়েছে। কিছু দুর্বল ব্যাংক সবল ব্যাংকের সাথে একীভূতকরণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া খেলাপি ঋণ ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে খেলাপি ঋণ ৮ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনতে কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, আগামী ৮ মে পর্যন্ত আইএমএফের দলটি সরকারের বিভিন্ন দফতরের সাথে বৈঠক করবে। বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তাদের সাথে নিয়মিত বৈঠক করছে সংস্থাটি। ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ অনুমোদন করে আইএমএফ। সে সময় রাজস্ব বৃদ্ধি, ব্যাংক খাত সংস্কারসহ বিভিন্ন শর্ত দেয় সংস্থাটি। ইতোমধ্যে দুই কিস্তিতে ১০০ কোটি ডলারের বেশি অর্থ ছাড় করেছে। তৃতীয় কিস্তির অর্থ পাওয়ার কথা আগামী মাসের শেষ দিকে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা