১৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১১ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

আজো থাকবে গনগনে তাপ : মঙ্গলবার মিলতে পারে স্বস্তি

-

- আবারো ৪২.৭ ডিগ্রি চুয়াডাঙ্গাতে
- ঈশ্বরদীতে বেঁকে গেছে রেললাইন

আজো সারা দেশে থাকবে গনগনে তাপপ্রবাহ। গতকাল শনিবারের চেয়ে আজ রোববার সার্বিক তাপমাত্রা আরো বেড়ে যেতে পারে। দেশের পূর্বাঞ্চলের কিছু এলাকা ছাড়া অবশিষ্টাংশে মৃদু থেকে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। ফলে সূর্য মাঝ আকাশে আসার আগেই যেন এক বিভীষিকাময় পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। বৃষ্টির জন্য হাহাকার লেগেই আছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি চেয়ে ইসতিসকার নামাজ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। গতকালও দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছে চুয়াডাঙ্গায় ৪২.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটিই চলতি গরম মৌসুমে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। তবে গত শুক্রবারও চুয়াডাঙ্গায় একই পরিমাণ ৪২.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। যৌথভাবে গত শুক্রবার ও শনিবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড গড়ল চুয়াডাঙ্গা জেলা। তবে আবহাওয়া অধিদফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী মঙ্গলবারের দিকে দেশের বিভিন্ন স্থানে কিছুটা স্বস্তি মিলতে পারে। উচ্চ তাপমাত্রা কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গতকাল সিলেট বিভাগে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়েছে। সেখানকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রাও বেশ সহনীয় রয়েছে।

নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া মানুষের চলাচল সীমিত হয়ে পড়েছে। খেটেখাওয়া মানুষের যেন কষ্টের শেষ নেই। বর্তমানে দুপুরের দিকে রাস্তায় বের হলে স্বল্প সময়ের মধ্যেই ঘাম বের হয়ে পরনের কাপড়- চোপড় ভিজে একাকার। আধা ঘণ্টার রোদে অবস্থানের পরই শরীর ক্লান্তিতে অবসন্ন হয়ে যায়, দেখা দেয় পানিশূন্যতা। পানি পান করতে না পারলে হাঁটার শক্তিও থাকে না; যা হিটস্ট্রোকের একটি লক্ষণ। চিকিৎসকরা বলছেন, এই তীব্র গরমে বাইরে বের হলে সবারই উচিত পানি নিয়ে বের হওয়া। পানি পিপাসা পেলেই তা গরম হলেও (ফ্রিজারের ঠাণ্ডা পানি পান করা উচিত নয়) পান করে শরীরের পানি শূন্যতা রোধ করা উচিত। পেটে যতক্ষণ পর্যাপ্ত পানি থাকবে ততক্ষণ পানি শূন্যতা দেখা দেবে না।
দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আমাদের সংবাদদাতারা জানাচ্ছেন, উচ্চ তাপমাত্রায় মানুষের মধ্যে যে অস্বস্তি বিরাজ করছে কেবল তা নয়। মানুষের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজও পড়তে শুরু করেছে। কারণ কয়েক মাস থকে বিচ্ছিন্নভাবে ছিটেফোঁটা ছাড়া দেশের বেশির ভাগ স্থানে কোনো বৃষ্টি হয়নি। নয়া দিগন্তের আবহাওয়া পূর্বাভাসের আর্কাইভ পরীক্ষা করে দেখা গেছে, গত ১ মার্চের পর থেকে সিলেট অঞ্চল ছাড়া দেশের অন্য কোথাও বৃষ্টির দেখা নেই। বৃষ্টি না হওয়ায় চলতি বোরো মৌসুমের ফসল উৎপাদনে এর প্রভাব পড়তে বাধ্য। ধানের উৎপাদন বৃষ্টির ওপর নির্ভরশীল। বৃষ্টির কারণে ধানের কাক্সিক্ষত উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে। অন্য দিকে বাজারে গেলেই দেখা যায়, বাজারে কিছু তরমুজ পাওয়া যায় এবং এগুলো আকারে খুবই ছোট। বড় তরমুজ নেই বললেই চলে। বৃষ্টি হয়নি বলে তরমুজের ফলনে প্রভাব পড়েছে। অন্য দিকে আমের ফলনেও এর যথেষ্ট প্রভাব পড়েছে। বৃষ্টি না হওয়ায় আমের গুটি ঝরে পড়ে যাচ্ছে। অন্যান্য ফসলেরও একই অবস্থা।

এ দিকে আজ রোববার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলাসহ আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। চুয়াডাঙ্গা জেলার ওপর দিয়ে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং রাজশাহী, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, যশোর ও কুষ্টিয়া জেলাগুলোর ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে; অর্থাৎ এসব অঞ্চলে ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। অন্য দিকে দিনাজপুর, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, ফেনী ও বান্দরবান জেলাসহ রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের অবশিষ্টাংশে এবং ঢাকা ও বরিশাল বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। উল্লিখিত এসব এলাকার বাইরে তাপপ্রবাহ নাও ছড়িয়ে পড়তে পারে। সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে জনমনে অস্বস্তি বিরাজ করতে পারে।

চুয়াডাঙ্গা ছাড়াও যশোরে ৪১.৬, রাজশাহী ও ঈশ্বরদীতে ৪১.৫ ও কুমারখালীতে ৪০.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা উঠেছে গতকাল। ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছে ৩৭.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন ২৮.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় শ্রীমঙ্গলে ২১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল সিলেট ৮৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
চুয়াডাঙ্গা সংবাদদাতা জানান, চুয়াডাঙ্গায় ১৬ দিন ধরে অব্যাহত রয়েছে তীব্র থেকে অতি তীব্র তাপমাত্রা। এখানে বাতাসে বইছে আগুনের হল্কা। দিনের আলো ফোটার সাথে বেলা যত বাড়তে থাকে সূর্যের চোখ রাঙানিও ততো বাড়তে থাকে। গতকাল শনিবার বেলা ৩টায় চুয়াডাঙ্গা সর্বোচ্চ তাপমাত্র ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে । এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৪১ শতাংশ।
চলতি এ মৌসুমের শুরু থেকে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড হয়ে আসছে এই জেলায়। একটানা গতকাল ১৬ দিন তীব্র থেকে অতি তীব্র তাপদাহে হাসপাতালে বেড়েই চলেছে জ্বর, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা।

তীব্র রোদের তাপের কারণে শ্রমিক, দিনমজুর, রিকশা-ভ্যান চালকরা কাজ করতে না পেরে অলস সময়ও পার করছেন। একটু প্রশান্তির খোঁজে গাছের ছায়া ও ঠাণ্ডা পরিবেশে স্বস্তি খুঁজছে স্বল্প আয়ের মানুষরা। বেলা বাড়ার সাথে সাথে রাস্তাঘাটে লোকজনের চলাচল সীমিত হয়ে পড়ছে। আবার অনেকে জরুরি প্রয়োজন ও জীবন-জীবিকার তাগিদে প্রচণ্ড তাপদাহ উপেক্ষা করে কাজে বের হচ্ছেন। চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণীর আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ইনচার্জ জামিনুর রহমান জানান, গত ১৬ দিন ধরে চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বিরাজ করছে। আজ ২৭ এপ্রিল শনিবার বেলা ৩টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।

ঈশ্বরদীতে বেঁকে গেছে রেলপথ
ঈশ্বরদী (পাবনা) সংবাদদাতা জানান, পাবনার ঈশ্বরদীতে অতি তীব্র তাপপ্রবাহে রেললাইন বেঁকে যাচ্ছে এবং সড়কের পিচ গলে যাচ্ছে। টানা ১৫ দিনের তাপপ্রবাহে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি থেকে ৪২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করছে। ঈশ্বরদী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের সহকারী পর্যবেক্ষক নাজমুল হক রঞ্জন বলেন, গতকাল শনিবার বেলা ৩টায় ঈশ্বরদীতে ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। তবে গত শুক্রবার চলতি মৌসুমে ঈশ্বরদীর সর্বোচ্চ ৪২.৪ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।
টানা তাপদাহে ঈশ্বরদীর জনজীবনে স্থবিরতা নেমে এসেছে। প্রয়োজন ছাড়া মানুষ বাড়ি থেকে বের হচ্ছে না। তীব্র তাপপ্রবাহে সবচেয়ে বিপদে পড়েছেন নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ। রোদের তীব্রতায় পিচঢালা সড়ক থেকে উষ্ণ তাপ ছড়িয়ে পড়ছে মানুষের চোখেমুখে।

ঈশ্বরদী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা যায়, গত ১৫ দিন ধরে ঈশ্বরদীতে তাপপ্রবাহ বয়ে চলেছে। এর মধ্যে ১৩-১৬ এপ্রিল পর্যন্ত মাঝারি তাপপ্রবাহ বিরাজমান ছিল। ১৭ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত তীব্র ও অতি তীব্র তাপপ্রবাহ বিরাজমান রয়েছে।
ঈশ্বরদী আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, শনিবার বেলা ৩টায় দিনের তাপমাত্রায় ৪১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। অপর দিকে তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে ঈশ্বরদীতে বেঁকে যাচ্ছে রেললাইন। গত বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) ঈশ্বরদী-রাজশাহী রেলরুটের ঈশ্বরদী বাইপাস স্টেশনের অদূরে রেললাইনের পাত বেঁকে যায়। প্রায় দুই ঘণ্টা রেললাইনের ওপর পানি ঢেলে তাপমাত্রা কমিয়ে পাত সোজা করার পর ট্রেন চলাচল শুরু হয়।
পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের প্রকৌশলী বীরবল মণ্ডল বলেন, লোহা অতিরিক্ত তাপে সম্প্রসারিত হয়। সেজন্য তাপমাত্রা বেশি হলে রেললাইন সম্প্রসারিত হয়ে বেঁকে যেতে পারে। অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে রেললাইন যেন সম্প্রসারিত হতে না পারে সেজন্য আমরা সবসময় দেখভাল করি।

কক্সবাজারে সমুদ্রসৈকতে পর্যটকের মৃত্যু
কক্সবাজার অফিস জানায়, কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে প্রচণ্ড গরমে মোবাইল ফোনে কথা বলার সময় এক পর্যটকের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার সময় কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানান সাগরে গোসলরত পর্যটকদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত সী সেইফ লাইফ গার্ডের সুপারভাইজার মো: ওসমান গণি। পর্যটক মতিউর রহমান (৪০) কুমিল্লা জেলার বুড়িচং এলাকার বাসিন্দা।
গুরুদাসপুর (নাটোর) সংবাদদাতা জানান, নাটোরের গুরুদাসপুরে চড়ক পূজা উদযাপনের সময় সঞ্জয় ঘোষ ওরফে সঞ্জিত (৪৭) নামের এক যুবক হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় চড়কের রশি ধরে ঘুরানোর সময় সঞ্জিত অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে স্থানীয়রা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন। সঞ্জয় ঘোষ উপজেলার ধারাবারিষা ইউনিয়নের সিধুলী গ্রামের ঘোষপাড়া মহল্লার সুদর্শন ঘোষের ছেলে।
স্থানীয় ও মেলা কমিটি সূত্রে জানা যায়, গুরুদাসপুরে দুই দিনব্যাপী চড়ক পূজা ও বউ মেলার আয়োজন করেছে। তারই ধারাবাহিকতায় গতকাল শুক্রবার চড়ক পূজা চলছিল। ওই পূজোতে সঞ্জিতসহ তিন চারজন ছেলে চড়ক ঘুরাতে থাকে। ঘুরানোর একপর্যায়ে সঞ্জিত মাথা ঘুরে পড়ে যায়।

ধারাবারিষা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন মাস্টার জানান, ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। নিহত সঞ্জিতের পরিবারের সাথে কথা বলে সৎকারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
লালপুর (নাটোর) সংবাদদাতা জানান, নাটোরের লালপুরে চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২.৪ ডিগ্রিতে পৌঁছেছে। গত শুক্রবার ২৬ এপ্রিল বেলা ৩টায় ঈশ্বরদী আবহাওয়া অফিস এই তাপমাত্রা রেকর্ড করে। গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায় ছিল ৪২.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। লালপুরে গতকালকের তাপমাত্রা ছিল ৪১.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঈশ্বরদী আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন এই তথ্য নিশ্চিত করেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জে গত কয়েক দিন ধরেই তাপমাত্রার পারদ ৪২ ডিগ্রি ছুঁয়ে যাচ্ছে। মাঝ আকাশে সূর্য আসার আগেই গনগনে তাপে যেন বিভীষিকাময় পরিবেশ বিরাজ করছে। সর্বত্র বৃষ্টির জন্য হাহাকার যোগ করেছে অস্থিরতার নতুন মাত্রা। প্রতিদিন জেলার আনাচে-কানাচে অনুষ্ঠিত হচ্ছে সালাতুল ইসতিসকা। অনেক এলাকায় একই স্থানে লাগাতার এই নামায অনুষ্ঠিত হবার খবর পাওয়া গেছে।
নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া মানুষের চলাচল হয়ে পড়েছে একেবারেই সীমিত। খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষের কষ্টের শেষ নেই।। দুর্যোগের মতো করে মানুষের ঘরে ঘরে অতি তাপজনিত নানা রোগ-বালাই ছড়িয়ে পড়েছে। জেলা হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতেও রোগীর ভিড়ে ঠাঁই নেই অবস্থা। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে অনেক বেশি। বেড়ে গেছে মওসুমী রোগবালাই।
জেলা সিভিল সার্জন ডা: মাহমুদুর রশিদ জানান, উচ্চ তাপমাত্রার সম্ভাব্য ক্ষতি বিষয়ে ব্যাপকভাবে জনসচেতনতা বার্তা প্রচার করা হচ্ছে। প্রয়োজন ছাড়া মানুষ যাতে ঘরের বাইরে বের না হয় সে বিষয়ে সরকারি প্রচারণা চালানো হচ্ছে। শিশু ও বয়ষ্কদের জন্য পরিস্থিতিকে অ্যালারমিং উল্লেখ করে তিনি জানান, সব ধরনের পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুতি রাখা হচ্ছে।

তীব্র তাপদহে রাজবাড়ীতে পানির সঙ্কট
রাজবাড়ী প্রতিনিধি জানান, সারা দেশের ন্যায় রাজবাড়ীতেও চলছে তীব্র তাপপ্রবাহ। মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রায় রাজবাড়ীর জনজীবনে নেমে এসেছে বিপর্যয়। একদিকে তীব্র তাপদাহে পুড়ছে জেলার মানুষ অন্য দিকে নতুন করে প্রায় সব উপজেলায় দেখা দিয়েছে তীব্র পানি সঙ্কট। এতে যেমন বিপর্যস্ত হচ্ছে জনজীবন, তেমনি ব্যাহত হচ্ছে কৃষি উৎপাদন।
জানা গেছে, তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে খরায় পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। ফলে নলকূপে (টিউবওয়েল) পানি উঠছে না। পানির অভাবে গৃহস্থালী কাজকর্ম যেমন ব্যাহত হচ্ছে তেমনি জমিতে সেচ দিতে পারছে না কৃষক। সেচের অভাবে নষ্ট হচ্ছে ফসলাদি।

রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দির তাপসী বিশ্বাসের ৬ সদস্যের পরিবার। নিজের নলকূপ থাকলেও বেশ কয়েক দিন ধরে তাতে পানি উঠছে না। ফলে সীমাহীন কষ্টে ভুগছেন তার পরিবারের সদস্যরা।
জানা গেছে, শুধু তাপসী বিশ্বাসের পরিবারই নয়। পানির জন্য এমন চিত্র রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দির সাতটি ইউনিয়নের হাজার হাজার পরিবারের। তীব্র তাপপ্রবাহ এবং শুষ্ক মৌসুমে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় এই ভোগান্তি বলে জানিয়েছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর। বালিয়াকান্দি উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, ভৌগোলিক কারণে বৃহত্তর ফরিদপুরের মধ্যে বালিয়াকান্দি উপজেলাটি ভিন্ন। আশপাশের তুলনায় এই অঞ্চলের ভূগর্ভস্থ স্তর বেশ নি¤œমুখী। যে কারণে প্রতি বছর পানির স্তর ৮ থেকে ১০ ইঞ্চি নিচে নেমে যাচ্ছে। বালিয়াকান্দিতে মোট পরিবারের সংখ্যা ৫০ হাজার। সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী পাঁচটি পরিবারের জন্য কমপক্ষে একটি নলকূপ থাকা জরুরি। সে অনুযায়ী বালিয়াকান্দিতে প্রয়োজন প্রায় ১০ হাজার নলকূপ। কিন্তু সরকারিভাবে ২০২২ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ১৬০টি সাবমারসিবল পাম্প ও ২০১৯ সাল থেকে ৫২০টি তারা টিউবওয়েল বসানো হয়েছে। যা চাহিদার তুলনায় খুবই সামান্য।
রাজবাড়ী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু জাকারিয়া বলেন, গ্রীষ্মকালে খরায় পানির স্তর নিচে নেমে যায়। ফলে টিউবওয়েল থেকে পানি ওঠে না। আমাদের এ অঞ্চলে বেশিরভাগ পানির স্তর ২৫ ফুটের নিচে নেমে গেছে। এই সমস্যা সমাধানের জন্য আমাদের বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement