ইসরাইলি বাহিনীর ছেড়ে যাওয়া খান ইউনুসের গণকবরে ৫০ লাশ
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ২২ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০৫
- হামাস প্রধানের সাথে বৈঠকে ঐক্যের আহ্বান এরদোগানের
- যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে ইসরাইলকে ২৬ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা প্যাকেজ পাস
- ইসরাইলি সেনা ইউনিটের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজার খান ইউনুস শহরে একটি গণকবরে ৫০ জনের লাশেরর সন্ধান পাওয়া গেছে। অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডটির খান ইউনুসে নাসের মেডিক্যাল কমপ্লেক্সে এই গণকবর শনাক্ত করা হয়। চলতি মাসের শুরুতে ইসরাইলি বাহিনী এ শহরটি ছেড়ে যায়। গতকাল রোববার এ তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।
আলজাজিরা বলছে, ইসরাইলি সামরিক বাহিনী গত ৭ এপ্রিল গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খান ইউনুস থেকে তাদের সৈন্য প্রত্যাহার করে। আর এর পরই সেখানে এই গণকবর শনাক্ত হলো। কয়েক মাসের নিরলস ইসরাইলি বোমাবর্ষণ এবং ভারী লড়াইয়ের পরে গাজার এই শহরের বেশির ভাগ অংশ এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
রাফাতে নিহতদের বেশির ভাগই শিশু : এ দিকে গাজা উপত্যকার সর্বদক্ষিণের শহর রাফাহর একটি বাড়িতে ইসরাইলি বাহিনীর বিমান হামলায় একই পরিবারের অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। নিহতদের মধ্যে ১৩টিই শিশু। বাকি দু’জন নারী সদস্য। গত শুক্রবার রাতে রাফাহর পশ্চিমে তাল আস-সুলতান এলাকায় ওই হামলা চালানো হয়। ওই ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের দাফন শনিবার সম্পন্ন হয়েছে। গাজার সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ এ তথ্য জানায়।
হামাস প্রধানের সাথে বৈঠক এরদোগানের : তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তৈয়ব এরদোগান গাজায় ইসরাইলি হামলা মোকাবেলায় ফিলিস্তিনিদের ঐক্যের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছেন। তুরস্ক সফররত ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের প্রধান ইসমাইল হানিয়ার সাথে কয়েক ঘণ্টার বৈঠক শেষে এ কথা বলেন এরদোগান। স্থানীয় সময় শনিবার ইস্তাম্বুলে এরদোগান ও হানিয়ার মধ্যে কয়েক ঘণ্টার বৈঠক হয়েছে বলে তুরস্কের প্রেসিডেন্টের দফতর জানিয়েছে। এরদোগান বলেন, ইসরাইলের প্রতি সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিক্রিয়া দেখানো এবং সম্ভাব্য বিজয়ের পথ শুধু ঐক্য ও অখণ্ডতার মাধ্যমে অর্জিত হতে পারে। গাজায় চলমান ইসরাইলি আগ্রাসনের মধ্যে ফিলিস্তিনিদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান এরদোগান। গত ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরুর পর থেকে তুরস্ক সরকার বারবার এর নিন্দা জানিয়েছে। হামাসের রাজনৈতিক শাখার প্রধান হানিয়া। তুরস্ক সফরে তার সাথে হামাসের একটি প্রতিনিধিদল রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে ইউক্রেন-ইসরাইল সহায়তা প্যাকেজ পাস : রয়টার্স জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে ইউক্রেন, ইসরাইল ও তাইওয়ানকে সামরিক সহায়তা দেয়ার ৯৫ বিলিয়ন ডলারের প্যাকেজ অনুমোদন পেয়েছে। শনিবার প্রতিনিধি পরিষদের রিপাবলিকান কট্টরপন্থীদের তীব্র আপত্তি সত্ত্বেও বিস্তৃত দ্বিদলীয় সমর্থনে প্যাকেজটি অনুমোদন পায়। প্যাকেজটি এখন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের উচ্চ কক্ষ ডেমোক্র্যাট সংখ্যাগরিষ্ঠ সিনেটে পাঠানো হয়েছে। প্রতিনিধি পরিষদের যে রিপাবলিকান কট্টরপন্থীরা প্যাকেজটির বিরোধিতা করছিলেন তাদের মধ্যে হাউজ স্পিকার মাইক জনসনও ছিলেন। তিনি প্রস্তাবিত আইনি প্যাকেজটি আটকে রেখেছিলেন।
এ দিকে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, মার্কিন হাউজ অব রিপ্রেজেনটেটিভ ইউক্রেনকে সহায়তার অনুমোদন দিলে সঙ্ঘাতে ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি আরো বাড়বে। এর আগে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও সিনেটের রিপাবলিকান নেতা মিচ ম্যাককনেল প্যাকেজটি ভোটে দেয়ার জন্য স্পিকার জনসনের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছিলেন। প্রতিনিধি পরিষদে পাস হওয়া বিলটি নিয়ে মঙ্গলবার থেকে সিনেটে আলোচনা শুরু হবে। ওই দিনই এর ওপর কিছু প্রাথমিক ভোটাভুটি হবে। পরে আগামী সপ্তাহের কোনো একসময় চূড়ান্ত ভোট হবে। সিনেটে বিলটি অনুমোদন পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এরপর সেটি যাবে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের কাছে। বাইডেন সই করলেই প্যাকেজটি আইনে পরিণত হবে।
পশ্চিমতীরে ইসরাইলি হামলায় ১৪ ফিলিস্তিনি নিহত : রয়টার্স আরো জানায়, ফিলিস্তিনের পশ্চিমতীরে ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় ১৪ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। একই সময় ইহুদি বসতিস্থাপনকারীদের পৃথক হামলায় এক ফিলিস্তিনি অ্যাম্বুলেন্স চালকও নিহত হয়। শুক্রবার ভোররাত থেকে পশ্চিমতীরের তুলকার্ম শহরের নিকটবর্তী নুর শামস এলাকায় ইসরাইলি বাহিনী বিস্তৃত এক অভিযান শুরু করে। সেখানে সশস্ত্র ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের সাথে তাদের শুরু হওয়া লড়াই শনিবার পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।
১৯৪৮ সালে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সময় সংঘটিত যুদ্ধে ঘরবাড়ি হারিয়ে উদ্বাস্তু হয়ে পড়া ফিলিস্তিনিরা নুর শামস এলাকায় আশ্রয় নিয়েছিল, তাদের বংশধররাও এখন এলাকাটিতে বসবাস করছে। এখানে ইসরাইলের সামরিক যানগুলো জড়ো হওয়ার পরপরই ব্যাপক গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়। এ সময় নুর শামস এলাকায় অন্তত তিনটি ড্রোন উড়তে দেখা যায়। বিভিন্ন ফিলিস্তিনি উপদলীয় বাহিনী নিয়ে গঠিত তুলকার্ম ব্রিগেডস জানিয়েছে, শনিবার তাদের যোদ্ধারা ইসরাইলি বাহিনীর সাথে গুলিবিনিময় করেছে।
গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর নিয়মিত অভিযানে পশ্চিমতীরে কয়েক হাজার ফিলিস্তিনি গ্রেফতার ও কয়েক শ’ নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে নিরীহ বেসামরিকরাও রয়েছে। শনিবার ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইসরাইলি বাহিনীর অভিযান চলাকালে অন্তত ১৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে মাত্র দু’জনকে বন্দুকধারী হিসেবে শনাক্ত করেছেন ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা। নিহত অন্যদের মধ্যে ১৬ বছর বয়সী এক কিশোর রয়েছে। শুক্রবার আরেকজন নিহত হয়েছিল।
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পৃথক আরেক ঘটনায় নাবলুস শহরের দক্ষিণে আল-সাবিয়া গ্রামের কাছে ইসরাইলিদের গুলিতে ৫০ বছর বয়সী এক অ্যাম্বুলেন্স চালক নিহত হয়। ইহুদি বসতিস্থাপনকারীরা ওই গ্রামটিতে হামলা চালালে অনেকে আহত হয়। এই অ্যাম্বুলেন্স চালক আহতদের নিয়ে যাওয়ার চেষ্টার সময় ইসরাইলিরা তাকে গুলি করে হত্যা করে। বসতিস্থাপনকারীরা তাকে গুলি করেছে কি না, তা তাৎক্ষণিকভাবে পরিষ্কার হয়নি। এ বিষয়ে ইসরাইলি সামরিক বাহিনীও কিছু জানায়নি।
ইসরাইলি সেনা ইউনিটের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেবে যুক্তরাষ্ট্র
এ দিকে এক্সিউস ও আলজাজিরা জানায়, মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে দখলদার ইসরাইলের সেনাবাহিনীর একটি ইউনিটের ওপর নিষোধাজ্ঞা দিতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন আগামী কয়েক দিনের মধ্যে নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দেবেন। ‘নেতজা ইয়েহুদা’ নামের এই ইউনিটটি ফিলিস্তিনের দখলকৃত পশ্চিমতীরে মোতায়েন রয়েছে। পশ্চিমতীরে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বহু অভিযোগ রয়েছে নেতজা ইয়েহুদার বিরুদ্ধে। যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম এক্সিউস শনিবার দেশটির এক কর্মকর্তার বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে। নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর এ ইউনিটটি যুক্তরাষ্ট্রের কোনো আর্থিক সহায়তা এবং প্রশিক্ষণ সুবিধা পাবে না। আলজাজিরা জানিয়েছে, উগ্রবাদী-অবৈধ বসতিস্থাপনকারী যেসব ইসরাইলি সেনাবাহিনীর অন্যান্য ইউনিটে যোগ দেয়ার সুযোগ পায় না, তারাই ‘নেতজা ইয়েহুদাতে’ যোগ দেয়। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা বিষয়ক সংস্থা প্রোপাবলিকা গত সপ্তাহে জানায়, মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি প্যানেল কয়েক মাস আগে দখলদার ইসরাইলের পুলিশ ও সেনাবাহিনীর নির্দিষ্ট ইউনিটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য মতামত দেয়। কিন্তু পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন কোনো ব্যবস্থা নেননি। এ খবরটি প্রকাশের পরই ইসরাইলি সেনা ইউনিটের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথা শোনা যাচ্ছে।
নিষেধাজ্ঞা ঠেকাতে সব কিছু করা হবে : ইসরাইলের এলিট ফোর্স ‘নেতজা ইয়েহুদা ব্যাটালিয়ন’-এর ওপর যুক্তরাষ্ট্র স্যাংশন দিতে পারে- এমন খবরে ক্ষিপ্ত হয়েছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। তিনি বলেছেন, এমন কোনো উদ্যোগকে প্রতিরোধ করতে তার সরকার সর্বশক্তি দিয়ে লড়বে। পশ্চিমতীরে ফিলিস্তিনের ওপর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ইসরাইলের এই ব্যাটালিয়নের ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছিল। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে তাদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের খবরও প্রচারিত হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আইডএফের এই এলিট ব্যাটালিয়নের বিরুদ্ধে বাইডেন প্রশাসন স্যাংশন আরোপ করতে পারে বলেও বিভিন্ন মহলে আলোচিত হয়। শনিবার রাতে এক বিবৃতিতে নেতানিয়াহু বলেন, কোনো অবস্থাতেই ইসরাইলি ডিফেন্স ফোর্স (আইডিএফ) বিরুদ্ধে স্যাংশন আরোপ করা যাবে না। আমাদের সৈন্যরা সন্ত্রাসবাদী দানবদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। এমন একটা বাহিনীর বিরুদ্ধে স্যাংশন আরোপ করা হলে সেটা হবে একটা অবাস্তব ও নীচু মানসিকতার কাজ। তিনি আরো বলেন, আমার নেতৃত্বে যে সরকার কাজ করছে, আমরা সবাই মিলে সর্বাত্মকভাবে সম্ভাব্য এমন পদক্ষেপের বিরুদ্ধে কাজ করব।
নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে বিক্ষোভে উত্তাল ইসরাইল : হামাসের হাতে আটক থাকা বেশির ভাগ বন্দীকেই উদ্ধার করতে পারেনি ইসরাইল। এ পরিস্থিতিতে নতুন নির্বাচন আয়োজন ও বন্দীদের ফিরিয়ে আনতে সরকারের পক্ষ থেকে আরো ব্যবস্থা নেয়ার দাবিতে ইসরাইলের রাস্তায় বিক্ষোভ করেছেন হাজার হাজার মানুষ। গতকাল রোববার রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে সর্বশেষ দফা বিক্ষোভে নতুন নির্বাচনের দাবিতে এবং গাজায় আটক বন্দীদের ঘরে ফিরিয়ে আনতে সরকারের পক্ষ থেকে আরো পদক্ষেপের দাবিতে শনিবার রাস্তায় নামে হাজার হাজার ইসরাইলি বিক্ষোভকারী। গাজায় প্রায় সাত মাস ধরে ইসরাইল আগ্রাসন চালাচ্ছে এবং হামাসের হাতে এখনো বন্দী থাকা ১৩৩ ইসরাইলির বিষয়ে নেতানিয়াহু সরকারের দৃষ্টিভঙ্গির ওপর ক্রমবর্ধমান ক্ষোভের মধ্যে ইসরাইলজুড়ে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা