সারা দেশে হিট অ্যালার্ট জারি
- হামিম উল কবির
- ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:৫০, আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৪:৫২
- তাপ প্রবাহে পুড়ছে দেশ
- গরমে ঘামে অস্বস্তিতে মানুষ
- সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায় ৪১.৫ ডিগ্রি
রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে মাঝারি থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে আগামী ৭২ ঘণ্টা বা তিন দিন ধরে এই তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকবে জানিয়ে হিট অ্যালার্ট জারি করেছে আবহাওয়া অধিদফতর।
গতকাল শুক্রবার আবহাওয়া অধিদফতরের উপপরিচালকের পক্ষে আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এই এলাট বা সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, দেশের ওপর দিয়ে চলমান তাপপ্রবাহ অ গতকাল শুক্রবার থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। শুধু তাই নয়, তাপমাত্রা আরো বাড়তে পারে। পাশাপাশি জলীয়বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বাড়তে পারে। এ ছাড়া আগামী তিন দিনের আবহাওয়া পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, বাগেরহাট, যশোর, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়ার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগসহ দিনাজপুর, চাঁদপুর, খুলনা, সাতক্ষীরা, বরিশাল ও পটুয়াখালীর ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এই তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে।
মৌসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রায় পুড়ছে দেশ। বিশেষ করে দেশের কয়েকটি অঞ্চলে বিরাজ করছে তীব্র তাপমাত্রা। চলতি এ গরম মৌসুমে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ডটিও গতকালই ঘটে গেল। খুলনা বিভাগের চুয়াডাঙ্গায় গতকাল ৪১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। উচ্চ তাপমাত্রার সাথে রয়েছে অস্বস্তিকর জলীয় বাষ্প। তীব্র তাপ প্রবাহের কারণে খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের কিয়দংশে বাতাসে যেন আগুনের হলকা বয়ে যাচ্ছে। খোলা আকাশে হেঁটে গেলে যে বাতাস মুখে লাগে তাতে মনে হয় কেউ যেন আগুনের গোলা ঢেলে দিয়েছে। মুখমণ্ডল পুড়ে যাওয়ার অবস্থা হচ্ছে। খোলা আকাশে বেশিক্ষণ ঘোরাফেরা করলে মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়ার অবস্থা হয় বলে ওই অঞ্চলের সংবাদদাতারা জানিয়েছেন। তীব্র এই গরমে খেতের ফসল পুড়ে যাচ্ছে এমনকি অযত্নে-অবহেলায় বেড়ে ওঠা লতানো ঘাসগুলোও মরে যাচ্ছে। চলতি এই গরম আরো কয়েক দিন অব্যাহত থাকলেও ধানসহ বিভিন্ন ফসলের ফলন কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষক। আবহাওয়া অফিস অবশ্য জানিয়েছে, আগামী পাঁচ দিনের আগে তীব্র এই গরম অবস্থার পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
গত কয়েক দিন থেকে বাংলাদেশের সর্বত্র জলীয় বাষ্পের পরিমাণ একটু বেশি হওয়ায় শরীরে অনেক ঘাম হচ্ছে। ঘামে শরীর থেকে অনেক পানি বেরিয়ে গিয়ে মানুষকে দুর্বল করে দিচ্ছে। এ সময়ে পানি পানের পরিমাণ বাড়াতে না পারলে হিটস্ট্রোকের শিকার মানুষের সংখ্যা বাড়তেই থাকবে। একই সাথে বিশুদ্ধ পানির অভাবে ডায়রিয়া ও আমাশয়ে ভুগছে মানুষ। সব মিলিয়ে এই গরম দেশের কয়েকটি অঞ্চল ছাড়া পুরো দেশের মানুষ অস্বস্তিকর কষ্ট পাচ্ছে। আজ শনিবার সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রাজশাহী, পাবনা, টাঙ্গাইল জেলাসহ খুলনা বিভাগের ওপর দিয়ে তীব্র তাপ প্রবাহ (৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে) এবং চাঁদপুর, মৌলভীবাজারসহ ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগের অবশিষ্টাংশে এবং বরিশাল বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। তা ছাড়া কুমিল্লা ও কিশোরগঞ্জ অঞ্চলসহ ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের দুই-এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা ও ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্র বৃষ্টি হতে পারে। কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলাবৃষ্টিও হতে পারে।
গতকাল খুলনা বিভাগের প্রায় সর্বত্রই তীব্র তাপ প্রবাহের কবলে ছিল। চুয়াডাঙ্গায় ৪১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বিরাজ করলেও যশোরের তাপমাত্রা ছিল ৪১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, মংলায় ছিল ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, খুলনায় ৪০.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, কুমারখালীতে ৪০.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সাতক্ষীরায় ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস, রাজশাহী ও ঈশ্বরদীতে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। ঢাকা বিভাগের মধ্যে টাঙ্গাইলে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস, গোপালগঞ্জে ৩৯.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ফরিদপুরে ৩৯.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ঢাকায় ৩৮.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, মাদারীপুরে ৩৮.২ সেলসিয়াস তাপমাত্রা বিরাজ করছিল।
কেন এত চরম গরম পড়েছে? এ প্রশ্নের জবাবে আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ তারিফুল নেওয়াজ কবির জানিয়েছেন, প্রথমত, বাংলাদেশে এই সম্যাটা সব সময়ই গরম থাকে। এ সময়ে সূর্য মাথার ওপর থেকে কিরণ দিয়ে থাকে বলে সূর্যের সর্বোচ্চ কিরণ পেয়ে থাকে বাংলাদেশ। এ সময়ের গরম কমিয়ে রাখতে পারে প্রচুর বৃষ্টিপাত হলে এবং একই সাথে ঝড় হলে। কিন্তু বেশ কিছুদিন যাবৎ দেশব্যাপী বৃষ্টির পরিমাণ একেবারেই কমে গেছে। সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগ ছাড়া অন্য কোথাও বৃষ্টিই হচ্ছে না। অন্য দিকে ভৌগোলিক অবস্থান ও ভূপ্রকৃতির কারণে খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের কিছু অংশ এ সময়ে অনেক গরম পড়ে থাকে। শীতে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে কোল্ডওয়েভ তা শৈত্যপ্রবাহ হলে এর খানিকটা আঁচ বাংলাদেশে খুলনা ও রাজশাহী বিভাগে লেগে থাকে। তেমনি গরমে পশ্চিমবঙ্গে হিটওয়েভ হলে এরও আঁচ বাংলাদেশের খুলনা ও রাজশাহী বিভাগে লেগে থাকে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার ভৌগোলিক কারণে খুলনা ও রাজশাহী বিভাগে বছরের এই সময়ে বৃষ্টি হয় না বললেই চলে। এর পরিণতিতে তাপমাত্রা বাড়তে বাড়তে এই অঞ্চলে হিটওয়েভ বা তাপপ্রবাহের সৃষ্টি করে থাকে। ভারী বৃষ্টি হলেই এই অঞ্চলের তাপপ্রবাহ কমে যাবে। তবে কখন বৃষ্টি হবে তা বলা যাচ্ছে না।
চুয়াডাঙ্গায় মাইকিং করে হিট ওয়েভ জারি
চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি জানান, চুয়াডাঙ্গায় অব্যাহত রয়েছে তীব্র তাপদাহ। টানা চারদিন ধরে ৪০ ডিগ্রির উপরে তাপমাত্রায় পুড়ছে চুয়াডাঙ্গা। টানা তাপদাহে অতিষ্ঠ সীমান্তবর্তী জেলার মানুষ। অসহ্য গরমে ওষ্ঠাগত হয়ে উঠেছে প্রাণিকুল।
শুক্রবার বিকেল ৩টায় চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে বৃহস্পতিবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
বুধবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং মঙ্গলবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তীব্র তাপদাহে হিট ওয়েভ জারি করেছে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসন। মাইকিং করে খুব
প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বের নাহতে বলা হচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রান্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান বলেন, তীব্র তাপদাহ কিছুদিন আরো অব্যাহত থাকতে পারে। তবে আপাতত বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। তিনি আরো বলেন, প্রতিদিন তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাবে। এখনো পর্যন্ত কোনো বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত তাপমাত্রা কমবে না। ২০২৩ সালে ১৯ ও ২০ এপ্রিল জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ বছর ৪৩ ডিগ্রি ছাড়িয়ে যেতে পারে।
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমা জানান, চুয়াডাঙ্গাতে তাপমাত্রা বাড়ার কারণে আবহাওয়া অধিদফতর ও স্বাস্থ্য বিভাগের পরামর্শ ক্রমে চুয়াডাঙ্গাতে বৃহস্পতিবার ৭২ ঘণ্টার জন্য হিট এলার্ট জারি করা হয়েছে। চুয়াডাঙ্গার চারটি উপজেলায় তথ্য অফিসের মাধ্যমে জনগণকে সচেতন করার জন্য মাইকিং করা হচ্ছে।
পুড়ছে কৃষকের স্বপ্ন
বেড়া (পাবনা) সংবাদদাতা জানান, দুঃসহ গরম, প্রচণ্ড তাপদাহে ক্ষেতে পুড়ছে কৃষকের স্বপ্ন, মানুষ ও পশু-পাখির প্রাণ ওষ্ঠাগত। জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে। গেল তিন- চারদিনে অতিরিক্ত গরম ও তাপদাহে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
আবহাওয়ায় বিরাজ করছে মরর রুক্ষতা। বইছে লু হাওয়া। প্রচণ্ড গরম ও তাপদাহে খেটে খাওয়া মানুষে দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। এদিকে ভুগর্ভস্থ পানির স্তর দ্রুত নিচে নেমে যাচ্ছে। ফলে পানির সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এ অঞ্চলের হস্তচালিত নলকূপে পানি উঠছে না। সুপেয় খাবার পানির তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। বৈশাখে সূর্যের প্রখর তাপের কারণে মানুষের শরীর পুড়ে যাচ্ছে। বারবার পানি পান করলেও তৃষ্ণা মিটছে না। বেলা বাড়ার সাথে সাথে সূর্যের প্রখরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। হাটবাজার ও সড়কে মানুষের উপস্থিতি কম। প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হচ্ছে না কেউ।
বেড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ফাতেমাতুয জান্নাত বলেন, এ গরমে হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। গরমে ফাস্টফুড-জাতীয় খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। প্রয়োজনে ঘন ঘন পানি পান করা এবং প্রয়োজন ছাড়া রোদে বের না হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
ধামরাইয়ে জনজীবন বিধ্বস্ত
ধামরাই ঢাকা সংবাদদাতা জানান, ধামরাই উপজেলায় পাঁচদিন ধরে তীব্র তাপদাহে জনজীবন বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে। খেটে খাওয়া মানুষ ও শ্রমজীবীরা চরম বিপাকে পড়েছে। মানুষ প্রয়োজন ছাড়া বাইরে যাচ্ছে না। প্রচণ্ড গরমে ও তাপদাহ পরিত্রাণের জন্য মানুষ ছুটে যাচ্ছে গাছের ছায়ায়, নদীর ধারে কিংবা পুকুরের পাড়ে একটু প্রশান্তি লাভের জন্য। গরমের সাথে লু হাওয়া বইছে। এতে অসুস্থ হয়ে পড়ছে অনেকে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা