ইরানে সীমিত আকারে হামলা চালাতে পারে ইসরাইল
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০০:৪৩
- ক্ষুদ্রতম হামলার প্রতিক্রিয়া হবে বিধ্বংসী : রাইসি
- ইরানের হামলার জন্য দায়ী নেতানিয়াহু : এরদোগান
ইরানের নজিরবিহীন হামলার জবাবে দেশটিতে ‘সীমিত আকারে’ হামলা চালাতে পারে ইসরাইল। এমনটাই মনে করছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির একজন জ্যেষ্ঠ প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং এ সম্পর্কিত গোয়েন্দা তথ্যের বিষয়ে জানাশোনা আছে, এমন একটি সূত্র সিএনএনকে তেল আবিবের এ মনোভাবের কথা জানিয়েছেন। দ্বিতীয় সূত্রটি বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তথ্যানুযায়ী, ইরানের অভ্যন্তরে ছোট ও সীমিত আকারে হামলা চালানোর চিন্তাভাবনা করছে ইসরাইল। দেশটি মনে করছে, ইরানের হামলার পরিপ্রেক্ষিতে তাদের এক ধরনের সামরিক শক্তি প্রয়োগ করেই জবাব দেয়া দরকার। সিএনএন, বিবিসি, এএফপি ও আনাদোলু।
অন্য দিকে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি বলেছেন, ইসরাইলের ক্ষুদ্রতম আক্রমণের জবাব হবে ‘ব্যাপক এবং বিধ্বংসী’। মধ্যপ্রাচ্যে একটি পূর্ণমাত্রার যুদ্ধের ক্রমাগত হুমকির বিষয়ে বৈশ্বিক উদ্বেগের মধ্যেই গতকাল বুধবার ইরানের বার্ষিক সেনা কুচকাওয়াজে বক্তৃতা দেয়ার সময় রাইসি এ সতর্কবার্তা পুনর্ব্যক্ত করেন। এ দিকে ইসরাইলে ইরানের হামলার সম্ভাব্য প্রতিশোধমূলক হামলা নিয়ে উদ্বেগে বিশ্ব।
অন্য দিকে ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বুধবার ইসরাইল সফর থেকে ফিরে জানিয়েছেন যে, সব পক্ষ থেকে সংযত থাকার আহ্বান জানানো সত্ত্বেও ইসরাইল ইরানের হামলার প্রতিক্রিয়া জানানোর প্রতিশ্রুতি নিয়েছে। তিনি বলেছেন ইসরাইল প্রতিশোধ নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
হামলার বিষয়ে জ্ঞাত মার্কিন প্রশাসনের জ্যেষ্ঠ ওই কর্মকর্তা বলেন, নিজেদের পরিকল্পনা কী এবং সেটি কখন ঘটতে যাচ্ছে, সে বিষয়ে দাফতরিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে এখনো কোনো সতর্কবার্তা দেয়নি ইসরাইল। এই প্রশাসনিক কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘আমরা আশা করব, তারা (ইসরাইল) আমাদের এক ধরনের সতর্কবার্তা দেবে; যাতে আমাদের সেনাদের সুরক্ষায় আমরা প্রস্তুত থাকি। এটি শুধু সামরিক বিষয়ে নয়; বরং পুরো অঞ্চলে আমাদের কূটনৈতিক মিশনের জন্যও।’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসনের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘তবে এই নিশ্চয়তা নেই যে প্রস্তুতি নিতে তারা (ইসরাইল) আমাদের আগাম বার্তা দেবে। আর তারাই জানে, কখন আমাদের আগাম বার্তা দেবে। তারা যা করতে যাচ্ছে, সে বিষয়ে আমরা সম্ভবত আবারো আমাদের আপত্তির কথা জানাব।’ এই কর্মকর্তা আরো বলেন, যদি ইসরাইল পাল্টা হামলা না চালায়, উত্তেজনা কমে আসবে এবং পরিস্থিতি আগের অবস্থায় ফিরবে বলে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাসী। তবে তিনি বলেন, ‘এখন যেকোনো অতিরিক্ত পদক্ষেপ অন্যান্য পাল্টাপাল্টি ঘটনার সম্ভাবনার দুয়ার খুলবে; যার কয়েকটি খুবই ভয়ংকর।’
১ এপ্রিল সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেটে হামলা চালায় ইসরাইল। এতে সেখানে থাকা ইরানের কয়েকজন শীর্ষ সেনা কর্মকর্তা নিহত হন। ওই হামলার জবাবে গত শনিবার রাতে ইসরাইলকে লক্ষ্য করে তিন শতাধিক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ড কোর (আইআরজিসি)। এরইমধ্যে ইরানের হামলার পাল্টা জবাব দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসরাইলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা। তবে কোথায় ও কীভাবে হামলা চালানো হবে, এ নিয়ে এখনো সিদ্ধান্ত পৌঁছাতে পারেনি তারা। গতকাল বুধবার এ নিয়ে ষষ্ঠবারের মতো বসার কথা মন্ত্রিসভার।
নেতানিয়াহুকে দায়ী করলেন এরদোগান : ইসরাইলের ওপর ইরানের প্রথম সরাসরি হামলার জন্য ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতানিয়াহুকে দায়ী করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তৈয়ব এরদোগান। তিনি বলেছেন, ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতানিয়াহুর কারণেই ইরান এই হামলা চালিয়েছে। টেলিভিশনে দেয়া মন্তব্যে তিনি বলেছেন, ‘গত ১৩ এপ্রিল সন্ধ্যায় আমাদের হৃদয়ে যে উত্তেজনা গ্রাস করেছিল, তার জন্য প্রধান দায়ী হলেন নেতানিয়াহু এবং তার নিষ্ঠুর প্রশাসন।’
প্রেসিডেন্ট এরদোগান বলেন, ‘যারা ইসরাইলের আগ্রাসী মনোভাব সম্পর্কে কয়েক মাস ধরে নীরব ছিল তারা ইরানের প্রতিশোধমূলক হামলার পরপরই নিন্দা জানিয়েছে। কিন্তু এই ঘটনার জন্য নেতানিয়াহুকেই প্রথমে নিন্দা করা উচিত।’ এরদোয়ান বলেন, গত ৭ অক্টোবর থেকে ইসরাইল সরকার বিভিন্নভাবে উসকানি সৃষ্টির চেষ্টা করেছে যাতে পুরো অঞ্চলকে আগুনের কুণ্ডলীতে পরিণত করা যায়। ইসরাইল সরকার দামেস্কে অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে হামলা চালিয়েছে, এই হামলার মধ্য দিয়ে তারা আন্তর্জাতিক আইন এবং ভিয়েনা কনভেনশন লঙ্ঘন করেছে এবং একে কেন্দ্র করেই ইরান-ইসরাইল সঙ্ঘাত শুরু হয়েছে।
ইসরাইলে ইরানের হামলার পর তুরস্ক গত রোববার মধ্যপ্রাচ্যে ‘উত্তেজনা নিরসনের’ আহ্বান জানায়। এ সময় আঞ্চলিক যুদ্ধ শুরুর ঝুঁকি রয়েছে বলেও সতর্ক করে দেয় দেশটি। উল্লেখ্য, সিরিয়ার রাজধানীতে তেহরানের কনস্যুলেটে সাম্প্রতিক হামলার জবাবে শনিবার গভীর রাতে তিন শতাধিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন দিয়ে ইসরাইলে হামলা চালায় ইরান। যদিও বেশির ভাগ ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্র ইসরাইলি ভূখণ্ডে পৌঁছানোর আগেই ধ্বংস করা হয়েছে বলে ইসরাইল দাবি করেছে, তার পরও উত্তেজনার আরো বৃদ্ধি হতে পারে বলে ব্যাপক উদ্বেগ রয়েছে।
যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত নয় : তবে হিজবুল্লাহ বা ইরান কেউই বর্তমানে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত নয় বলে মন্তব্য করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। এমনকি আঞ্চলিক সঙ্ঘাত সৃষ্টি হলে তা ‘কারো স্বার্থেই ভালো হবে না’ বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি। হিজবুল্লাহ বা ইরান কেউই বর্তমানে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত নয় বলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতি প্রধান মঙ্গলবার ফরাসি দৈনিক লে মন্ডে’কে বলেছেন। সপ্তাহান্তে ইসরাইলে ইরানের হামলা সম্পর্কে জোসেপ বোরেল বলেন, ‘আমাদের বেশ কয়েক দিন আগে সতর্ক করা হয়েছিল।’
জোসেপ বোরেল আরো বলেছেন, ‘আক্রমণের পর, ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমাকে বলেছিলেন- তারা শুধু সামরিক স্থাপনাগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করেছে, তিনি আমাকে বুঝিয়েছেন- এটি ছিল কেবল নিয়ন্ত্রিত প্রতিক্রিয়া। আপনি যখন ক্ষতি করতে চান, তখন আপনি এমন কোনো ড্রোন পাঠাবেন না যেটি আঘাত হানতে ছয় ঘণ্টা সময় নেয়।’ তার ভাষায়, ‘বর্তমানে, হিজবুল্লাহ বা ইরান কেউ-ই যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত নয়।’
ইইউ পররাষ্ট্র নীতির এই প্রধান জোর দিয়ে বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাজনৈতিক লক্ষ্য হলো উত্তেজনা এড়ানো। তিনি উল্লেখ করেছেন, আঞ্চলিক সঙ্ঘাত ‘কারো স্বার্থে, বিশেষ করে গাজার স্বার্থে ভালো কিছু নয়’। জোসেপ বোরেল জোর দিয়ে বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের কূটনীতি এবং ঐক্য ছাড়া অন্য কোনো ক্ষমতা নেই, যদিও জার্মানিসহ কিছু সদস্য দেশের ইসরাইলের সাথে ভালো সম্পর্ক রয়েছে। তিনি ব্যাখ্যা করেন, ‘আমেরিকানরা চাইলে অন্য উপায় ব্যবহার করতে পারে, বিশেষ করে ইসরাইলে তাদের অস্ত্র হস্তান্তরের বিষয়ে। তারা অতীতে অপরিবর্তনীয় নানা সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু আজ, আমি মনে করি, তাদের যে সুবিধা আছে তা তারা ব্যবহার করতে চায় না।’ তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্ঘাত সম্পর্কে ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে ‘স্পষ্ট এবং গভীর বিভাজন’ নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং উল্লেখ করেছেন, তাদের মধ্যে কিছু দেশ- যেমন ফ্রান্স অবস্থান পরিবর্তন করেছে এবং অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাতে শুরু করেছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা