নির্মাণাধীন ভবনের নিরাপত্তা দুর্বলতায় মরতে হচ্ছে পথচারী ও নির্মাণ শ্রমিকদের
- হামিম উল কবির
- ০৮ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০৫
নির্মাণাধীন ভবনগুলোর নিরাপত্তাব্যবস্থা না থাকায় মৃত্যু ফাঁদ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। নির্মাণাধীন ভবনের নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে প্রায় দুর্ঘটনা ঘটছে। বেশির ভাগ নির্মাণাধীন ভবনেই নিরাপত্তা বেষ্টনি থাকে না। আবার কিছু কিছু ভবনে নামকাওয়াস্তে ছালার চট ব্যবহার করা হয় যা পথচারীদের নিরাপত্তা অথবা কর্মরত শ্রমিকদের নিরাপত্তা দিতে পারছে না।
বিধি অনুসারে, নির্মাণাধীন বহুতল ভবনের চার পাশটা জাল দিয়ে ঢেকে দিতে হয় এবং একই সাথে নিরাপত্তা-মাচা তৈরি করে নিতে হয়। ওপর থেকে ইট, রড, সিমেন্টের বস্তা ইত্যাদি পড়ে গেলে যেন নিরাপত্তা মাচায় আটকে থাকে। কিন্তু নির্মাণাধীন বহুতল ভবনের মালিকপক্ষ বা নির্মাতাপ্রতিষ্ঠান বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নিরাপত্তা বেষ্টনি অথবা মাচা তৈরি করছে না। ফলে পথচারীদের জন্য এমন কি নির্মাণ শ্রমিকদের জন্য এসব ভবন বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। অনেকের মৃত্যু হচ্ছে এবং আহত হয়ে চিরকাল পঙ্গুত্ববরণ করতে হচ্ছে। কিন্তু এ ব্যাপারে রাজধানীর উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে নিয়োজিত রাজউক একেবারেই নির্বিকার।
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার নির্মাণাধীন ভবনগুলো ঘুরে দেখা গেছে, এসব ভবনে বিধি অনুযায়ী সব ধরনের নিরাপত্তাব্যবস্থা নেয়া হয় না। নির্মাণসামগ্রী যেন নিচে পড়ে না যায় সে জন্য কেউ মাচা তৈরি করলেতো জাল দিয়ে ঢেকে দেয় না। আবার কেউ এজন্য খুবই সামান্য খরচ করে যেন শুধু দেখানো যায় যে, ‘নিরাপত্তা বেষ্টনি তৈরি করা হয়েছে।’ কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এসব দিয়ে নিরাপত্তার কিছুই হয় না। যার ফলে শ্রমিক ও পথচারীদের মৃত্যু হচ্ছে। যত না মৃত্যু হচ্ছে এর চেয়ে বেশি আহত হচ্ছে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান এ ব্যাপারে বলেন, ‘ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অথবা বাংলাদেশে ন্যাশনাল বিল্ডিং কোডে (বিএনবিসি) নির্মাণাধীন ভবনের নিরাপত্তার কথা বলা হয়েছে। এই দুই বিধিমালায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা বেষ্টনি রাখার কথা বলা হয়েছে। ভবনের নকশা অনুমোদনের সময়েই নির্মাণাধীন ভবনের নিরাপত্তার বিষয়টির অনুমোদন নিতে হয়।’ তিনি বলেন, ‘কিন্তুবাস্তবতা হচ্ছে- নির্মাণাধীন ভবন থেকে নির্মাণসামগ্রী নিচে পড়ে পথচারী অথবা নির্মাণ শ্রমিকরা মারা যাচ্ছেন, এটা বন্ধ হচ্ছে না।’ এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘নির্মাণাধীন ভবন থেকে নির্মাণসামগ্রী পড়ে পথচারীর মৃত্যুই হোক বা নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যুই হোক এর বিরুদ্ধে বিরাজমান ক্ষতিপূরণ ভবন মালিকদের ভয় দেখাতে পারছে না। এভাবে মৃত্যু হলে মাত্র দুই লাখ টাকা ক্ষতিপূরণের বিধান রয়েছে। উন্নত বিশ্বে নির্মাণাধীন ভবন থেকে দুর্ঘটনায় কেউ মারা গেলে কোটি টাকার বেশি ক্ষতিপূরণ দিতে হয়। আমাদের দেশে ক্ষতিপূরণ হিসেবে কোটি টাকা না হোক কমপক্ষে ২০ লাখ টাকা জরিমানা করা উচিত। তাহলে ক্ষতিপূরণের ভয়ে ভবন মালিকেরা প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা নেবেন।’
এ ব্যাপারে সিভিল ইঞ্জিনিয়ার নিজামউদ্দিন খান বলেন, পথচারীরা উপরের দিকে তাকিয়ে হাঁটবেন না, নির্মাণাধীন ভবনে যে মৃত্যুফাঁদ রয়েছে এটা তাদের মাথায় থাকারও কথা না। ওপর থেকে নির্মাণসামগ্রী যেন না পড়ে তা দেখার দায়িত্ব ভবন মালিক বা নির্মাণ কোম্পানির। একই সাথে এসব মনিটরিংয়ের দায়িত্ব রাজউকের।’ তিনি বলেন, ‘কোনো দুর্ঘটনা ঘটার পরই রাজউক নানা কিছু করে, নানা কথা বলে। রাজউকের এসব কর্মকাণ্ড অনেকটা লোক দেখানো। কারণ কোনো ভবনটি কিভাবে নির্মাণ করা হচ্ছে, নির্মাণে ত্রুটি হচ্ছে কিনা, অনুমোদিত নকশা পুরোপুরি মেনে ভবন নির্মাণ হচ্ছে কিনা তা নিশ্চিত রাজউককেই করতে হবে। কিন্তু দুঃখের বিষয়, রাজউক এসব দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ। তারা কোনো কাজে বেশি ব্যস্ত তা সবাই জানে।’ এসব থেকে বের হতে না পারলে নগরীর নির্মাণ শিল্পে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে না বলে ইঞ্জিনিয়ার নিজামউদ্দিন খান জানান।
ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ‘ভবন নির্মাণের সার্বিক প্রস্তুতির মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নির্মাণকাজের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। শ্রমিকদের পোশাক থেকে শুরু করে সবই হতে হবে নিরাপত্তাবান্ধব। নির্মাণ শ্রমিকদের মাথায় সেফটি হেলমেট থাকতে হবে, কোমরে সেফটি বেল্ট থাকতে হবে এবং তাদের ঢিলেঢালা পোশাক পরিয়ে কাজে নামাতে হবে। এসব বিধিমালার অংশ এবং এসব মানা হলেই নির্মাণসামগ্রীর দুর্ঘটনা থেকে পথচারী কিংবা নির্মাণ শ্রমিকদের সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব।’
গতকাল রোববার সরকারি ছুটি থাকায় রাজউকের ঊর্ধ্বতন কোনো কর্মকর্তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে রাজউকের অথোরাইজ অফিসাররা জানিয়েছেন, নকশা অনুমোদন করিয়ে নেয়ার সময়ই বলে দেয়া হয় ভবন মালিককে রাজউকের সব বিধি মেনে নিয়ে ভবন নির্মাণ করতে হবে। এর মধ্যে নির্মাণের সময়ের নিরাপত্তার কথাও বলা থাকে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা