বন্দীমুক্তি চুক্তির দাবিতে ইসরাইলে লাখো মানুষের বিক্ষোভ
ইসরাইলি যুদ্ধ মানবতার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা : জাতিসঙ্ঘ- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ০৮ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০৫
গাজা থেকে ইসরাইলি বন্দী ইলাদ কাৎজিরের লাশ উদ্ধারের পর রাজধানী তেল আবিবসহ ইসরাইলের অন্যান্য নগরীতে শনিবার লাখো মানুষ হামাস ও ইসলামিক জিহাদের হাতে থাকা বন্দীদের মুক্ত করে আনার দাবিতে সড়কে নেমে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমগুলো জানায়, বিক্ষোভকারীরা ‘এখনই নির্বাচন’ এবং ‘ইলাদ, আমরা দুঃখিত’ বলে স্লোগান দেন। পরে পুলিশ জোর করে তেল আবিবের বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। আলজাজিরা, রয়টার্স ও বিবিসি।
গাজায় বন্দীদের স্বজন ও বন্ধুদের সাথে এদিন সরকার বিরোধী বিক্ষোভকারীরাও সড়কে নেমেছিল। গাজায় এখনো প্রায় ১২৯ জন ইসরাইলি বন্দী হয়ে আছেন বলে ধারণা করা হয়। তাদের মুক্ত করে আনতে ইসরাইল সরকারের একটি চুক্তিতে উপনীত হওয়ার অক্ষমতায় বিক্ষোভকারীরা চরম হতাশা প্রকাশ করেছেন। শনিবার ভোরে ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী-আইডিএফ জানায়, তারা গাজার দক্ষিণের খান ইউনুসে রাতভর অভিযান চালিয়ে ইসরাইলি বন্দী কাৎজিরের মৃতদেহ উদ্ধার করে।
গত জানুয়ারিতে ইসলামিক জিহাদ কাৎজিরের একটি ভিডিও প্রকাশ করে। যেখানে তাকে ইসরাইল সরকারকে গাজায় অভিযান বন্ধ করে তাকে এবং অন্য বন্দীদের উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়ার অনুরোধ জানাতে দেখা যায়। বিক্ষোভে অংশ নেওয়া নোয়াম পেরি বিবিসিকে বলেন, বন্দী হওয়ার পর ইলাদ কাৎজির নিজেকে তিন মাস বাঁচিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন। আজ তার এখানে আমাদের সাথে থাকা উচিত ছিল। আজ সে এখানে আমাদের সাথে থাকতে পারতো।
বিক্ষোভ আয়োজনকারীরা জানান, ইসরাইল জুড়ে প্রায় অর্ধশত স্থানে বন্দীদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। যে বিক্ষোভে এক লাখের মত মানুষ অংশ নিয়েছে বলে দাবি দেশটির বিরোধীদলগুলোর। সম্প্রতি ইসরাইলে সরকারবিরোধী এবং প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতানিয়াহুর পদত্যাগের দাবিতে বৃহৎ যেসব বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে এটি তার একটি। বিক্ষোভকারীদের দাবি, নেতানিয়াহু বন্দীদের মুক্ত করে আনতে ব্যর্থ হয়েছেন।
তেলআবিবে একটি গাড়ি বিক্ষোভকারীদের ভিড়ের মধ্যে চালিয়ে দেয়া হয়েছিল বলেও জানায় বিবিসি। এতে পাঁচজন আহত হয়েছেন। এটি দুর্ঘটনা ছিল নাকি ইচ্ছাকৃত ছিল তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এ দিকে রোববার, গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার ঠিক ছয় মাস পর নিষ্ঠুর এই যুদ্ধ বন্ধ করতে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে উপনীত হতে মিসরের রাজধানী কায়রোতে বৈঠকের কথা রয়েছে।
কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়, ওই বৈঠকে মিসর, ইসরাইল ও হামাসের প্রতিনিধিদের সাথে সিআইএ পরিচালক বিল বার্নস এবং কাতারের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন আব্দুর রহমান আলে সানিও অংশ নেবেন। কাৎজিরের বোন কারমিৎ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক পোস্টে তার ভাইয়ের মৃত্যুর জন্য ইসরাইলি কর্তৃপক্ষকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, যদি তারা নতুন যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে রাজি হতো তবে তার ভাই জীবিত ফেরত আসত।
ফেসবুকে তিনি লেখেন, আমাদের নেতারা কাপুরুষ এবং রাজনৈতিক বিবেচনায় চালিত, যে কারণে এই চুক্তি এখনও হয়নি। প্রধানমন্ত্রী, যুদ্ধ মন্ত্রিসভা এবং জোটের সদস্যরা: আয়নায় নিজেদের দেখুন এবং বলুন, আপনাদের হাতেও কী রক্তের দাগ লেগে নেই।
৬০৪ ইসরাইলি সেনা নিহত : ছয় মাস ধরে গাজায় ধ্বংসলীলা চালাচ্ছে ইসরাইলি বাহিনী। প্রায় প্রতিদিনই শত শত নিরীহ ফিলিস্তিনি ইসরাইলি হামলায় প্রাণ হারাচ্ছেন। তবে গাজায় অভিযান চালাতে গিয়ে ইসরাইলি বাহিনীর ছয় শতাধিক সদস্য নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে। ইসরাইলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, গাজা উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চলে অভিযানে গত রাতে তাদের আরো চার সেনা নিহত হয়েছে। নিহত সেনাদের মধ্যে এক স্কোয়াড কমান্ডারও রয়েছে। ফলে গত ৭ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত গাজায় ৬০৪ সেনা নিহত হয়েছে।
সামুদ্রিক করিডর নির্মাণ ব্রিটেনের : সাইপ্রাস-গাজা নতুন মানবিক সামুদ্রিক করিডর নির্মাণ প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে গাজায় ত্রাণ সরবরাহ করতে যাচ্ছে ব্রিটিশ রয়্যাল নেভি জাহাজ। আগামী মে মাসের শুরুর দিকে নতুন এই করিডর উন্মুক্ত হবে উল্লেখ করে শনিবার ব্রিটেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এ ঘোষণা দেয়। যুক্তরাষ্ট্র, সাইপ্রাস ও অন্যান্য দেশের বহুজাতিক উদ্যোগের অংশ হিসেবে গাজা উপকূলে অস্থায়ী পায়ার নির্মাণ করা হবে বলে জানান ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরুন।
এক বিবৃতিতে ক্যামেরুন বলেন, গাজার পরিস্থিতি ভয়াবহ এবং দুর্ভিক্ষের সম্ভাবনা বাস্তব। যাদের নিদারুণভাবে প্রয়োজন, তাদের কাছে সহায়তা পৌঁছে দিতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ রয়েছি। ক্যামেরুন সাইপ্রাস থেকে গাজা পর্যন্ত সামুদ্রিক করিডর স্থাপনে সহায়তা সরঞ্জাম এবং লজিস্টিক্যাল দক্ষতার জন্য ১ কোটি ২২ লাখ ৬০ হাজার ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
ব্রিটেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে বিবিসির খবরে বলা হয়, এই উদ্যোগে সাইপ্রাসে ত্রাণসামগ্রীর নিরাপত্তা যাচাই করে সরাসরি সমুদ্রপথে গাজায় পাঠানো হবে। এক্ষেত্রে গাজা উপকূলে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি নতুন অস্থায়ী পায়ার বা আশদোদ বন্দর ব্যবহার করা হবে, যা ইতিমধ্যে ইসরাইল উন্মুক্ত করতে সম্মত হয়েছে। ব্রিটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী গ্র্যান্ট শ্যাপস বলেন, গাজা উপকূলে নির্মিত নতুন অস্থায়ী পায়ারে সমুদ্রপথে ত্রাণ সরবরাহের জন্য পণ্যবাহী জাহাজ রাখা হবে।
দেশটির সরকার জানায়, সবচেয়ে নিরাপদ ও কার্যকর সামুদ্রিক রুট তৈরির জন্য কয়েক সপ্তাহ ধরে সাইপ্রাসের পাশাপাশি ফ্লোরিডার ট্যাম্পায় মার্কিন অপারেশনাল সদর দফতরের পরিকল্পনা দলের সাথে কাজ করে আসছে ব্রিটিশ সামরিক দল।
খান ইউনুসে প্রচণ্ড যুদ্ধ : গাজা উপত্যকার খান ইউনুস শহরে ইসরাইলি বাহিনী ও ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা প্রচণ্ড যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছে আলজাজিরা। ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস বলেছে, তাদের আচমকা হামলায় ১৪ জন ইসরাইলি সৈন্য নিহত হয়েছে। এদিকে, ইসরাইলি সেনাবাহিনী এক ঘোষণায় জানিয়েছে শনিবার রাতে গাজা উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চলে যুদ্ধে তাদের ইনফ্যান্ট্রি ইউনিটের একজন স্কোয়াড কমান্ডারসহ আরও চারজন সৈন্য নিহত হয়েছে।
এর আগে হামাসের সামরিক উইং কাসসাম ব্রিগেড দাবি করেছিল খান ইউনুসের পূর্বাঞ্চলে আজ-জান্না জেলায় নয়জন ইসরাইলি সৈন্যকে হত্যা করা হয়েছে। মৃত্যুর এই সংখ্যা নিয়ে গত ৭ অক্টোবরের পর থেকে মোট ৬০৪ জন ইসরাইলি সৈন্যের মৃত্যুর কথা জানা গেল। এর মধ্যে গত ২৬ অক্টোবরের পর থেকে শুরু হওয়া স্থল অভিযানেই মারা গেছে ২৬৮ জন সৈন্য।
মানবতার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা : গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে ইসরাইলের যুদ্ধকে মানবতার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা বলে অভিহিত করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার ও ইমার্জেন্সি রিলিফ বিষয়ক আন্ডারসেক্রেটারি জেনারেল মার্টিন গ্রিফিথস। এই যুদ্ধের ৬ মাস পূর্তির প্রাক্কালে দেয়া বিবৃতিতে তিনি মানবতার বিরুদ্ধে এই বিশ্বাসঘাতকতায় সম্মিলিত সুদৃঢ় পদক্ষেপ প্রত্যাশা করেন। গ্রিফিথস বলেন, প্রতিদিনই এই যুদ্ধে অধিক থেকে অধিক পরিমাণে নিরীহ মানুষ মারা যাচ্ছেন।
গ্রিফিথস বলেন, গাজায় অবিবেচকের মতো আরও উত্তেজনা বৃদ্ধি করলে তা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলবে। এরই মধ্যে বোমা হামলার কারণে ত্রাণ তৎপরতা ভঙ্গুর পর্যায়ে চলে এসেছে। কোনো নিরাপত্তা নেই। তিনি বলেন, যেসব মানুষ নিহত হয়েছেন তাদের পরিবারবর্গের প্রতি আমার সহানুভূতি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা