সরকার হটানোর আন্দোলনে দুর্ভেদ্য দুর্গ গড়ে তোলার আহ্বান ফখরুলের
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ০৭ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০
সরকার হটানোর আন্দোলনে ‘ঢাকায় দুর্ভেদ্য দুর্গ’ গড়ে তোলার তাগিদ দিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গতকাল ঢাকা মহানগর বিএনপি আয়োজিত ইফতার অনুষ্ঠানে দেশের মানুষের দূঃখ-কষ্টের কথা তুলে ধরে মহানগর নেতাদের উদ্দেশে তিনি এই তাগাদা দেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, “সারা দেশের মানুষ কত কষ্টে আছে। কয়েকদিন আগে আমার জেলা ঠাকুগাঁও গিয়েছিলাম। দেখেছি তারা ভয়াবহভাবে দুঃখ-কষ্টে জীবনযাপন করছে। অথচ তাদের মুখে কোনো হতাশার ছাপ দেখিনি। এত অত্যাচার নির্যাতনের পরেও তারা সুন্দর আছে, সঠিক আছে, দৃঢ়চেতা আছে। আমাদেরকে তারা বলেছে, আপনারা সঠিক নির্দেশনা দেন, সঠিক কর্মসূচি দেন তাহলে আমরা আবার সামনের দিকে এগিয়ে আগেকার মতো আন্দোলন গড়ে তুলতে পারব।” তিনি বলেন, ‘‘ঢাকা মহানগরের উদ্দেশ্যে আমি দুই-একটি কথা বলতে চাই, ঢাকা মহানগর হচ্ছে কেন্দ্র বিন্দু। আমাদের সব আন্দোলনের মূল লক্ষ্য হচ্ছে যে ঢাকায়- এখানে সরকারের ভয়াবহ সেই দানবদেরকে পরাজিত করা। সেই কারণে ঢাকা মহানগরের দায়িত্ব অনেক বেশি। আমি অনুরোধ করব মহানগরের নেতাদেরকে ঢাকাতে সেইভাবে গড়ে তোলেন যেন ঢাকা দুর্ভেদ্য দুর্গে পরিণত হয়। এই দুর্গ যেন কেউ ভাঙতে না পারে সেইভাবে আমাদেরকে এখানে সংগঠন গড়ে তুলতে হবে।” ‘এখন সবেচেয়ে মনোনিবেশ করতে হবে সংগঠনের প্রতি, সবচেয়ে মনোনিবেশ করতে হবে জনগণের যে সাহস সেটাকে বাড়িয়ে তুলতে এবং শত্রুকে পরাজিত করবার জন্য কৌশল গ্রহণ করতে হবে। এই কথাগুলো আপনারা মনে রাখবেন।’
বিএনপি মহসচিব বলেন, এই আন্দোলন বিএনপির আন্দোলন নয়, এই আন্দোলন জাতিকে রক্ষা করবার আন্দোলন। আমাদের চলমান আন্দোলন গণতন্ত্রের জন্য, ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনবার জন্য। আমাদের প্রিয় রাষ্ট্রকে সব ধরনের আধিপত্যবাদ থেকে মুক্ত করে সত্যিকার অর্থে স্বাধীন বাংলাদেশে পরিণত করবার জন্য।
তিনি বলেন, ‘‘তখনই আমরা জাতিকে রক্ষা করতে পারব যখন এই জনসমর্থনহীন একেবারে ম্যান্ডেটবিহীন যারা জোর করে ক্ষমতায় বসে আছে, এই দখলদারি সরকারকে সরিয়ে দিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবে।” আমরা একাত্তর সালে যুদ্ধ করেছিলাম একটা স্বাধীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য যা আজকে সম্পূর্ণ ধবংস হয়ে গেছে। আমাদের ভোটের অধিকার, কথা বলার অধিকার ছিনিয়ে নিয়ে গেছে, সংবিধান তচনচ করেছে। সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যাপার যা আগে কখনো দেখিনি আমাদের সন্তানদেরকে ভাইদেরকে গুম করে দিয়েছে ১২-১৩ বছর হয়ে গেছে এখনো আমরা তাদের খবর জানি না। আমাদের ছেলেদের পঙ্গু করে দেয়া হয়েছে, বিনা বিচারে তাদেরকে হত্যা করা হয়েছে, বিএনপির ৬০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে ২৮ অক্টোবরের সমাবেশের পর দুই দিনের মধ্যে ৩৭ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করে ফেলা হচ্ছে, বিচারব্যবস্থাকে দলীয়করণ করা হয়েছে। এককথায় এই রাষ্ট্রকে সম্পূর্ণভাবে একদলীয় শাসনব্যবস্থায় নিয়ে গেছে।”
ফখরুল বলেন, ‘‘প্রত্যেকটি বড় বিজয়ের জন্য, ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। আমাদের নবী রাসূলুল্লাহ সা: এক দিনে ইসলাম ধর্ম প্রচার করতে সক্ষম হননি। দীর্ঘকাল লেগেছে তার এই ইসলাম প্রতিষ্ঠা করবার জন্য। এক দিনের ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয়নি সব জায়গায়।”
তিনি বলেন, ‘‘আজকে ফেরাউন-নমরুদ-হিটলারের মতো কর্তৃত্ববাদী ধ্বংসকারী সরকারগুলো যখন এসেছে তখন তারা চেষ্টা করেছে সারা জীবন তাদের নিয়ন্ত্রণ রাখতে। আমরা দেখেছি, আজকে আওয়ামী লীগ যা চেষ্টা করছে একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করবার জন্য। অতীতে তাদের নেতা ’৭৫ সালেও চেষ্টা করেছিলেন বাকশাল সৃষ্টি করে জনগণকে পুরোপুরিভাবে একটা বন্দী অবস্থায় নিয়ে আসা। আজকে আবার তারা (আওয়ামী লীগ) নতুন কায়দায় শুরু করেছে একদলীয় সরকার বাকশাল প্রতিষ্ঠা করার জন্য। আসুন আজকে আমরা এই শপথ গ্রহণ করি, আল্লাহর কাছে এই দোয়া চাই যেন, আল্লাহ সেই তৌফিক দেন সেই শক্তি দেন যেন আমরা সেই শক্তিতে বলীয়ান হয়ে আন্দোলনে সংগ্রামে নির্বাচনে সবখানেই যেন আমরা তাদেরকে পরাজিত করতে পারি- এটাই হোক আজকে দিনে প্রার্থনা।”
ইস্কাটন গার্ডেনের লেডিস ক্লাবে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি ও গুম-খুনের শিকার নেতাকর্মীদের পরিবারের সম্মানে এই ইফতার মাহফিল হয়। এতে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন ওয়ার্ড ও থানার কয়েক সহস্রাধিক নেতাকর্মী অংশ নেন।
ইফতারের আগ মুহূর্তে লন্ডন থেকে তারেক রহমান ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে নেতাকর্মীদের উদ্দেশে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন। মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে ও দুই মহানগরের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু ও আমিনুল হকের যৌথ সঞ্চালনায় ইফতার-পূর্ব আলোচনা সভায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, মহানগর উত্তরের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক অধ্যাপক ফরহাদ হালিম ডোনার বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে গুম হওয়া পরিবারের পক্ষে ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদির লুনা, চৌধুরী আলমের ছেলে আবু সাদাত শাওন চৌধুরী, সাজেদুল ইসলাম সুমনের বোন সানজিদা ইসলাম তুলি, পারভেজ হোসেনের মেয়ে হৃদি, আনোয়ার হোসেন মাহবুবের মেয়ে রাইসা প্রমুখ তাদের কষ্টের কথা বলেন।
পরে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরা, দলের ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান, জয়নাল আবেদীন, অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব মজিবুর রহমান সারোয়ার, মাহবুব উদ্দিন খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালসহ কেন্দ্রীয় ও অঙ্গসংগঠনের নেতাদের নিয়ে ইফতার করেন বিএনপি মহাসচিব।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা