১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৮ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

ব্যাংক একীভূতকরণে আরো সতর্ক থাকা দরকার

প্রবৃদ্ধি কমার আভাস বিশ্বব্যাংকের
-


বাংলাদেশে ব্যাংক একীভূতকরণের ক্ষেত্রে আরো সতর্ক থাকা দরকার। সম্পদের মান ও সুনির্দিষ্ট নীতিমালার ভিত্তিতে ব্যাংক একীভূত করা উচিত বলে মনে করে বিশ্বব্যাংক। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে মুদ্রানীতির রাশ আরো টেনে ধরা দরকার বলেও অভিমত সংস্থাটির। তারা বলছেন, চলতি অর্থবছর প্রবৃদ্ধি কমে ৫.৬ শতাংশ হতে পারে। ধারাবাহিক উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। ব্যাপক সংস্কার কর্মসূচি গ্রহণ না করা হলে আর্থিক দুর্বলতা আরো গভীর হতে পারে। এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের প্রস্তুতির জন্য জাতীয় ট্যারিফ নীতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে প্যারা-ট্যারিফগুলো ধীরে ধীরে হ্রাস করা উচিত।
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসে গতকাল বাংলাদেশের উন্নয়ন হালনাগাদের ওপর প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরেন বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদৌলায়ে সেক। সংস্থাটির দক্ষিণ এশিয়ার প্রধান অর্থনীতিবিদ ফ্রানজিস্কা ওনসর্গ, জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ রনজিত ঘোষ, সিনিয়র এক্সটার্নাল এফেয়ার্স অফিসার মেহরিন আহমেদ মাহবুব এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
বিশ্বব্যাংক বলেছে, ধারাবাহিক উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। সেই সাথে তারল্যের রাশ টেনে ধরা, ক্রমবর্ধমান সুদের হার, আমদানি বিধিনিষেধ ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধিজনিত কারণে, কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশে বিনিয়োগ ব্যাহত হয়েছে। দীর্ঘমেয়াদি প্রবৃদ্ধির অর্থায়নের মূল চাবিকাঠি হলো দেশীয় সম্পদ সংহতিকে শক্তিশালী করা। জিডিপির একটি অংশ হিসেবে বাংলাদেশের রাজস্ব বিশ্বের সর্বনিম্ন এবং আঞ্চলিক ও উচ্চাকাক্সক্ষী সমবয়সীদের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে নিচে রয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুসারে, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ। ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ৭ দশমিক ১ শতাংশ। অর্থাৎ তাদের হিসাবে ২০২১-২২ অর্থবছরের পর টানা দুই অর্থবছর দেশের প্রবৃদ্ধির হার কমে ৬ শতাংশের নিচে নামতে যাচ্ছে। চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি আরো মন্থর হয়েছে। এতে বোঝা যাচ্ছে, বিনিয়োগে মন্দাবস্থা তৈরি হয়েছে। ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের উচ্চ হার-সহ দুর্বল নিয়ন্ত্রণের কারণে এ খাত চাপের মুখে আছে বলে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক। অলস ঋণের অনুপাত (মোট ঋণের সাথে এনপিএলের অনুপাত) ডিসেম্বর ২০২৩ সালে ৯ শতাংশ বেড়েছে, যা ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ৮.২ শতাংশ ছিল।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে ভারত। এরপরই জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দেশ হবে বাংলাদেশ। অর্থবছর শেষে বাংলাদেশ ৫.৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে। এরপর ভুটান ৪.৯ শতাংশ, মালদ্বীপ ৪.৭ শতাংশ, নেপাল ৩.৩ শতাংশ, শ্রীলঙ্কা ২.২ শতাংশ এবং পাকিস্তান ১.৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে। তবে দক্ষিণ এশিয়ায় সামগ্রিকভাবে ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন হবে।
প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক বলছে, কোভিড-১৯ মহামারী থেকে প্রত্যাবর্তনে বাংলাদেশের অর্থনীতি শক্তিমত্তার পরিচয় দিয়েছে। কিন্তু উচ্চ মূল্যস্ফীতি, লেনদেন ভারসাম্যে ধারাবাহিক ঘাটতি, আর্থিক খাতের দুর্বলতা ও বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে মহামারী পরবর্তী পুনরুদ্ধার ব্যাহত হচ্ছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে আর্থিক সংস্কার ও মুদ্রার একক বিনিময় হার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা জরুরি। মুদ্রার বিনিময় হারে অধিকতর নমনীয়তা বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে ভারসাম্য পুনরুদ্ধারে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। অর্থনীতির বৈচিত্র্য এবং অর্থনীতির মধ্যম ও দীর্ঘ মেয়াদে স্বাভাবিক অবস্থায় প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা বৃদ্ধিতে কাঠামোগত সংস্কার গুরুত্বপূর্ণ বলে তারা মনে করেন।

বিশ্বব্যাংক সুপারিশ জানিয়ে বলছে, কর ব্যয় যৌক্তিককরণ করা দরকার। বৃহত্তর অটোমেশন, ইন্টিগ্রেশন এবং প্রযুক্তিগত ক্ষমতা দ্বারা কর প্রশাসনের দক্ষতা উন্নত করা।
বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদৌলায়ে সেক বলেন, একটি আঁটসাঁট রাজস্ব ও মুদ্রানীতি বজায় রাখা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করবে। রাজস্ব সংগ্রহের ব্যবস্থা জোরদারের মাধ্যমে এই প্রক্রিয়ায় আর্থিক নীতি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। তিনি বলেন, এখনো ভালো ব্যাংকগুলোকে রক্ষা করার জন্য দুর্বল ব্যাংকগুলোতে সম্পদের মানের পুঙ্খানুপুঙ্খ মূল্যায়নের প্রয়োজন। ব্যাংক রেজুলেশনের ওপর একটি ব্যাপক কৌশলের অংশ হিসেবে একীভূতকরণ এবং অধিগ্রহণের নির্দেশিকা তৈরি করা প্রয়োজন। এই কাঠামো নির্ধারণের আগে জোরপূর্বক একীভূতকরণের সাথে এগিয়ে যাওয়া আর্থিক খাতে বিনিয়োগকারীদের আস্থা হ্রাস করতে পারে। বিশ্বব্যাংক গ্রুপ একটি শক্তিশালী ব্যাংকিং খাত গড়ে তুলতে সরকারকে সহায়তা করতে প্রস্তুত রয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement