১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

মিরাজ-তাইজুলে পঞ্চম দিনে গড়াল ম্যাচ

-


শ্রীলঙ্কার ছুড়ে দেয়া ৫১১ রানের বিশাল টার্গেটে খেলতে নেমে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টের চতুর্থ দিন শেষে ৭ উইকেটে ২৬৮ রান করেছে স্বাগতিক বাংলাদেশ। টেস্ট জিততে ম্যাচের শেষ দিন বাকি ৩ উইকেটে আরো ২৪৩ রান করতে হবে টাইগারদের।
সাগরিকায় বাংলাদেশের প্রথম ইনিংসের ব্যাটিং দেখে অনেকেই হয়তো ভাবেননি পঞ্চম দিনে গড়াবে চট্টগ্রাম টেস্ট। তবে সেটা হয়েছে। চতুর্থ দিনে দুই সেশনের বেশি ব্যাট করে বাংলাদেশ তা সম্ভব করেছে। কে জানে, টেস্ট ক্রিকেটে দুর্দশার দিনে এটাকেও হয়তো সাফল্য হিসেবে দেখতে পারে বাংলাদেশ। তবে বড় হারের শঙ্কা মাথার ওপর ঝুলছে। নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে কি জানি আজ সেটির ব্যাখ্যা কী হবে। লঙ্কানরা টাইগারদের ফলো অনে না ফেলে নিজেরা দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করেছে। তা না হলে হয়তো ইনিংস ব্যবধানেই হারটা হয়ে যেতে পারত।

৪৫৫ রানের লিড নিয়ে চতুর্থ দিনের খেলা শুরু করে লঙ্কানরা। সে লিডের সাথে আর ৫৫ রান যোগ করে ৭ উইকেটে ১৫৭ রানের ইনিংস ঘোষণা করে সফরকারীরা। তাদের লিড দাঁড়ায় ৫১০ রান। লঙ্কানদের পক্ষে দ্বিতীয় ইনিংসে সর্বোচ্চ ৫৬ রান আসে অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসের ব্যাটে। ইনিংসে ৬৫ রান খরচায় সর্বোচ্চ ৪ উইকেট নেন পেসার হাসান মাহমুদ। প্রথম ইনিংসের দুই উইকেট যোগ করলে যৌথভাবে টেস্ট অভিষেকে সর্বোচ্চ ৬ উইকেট নেয়ার কীর্তি গড়েছেন। ২০০১ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বুলাওয়েতে মনজুরুল ইসলাম প্রথম অভিষেকে পেয়েছিলেন ৬ উইকেট।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে তৃতীয় দিন শেষে লঙ্কানদের সংগ্রহ ছিল ৬ উইকেটে ১০২ রান। ৪ উইকেট হাতে নিয়ে ৪৫৫ রানে এগিয়ে ছিল। অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজ ৩৯ ও প্রবাথ জয়সুরিয়া ৩ রানে অপরাজিত ছিলেন। গতকাল চতুর্থ দিনে টেস্ট ক্যারিয়ারের ৪১তম হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন ম্যাথুজ। অর্ধশতকের পর বেশিক্ষণ ক্রিজে টিকতে পারেননি তিনি। সাকিবের বলে বোল্ড হওয়ার আগে পাঁচটি চারে ৫৬ রান করেন ম্যাথুজ। এরপর শ্রীলঙ্কার লিড পাঁচ শ’ পার করেন জয়সুরিয়া ও বিশ^ ফার্নান্দো। ৪০ ওভার শেষে ৭ উইকেটে ১৫৭ রানে ইনিংস ঘোষণা করে শ্রীলঙ্কা। এতে সিলেটের প্রথম টেস্টের মতোই বাংলাদেশকে ৫১১ রানের লক্ষ্য দেয়। জয়সুরিয়া ২৮ ও বিশ^ ৮ রানে অপরাজিত ছিলেন। হাসান মাহমুদ ৬৫ রানে ৪টি, খালেদ আহমেদ ৩৪ রানে দু’টি ও সাকিব ৩৯ রানে একটি উইকেট নেন।

সিলেট টেস্টের মতো ৫১১ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে শুরুটা ভালোই করেছিলেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয় ও জাকির হাসান। বিনা উইকেটে ৩১ রান তুলে মধ্যাহ্ন-বিরতিতে যান তারা। বিরতি থেকে ফেরার পর জয়সুরিয়ার বলে বোল্ড হয়ে ফিরেন ৩টি চারে ২৪ রান করা জয়। সতীর্থকে হারানোর পর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি প্রথম ইনিংসে হাফসেঞ্চুরি করা জাকির (১৯)। ৫১ রানে ২ উইকেট হারানোর পর প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ও মুমিনুল হক। লাহিরু কুমারার দারুণ এক ডেলিভারিতে নাজমুলকে বোল্ড করেন (২০)।
ওয়ানডে মেজাজে খেলে টেস্ট ক্যারিয়ারের ১৮তম হাফসেঞ্চুরির স্বাদ নেয়ার পর জয়সুরিয়ার বলে সুইপ করে ক্যাচ দিয়ে আউট হন মুমিনুল। ৮টি চার ও একটি ছক্কায় ৫৬ বলে ৫০ রান করেন তিনি। এরপর সাকিব ও লিটন দাস সাবধানে খেলে জুটিতে হাফসেঞ্চুরি তুলে উইকেটে থিতু হয়ে গিয়েছিলেন। জুটি ভাঙতে টেস্ট ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো বল হাতে কামিন্দু মেন্ডিসকে আক্রমণে আনেন অধিনায়ক ধনাঞ্জয়া। নিজের চতুর্থ ওভারে সাকিবকে ফিরিয়ে সাফল্য পান কামিন্দু। তিনটি চারে ৩৬ রান করেন সাকিব। এর ঠিক ১৯ বল পর কুমারার দ্বিতীয় শিকার হন ৪ বাউন্ডারিতে ৩৮ রান করা লিটন। ১৯৭ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারিয়ে আরো ভালোভাবে হারের মুখে পড়ে বাংলাদেশ। এ অবস্থায় জুটি বেঁধে ম্যাচে এই সিরিজে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের রান ২শ পার করেন শাহাদাত হোসেন ও মেহেদি হাসান মিরাজ। তাদের ৫৪ বলে ৪৬ রানের জুটিতে ম্যাচটি পঞ্চম দিনে গড়ানোর আভাস দেয়। ১৫ রান করা শাহাদাতকে শিকার করে শ্রীলঙ্কাকে আবারো ব্রেক-থ্রু এনে দেন কামিন্দু। এরপর দিনের বাকি ৩৩ বল বিপদ ছাড়া পার করে ম্যাচটি পঞ্চম দিনে নিয়ে যান মিরাজ ও তাইজুল। মিরাজ ৪৪ ও তাইজুল ১০ রানে অপরাজিত আছেন। কুমারা-জয়সুরিয়া ও কামিন্দু দু’টি করে উইকেট নেন।

সংক্ষিপ্ত স্কোর : চতুর্থ দিন
শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস : ৫৩১/১০
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস : ১৭৮/১০
শ্রীলঙ্কা ২য় ইনিংস : ৪০ ওভার ১৫৭/৭ ডি, (মাদুশকা ৩৪, ম্যাথুজ ৫৬, জয়সুরিয়া ২৮*, বিশ^ ফার্নান্দো ৮, খালেদ ২/৩৪, হাসান ৪/৬৫, সাকিব ১/৩৯)।
বাংলাদেশ ২য় ইনিংস : ৬৭ ওভার ২৬৮/৭ (মাহমুদুল ২৪, জাকির ১৯, নাজমুল ২০, মুমিনুল ৫০, সাকিব ৩৬, লিটন ৩৮, শাহাদাত ১৫, মিরাজ ৪৪*, তাইজুল ১০*, বিশ^ ফার্নান্দো ১/৩৯, কুমারা ২/৪১, জয়সুরিয়া ২/৭৯, কামিন্দু ২/১২২)।


আরো সংবাদ



premium cement