১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

কবুল রোজার ৪ আলামত

-


আজ মাহে রমজানের তেইশ তারিখ। শেষ হয়ে আসছে পবিত্র মাসটি। এ পর্যায়ে আমাদের ভেবে দেখা উচিত, আমাদের রোজাগুলো আল্লাহর কাছে কবুলযোগ্য হলো কি না। কোনো ইবাদতের বিশেষত্ব ও তা কবুলযোগ্য হওয়ার প্রথম প্রমাণ এই যে, তা পালনের সময়ে অন্তর বিগলিত হবে, অন্তর নরম হবে এবং বিনয় ও ঈমানের চেতনা তৈরি হবে। পক্ষান্তরে যখন অহমিকা ও অহঙ্কার এবং আত্মম্ভরিতা তৈরি হবে, তখন মনে করতে হবে, আমার এই ইবাদত কবুল হয়নি। এতে ত্রুটি রয়ে গেছে। তাই এসব বিষয় মনে রাখা এবং এসব দোষ দূর করার চিন্তা থাকা প্রয়োজন।

দ্বিতীয়ত শরিয়তের যত রোকন রয়েছে সেগুলো পরস্পরে শক্তি সঞ্চারিত করে। অর্থাৎ এক ইবাদত আরেক ইবাদতের সহায়ক হয়, অন্য ইবাদতের শক্তি সঞ্চার করে। একটি খাদ্য যেমন অন্য খাদ্যের সহায়ক হয়, তেমনি একটি ফরজ আদায় অন্যান্য ফরজ আদায়ের জন্য সহায়ক হয়, তাতে শক্তি সঞ্চার করে। এমন নয় যে, প্রতিটি রোকন বিচ্ছিন্ন। অবশ্য প্রতিটির আবশ্যিকতা ও গুরুত্ব যথাস্থানে প্রযোজ্য। তবে একটি থেকে অন্যটি বিচ্ছিন্ন নয়। বরং একটি অপরটির সহায়তার জন্য। তাই রমজানের রোজা যদি বছরের পুরো এগার মাসের ইবাদতের জন্য শক্তি জোগায় এবং রোজার কারণে অন্যান্য ইবাদত আদায়ে আগ্রহ উদ্দীপনা তৈরি হয় ও শক্তি পাওয়া যায়, তাহলে এটা রোজা কবুল হওয়ার একটা আলামত ।
তৃতীয়ত, রোজার উদ্দেশ্য প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণে আনা। রোজার কারণে প্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রণ সহজ হয়, শরিয়তের বিধান পালনের আগ্রহ তৈরি হয়, অন্যান্য ইবাদত পালনের উৎসাহ জন্ম নেয়। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- হে মুমিনরা, তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হলো, যেমন- তা ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের আগে যারা ছিল তাদের ওপর, যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার। (সূরা বাকারা, আয়াত ১৮৩) কেননা পুরো এক মাস অভ্যাস হয়ে দাঁড়ায় দিনের বেলায় পানাহার না করার। ঈদের দিনে তাতে ব্যত্যয় ঘটে। এ জন্য এ দিন পানাহার করা অভ্যাসের খেলাপ হয়। আর এতেই মনে সঙ্কোচ লাগে। অথচ তা ছিল সাময়িক। তেমনি পাপের কাজ পরিহার, আল্লাহর অবাধ্যতা এড়িয়ে চলা, গিবত, অশ্লীলতা, রাগ, বিদ্বেষ পরিহার করার অভ্যাস স্বভাবে পরিণত হওয়া উচিত। যেগুলো সব সময়ের জন্য হারাম, সেগুলো করতে গিয়ে আরো সঙ্কোচ ও অনীহা হওয়া উচিত। রোজায় জীবনে পরিবর্তন আসা উচিত। রোজা রাখলাম, কিন্তু গালি দেয়া, গিবত করা, অশ্লীলতা, রাগ, বিদ্বেষ ছাড়লাম না, তাহলে রোজার ফল হলো না। প্রকৃতপক্ষে রোজা যেন মুমিনের জীবনে স্পষ্ট পরিবর্তন সাধন করে। রোজার সময় পাপাচার বর্জন করা হয়েছে। এতে অবিচল থাকা উচিত। আর পাপাচার করা যাবে না। রোজার কারণে যেগুলো পরিহার করা হয়েছে, রোজা চলে গেলেই যদি সেগুলো আবার করা হয়, তাহলে প্রমাণিত হবে- রোজা রাখা হলেও তা কবুল হয়নি।

চতুর্থত, রোজাকে যেসব বিষয়ে সমৃদ্ধ করা হয়েছে সেগুলোর প্রতি লক্ষ রাখতে হবে। রোজার উদ্দেশ্য এই প্রতীয়মান হয় যে, আল্লাহ তায়ালার প্রতি যেন বান্দার মনোযোগ বৃদ্ধি পায়। শুধু রোজা রাখা হলো। কিন্তু নেই তেলাওয়াত, নেই সদকা খয়রাত, নেই তারাবিহ, তাহলে সেই রোজার ফল সামান্যই। বরং রমজানে গুরুত্ব দেয়া দরকার তওবা ইস্তেগফারে। দোয়ায় মনোনিবেশ করা প্রয়োজন। শেষ রাতে উঠে তাহাজ্জুদ ও দোয়ায় আত্মনিয়োগ করা প্রয়োজন। কেননা এই সময়টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ সময়ে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে ঘোষণা হতে থাকে- আছে কি আমার কোন প্রিয় বান্দা, যে আমাকে ডাকবে? আমি তার ডাকে সাড়া দেবো। মহানবী সা: তাহাজ্জুদে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে আত্মনিয়োগ করতেন। বরং তিনি তারাবিহের চেয়ে তাহাজ্জুদেই জোর দিতেন বেশি।

এ মাসে সদকা-খয়রাতের ওপরেও জোর দেয়া প্রয়োজন। আল্লাহর রাসূল সা: এই মাসটিকে সদাচার ও সমবেদনার মাস বলে আখ্যায়িত করেছেন। অর্থাৎ এ মাসে আল্লাহ তায়ালার প্রতি আরো বেশি মনোযোগী হওয়া এবং সদকা-খয়রাতে আরো অংশ নেয়া প্রয়োজন। মানুষের খোঁজখবর নিয়ে তাদের বাড়িতে উপহার ও সহায়তা পাঠানো প্রয়োজন। আল্লাহর এমন অনেক বান্দা রয়েছেন, যারা মসজিদে এসে ইফতার করেন। তারা আর কোনো খাবার পান না। তাদের অনাহারে থাকতে হয়। এ জন্য এমন অভাবী লোকদের খোঁজ নিয়ে তাদের সহায়তা করা প্রয়োজন। আল্লাহর রাসূল সা: এটির প্রতি খেয়াল রাখতেন। তার সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়, রমজানে তিনি হতেন সবচেয়ে দানশীল। আরেক জায়গায় বলা হয়েছে তিনি মুক্ত বাতাসের চেয়েও দানশীল হয়ে যেতেন। অর্থাৎ তিনি অন্তর খুলে অভাবী, দুস্থ, বিধবা ও এতিমদের সহায়তা করতেন। যদি রোজা পালনের মাধ্যমে এসব গুণ অর্জিত হয়, তাহলে রোজা কবুল হয়েছে বলে আশা করা যায়। আর যদি এসব গুণ অর্জিত না হয়ে থাকে, তাহলে এখনো যে কয়টি দিন বাকি রয়েছে, সেই দিনগুলোতে চেষ্টা করা উচিত এসব গুণ অর্জনের।


আরো সংবাদ



premium cement
জয়কে অপহরণ ও হত্যার ষড়যন্ত্রের মামলায় দণ্ডিত বিএনপি নেতা মিজানুরের জামিন সাবেক ৫ এমপির স্ত্রী-সন্তানসহ বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১০ পরোয়ানাভুক্ত আসামিদের গ্রেফতারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা জানতে চায় ট্রাইব্যুনাল সুইজারল্যান্ডে থাকা সিরিয়ার হিমায়িত অর্থের পরিমাণ জানালো সুইস সরকার ইসরাইলি হামলায় ২১ জন নিহত : বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থা ২০২৪ সালে ৫৪ জন সাংবাদিককে হত্যা যাত্রাবাড়ী থানার ওসিকে ১৫ ডিসেম্বর জিজ্ঞাসাবাদ করবে তদন্ত সংস্থা ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন করার বিষয়ে পলককে জিজ্ঞাসাবাদ করবে তদন্ত সংস্থা র‍্যাবে আয়নাঘর ছিল, স্বীকার করলেন ডিজি আবারো গাজায় অবিলম্বে নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাশ জাতিসঙ্ঘের

সকল