নতুন শিক্ষাক্রমে প্রাথমিকে ২৫ মাধ্যমিকে ৫১ শতাংশ ব্যয় বৃদ্ধি
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ৩১ মার্চ ২০২৪, ০২:২১
করোনার সময়ের চেয়েও নতুন শিক্ষাক্রম চালুর পর দেশে প্রতি পরিবারেই শিক্ষা ব্যয় বেড়েছে। প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক এই উভয় পর্যায়েই ব্যয় বেড়েছে আগের তুলনায় অনেক বেশি। বিশেষ করে দেশের প্রাথমিক স্তরে শিক্ষার্থীপ্রতি বছরে একটি পরিবারের ব্যয় হয় প্রায় ১৪ হাজার টাকা। আর মাধ্যমিকে ২৭ হাজার টাকার বেশি ব্যয় হচ্ছে।
গতকাল ‘বাংলাদেশে বিদ্যালয় শিক্ষা: মহামারী উত্তর টেকসই পুনরুত্থান’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। নতুন শিক্ষাক্রম চালুর পর ব্যয় বেড়েছে স্বীকার করলেও এর প্রকৃত হিসাব নেই বলে প্রতিবেদনের গবেষকরা জানিয়েছেন।
রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে গণসাক্ষরতা অভিযান এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে সহযোগিতা করেছে ক্লিয়ার ও এফসিডিও। গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক ও এডুকেশন ওয়াচের সদস্যসচিব রাশেদা কে চৌধুরীর সঞ্চালনায় সভাপ্রধান ছিলেন এডুকেশন ওয়াচের চেয়ারপারসন ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ। এডুকেশন ওয়াচ প্রতিবেদন-২০২৩ উপস্থাপন করেন গণসাক্ষরতা অভিযানের উপ-পরিচালক ও এডুকেশন ওয়াচের ফোকাল পয়েন্ট ড. মোস্তাফিজুর রহমান। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন এডুকেশন ওয়াচের আহ্বায়ক ড. আহমদ মোশতাক রাজা চৌধুরী।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীর জন্য বছরে গড়ে ১৩ হাজার ৮৮২ টাকা খরচ হয়। তবে শহরের তুলনায় গ্রামে খরচ কম। গ্রামে বছরে গড়ে ১০ হাজার ৬৩৭ এবং শহরে ১৮ হাজার ১৩২ টাকা খরচ হয়। গত বছরের (২০২৩) প্রথম ছয় মাসে এ খরচ ৮ হাজার ৬৪৭ টাকা বা ২৫ শতাংশ বেড়েছে।
অপর দিকে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বছরে শিক্ষার্থীপ্রতি বছরে গড়ে খরচ হয় ২৭ হাজার ৩৪০ টাকা। এর মধ্যে গ্রামে ২২ হাজার ৯০৯ এবং সিটি করপোরেশন এলাকায় সর্বোচ্চ ৩৫ হাজার ৬৬২ টাকা ব্যয় হয়। গত বছরের প্রথম ছয় মাসে এ খরচ অন্তত ২০ হাজার ৭১২ টাকা বা ৫১ শতাংশ বেড়েছে। ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর এবং গত বছরের (২০২৩) জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত তুলনামূলক হিসাব করে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
এতে উল্লেখ করা হয়, এ খরচের বড় অংশই চলে যায় টিউশনি বা কোচিং সেন্টারে। এ ছাড়া বাকি খরচ হয় গাইড বইসহ সহায়ক বিভিন্ন সামগ্রী, যাতায়াত, খাবার, শিক্ষা উপকরণ (বই, খাতা, কলম), স্কুলের বিভিন্ন ফি এবং এক্সট্রা কারিকুলাম অ্যাক্টিভিটিজে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, শিশুশ্রমে নিয়োজিত শিক্ষার্থীরা উপার্জনের মাধ্যমে তাদের পরিবারে আর্থিক অবদান রাখে, যা তাদের ঝরে পড়ার কারণ হিসেবে দারিদ্র্যকেই নির্দেশ করে। ঝরেপড়ার কারণগুলো দূর করতে এবং স্কুলে কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিতের লক্ষ্যে লেখাপড়ার মান গ্রহণযোগ্য পর্যায়ে উন্নীত করতে হবে এবং তা পরিবারের জন্য সাশ্রয়ী হতে হবে।
সুপারিশে বলা হয়, পারিবারিক সহায়তা এবং শিক্ষা ব্যয়ের বোঝা কমানো প্রাইভেট টিউটরিং, কোচিং, বাণিজ্যিক গাইড বই এবং বিভিন্ন স্কুল ফি-র ক্রমবর্ধমান খরচ পরিবারগুলোর ওপর উল্লেখযোগ্য চাপ সৃষ্টি করেছে, যা বৈষম্য এবং শিক্ষাবঞ্চিত হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দিয়েছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করা এবং পরিবারের ওপর অর্থনৈতিক বোঝা কমানোর লক্ষ্যে শিক্ষায় ন্যায়সঙ্গত সুযোগের জন্য পরিকল্পিত পদক্ষেপ নিতে হবে।
এই পদক্ষেপগুলো হলো:
মনিটরিং ও গাইডেন্স: শ্রেণিকক্ষের কার্যক্রমের মনিটরিং, প্রাইভেট টিউটরিং এবং গাইড বই নির্ভরতা কার্যকরভাবে হ্রাস করা। অভিভাবক ও শিক্ষকদের সহযোগিতায় শিক্ষার্থীদের মুখস্থভিত্তিক শিখন থেকে নিবৃত্ত করে প্রকৃত জ্ঞান আরোহণের দিকে নিয়ে যেতে সাহায্য করা।
পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীর জন্য বাড়তি সহায়তা: যারা পড়ালেখায় পিছিয়ে পড়ছে তাদের জন্য অতিরিক্ত পাঠ এবং চাহিদাভিত্তিক সহায়তা দিয়ে সফল হতে সাহায্য করা।
ফি নিয়ন্ত্রণ: স্কুলকর্তৃক আরোপিত আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক ফি নিয়ন্ত্রণ এবং দূর করার জন্য বিধান কার্যকর করা, যা পরিবারের ওপর আর্থিক বোঝা কমাতে এবং শিক্ষায় আরো বেশি সুযোগ তৈরি করতে সাহায্য করে।
স্কুল মিল কর্মসূচির সম্প্রসারণ: প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্কুল মিল কর্মসূচি প্রবর্তন ও সম্প্রসারণ করা এবং সরকারি বাজেটের সহায়তায় মাধ্যমিক স্তরে ভর্তুকিযুক্ত পুষ্টিকর খাবার সরবরাহ করা। এই উদ্যোগের লক্ষ্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা মোকাবেলা এবং তাদের শারীরিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক সুস্থতা বাড়ানো।
এডুকেশন ওয়াচ-২০২৩ এর মুখ্য গবেষক ড. মনজুর আহমদ বলেন, ২০২২ সালের পর চার দশমিক পাঁচ শতাংশ প্রাথমিকে এবং ছয় শতাংশ শিক্ষার্থী মাধ্যমিকে নেই। সরকারের যে ঝরে পড়ার হিসাব, এটা অনেকাংশে তার অতিরিক্ত; সে আশঙ্কা রয়েছে। কারণ দ্বিতীয় শ্রেণীতে এত বেশি ঝরে পড়ার কথা না। তিনি বলেন, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিসহ নানা কারণে খরচ বেড়েছে। প্রাথমিকে ২৫ শতাংশ এবং মাধ্যমিকে ৫১ শতাংশ খরচ বেড়েছে। খরচ বেশি হচ্ছে কোচিং, টিউশনি ও গাইড বইয়ে। নতুন শিক্ষাক্রমের হিসাব এখনো আসেনি। এর প্রভাব ব্যয়ের কিছুটা পড়লেও দেখানোর মতো অবস্থা এখনো হয়নি।