ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নেয়নি শিক্ষার্থীরা
বুয়েটে ছাত্ররাজনীতির দাবিতে সমাবেশের ঘোষণা ছাত্রলীগের- ঢাবি প্রতিবেদক
- ৩১ মার্চ ২০২৪, ০২:২১, আপডেট: ৩১ মার্চ ২০২৪, ০২:২১
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েটে) গভীররাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রবেশের ঘটনায় জড়িত শিক্ষার্থীদের স্থায়ী বহিষ্কার ও ডিএসডব্লিউর পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে গতকাল শনিবার কোনো ক্লাস-পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেননি শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি আজ রোববার ও কোনো ক্লাস পরীক্ষায় বসবেন না তারা। সকাল সাতটা থেকে বুয়েটের বিভিন্ন প্রবেশদ্বারে অবস্থানের ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ হোসেন রাহিমের হলের সিট বাতিল করলেও শিক্ষার্থীদের আরো পাঁচটি দাবি পূরণ না হওয়ায় তারা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। গতকাল শনিবার ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী সকাল ৮টায় বুয়েটের বিভিন্ন প্রবেশপথে তারা অবস্থান নেন। এ সময় আগের ছয় দফা দাবি আপডেট করে উপস্থাপন করে তারা। দুপুর সাড়ে বারোটা নাগাদ শনিবারের মতো আন্দোলন কর্মসূচি স্থগিত করেন শিক্ষার্থীরা।
এ সময় শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বলা হয়, আমরা বেলা ১১টায় বুয়েট শহীদ মিনারের সামনে নতুন দাবি জানিয়েছি। আমরা এই মুহূর্তে ওই দাবিতেই অটল থাকব, আমাদের আর কোনো নতুন দাবি নেই। এই দাবিগুলোর সাথে আমরা উপস্থিত সবার গণস্বাক্ষর নিয়ে আবেদনপত্র জমা দিয়েছি। আমরা দেখি আমাদের স্যার আমাদের সাথে পরে কথা বলতে চান কিনা, কোনো আপডেট দিতে চান কিনা। আমরা এখনো জানি না। আমরা আবেদনপত্র জমা দিয়ে এসেছি। তবে এখনো পর্যন্ত আমাদের দাবি বাস্তবায়ন হয়নি। আমরা দাবির বাস্তবায়ন চাই এবং দাবির বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চলমান রাখব।
এ দিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবির সাথে একমত পোষণ করে তদন্ত করে তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছে বুয়েট কর্তৃপক্ষ। গতকাল শনিবার সোয়া ১টার দিকে ভিসি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন বুয়েটের ভিসি সত্য প্রসাদ মজুমদার। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণ করার জন্য যা যা করার করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন এলে আমরা নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব। নিয়মবহির্ভূতভাবে একজনকে বহিষ্কার করলে সেটা আদালতে টিকবে না। নিয়মের মধ্যে সবকিছু করার জন্য সময়ের প্রয়োজন। যেহেতু রোজার মাস, সময় একটু বেশি দেয়া উচিত ছিল। তদন্ত লাগবে এবং তদন্তে অভিযুক্তকেও আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হবে। আমাদের আইন ও নিয়ম অনুযায়ী চলতে হবে। তিনি আরো বলেন, আজকে তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছে। আগামী ৮ এপ্রিল পর্যন্ত সময় দেয়া হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর এর সদস্যদের মতামত আমরা শুনব। ইমতিয়াজকে হল থেকে বহিষ্কার আমরা করতে পারি। কিন্তু টার্ম বহিষ্কার শৃঙ্খলা কমিটির বৈঠক ডেকে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে করতে হবে। শৃঙ্খলা কমিটির সভার জন্য তদন্ত প্রতিবেদন লাগবে। তদন্ত প্রতিবেদন ছাড়া শৃঙ্খলা কমিটি কোনো ব্যবস্থা নিতে পারবে না।
এ দিকে বুয়েটে কমিটি দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। পাশাপশি বুয়েট শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ রাব্বীর হলের সিট বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের প্রতিবাদ এবং এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারে দাবি জানিয়েছে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। গতকাল শনিবার বিকেলে সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও সাধারণ সম্পাদক আল মামুন স্বাক্ষরিত একটি বিজ্ঞপ্তিতে এই ঘোষণা দেন তারা।
সমাবেশের ঘোষণা ছাত্রলীগের : একই ইস্যুতে বুয়েট কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ ও বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি চালুর দাবিতে আজ প্রতিবাদী সমাবেশ করবে ছাত্রলীগ। আজ রোববার সকাল ১১টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এই সমাবেশ করবে সংগঠনটি। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালি আসিফ ইনান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়।
ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতারা বলেন, ২৯ মার্চ ২০২৪ তারিখে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) কর্তৃক বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১ ব্যাচের পুরকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী ইমতিয়াজ হোসেন রাহিমের আবাসিক হলের বরাদ্দকৃত সিট বাতিল ঘোষণা করার সিদ্ধান্তকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা-গণতন্ত্রকামী মানুষ ও ছাত্রসমাজ চূড়ান্তভাবে প্রত্যাখ্যান করছে। বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ বুয়েট প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তকে একটি অন্যায্য, অসাংবিধানিক, মৌলিক অধিকার পরিপন্থী ও সর্বোচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃক নৈতিক স্খলনজনিত শিক্ষাবিরোধী কর্মকাণ্ড হিসেবে আখ্যায়িত করে এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছে। তারা বলেন, তা না করে, এ আইনের কোথাও ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার ক্ষমতা বুয়েটকে প্রদান করা না হলেও বুয়েট প্রশাসন বেআইনি ও অসাংবিধানিকভাবে তা বাস্তবায়ন করছে। মূলধারার প্রকাশ্য ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের এই প্রচেষ্টার মাধ্যমে বুয়েটকে দেশ ও বিশ্ব মানবতাবিরোধী নিষিদ্ধ, অন্ধকার জগতের বিভিন্ন সংগঠনের কর্মকাণ্ড পরিচালনার তীর্থস্থানে পরিণত করা হয়েছে। টাঙ্গুয়ার হাওড়ে জঙ্গি আস্তানায় গোপন মিটিং, শিক্ষার্থীদের অফিসিয়াল মেইলে উগ্রবাদের প্রচারণা, ক্যাম্পাসে কিউ কোডের মাধ্যমে রাষ্ট্রবিরোধী তৎপরতা চালানো, বিশ্ববিদ্যালয় পরিমণ্ডলে শ্রেণিকক্ষে মহান স্বাধীনতাকে কটাক্ষ ইত্যাদি কর্মকাণ্ড বুয়েটকে তার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থেকে পশ্চাৎ দিকে ধাবিত করছে।
সাদ্দাম হোসেন ও ওয়ালি আসিফ ইনান আরো বলেন, বুয়েট প্রশাসন, শিক্ষকমণ্ডলী ও শিক্ষার্থীদের প্রতি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আহ্বান জানাচ্ছে, একটি অন্যায়ের প্রতিকার হিসেবে আপনারা ধারাবাহিক অসংখ্য অন্যায় ও সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘনের সাথে জড়িত হবেন না। যে মহান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাটিতে এ দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতীক জাতীয় পতাকা নির্মিত হয়েছে, সেই প্রতিষ্ঠানের অংশ হিসেবে আপনারা এমন কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন না, রীতি-পদ্ধতি-সামাজিকতা প্রচলন করবেন না যেটি এ দেশের সংবিধানকে অমান্য করে, একজন শিক্ষার্থীর মৌলিক অধিকার ও ব্যক্তি স্বাধীনতাকে খর্ব করে, শিক্ষার অধিকারকে অস্বীকার করে, স্বাভাবিক ও পারিবারিক জীবনযাত্রাকে বিঘিœত করে। আপনাদের এরূপ কর্ম-সিদ্ধান্ত এ দেশের সামগ্রিক অগ্রযাত্রায় অন্তরায় হিসেবে বিবেচিত হবে এবং এ দেশের সাধারণ মানুষ যাদের শ্রম-ঘামের বিনিময়ে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালিত হয় তারা কোনোভাবেই তা মেনে নেবে না।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা