১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`
মুক্তিযোদ্ধা দলের সমাবেশে মির্জা ফখরুল

বাংলাদেশের জনগণ কোনো দেশের প্রভুত্ব স্বীকার করবে না

-


বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমরা রক্তের দাম দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছি। কারো দয়ায় বাংলাদেশ স্বাধীন হয়নি। বাংলাদেশের জনগণ তাই কখনোই কারো প্রভুত্ব স্বীকার করবে না।
গতকাল রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল এই সমাবেশের আয়োজন করে। নয়াপল্টন কার্যালয়ের সামনে একপাশের সড়কে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, ফকির আলমগীরের (মরহুম গণসংগীত শিল্পী) একটা চমৎকার গান আছে ‘দাম দিয়ে কিনেছি বাংলা, কারো দানে নয়’। আজকে সেই বোধ নিয়ে রুখে দাঁড়াতে হবে। আন্তর্জাতিক বিশ্ব নিশ্চয়ই সেই বিষয়গুলো দেখবে, দেখেছে অতীতে। আর কোনো দেশ যদি মনে করে যে আমাদের ওপর প্রভুত্ব করবে, বাংলাদেশের মানুষ কোনো দিন সেই প্রভুত্ব স্বীকার করেনি। মোগল আমলেও করেনি, ব্রিটিশ আমলেও করেনি, পাকিস্তান আমলেও করেনি, এখনো করবে না।
তরুণ সমাজকে জেগে উঠার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমি বৃদ্ধ মানুষ হয়ে গেছি। আমরা এখনো লড়ছি, কথা বলছি, লড়ে যাচ্ছি। আমরা এখনো বিশ্বাস করি, এই দেশকে পরাধীন করে রাখার ক্ষমতা কারো নেই। আমরা বিশ্বাস করি এই ভয়াবহ ফ্যাসিবাদী শাসকগোষ্ঠী যারা জোর করে, কলাকৌশল করে, বিভিন্ন নাটক করে ক্ষমতা দখল করে আছে তাদের একদিন চলে যেতেই হবে। তিনি বলেন, মানুষকে সাথে নিয়ে নামতে হবে। মানুষকে সাথে নিয়ে না নামলে জয়ী হওয়া যাবে না। শ্রমিক, ছাত্র, সমস্ত জায়গা থেকে মানুষকে যখন বের হয়ে আসবে সেই দিন হবে সত্যিকার অর্থেই সফল গণঅভ্যুত্থান, সফল বিস্ফোরণ।

মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে বিএনপির স্বাধীনতা দিবস উদযাপন কমিটির উদ্যোগে এই মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশ হয়। সমাবেশের ব্যানারে ‘ভারতীয় পণ্য বর্জন করুন’ এ রকম কথা লেখাও ছিল।
গত বছরের ২৮ অক্টোবর গ্রেফতারের পর সাড়ে তিন মাস পর মুক্তি পেয়ে চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুর যান বিএনপি মহাসচিব। এরপর গত শনিবার দেশে ফিরে এটি তার প্রথম রাজনৈতিক কর্মসূচিতে যোগদান।
ব্যাংক একীভূত আরেকটা দুর্নীতির কৌশল : মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার বলে যে, দারিদ্র্যের সংখ্যা নাকি কমে এসেছে। নিরাপত্তা বেষ্টনীর কর্মসূচির আওতায় সরকার যে ভাতা দেয় দুস্থ ভাতা, বিধবা ভাতা, দরিদ্র ভাতা, পত্রিকায় এসেছে, ওখানেও তারা ভাগ বসায়, বরাদ্দের টাকা নিয়ে যায়। এভাবে হাজার হাজার কোটি টাকা তারা বিদেশে পাচার করেছে। টাকার কোনো হিসাব নাই। তিনি বলেন, ব্যাংকগুলো লোপাট করে দিয়ে এখন একীভূত হচ্ছে। এর ফলে দুর্নীতির আরেকটা ব্যবস্থা তৈরি হচ্ছে ।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী শিক্ষার্থীদের শ্লীলতাহানির ঘটনাবলিতে ক্ষোভ প্রকাশ করে এ ব্যাপারে ছাত্র দলকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আজ ছাত্রীদের শ্লীলতাহানি করছে। আপনারা (ছাত্ররা) একটা প্রতিবাদ পর্যন্ত করেন নাই। এই যে মেয়েরা বসে আছে আপনারা প্রতিবাদ করেন নাই কেন। কোথায় গেল সেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, কোথায় গেল ছাত্ররা যারা স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছে, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন করেছে, ’৬৯ এর আন্দোলন করেছে, ৯০ এর আন্দোলন করেছে কোথায় গেছে তারা? আজকে ছাত্র দলের নেতারা এখানে যারা আছেন এভাবে শুধু স্লোগান দিলে হবে না, প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সংগঠন গড়ে তুলতে হবে। তিনি বলেন, ইনফেন্ট্রি যদি শক্তিশালী না হয় তাহলে যুদ্ধ কে করবে? ইনফেন্ট্রিকে শক্তিশালী করতে হবে। যারা একটা পুলিশের হুঁইসেল শুনলে দৌড়াবে না, যারা একটা সাউন্ড গ্রেনেডের শব্দ শুনলে পালাবে না, যারা রাস্তায় অনঢ় হয়ে প্রাণ দেবে, দাঁড়িয়ে থাকবে এই ধরনের মানুষগুলো তৈরি করতে হবে, সেই সাহস বুকে তৈরি করে দাঁড়াতে হবে।

মুক্তিযোদ্ধারা একাত্তরে জীবন বাজি রেখে যুদ্ধে করেছে উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, সেইভাবে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। আমি জানি আমার বহু ছেলেরা সেইভাবে কষ্ট করছে, তারা কেউ বাড়িতে থাকতে পারে না, তাদের চাকরি-বাকরি নাই, টাকা-পয়সা নাই, তাদের কোনো ভবিষ্যৎ নাই। তারা লড়াই করছে দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য। তিনি বলেন, এই গণতন্ত্র ফেরানোর আন্দোলন ছড়িয়ে দিতে হবে সারা দেশে তরুণ সমাজের মধ্যে। তাদের মধ্যে সাহস ও বোধ তৈরি করতে হবে যে আমি যা করছি তা আমার দেশের জন্য করছি, আমি যা করছি তা আমার গণতন্ত্রকে রক্ষা করার জন্য করছি, আমি যা করছি তা আমার দেশমাতৃকাকে রক্ষা করার জন্য করছি।
পাকিস্তানের ইমরান খানের দিকে তাকান : মির্জা ফখরুল বলেন, পাকিস্তানের দিকে তাকিয়ে দেখেন। আমরা পাকিস্তান নাম বললে সবাই উতকে উঠি, অন্যভাবে চিন্তা করি। সেই ইমরান খান দেখিয়ে দিয়েছেন কিভাবে তরুণদের মাঠে নিয়ে আসতে হয়। তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন যে, কিভাবে মহিলাদের মাঠে আনতে হয়। আমাদের চেয়ে কম অত্যাচার তাদের উপরে হয়নি। তারা সেনানিবাস আক্রমণ করেছিল, তারা মার্কিন সামাজ্যবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, তারা সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। পাকিস্তানে এই অবস্থান নিয়ে কেউ কোনো দিন রাজনীতিতে টিকতে পারে নাই। ইমরান খান জেলে চলে গেছে। ৩৪ বছর সাজা হয়েছে, তার দুই হাজারের বেশি নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার হয়েছে। জোর করে দল বদল করা হয়েছে। তারপরও জেলে বসে যখন তার দলের মার্কা নিয়ে গেছে। তখন তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নির্বাচনে যাও। সেই নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঝাঁপিয়ে পড়েছে কারা এই তরুণরা।
একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আজ ২৫ মার্চের কালো রাত। এই দিনে সন্ধ্যা পর্যন্ত আওয়ামী লীগ চেষ্টা করেছে পাকিস্তানের সাথে একটা দফা-রফা করার জন্য। যখন ব্যর্থ হয়েছে, যখন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টসহ জুলফিকার আলী ভুট্টো ঢাকা ছেড়ে চলে গেছে। তখন আমাদের তৎকালীন রাজনৈতিক নেতারা কেউ দেশে থাকেননি, পালিয়ে ভারতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। তারপরে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণার মধ্য দিয়ে সমস্ত মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়ে যুদ্ধ করেছিলো বলেই ১৯৭১ সালে আমরা দেশ স্বাধীন করতে পেরেছি।

স্বাধীনতা দিবস উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক দলের ভাইস চেয়ারম্যান মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশের চরম অবস্থা। দেশের যুবসমাজ, তরুণ সমাজকে বলব, আজকে মোবাইল রাখেন, ল্যাপটপ রাখেন। আজকে দেশ আপনাদের আহ্বান জানাচ্ছে, দেশের ডাকে, জনগণের ডাকে আপনাদের মা-বোনের ইজ্জত রক্ষায় রাজপথে নেমে আসুন। বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ও তারেক রহমান-মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মতো বীর মুক্তিযোদ্ধারা আবারো ভূমিকা রাখবে। তিনি বলেন, দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নাই। অতীতে দেশে কোনো আন্দোলন ব্যর্থ হয়নি, গণতন্ত্র ফেরানোর এই আন্দোলন ব্যর্থ হবে না। সবাই প্রস্তুত থাকুন, বিজয় আমাদের হবেই।
মেজর হাফিজের সভাপতিত্বে ও মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খানের সঞ্চালনায় এই সমাবেশে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য জয়নুল আবদিন ফারুক, ফজলুর রহমান, ফরহাদ হালিম ডোনার, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, জয়নাল আবেদীন, মুক্তিযোদ্ধা দলের ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, যুব দলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, মহানগর দক্ষিণ বিএনপির ইশরাক হোসেন, ছাত্র দলের রাকিবুল ইসলাম রাকিবসহ মুক্তিযোদ্ধা দলের কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য রাখেন।


আরো সংবাদ



premium cement