বান্দরবানে ফের আশ্রয় বিজিপির ১৭৫ জনের
রাখাইনে আরাকান আর্মির হামলায় জান্তার কর্নেল নিহত- কক্সবাজার অফিস বান্দরবান প্রতিনিধি ও উখিয়া সংবাদদাতা
- ১২ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
মিয়ানমারে বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির তাড়া খেয়ে প্রাণ বাঁচাতে এবার দেশটির সীমান্তরক্ষী বর্ডার গার্ড পুলিশ-বিজিপির ১৭৫ সদস্য বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। গতকাল সোমবার বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার জামছড়ি সীমান্ত দিয়ে তারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে। পরে তাদের নিরস্ত্র করে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড-বিজিবি। এদের মধ্যে সকালে ২৯ জন এবং বিকেলে আরো ১৪৬ জন আশ্রয় গ্রহণ করে সীমান্তে। এর মধ্যে একজন গুলিবিদ্ধ ও অন্য একজন আহত রয়েছেন। সকালে আশ্রয় নেয়া ২৯ জনকে নাইক্ষ্যংছড়ি ব্যাটালিয়ন সদরে নিয়ে আসা হয়েছে। অন্যদেরও পর্যায়ক্রমে সেখানে নিয়ে আসা হচ্ছে বলে জানা গেছে। এ দিকে মিয়ানমারের রাখাইনে জান্তা বাহিনীর সাথে আরাকান আর্মির তুমুল যুদ্ধ চলছে। গত চার দিনে বেশ কিছু ঘাঁটিসহ জান্তা প্রতিপক্ষের হামলায় তাদের একজন লে. কর্নেলকে হারিয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, সীমান্তের ৪৫ নং পিলার এলাকার জামছড়ি দিয়ে সকালে ২৯ জন বিজিপি সদস্য প্রবেশ করে। তাদের নিরস্ত্র করে নিরাপদ জায়গায় রাখা হয়। পরে বিকেলে নতুন করে ১৪৬ জন অনুপ্রবেশ করে। এ ঘটনায় বিজিবির নাইক্ষ্যংছড়ি ব্যাটালিয়নের অধিনায়কসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এলাকা পরিদর্শন করেছেন। নতুন করে অনুপ্রবেশ করা বিজিপি সদস্যদের কোথায় রাখা হবে সে বিষয়ে জানা যায়নি। বিজিবি ও স্থানীয়রা জানিয়েছে, মিয়ানমারের ঢেকুবুনিয়ার অভ্যন্তরে সে দেশের বিচ্ছিন্নতাবাদী আরাকান আর্মির সাথে সংঘর্ষে টিকতে না পেরে বিজিপি সদস্যরা বাংলাদেশের সীমান্তের নো ম্যান্স ল্যান্ডে আশ্রয় নেয়। পরে জামছড়ি বিজিবি ক্যাম্পের সদস্যরা তাদের নিরস্ত্র করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আশ্রয় দেয়। বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিন জানিয়েছেন, সকালে সীমান্ত দিয়ে ২৯ জন বিজিপি সদস্য বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। আর ১৪৬ জনের আশ্রয় নেয়ার বিষয়ে এখনো আমাদের কাছে তথ্য আসেনি। তবে বিজিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ১৭৫ জনের আশ্রয় নেয়ার কথা স্বীকার করেছেন। গতকাল সকালে আশ্রয় নেয়ার বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো: শরীফুল ইসলাম। তিনি জানান, বিজিবির নাইক্ষ্যংছড়ি ব্যাটালিয়নের (১১ বিজিবি) অধীনস্থ জামছড়ি বিওপির অধীন সীমান্ত এলাকা দিয়ে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর অংথাপায়া ক্যাম্প থেকে ২৯ জন বিজিপি সদস্য বাংলাদেশে আশ্রয় নেন।
উল্লেখ্য, মিয়ানমারে সঙ্ঘাতের জেরে গত ফেব্রুয়ারিতে আরাকান আর্মির আক্রমণের মুখে টিকতে না পেরে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদস্যসহ (বিজিপি) ৩৩০ জন। পরে ১৫ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজারের উখিয়া ইনানী নৌবাহিনীর জেটিঘাট থেকে জাহাজে করে তাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়।
জানা গেছে, কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তের ওপারে টানা দুই সপ্তাহ থেমে থেমে গোলাগুলি ও মর্টার শেলের বিস্ফোরণ চলছে। তীব্র বিস্ফোরণে কেঁপে উঠছে সীমান্তের টেকনাফ এলাকার ঘরবাড়ি। সীমান্তের ওপারে ভারী অস্ত্রের টানা ব্যবহার টেকনাফবাসীর আতঙ্ক আরো বাড়িয়েছে। অনেকটাই থমকে গেছে জনজীবন। কাজে যেতে পারছেন না শ্রমজীবীরা। সীমান্তের কাছের লোকজন ঘরের বাইরেও বের হচ্ছেন সাবধানে।
আরাকান আর্মির হাতে জান্তার কর্নেল নিহত : মিয়ানমারের বিভিন্ন রাজ্যে দেশটির স্থানীয় বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর হামলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানির শিকার হয়েছেন জান্তা সৈন্যরা। দেশটির কয়েকটি অঞ্চলে জান্তাবিরোধী পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেস (পিডিএফ) ও জাতিগত সশস্ত্র সংগঠনগুলো (ইএও) হামলা বৃদ্ধি করায় গত চার দিনে মিয়ানমার জান্তা একজন লেফটেন্যান্ট কর্নেলসহ বেশ কয়েকজন সৈন্য এবং কৌশলগত ঘাঁটির নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে।
গতকাল সোমবার থাইল্যান্ডভিত্তিক মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম দ্য ইরাবতির খবরে বলা হয়েছে, পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন, কাচিন, স্যাগাইং ও মান্দালয় অঞ্চলে এসব হামলার ঘটনা ঘটেছে। পিডিএফ ও ইএওর হামলায় জান্তার ক্ষয়ক্ষতির তথ্য সংগ্রহ করেছে ইরাবতি। তবে সামরিক বাহিনীর হতাহতের তথ্য স্বাধীনভাবে যাচাই করা যায়নি বলে জানিয়েছে দেশটির এই সংবাদমাধ্যম।
রাখাইনের জাতিগত সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ) বলেছে, শুক্রবার রাখাইন রাজ্যের মিনবিয়া শহরে জান্তা বাহিনীর নবম সেন্ট্রাল মিলিটারি ট্রেনিং স্কুল থেকে পালিয়ে আসা সৈন্যদের ওপর হামলা চালিয়েছে এএ যোদ্ধারা। হামলায় জান্তার লেফটেন্যান্ট কর্নেল ইয়ে তুত উইন এবং অন্যান্য কয়েকজন সৈন্য নিহত হয়েছেন।
১০ দিনের তীব্র লড়াইয়ের পর আরাকান আর্মির সদস্যরা গত ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে স্কুলটির দখল নেয়। আরাকান আর্মির যোদ্ধাদের হামলার মুখে শহরটি ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয় জান্তা সৈন্যরা। পরে ওই শহরে নিহত লেফটেন্যান্ট কর্নেল ও তার বাহিনীর হাতে আটক হওয়া ২০ জন গ্রামবাসীকে উদ্ধার করে এএ যোদ্ধারা।
শনিবার রাখাইনের রাথেডং ও রামরি শহরে আকাশ, সমুদ্র ও স্থলপথে জান্তা বাহিনী বোমা হামলা চালিয়েছে বলে জানিয়েছে এএ। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেছেন, জাতিগত সশস্ত্রগোষ্ঠী কাচিন ইন্ডিপেন্ডেন্স আর্মি (কেআইএ) ও মিত্র প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলো ১৩ দিনের টানা হামলার পর শনিবার কাচিন রাজ্যের হপাকান্ত শহরের একটি সামরিক ঘাঁটি দখল করেছে। হপাকান্তের তর মা খান গ্রামের কাছে কৌশলগত পাহাড়ের চূড়ায় এই ঘাঁটিটির অবস্থান।
ঘাঁটি রক্ষায় ব্যর্থ হওয়ার পর জান্তা সৈন্যরা ওই এলাকায় ব্যাপক কামানের গোলা নিক্ষেপ ও বিমান হামলা চালিয়েছে। পরে শনিবার কেআইএর কর্মকর্তাদের সাথে সমঝোতার পর জান্তা সৈন্যরা অস্ত্র রেখে ঘাঁটি ছেড়ে চলে যান বলে কেআইএর একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র দ্য ইরাবতিকে জানিয়েছে। গত সপ্তাহ থেকে কাচিন রাজ্যজুড়ে জান্তার সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা বৃদ্ধি করেছে কেআইএ। ওই রাজ্যে এখন পর্যন্ত এক ডজনেরও বেশি জান্তা ঘাঁটি দখলে নিয়েছে কেআইএ যোদ্ধারা।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা