দেশের ৫০০ এসিল্যান্ড অফিস মন্ত্রণালয়ের নজরদারিতে
- মনির হোসেন
- ০৯ মার্চ ২০২৪, ০১:৩৮, আপডেট: ০৯ মার্চ ২০২৪, ০৫:৫২
- মাঝেমধ্যে বিভিন্ন জেলায় ঝটিকা পরিদর্শনের পরিকল্পনা ভূমিমন্ত্রীর
- একজন নাগরিক মুঠোফোন ব্যবহার করেই ভূমি সেবা পেতে পারেন
দীর্ঘদিন ধরেই দেশের অধিকাংশ তহসিল ও এসিল্যান্ড অফিস অনিয়ম আর দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ খোদ সেবা গ্রহীতাদের। এসব অফিস থেকে ঘুষ, অনিয়ম দুর্নীতি কমিয়ে কাক্সিক্ষত সেবা দেয়ার লক্ষ্য ইতোমধ্যে ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে সংশ্লিষ্ট অফিসগুলোর কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সার্বিক কার্যক্রম নানা কৌশলে কঠোরভাবে নজরদারির মধ্যে আনা হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে মাঝেমধ্যে দেশের বিভিন্ন জেলার তহসিল ও এসিল্যান্ড অফিস ভিজিট করার পরিকল্পনা করছেন ভূমিমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল। আর এই পরিদর্শনের সময় যদি কারো (কর্মকর্তা-কর্মচারী) বিরুদ্ধে সেবা গ্রহীতাদের কাছ থেকে অবৈধভাবে টাকা নেয়া সংক্রান্ত কোনো ধরনের অভিযোগ উঠে তাহলে সেই অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গত সপ্তাহে (বুধবার) ভূমিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ এমপির সাথে সচিবালয়ে তার দফতরে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি নয়া দিগন্তের এই প্রতিবেদককে এসব কথা বলেন। এ সময় মন্ত্রীর একান্ত সচিব মো: সাদেকুল ইসলাম, সহকারী একান্ত সচিব সমীর কুমার দে ছাড়াও মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা সৈয়দ মো: আব্দুল্লাহ আল নাহিয়ান উপস্থিত ছিলেন।
মন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে তার মন্ত্রণালয় থেকে সারা দেশে ভূমি সেবা নিতে যাওয়াদের আরো কিভাবে উন্নত এবং সহজ সেবা দেয়া যায় সেটির জন্য প্রাথমিকভাবে ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে ১৮০ দিনের একটি টার্গেট পরিকল্পনা কার্যক্রম নেয়া হয়েছে। তবে আগের মন্ত্রীর নেয়া কার্যক্রম দ্রুত কিভাবে সফলভাবে সম্পন্ন করা যায় সেটি আমার অন্যতম প্রধান কাজ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকাসহ দেশের প্রায় ৫০০ তহসিল ও এসিল্যান্ড অফিসে প্রতিদিন লাখ লাখ মানুষ ভূমি সেবা নিতে যাচ্ছেন। আর এই সেবা নিতে গিয়ে প্রতিনিয়ত অনেকে দালাল, অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীদের মাধ্যমে নানাভাবে প্রতারিত হচ্ছেন বলে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফতরে অভিযোগ পড়ছে। অনেকে হয়রানির বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করছেন। আবার অনেকে মৌখিকভাবে অভিযোগ জানিয়ে তাদের মনের ক্ষোভ ঝাড়ছেন। তবে তহসিল এবং এসিল্যান্ড অফিসগুলোর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের টাকা দিয়েই দিন শেষে ভূমির কাজ করাতে হচ্ছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। আর এভাবে অনিয়ম দুর্নীতি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন এক শ্রেণীর তহসিল অফিস ও এসিল্যান্ড অফিসের সার্ভেয়ার, কানুনগোসহ সংশ্লিষ্ট অনেকেই ‘আঙুল ফুলে কলাগাছ’ হয়েছেন। দীর্ঘ দিন ধরে চলতে থাকা এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে এবার কঠোর অবস্থান নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভূমি মন্ত্রণালয়।
এর কিছুদিন আগে সরেজমিন পর্যটন নগরী কক্সবাজারের (সদর) তহসিল অফিস ও এসিল্যান্ড অফিসে খোঁজ নিতে গেলে দেখা যায়, অনলাইনে নামজারি কার্যক্রম চালু করা হলেও সেবাগ্রহীতারা এ ক্ষেত্রে তাদের কাছ থেকে কাক্সিক্ষত সেবা পাচ্ছেন না। বরং উল্টো আরো সেবা নিতে গিয়ে সেবাগ্রহীতারা নানাভাবে হয়রানি ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তবে বেশির ভাগ সেবা গ্রহীতাকে দেখা গেছে নীরবে অথবা অনেকটা ‘হাসিখুশি মুখে’ নগদ লেনদেন করেই কাজ সম্পন্ন করে বাড়ি ফিরছেন। আবার অনেক সময় জাল জালিয়াতির সাথেও এসিল্যান্ড অফিসের কিছু কর্মকর্তার জড়িত থাকার অভিযোগ উঠছে। এরমধ্যে সার্ভেয়ার জাহাঙ্গীরের এসিস্ট্যান্ট শমছু ও কানুনগোর সহকারী মাসুম আগত সেবা গ্রহীতাদের কাছ থেকে নানাভাবে আবার কখন তাদের কথা ছাড়া ফাইলে সই হবে না এমন ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয়ারও অভিযোগ রয়েছে।
শুধু কক্সবাজার নয়, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, যশোর, রাজশাহী, খুলনা থেকে শুরু করে অধিকাংশ জেলার তহসিল অফিস ও এসিল্যান্ড অফিস অনিয়ম দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব জঞ্জাল কমাতে ভূমিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ দেশের ৮ বিভাগের সার্বিক কার্যক্রম মনিটরিং এবং মাঝেমধ্যে পরিদর্শনেরও চিন্তাভাবনা করছেন।
গত বুধবার মন্ত্রীর সাথে সচিবালয়ে তার দফতরে দেখা করতে গেলে তিনি ১৮০ দিনের পরিকল্পনাসহ নানা বিষয়ে নয়া দিগন্তের সাথে কথা বলেন। ১৮০ দিনের পরিকল্পনার মধ্যে কী কী পরিকল্পনা সাজানো হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কয়েক দিন আগে আমি যখন আমার নির্বাচনী এলাকায় গিয়েছিলাম তখন কয়েকটি তহসিল অফিস ঘুরেছি। তা ছাড়া সবগুলো তো ভিজিট করা সম্ভব না। তারপরও আমি খুলনা বিভাগে একটা মিটিং করে এসেছি। বিভাগের ১০টি জেলার এডিসি রেভিনিউ, এসিল্যান্ড এবং কানুনগোদের ডাকা হয়েছিল খুলনায়। তাদেরকে আমি নির্দেশনা দিয়েছি। এখন মাঝেমধ্যে আমরা বিভিন্ন জায়গায় যাবো। শুনবো। যদি বিভিন্ন অভিযোগ আসে সেগুলো আমরা তাৎক্ষণিকভাবে দেখব। ঘটনার সত্যতা থাকলে তখন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো বলে জানান তিনি।
অভিযোগ কি ধরনের হতে পারে এমন প্রশ্নের উত্তরে ভূমিমন্ত্রী নয়া দিগন্তকে বলেন, অভিযোগ মানে আপনি কাজ (ভূমি) করতে গেছেন, আপনার কাছে টাকা চাইল। কে চাইছে এবং কি করে। কেন চাওয়া হবে। এ বিষয়ে ওখানে তো (খুলনায়) আমি ক্লিয়ারকাট কথা বলে এসেছি।
এ দিকে ভূমি মন্ত্রণালয়ের ডিজিটাল ভূমি সেবা প্রদান পদ্ধতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশর একজন নাগরিক দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে যেকোনো সময় ভূমি মন্ত্রণালয় হটলাইন ১৬১২২ তে কল করে ভূমি সেবা গ্রহণ করতে পারেন। এ ছাড়া প্রবাসী বাংলাদেশী নাগরিকরাও +৮৮০৯৬১২৩১৬১২২ নম্বরে কল করে এই সেবা গ্রহণ করতে পারেন। এই নম্বরে কল করলে ভূমি মন্ত্রণালয় হটলাইনের এজেন্ট নাগরিকদের প্রয়োজনীয় তথ্যাদি গ্রহণপূর্বক তাকে প্রয়োজনীয় সেবা প্রদান করে থাকেন।
বর্তমানে হটলাইনের মাধ্যমে অভিযোগ গ্রহণ এবং তথ্য সেবা প্রদান করা ছাড়াও ই-নামজারি আবেদন, অনলাইন ভূমি উন্নয়ন কর এবং খতিয়ান আবেদন সেবা প্রদান করা হয়। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ভূমি সেবা গ্রহণের পদ্ধতিতে আরো বলা হয়েছে, একজন নাগরিক তার মুঠোফোন ব্যবহার করেই এই সেবা পেতে পারেন। তবে কল চার্জ প্রযোজ্য। এ ছাড়া আবেদন সংক্রান্ত কলের জন্য আবেদন ফি প্রযোজ্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা