বিরোধী রাজনীতিকদের ওপর ক্র্যাকডাউন অগ্রহণযোগ্য
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনের যৌথ বিবৃতি- কূটনৈতিক প্রতিবেদক
- ০৮ নভেম্বর ২০২৩, ০০:২৩
রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটসসহ আটটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছে, বিরোধী রাজনীতিকদের দমন অভিযান বাংলাদেশ সরকার জোরদার করেছে। এটি পরিস্থিতিকে আরো খারাপের দিকে নিয়ে যাচ্ছে এবং বাংলাদেশের মানবাধিকার সঙ্কটকে ঘনীভূত করছে। বিরোধী রাজনীতিকদের ওপর ক্রমেই জোরালো হওয়া ক্র্যাকডাউন অগ্রহণযোগ্য। এটি বাংলাদেশে মানবাধিকার, গণতন্ত্র ও মৌলিক স্বাধীনতা নিয়ে উদ্বেগ আরো বাড়িয়ে তুলেছে।
গতকাল রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটস ছাড়াও ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর হিউম্যান রাইটস, অ্যান্টি-ডেথ পেনাল্টি এশিয়া নেটওয়ার্ক, ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট জাস্টিস প্রজেক্ট, ইন্টারন্যাশনাল রিহ্যাবিলিটেশন কাউন্সিল ফর টর্চার ভিক্টিমস, ওমেগা রিসার্চ ফাউন্ডেশন, রেডড্রেস এবং ওয়ার্ল্ড অর্গানাইজেশন এগেইনস্ট টর্চার যৌথভাবে এই বিবৃতি দিয়েছে। এতে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারের পদত্যাগ এবং একটি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে গত ২৮ অক্টোবর বিএনপি ঢাকায় একটি বিশাল সমাবেশের আয়োজন করে। কিন্তু নির্ধারিত তারিখের আগেই এক হাজার ২০০ জনেরও বেশি বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীকে শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেফতার করা হয়। পাশাপাশি বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি) ২৮ অক্টোবর বেলা ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ইন্টারনেট বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়। সাম্প্রতিক কিছু রিপোর্টে ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে, ২৮ অক্টোবর সমাবেশের সময় বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ অতিরিক্ত বল প্রয়োগ করেছিল। এতে অন্তত তিনজন নিহত হন।
নিহতদের মধ্যে একজন পুলিশ সদস্য, একজন বিএনপি কর্মী ও একজন সাংবাদিক ছিলেন। ৩১ অক্টোবর সকাল পর্যন্ত বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ সংশ্লিষ্ট সহিংসতায় অন্তত ১১ জন নিহত এবং শতাধিক মানুষ আহত হন। বিক্ষোভকারীরাও সহিংস আচরণ করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। ভিন্ন মত দমনে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোও চরম পদক্ষেপ নিয়েছে, যা একটি উদাহরণ। বিক্ষোভ শেষে পুলিশ বিএনপি নেতাকর্মীদের বাসায় অভিযান চালায়। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলটির পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। এটা গভীর উদ্বেগের বিষয়। বিক্ষোভ চলাকালীন প্রাণহানি এবং সহিংসতায় আমরা গভীরভাবে মর্মাহত।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আটক ব্যক্তিরা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হতে পারেন বলে আমরা আশঙ্কা করছি। নিরাপত্তা বাহিনী এবং আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তাদের হাতে নির্যাতন এবং দুর্ব্যবহারের অভিযোগ গত কয়েক সপ্তাহে বহুগুণ বেড়েছে। বাংলাদেশ সরকার ভিন্ন মত দমন এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে শাস্তি দিতে কম প্রাণঘাতী অস্ত্রসহ ব্যাপক শক্তি ব্যবহার করেছে। এটি গণতন্ত্রের নীতি, মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকারকে ক্ষুণœ করেছে।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, সম্প্রতি পুলিশের গুলিতে অন্তত দুই শ্রমিক প্রাণ হারিয়েছেন। বিক্ষোভের সময় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। আমরা অবিলম্বে বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা ও অতিরিক্ত শক্তির ব্যবহার বন্ধ করতে এবং মত প্রকাশ ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের স্বাধীনতাকে সমুন্নত রাখার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই। আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের অবসান ঘটাতে বাংলাদেশ সরকারের সাথে কাজ করার আহ্বান জানাই। মানবাধিকার রক্ষায় নিজেদের অঙ্গীকার বজায় রাখা এবং বাংলাদেশের জনগণের মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করা বিশ্ব সম্প্রদায়ের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে, জাতিসঙ্ঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোকে অবশ্যই বাংলাদেশের ওপর ইউনিভার্সাল পিরিয়ডিক রিভিউতে (ইউপিআর) এই উদ্বেগগুলো উত্থাপন করতে হবে। আগামী ১৩ নভেম্বর এটি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
বিবৃতিতে মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলেছে, আমরা বাংলাদেশের জনগণের ন্যায়সঙ্গত, গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টার সাথে একাত্মতা প্রকাশ করছি। একই সাথে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে সহিংসতা, দমন-পীড়ন এবং হুমকির চলমান চক্রের অবসানের পাশাপাশি নির্বিচারে গ্রেফতার হওয়া সবার অবিলম্বে মুক্তির আহ্বান জানাচ্ছি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা