২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৭ পৌষ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

নমনীয়তা দেখাবে না আওয়ামী লীগ

-

বিএনপির আন্দোলনের কঠোরতায়ও কোনোভাবেই নমনীয় নীতি দেখাবে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বিশ্বের প্রভাবশালী রাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি বা নিষেধাজ্ঞা আসলেও তা আমলে না নিয়ে উড়িয়ে দিচ্ছেন দলটির প্রধান। ভিসানীতি ও নিষেধাজ্ঞার প্রভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মনোবল যাতে না ভাঙে সেজন্য সরকারের তরফ থেকেও পেশাগত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনে নানাভাবে উৎসাহ দেয়া হচ্ছে। অপরদিকে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপির সরকার পতনের এক দফার চলমান আন্দোলনকেও কঠোরভাবে দমনের চিন্তাভাবনা নিয়ে এগোচ্ছে সরকারি দল। এজন্য তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত সব পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি দলীয়ভাবে চোখ কান খোলা রেখে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায় সূত্রে জানা গেছে।

আওয়ামী লীগ মনে করে, গত এক দশকে বেশ কয়েকবার বিএনপি তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলতে চেয়েছে কিন্তু আন্দোলনের ঠিক চূড়ান্ত ধাপে গিয়ে হোঁচট খেয়েছে দলটি। সর্বশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সরকার পতনের এক দফা আন্দোলন করছে বিএনপি ও তার মিত্ররা। তৃণমূল থেকে আন্দোলন জোরালোভাবে রাজধানীতে গড়ালেও শেষতক সেই আন্দোলনের গতি হারিয়ে ফেলেছে মনে করে সরকারি দল। সরকারি দলের নেতারা বলছেন, বিএনপির আন্দোলনের মূল নেতা খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ হওয়ায় রাজনীতিতে নতুন করে অবদান রাখার মতো অবস্থা উনার আর নেই। তা ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর মানবিক উদারতায় গুলশানের বাসায় থাকলেও তিনি এক প্রকার কারাগারেই রয়েছেন। সেই জায়গা থেকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে গেলেই আইনি বাধার মুখে পড়তে হবে বিএনপি নেত্রীকে। ফলে আগামী দিনের রাজনীতিতে কোনোভাবেই সক্রিয় হওয়ার সুযোগ বিএনপি নেত্রীর নেই। আর বিএনপির অপর নেতা তারেক রহমান বিদেশে বসে যতই কঠোর আন্দোলনের হুমকিধমকি দিক না কেন সেই আন্দোলনের সফলতা তিনি দেখবেন না। এর কারণ হিসেবে নেতারা বলছেন, বিএনপির শীর্ষ নেতাদের যারা আন্দোলন পরিচালনা করছেন তাদের দুয়েকজন তারেক রহমানকে পছন্দ করেন না। এজন্য টেমস নদীর ওপার থেকে আন্দোলনের কঠোর হুমকি দিয়ে নির্দেশ দেয়ার পরও বাস্তবায়নে কিছুটা হলেও ধীরগতি চলে আসে। আবার কেউ কেউ নির্দেশ পালনে গড়িমসি করে। আর রাজনৈতিক বিচক্ষণতা দিয়ে এই সুযোগটা আওয়ামী লীগ পুরোপুরি কাজে লাগাতে সক্ষম হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ডা: মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন নয়া দিগন্তকে বলেন, বিএনপি আন্দোলনের নামে যেসব চিন্তাভাবনা করছে এসব অবাস্তব। কখনো কি সচিবালয় কিংবা গণভবন ঘেরাও তারা করতে পারবে? তাদের কি সেই সক্ষমতা আছে? তারা গণতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন করলে সেটা জনগণও মেনে নিতে পারে। কিন্তু অগণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচনের বাইরে গিয়ে সরকার পতনের চিন্তা করলে বিষয়টি কেউই ভালোভাবে নেবে না, তাদের সাথেও কেউ থাকবে না। তাদের এই অগণতান্ত্রিক আন্দোলন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দেখবে। পাশাপাশি জনগণকে সাথে নিয়ে আমরা প্রতিহত করব। তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনের আর বেশি দেরি নাই। বিএনপির উচিত হবে, ধ্বংসাত্মক আন্দোলন বাদ দিয়ে আগামী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা। আমরা ইতোমধ্যে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নেয়া শুরু করেছি।

আওয়ামী লীগ সূত্র বলছে, বিএনপির সরকার পতনের এক দফা আন্দোলন ঘোষণা করার পরেই আন্দোলন মোকাবেলা করার জন্য সরকারের তরফ থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট পুনর্গঠনসহ নতুন নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ভিসানীতির প্রভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের যাতে মনোবল ভেঙে না পড়ে এবং আন্দোলন দমনে নমনীয় নীতি না দেখায় সেজন্যও কঠোর বার্তা দেয়ার পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বিএনপির আন্দোলন সফল হলে তাদের ঘাড়ে কী কী খড়গ আসতে পারে সে বিষয়টাও তাদের স্পষ্ট করা হয়েছে। যার ফলে মার্কিন ভিসানীতি ও নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও বিএনপির আন্দোলন দমনে কঠোরতার সর্বোচ্চ ধাপ প্রয়োগ করবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

সূত্র আরো বলছে, বিএনপির আন্দোলন দমনে গত এক দশক ধরে আওয়ামী লীগ সবচেয়ে বেশি পুলিশের ওপর নির্ভর করে আসছে। যার সুফল আওয়ামী লীগ ইতোমধ্যে পেয়েছে। তৃণমূল পর্যায়ে দীর্ঘদিন হোমওয়ার্ক করার পর গত ২৮ জুলাই রাজধানীর নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সফলভাবে মহাসমাবেশ করে বিএনপি। মহাসমাবেশ থেকে পরদিন ২৯ জুলাই ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচি দিলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক তৎপরতার ফলে মুখ থুবড়ে পড়ে বিএনপি ও তার মিত্রদের কর্মসূচি। এর আগে গত বছরের ১০ ডিসেম্বর ঢাকার নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বড় ধরনের সমাবেশ করতে চেয়েছিল বিএনপি। সারা দেশে বড় বড় কর্মসূচি পালন করে বেশ আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে দলটি। সমাবেশের কয়েক দিন আগে থেকে কয়েক লাখ নেতাকর্মীও ঢাকায় এসেছিল দলটির। সরকার পতনের জন্য ওই সমাবেশ কাজে লাগানোর চিন্তাও ছিল বিএনপি হাইকমান্ডের কারো কারো। ওই সমাবেশ অনুষ্ঠানের বেশ আগেই বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহবায়ক আমানউল্লাহ আমান এক কর্মসূচিতে বলেন, ‘আগামী ১০ ডিসেম্বরের পর দেশ চলবে খালেদা জিয়ার কথায়।’ ওই বক্তব্যের পর থেকেই আওয়ামী লীগ সরকার সতর্ক হয়ে যায়। এ ছাড়া সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে সরকার এও জানতে পারে, ১০ ডিসেম্বর বিএনপিকে নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে দেয়া হলে সরকারের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। এমন তথ্য উঠে আসায় সমাবেশের একদিন আগেই বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ অর্ধশতাধিক নেতাকে কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ। পরে অবশ্য রাজধানীর গোলাপবাগের গরুর হাটে গিয়ে সমাবেশ করতে পারলেও গুরুত্ব হারায় সমাবেশ।

আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায় মনে করে, ভিসানীতি ও নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে সক্ষম হয়েছে। ভবিষ্যতেও বিএনপি সরকার পতনের এক দফার আন্দোলন চাঙ্গা করলে বা সরকারের যেকোনো স্থাপনা ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচি গ্রহণ করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করবে। পাশাপাশি দলীয়ভাবে নেতাকর্মীরা প্রস্তুত থাকবে।

এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণবিষয়ক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন নয়া দিগন্তকে বলেন, বিএনপি তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে পারে, এতে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। তবে আন্দোলনের নামে জ্বালাও পোড়াও করলে, পেট্রলবোমা মারলে, অগ্নিসন্ত্রাস করলে, মানুষের শান্তি বিনষ্ট করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তা কঠোর হস্তে দমন করবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা কোনো পাল্টা কর্মসূচিতে যাবো না। সামনে নির্বাচন, সেই নির্বাচনের প্রস্তুতি আমরা গ্রহণ করছি। পাশাপাশি নির্বাচন বানচাল করার অপচেষ্টা কেউ করতে আসলে সেটা প্রতিহত করা হবে।


আরো সংবাদ



premium cement