০৮ জুলাই ২০২৪, ২৪ আষাঢ় ১৪৩১, ১ মহররম ১৪৪৬
`
অতিবর্ষণ, জোয়ার ও ঢলের পানিতে পরিস্থিতির অবনতি

চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে ১০ লাখ মানুষ পানিবন্দী : ৪ জনের মৃত্যু

ঢলের পানিতে তলিয়ে গেছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়ক : নয়া দিগন্ত -

- চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়ক বন্ধ
-৩৫৯ স্থানে পাহাড় ধস
-সাজেকে ৩০০ পর্যটক আটকা
-আজ ও কাল ৪ জেলায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা

প্রবল বর্ষণ, পাহাড়ি ঢল ও জোয়ারের পানিতে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের জলাবদ্ধতা ও বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারসহ এসব এলাকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার প্রায় ১০ লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। হাজার হাজার মানুষকে বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে নেয়া হয়েছে। কক্সবাজারে পানিতে ডুবে ও সাপের দংশনে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। রাঙ্গামাটিতে ৩৫৯ স্থানে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। বরকলে পানিতে ডুবে একজন নিখোঁজ রয়েছে। পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। ফেরিঘাটের পিলার পানির তোড়ে উপড়ে যাওয়ায় বান্দরবান-রাঙ্গামাটি সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। সাজেকে ৩০০ পর্যটক আটকা পড়েছেন। বর্ষণ ও জলাবদ্ধতার কারণে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি এই চার জেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আজ ও আগামীকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ দিকে সোমবার রাতে লোহাগড়ায় বানের পানিতে বিজিসি ট্রাস্ট ভার্সিটির ছাত্র জুনাইদুল ইসলাম জারিফ ভেসে গেছে। গতকাল তার লাশ পাওয়া গেছে।

পটিয়া-চন্দনাইশ (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা জানান, একটানা কয়েক দিনের ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে চট্টগ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে প্রায় সাড়ে ছয় লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া গতকাল দুপুর থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে ঝুঁকি নিয়ে অল্পবিস্তর যানবাহন চলাচল করতে পারছে।
গত সোমবার রাত ১২টার পরে ভারী বর্ষণের সাথে অস্বাভাবিক জোয়ার ও পাহাড়ি ঢলে চট্টগ্রাম কক্সবাজার মহাসড়কের চন্দনাইশ উপজেলার কসাইপাড়া এলাকায় মহাসড়কের ওপর দিয়ে ৬ থেকে ৭ ফুট উঁচু ঢলের পানি প্রবাহিত হওয়ায় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
মঙ্গলবার দুপুরে সাগরে ভাটা শুরু হওয়ার পর থেকে পানির উচ্চতা কিছুটা কমলে বেলা ২টার পর থেকে ঝুঁকি নিয়ে অল্প বিস্তর যানবাহন চলাচল শুরু করে ওই সড়কে। তবে আজ রাতে পুনরায় জোয়ার আসলে পুনরায় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
এ দিকে কয়েক দিনের ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে দক্ষিণ চট্টগ্রামসহ সমগ্র জেলায় অন্তত সাড়ে ছয় লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এতে চট্টগ্রাম জেলায় স্বাভাবিক জীবনযাপন স্থবির হয়ে পড়েছে।
জেলা পুনর্বাসন ও ত্রাণ কর্মকর্তা সাইফুল্লাহ মজুমদার গতকাল সন্ধ্যায় নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে চট্টগ্রাম জেলার ১ লাখ ৪০ হাজার ১২ পরিবারের ৬ লাখ ৩৫ হাজার ১৩০ জন মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ২৫ টন চাল, জেলার ১৫টি উপজেলায় ৩৩০ টন চাল এবং পটিয়া সাতকানিয়াসহ তিনটি পৌরসভায় ১৫ টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন।

গত কয়েক দিনের ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে চট্টগ্রামের চন্দনাইশ ও সাতকানিয়া উপজেলা।
এই দুই উপজেলাতেই কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। গতকাল বিকেলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সরকারি কমিশনার ভূমি জিমরান মোহাম্মদ সায়েক জানিয়েছেন উপজেলায় প্রায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এ উপজেলায় সোমবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত ২০ টন চাল, ৫০ হাজার টাকা শুকনো খাবার স্যালাইন পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করা অব্যাহত রয়েছে।
বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাইদুজ্জামান চৌধুরী জানিয়েছেন উপজেলার প্রায় ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এ উপজেলায় ২৫ টন চাল ও শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
পটিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার আতিকুল মামুন জানিয়েছেন উপজেলার প্রায় ৫৩ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এ উপজেলায় ৩০ টন চাল, শুকনা খাবার স্যালাইন ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট সরবরাহ করা হচ্ছে বলে গতকাল রাতে জানিয়েছেন ।

পানি উন্নয়ন বোর্ড চট্টগ্রাম ডিভিশন-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী শওকত ইবনে সাহীদ জানিয়েছেন, চট্টগ্রামের চন্দনাইশ সাতকানিয়া উপজেলার ওপর দিয়ে গড়ে ওয়াটার লেভেল থেকে ৬ দশমিক ৮৮ মিটার উঁচু দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
এ দিকে গতকাল সকাল থেকে দোহাজারী বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন গ্রিড অফিসে অস্বাভাবিক জোয়ারের পানি প্রবেশ করায় জেলা সাতকানিয়া লোহাগাড়া ও চন্দনাইশ উপজেলা সেই সকাল থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। এতে তিন উপজেলার প্রায় আড়াই থেকে তিন লাখ গ্রাহক বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছে।
এ দিকে গত কয়েক দিনের ভারীবর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে হাজার হাজার পুকুরের মাছের প্রজেক্ট তলিয়ে গেছে, এ ছাড়া জেলার রোপণ করা আউশ ধান ও বিস্তীর্ণ আমনের বীজতলা শাকসবজিক্ষেত তলিয়ে রয়েছে।

বান্দরবান-রাঙ্গামাটি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন
রাঙ্গুনিয়া-কাপ্তাই (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা জানান, পাহাড়ি ঢল ও কর্ণফুলী নদীর স্রোতে ফেরি বাঁধার দুইটি পিলার উপড়ে যাওয়ায় চন্দ্রঘোনা-রাইখালী ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এতে বান্দরবান-রাঙ্গামাটি সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সড়ক যোগাযোগ বন্ধ থাকায় দুইপাড়ের শতশত যানবাহন আটকা পড়ে মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।
কক্সবাজার অফিস জানায়, টানা ভারীবর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কক্সবাজারের বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। গত সোমবার রাতের পর থেকে আরো নতুন নতুন এলাকায় পাহাড়ি ঢলের পানি ঢুকে প্লাবিত হয়েছে। নদী ও খালের বেড়িবাঁধ ভেঙে ঢলের পানি ঢুকে পড়ছে গ্রামে।

জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী জেলার চকরিয়া, পেকুয়া, রামু সদর উপজেলার ৬০টি ইউনিয়নের শত শত গ্রাম বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। এতে এসব এলাকার তিন লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। মাতামুহুরী নদী ও বাকখালী নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পাহাড়ি ঢলের তোড়ে মাতামুহুরি নদীর কমপক্ষে ১০টি পয়েন্টে বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। এসব ভাঙন দিয়ে লোকালয়ে ঢলের পানি ঢুকে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। মাতামুহুরি নদীর পার্শ্ববর্তী এলাকার বাসিন্দারা চরম ভোগান্তিতে রয়েছে বলে জানা গেছে। পেকুয়ায় সাপের দংশনে নেছার আহমেদ নামে একজন রামু উপজেলার রাজারকুলে সামিয়া নামে এক শিশু ঢলের পানিতে ভেসে গিয়ে মারা গেছে। চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার বন্যাাকবলিত এলাকার সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে আশ্রয়কেন্দ্র ঘোষণা করা হয়েছে। এই দুই উপজেলায় প্রায় ৫০ হাজার মানুষ সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নিয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।

উখিয়া (কক্সবাজার) সংবাদদাতা জানান, তিন দিনের একটানা ভারীবর্ষণে কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের সাত হাজারের বেশি মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে ফসলি জমি-চিংড়িঘেরও। প্রাণহানি রোধে পাহাড়ি ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের সরে যেতে মাইকিং করছে উপজেলা প্রশাসন। তিন দিনের একটানা ভারী বর্ষণের কারণে উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলায় পাহাড়ি ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের অন্যত্র সরে যেতে বলা হচ্ছে। এরই মধ্যে গত সোমবার উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাহাড় ধসে মা ও মেয়ের মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালে আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন আছেন আরো একজন। ৮ এপিবিএনের কমান্ডিং অফিসার মো: আমির জাফর বলেন, সোমবার সাড়ে ৫টার দিকে পানবাজার এলাকার ৯ এর এ/৬ ব্লকের পাহাড়ের পাশে রোহিঙ্গা আনোয়ার ইসলামের শেডের ওপর পাহাড় ধসে পড়ে। এতে আনোয়ার ইসলামের স্ত্রী জান্নাত আরা (২৮) ও তার মেয়ে মাহিম আক্তার (২) নিহত হন। আনোয়ার ইসলামও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
এ দিকে টেকনাফ উপজেলার হ্নীলা ইউনিয়নের মৌলভী বাজার, ওয়াব্রাং, চৌধুরীপাড়া, রঙ্গিখালী লামারপাড়া, সাবরাং ইউনিয়নের ফতে আলীপাড়া, বাহারছাড়াপাড়া, কুড়া বুইজ্জ্যাপাড়া, মুন্ডার ডেইলপাড়া গ্রামের বসবাসকারী আড়াই হাজার পরিবারের পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি টেকনাফ পৌরসভার ১২টি ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে ধসের ঝুঁকিতে রয়েছে ২০ হাজার মানুষ। ভারী বৃষ্টিতে পাহাড়ধসে এসব মানুষের নতুন করে প্রাণহানির আশঙ্কা করা হচ্ছে।

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ
উখিয়া (কক্সবাজার) সংবাদদাতা আরো জানান, অতিবৃষ্টি ও মাতামুহুরী নদীতে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে বান্দরবানের লামা, কক্সবাজারের চকরিয়া ও পেকুয়ায় বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে চন্দনাইশ সড়কে জলাবদ্ধতায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
একটানা তিন দিনের ভারী বর্ষণ ও মাতামুহুরী নদীতে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে পার্বত্য বান্দরবানের লামা, কক্সবাজারের চকরিয়া ও পেকুয়ায় বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে তিন উপজেলার সাড়ে ৫ লাখ মানুষ এখন পানিবন্দী অবস্থায় দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন। অন্য দিকে কক্সবাজার সদর উপজেলার সাথে সরাসরি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। অভ্যন্তরীণ সড়কগুলো কয়েক ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে। লামা বাজার ৮ ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে। সরকারি-বেসরকারি অফিস, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। এই অবস্থায় রান্না করতে না পারায় খাবার ও বিশুদ্ধ পানির তীব্র সঙ্কটে পড়েছেন এলাকার মানুষ। কক্সবাজার আবহাওয়া অধিদফতরের সহকারী আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান জানিয়েছেন, সোমবার রাত ৯টা পর্যন্ত গত ২৩ ঘণ্টায় ১৪৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বৃষ্টিপাত আগামী ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানান তিনি। এ দিকে অসহায় পানিবন্দী মানুষের কাছে ছুটে গেছেন মানবতার সংগঠন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
ভারী বৃষ্টির পানিতে বান ভেঙে প্লাবিত হওয়া, পেকুয়া উপজেলাধীন, পূর্ব মেহেরনামা এলাকায় পানিবন্দী পরিবারের উদ্ধারকাজে অংশগ্রহণ করে তাদের মাঝে শুকনো খাবার বিতরণ করেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী পেকুয়া উপজেলা শাখার নেতৃবৃন্দ।

এতে উপস্থিত ছিলেন পেকুয়া উপজেলা জামায়াতে সেক্রেটারি, মাওলানা ইমতিয়াজ উদ্দিন, পেকুয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান, জননেতা অধ্যাপক নুরুজ্জামান মঞ্জু, উপজেলা শিবিরের সভাপতি, জামায়াত ও শিবিরের উপজেলা এবং স্থানীয় অন্যান্য নেতা।
রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি জানান, ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে রাঙ্গামাটির বরকল বিলাইছড়ি ও বাঘাইছড়ি উপজেলার ভারত সীমান্তবর্তী বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বরকল উপজেলার মাইসছড়িতে পাহাড়ি ঢলে পানিতে ডুবে এক তরুণ নিখোঁজ রয়েছে।

বরকলের ঠেগা, খুব্বাং, বড় হরিণামুখ, ভাল্যক্যাছড়ি, ছোট হরিণা ও ভুষণছড়ার শত শত ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। সেখানে কোথাও কোনো প্রতিষ্ঠানকে আশ্রয়কেন্দ্র ঘোষণা করেনি উপজেলা প্রশাসন। স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে আশ্রয় নিচ্ছেন দুর্গত মানুষ।
ছোট হরিণার জুনোপহর উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুরেশ সুর চাকমা জানান, ওই এলাকার সব ক’টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। সীমান্তবর্তী ঠেগা ও খুব্বাং এলাকার অবস্থা আরো ভয়াবহ জানিয়ে তিনি বলেন, ভয়াবহ ও বিপজ্জনক পাহাড়ি ঢল সবকিছু ধূলিস্মাৎ করে দিয়ে প্রবলবেগে নেমে আসছে। নদী তীরবর্তী বাগান বাগিচা, তে-খামার বসতবাড়ি সব ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।
বিলাইছড়ি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীরোত্তম তঞ্চঙ্গ্যা জানান, উপজেলার ফারুয়া ইউনিয়ন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পাহাড়ি ঢলে রাইংখ্যাং নদীর তীব্র পানির স্রোতে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বহু মানুষ। কেংড়াছড়িতে পাহাড় ধস হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতার জন্য জেলা প্রশাসন থেকে ফারুয়া ইউনিয়নের জন্য ১০ মেট্রিকটন ও অন্যান্য এলাকার জন্য ১০ মেট্রিকটন খাদ্য শস্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

এ দিকে মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সরেজমিনে দেখা গেছে রাঙ্গামাটি শহরের ভেদভেদী-রাঙাপানি সড়কের তপোবন আশ্রম সংলগ্ন রাস্তার একপাশে মাটি ধসে গেছে। কাপ্তাই আসামবস্তি সড়কের বড় আদম এলাকায়ও পাহাড় ধস হয়েছে। রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাপছড়ি ইউনিয়নের দেপেফাছড়ি এলাকায়ও মূল সড়কের পাশে পাহাড়ের মাটি ধসে পড়েছে।
এ দিকে কর্ণফুলী নদীতে তীব্র স্রোতে ফেরির পন্টুনের লোহার দড়ি ছিঁড়ে যাওয়ায় সোমবার বেলা ২টা থেকে রাঙ্গামাটি-বান্দরবান সড়কের চন্দ্রঘোনা ফেরি পারাপার বন্ধ করেছে। পন্টুনের ছিঁড়ে যাওয়া দড়ি মেরামত ও নদীর তীব্র স্রোত না কমা পর্যন্ত ফেরি পারাপার বন্ধ রেখেছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতর।
এ দিকে রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলায় টানা ছয় দিনের ভারী বৃষ্টিতে আকস্মিক বন্যায় বাঘাইহাট সাজেক সড়কের নিচু অঞ্চল বাঘাইহাট বাজার ও মাচালং সেতু প্লাবিত হয়ে যান চলাচল বন্ধ থাকায় সাজেকে আটকা পরেছে দেড় শতাধিক পর্যটক।

এ ছাড়া মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) সকালে মারিশ্যা দীঘিনালা সড়কের বলপেইয়া আদাম এলাকায় পাহাড় ধসে উপজেলা সদরের সাথেও যানচলাচল বন্ধ রয়েছে। সড়কের মাটি সরাতে কাজ করছে বাঘাইছড়ি থানার পুলিশের একটি উদ্ধারকারী টিম ও যুব রেড ক্রিসেন্ট সদস্যদের একটি টিম।
এ দিকে টানা বৃষ্টিতে কাঁচালং নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে উপজেলার নি¤œাঞ্চলসমূহ প্লাবিত হয়েছে। এতে ফসল ও মাছের খামারিদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে এক হাজার পাহাড়ি-বাঙালি পরিবার। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খোলা হয়েছে ৪৬টি আশ্রয়কেন্দ্র। এরই মধ্যে অনেক পরিবার আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছে।
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি জানান, টানা বর্ষণের কারণে খাগড়াছড়ির চেঙ্গী মাইনীসহ পাহাড়ি ছোট বড় নদীতেগুলোতে হঠাৎ অস্বাভাবিকভাবে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে নদীর তীরবর্তী অঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়ে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে সহস্রাধিক পরিবার।
জেলা শহরের মুসলিমপাড়া, গঞ্জপাড়া, খবংপুড়িয়া, বাঙ্গালকাটি, বটতলী, কালাডেবা প্রভৃতি এলাকার প্রায় ছয় শতাধিক পরিবারসহ দীঘিনালার মেরুং ইউনিয়নের প্রায় চার শতাধিক পরিবার পানিতে আটকা পড়েছে।
এ দিকে গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে খাগড়াছড়ি জেলা শহরের শালবন, কলাবাগান ও সবুজবাগ ছাড়াও মাটিরাঙ্গায় পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। তবে এতে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
ইতোমধ্যে খাগড়াছড়ির মুসলিমপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে ২০টির মতো পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। এ ছাড়াও দীঘিনালার পাঁচটি কেন্দ্রে ১০০ পরিবার আশ্রয় নিয়েছে বলে জানা গেছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement