০৮ জুলাই ২০২৪, ২৪ আষাঢ় ১৪৩১, ১ মহররম ১৪৪৬
`

বিক্ষোভকারীদের ওপর দমন পীড়নে উদ্বেগ যুক্তরাষ্ট্রের

অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন উৎসাহিত করে জাতিসঙ্ঘ
-


বাংলাদেশে বিক্ষোভকারীদের ওপর দমন-পীড়ন ও রাজনৈতিক সহিংসতায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি শান্তিপূর্ণ সমাবেশের নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টির জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
গতকাল ওয়াশিংটনে নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র ম্যাথিও মিলার এক প্রশ্নের জবাবে এ আহ্বান জানান। তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে ঢাকায় লাখো মানুষ বিক্ষোভ মিছিল করেছে। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক মিডিয়া রিপোর্টে বলা হয়েছে, শনিবার পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের সদস্যরা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে অংশ নেয়া মানুষ এবং বিরোধী নেতাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। এতে শীর্ষস্থানীয় বিরোধী নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। এ পরিস্থিতিকে আপনি কিভাবে মূল্যায়ন করবেন? বাংলাদেশে বিশ্বাসযোগ্য ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর কী পদক্ষেপ নেবে?

জবাবে ম্যাথিউ মিলার বলেন, আমরা সপ্তাহান্তের রাজনৈতিক বিক্ষোভকে ঘিরে বাংলাদেশে দমন-পীড়ন ও রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনায় উদ্বিগ্ন। যুক্তরাষ্ট্র এসব সহিংসতার পুঙ্খানুপুঙ্খ, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্ত করতে এবং জড়িত অপরাধীদেরকে জবাবদিহির আওতায় আনতে বাংলাদেশ সরকারকে উৎসাহিত করে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনগণ যেন শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করতে পারে এবং তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করতে পারে, সে জন্য নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টির জন্য আমরা আহ্বান জানাচ্ছি। একই সাথে মৌলিক স্বাধীনতা ও আইনের শাসনকে সম্মান করতে এবং সহিংসতা, হয়রানি ও ভীতি প্রদর্শনের মতো কাজ থেকে বিরত থাকতে আমরা সব পক্ষকে আহ্বান জানাই।
মুখপাত্র আরো বলেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সবার দায়িত্ব ও প্রতিশ্রুতির ওপর নির্ভর করে। এখানে ভোটার, রাজনৈতিক দল, যুব সমাজ ও পুলিশ- সবার দায়িত্ব রয়েছে। সহিংস রাজনৈতিক পরিবেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না।

অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন উৎসাহিত করে জাতিসঙ্ঘ : বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ, বিশ্বাসযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন উৎসাহিত করে জাতিসঙ্ঘ। এ কথা জানিয়েছেন জাতিসঙ্ঘের মহাসচিবের উপ-মুখপাত্র ফারহান হক।
গতকাল নিউ ইয়র্কে নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে একজন সাংবাদিক জানতে চান, যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের কিছু সদস্য জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার কমিশন থেকে বাংলাদেশকে বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছেন। এ দাবির বিষয়টি আপনি জানেন কি না? এ ছাড়া তথাকথিত নাগরিক সমাজের কিছু প্রতিনিধি ও যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচিত কিছু ব্যক্তি বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন জাতিসঙ্ঘের তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠানের আহ্বান জানিয়েছেন। অথচ বাংলাদেশ সরকার সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এর ফলে বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলো অবাধে সভা-সমাবেশ করছে। এ পরিস্থিতিতে জাতিসঙ্ঘের অবস্থান কী?
জবাবে ফারহান হক বলেন, আপনার প্রশ্নে দু’টি অংশ আছে। প্রথমত, নির্বাচন নিয়ে। বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ, বিশ্বাসযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন উৎসাহিত করে জাতিসঙ্ঘ। দ্বিতীয়ত, জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের সদস্যপদের বিষয়ে মন্তব্য করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। এ বিষয়ে জাতিসঙ্ঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলো সিদ্ধান্ত নেয়। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রতি বাংলাদেশ সরকার ও দেশের জনগণ যে উদারতা দেখিয়েছে, জাতিসঙ্ঘ তার প্রসংশা করে। আমরা আশা করবো, এই ধারা অব্যাহত থাকবে।

বিরোধী মতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া প্রয়োজন : বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের জন্য বিরোধী মতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন শান্তিপূর্ণ সমাবেশ ও সংগঠনের স্বাধীনতাবিষয়ক জাতিসঙ্ঘের স্পেশাল র্যাপোর্টিয়ার ক্লেমো ভউল। এক টুইট বার্তায় তিনি লিখেছেন, চলমান বিক্ষোভ সমাবেশে সঙ্ঘাত ও গ্রেফতারের মাত্রা বাড়ছে। এ অবস্থায় সব পক্ষকে সংযত হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। দায়িত্বশীল সংস্থাগুলোকে বলব, তারা যেন সভা-সমাবেশের অধিকার নিশ্চিতে কাজ করে এবং অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ না করে। সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের জন্য বিরোধী মতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া প্রয়োজন।
বাংলাদেশের পতাকার একটি চিত্র জুড়ে দিয়ে টুইট করেন জাতিসঙ্ঘের এই স্পেশাল র্যাপোর্টিয়ার। গত ডিসেম্বরে বিএনপির রাজনৈতিক কর্মসূচিতে দমন-পীড়ন এবং ২০২১ সালের মে মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকালে বিক্ষোভকারীদের দমন নিয়ে পৃথক বিবৃতি দিয়েছিলেন তিনি।

 


আরো সংবাদ



premium cement