ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা ছাড়াল ২০০
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ২৬ জুলাই ২০২৩, ০০:০০
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব এস এম নাজিয়া সুলতানা মারা গেছেন। গতকাল সকালে রাজধানীর বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। তিনি আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। একইভাবে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে রাজধানীর আনোয়ার খান মেডিক্যাল কলেজের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী সৈয়দা সাদিয়া ইয়াসমিন রাইসার গতকাল ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া গত রোববার রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান বাংলাদেশ ব্যাংকের পাবলিক অ্যাকাউন্ট ডিপার্টমেন্টের সহকারী পরিচালক আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা কান্তা বিশ্বাস।
এভাবে প্রতিদিনই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে নগরবাসী। এডিস মশাবাহিত এ রোগের হাত থেকে রেহাই মিলছে না শিশু থেকে বৃদ্ধ কারোরই। ফলে দেশের হাসপাতালগুলোতে এখন চলছে কান্নার রোল।
স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০১ জনে। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন দুই হাজার ৪১৮ জন, যা এক দিনে এ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে গত সোমবার এক দিনে দুই হাজার ২৯৩ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
গতকাল স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের ইনচার্জ ডা: মো: জাহিদুল ইসলাম সই করা ডেঙ্গুবিষয়ক প্রতিবেদনে জানানো হয়, গত সোমবার সকাল ৮টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন দুই হাজার ৪১৮ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা এক হাজার ১৬২ জন ও ঢাকার বাইরের এক হাজার ২৫৬ জন। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ২৫ জুলাই পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৩৭ হাজার ৬৮৮ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ২২ হাজার ৩৪৯ জন। ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন ১৫ হাজার ৩৩৯ জন। একই সময়ে হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২৯ হাজার ৫৬০ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ১৭ হাজার ৫৪১ জন এবং ঢাকার বাইরের ১২ হাজার ১৯ জন।
গত বছর ডেঙ্গুতে দেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ ২৮১ জন মারা যান। আর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ৬২ হাজার ৩৮২ জন। ২০২১ সালে সারা দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ২৮ হাজার ৪২৯ জন। ওই বছর দেশব্যাপী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ১০৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
এদিকে ডেঙ্গু আক্রান্ত ছাড়াও এখন জ্বর, ঠাণ্ডাসহ নানা রোগে আক্রান্তের হার বেড়েছে। বেশিরভাগ বাড়িতেই কেউ না কেউ এসব রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। আর যারা ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের নানা ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। আর পরিবারের সদস্য ও আত্মীয় স্বজনদের ভোগান্তির যেন শেষ নেই। আর চরম আকারে এ রোগ ছড়িয়ে পড়ায় সুযোগ সন্ধানীদেরও যেন পোয়া বারো। ডেঙ্গু আক্রান্তদের সুস্থ হতে যেসব ওষুধের প্রয়োজন হচ্ছে সে সব ওষুধের দামও বাড়িয়ে দিয়েছেন ফার্মেসি মালিকরা। এমনকি জরুরি একটি ওষুধের সাতটি ট্যাবলেটের দাম যেখানে আগে চারশ’ টাকা রাখা হতো সেখানে বর্তমানে ওই একটি ট্যাবেলেটের দাম রাখা হচ্ছে পাঁচশ টাকা। আর ডাবের দাম এখন ঠেকেছে দেড়শ’ টাকায়। ১২০ টাকার নিচে ডাব পাওয়া যেন দুষ্কর।
ডেঙ্গুর প্রকোপ রোধে জনসচেতনতামূলক র্যালি : রাজধানীতে এডিস মশা নিধন ও ডেঙ্গুর প্রকোপ রোধে জনসচেতনতামূলক র্যালি অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বিকেলে রাজধানীর মোহাম্মদপুরে অনুষ্ঠিত এ র্যালিতে ৩১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শফিকুল ইসলাম সেন্টুসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ এবং গণমাধ্যম কর্মীরা অংশ নেন। র্যালিটি মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন এলাকা প্রদক্ষিণ করে। এ সময় এডিস মশা নিধনে ব্লিচিং পাউডার, কেরোসিন, ফ্লোর ক্লিনার, সাবান, হারপিক, ক্লিনার এবং মশক কর্মীদের জন্য গামবুট ও মশা মারার ওষুধ বিরতণ করা হয়। এছাড়াও কর্মসূচির মধ্যে ওয়ার্ডের বিভিন্ন বাড়ির দুই পাশের মধ্যের প্যাসেজে ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করাসহ মশার ওষুধ ছিটানো হয়।
র্যালিপূর্বক সমাবেশে বক্তারা বলেন, এডিস মশা বা ডেঙ্গু আজ জাতীয় সমস্যা। তা সম্মেলিতভাবে মোকাবেলা করতে হবে। এরজন্য বেশি প্রয়োজন জনসচেতনতা। এছাড়া মশা নিধন ওষুধ কতটুকু কার্যকর এ বিষয়েও সরকারকে নজর দিতে হবে।
স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর শফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে র্যালিতে অংশ নেন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মাওলানা জালাল উদ্দিন আহমেদ, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ডিবেট ফর ডেমোক্র্যাসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের জোন-৫ এর স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা: মো: ওয়াসিম, বাইতুল ফালাহ মাদরাসা ও এতিমখানার প্রিন্সিপাল মাওলানা মো: আবু তালহা, মোহাম্মদপুর টাউনহল বাজার বণিক সমিতির সভাপতি মো: লুৎফর রহমান বাবুল, বাড়ি মালিক সমিতির সভাপতি মো: লিপটন প্রমুখ।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা