০৮ জুলাই ২০২৪, ২৪ আষাঢ় ১৪৩১, ১ মহররম ১৪৪৬
`

ঝুঁকিভেদে ব্যাংকের মূলধন বাড়ানোর নির্দেশ

চাপে পড়ে যাচ্ছে বেশি ঋণখেলাপির ব্যাংকগুলো
-


বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো যেসব উদ্যোক্তা পরিচালকের মধ্যে ঋণ বিতরণ করছে, সে সব ঋণগ্রহীতা উদ্যোক্তা পরিচালক ও ব্যবসায়ীদের অনেকেই ওই ঋণ ফেরত দিচ্ছেন না। ফলে ব্যাংকের পুঞ্জীভূত মন্দমানের খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। যার ফলে ব্যাংকের মূলধন কঠামো দুর্বল হয়ে ঝুঁকির মাত্রা বাড়িয়ে দিচ্ছে। ব্যাংকের মূলধন কাঠামো শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে আসতে ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে মূলধন বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বলা হয়েছে, যে ব্যাংকের ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদ যত বেশি ওই ব্যাংকের তত বেশি হারে মূলধন সংরক্ষণ করতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ নির্দেশনা ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে গত জুন থেকেই কার্যকর করতে হবে।

এ বিষয়ে গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে দেয়া ব্যাংকগুলোর জন্য নতুন এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী (ব্যাসেল-৩) ব্যাংকগুলোর পরিশোধিত মূলধন ৫০০ কোটি টাকা হারে সংরক্ষণ করতে হবে। তবে ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে মূলধন সংরক্ষণ আরো বেশি হারে করতে হবে। কোনো ব্যাংকের ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদ ১০ শতাংশ অথবা ৫০০ কোটি টাকা এ দুইয়ের মধ্যে যেটি বেশি তাই সংরক্ষণ করতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ নির্দেশনার কারণে যে ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেশি হলে অর্থাৎ ছয় হাজার কোটি টাকা হলে ১০ শতাংশ হারে ৬০০ কোটি টাকা সংরক্ষণ করতে হবে। এতে চাপে পড়ে যাবে অপেক্ষাকৃত বেশি খেলাপি ঋণধারী ব্যাংকগুলো।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, খেলাপি ঋণভেদে ব্যাংকগুলোর ২৫ শতাংশ থেকে শতভাগ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। কোনো ঋণ মন্দ মানের খেলাপি হলে ওই ঋণের বিপরীতে শতভাগ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। প্রভিশন সংরক্ষণ ব্যর্থ হলে ব্যাংকগুলোর মূলধন কাঠামো দুর্বল হয়ে যায়। আবার খেলাপি ঋণ বাড়লে ব্যাংকগুলোর ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদ বেড়ে যায়। আগে ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদ অনুযায়ী ব্যাংকগুলোর কমপক্ষে ৪০০ কোটি টাকা মূলধন সংরক্ষণ করতে হতো। সংশোধিত ব্যাংক কোম্পানি অনুযায়ী তা বাড়িয়ে এখন ৫০০ কোটি টাকা করা হয়েছে। আগে বলা হয়েছিল ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের ১০ শতাংশ আর ৪০০ কোটি টাকা এ দুয়ের মধ্যে যেটি বেশি তা সংরক্ষণ করতে হবে। কিন্তু নতুন নীতিমালায় বলা হয়েছে, ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের ১০ শতাংশ এবং ন্যূনতম মূলধন ৫০০ কোটি টাকা এ দুয়ের মধ্যে যেটি বেশি তা সংরক্ষণ করতে হবে।

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, অনেক ব্যাংকের পরিচালক নামে বেনামে ব্যাংক থেকে ঋণ বের করে নিচ্ছেন। কিন্তু ওই অর্থ আর ফেরত দিচ্ছেন না। আগে ব্যবসায়ীরা ঋণ নিয়ে তা থেকে একটি অংশ প্রকৃতপক্ষে ঋণখেলাপি হতেন, আবার কিছু ইচ্ছেকৃত ঋণখেলাপি হতেন। বছরের পর বছর এ ইচ্ছেকৃত ঋণখেলাপিরা নানা কৌশলে ঋণ পরিশোধ না করে বছরের পর বছর পার পেয়ে যেতেন। কিন্তু এখন এ ইচ্ছেকৃত ঋণখেলাপির সাথে কিছু ব্যাংকের পরিচালক নামে বেনামে ঋণ নিচ্ছেন। আবার অনেক সময় এক ব্যাংকের পরিচালক অন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছেন। এভাবে পরিচালকদের একটি অংশ নিজেদের মধ্যে যোগসাজশে ঋণ ভাগ করে নিচ্ছেন। আবার তা পরিশোধও করা হচ্ছে না। এভাবেই ব্যাংকের মূলধন কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়ছে। আবার ওই সব ঋণ খেলাপিও দেখানো হচ্ছে না। এমনি পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন নির্দেশনা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা হলে ব্যাংকের মূলধন কাঠামো শক্তিশালী হবে। জনগণের আমানত সুরক্ষিত থাকবে।


আরো সংবাদ



premium cement