০৪ অক্টোবর ২০২৪, ১৯ আশ্বিন ১৪৩১,
`

নির্বাচনী বছরে পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ নিয়ে নতুন শঙ্কা

অক্টোবরে বই পৌঁছানো নিয়ে অনিশ্চয়তা
-

নির্বাচনী বছরে পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ নিয়ে নতুন শঙ্কা তৈরি হয়েছে। নির্বাচনের দুই মাস আগে অর্থাৎ আগামী অক্টোবর মাসের মধ্যে স্কুলে স্কুলে বই পাঠানোর টার্গেট থাকলেও জাতীয় পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) এখনো নানা অনিশ্চয়তায় ভুগছে। ঘোষণা অনুযায়ী, চলতি বছরের শেষে কিংবা আগামী বছরের শুরুতেই অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ফলে নির্বাচনের ডামাঢোলের আগেই স্কুলে স্কুলে পাঠ্যবই পৌঁছানোর টার্গেট থাকলেও এখনো সেভাবে কোনো প্রস্তুতিই নিতে পারেনি এনসিটিবি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে জাতীয় নির্বাচন ডিসেম্বর অথবা যদি জানুয়ারিতেও হয় তাহলে নির্বাচনী সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বই পাঠানো সম্ভব হবে না। যেকোনো ঝুঁকি এড়াতে অক্টোবরের মধ্যেই সব স্কুলে বিনামূল্যের পাঠ্যবই পাঠাতে চাইলে এনসিটিবিকে বই ছাপার কাজ শুরু করতে বিলম্বের সুযোগ নেই। যদিও সর্বশেষ তথ্যমতে জুলাই মাসের অর্ধেক চলে গেলেও এখনো পর্যন্ত অধিকাংশ শ্রেণীর পাঠ্যবই ছাপানোর টেন্ডার বা কার্যাদেশই দিতে পারেনি এনসিটিবি। শুধুমাত্র প্রাকপ্রাথমিক ও প্রথম শ্রেণীর বই ছাপার কার্যাদেশ দেয়া সম্ভব হলেও বাদবাকি অন্যান্য কোনো শ্রেণীরই বই ছাপতে কার্যাদেশ এখনো দেয়া হয়নি।

এদিকে নির্বাচনী বছর হওয়ায় এবার দুই মাস পূর্বেই সব শ্রেণীর বই ছাপানোর জন্য প্রস্তুতি নেয় এনসিটিবি। কিন্তু টেন্ডার আহ্বান ও কার্যাদেশ দেয়া নিয়ে জটিলতা তৈরি হওয়ায় এখন যথাসময়ে বই ছাপা নিয়েই অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এনসিটিবি সূত্র জানিয়েছে, আগামী শিক্ষাবর্ষের নতুন পাঠ্যবই ছাপানোর কাজ চলতি বছরের অক্টোবরের মধ্যে শেষ করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। কেননা চলতি বছরের শেষ দিকে অথবা আগামী বছরের শুরুতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। আর নির্বাচনের সময় স্কুলগুলো ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এছাড়া এই সময় রাজনৈতিক ব্যক্তিদের পোস্টার ছাপাতে ছাপাখানাগুলো ব্যস্ত থাকে। তাই আগেভাগেই নতুন বই ছাপানোর কাজ শেষ করতে চায় এনসিটিবি। মুদ্রণ শিল্প সমিতির সাবেক সভাপতি তোফায়েল খাল গতকাল নয়া দিগন্তকে জানান, নির্বাচনী বছর হলেও কাজেকর্মে এনসিটিবি এখনো চলছে সম্ভুক গতিতেই। জুলাই মাসের অর্ধেক সময় চলে গেলেও এখনো প্রাথমিকের দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণী এবং মাধ্যমিকের কোনো শ্রেণীরই পাঠ্যপুস্তক ছাপার কাজের অগ্রগতি নেই। টেন্ডার আহ্বান, কার্যাদেশ দেয়া ছাড়াও অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ এখনো বাকি রয়েছে।

তিনি জানান, প্রাথমিকের শুধুমাত্র প্রাকপ্রাথমিক ও প্রথম শ্রেণীর বই ছাপার কার্যাদেশ (ওয়ার্ক অর্ডার) দেয়া হয়েছে। ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর টেন্ডার হলেও এখনো কার্যাদেশ দেয়া হয়নি। অপরদিকে অষ্টম শ্রেণীর টেন্ডারের জন্য আগামী ১৭ জুলাই তারিখ নির্ধারিত রয়েছে। নবম ও দশম শ্রেণীর পাঠ্যবইয়ের পাঠ্যসূচি এখনো যাচাই বাছাই শেষ হয়নি। ফলে এই দুই শ্রেণীর সিডিউলই এখনো ঘোষণা করতে পারেনি এনসিটিবি। ফলে টেন্ডার আহ্বান ও সর্বনিম্ন দরদাতা নির্বাচনের পরেই দেয়া হবে কার্যাদেশ। এসব প্রক্রিয়ার কাজ শেষ করতে আরো এক মাসের মতো সময় লাগবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।

এনসিটিবির উৎপাদন নিয়ন্ত্রক প্রফেসর মো: সাইদুর রহমান গতকাল বিকেলে নয়া দিগন্তের এই প্রতিবেদককে জানান, প্রাকপ্রাথমিক ও প্রথম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের বই ছাপার কাজ শুরুর প্রস্তুতি শেষ পর্যায়ে। এখন দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণীর বই ছাপার জন্য মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি চলতি জুলাই মাসেই সম্পন্ন হবে। তিনি আরো জানান, এ বছর নির্বাচনী বছর। তাই এনসিটিবিও আগেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখছে যাতে অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর এক দু’মাস আগেই পাঠ্যপুস্তক ছাপার কাজ শেষ করা যায়। সেভাবেই পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করেছে এনসিটিবি।

অপরদিকে আগামী বছরে দ্বিতীয়, তৃতীয়, অষ্টম ও নবম এই চার শ্রেণীতে নতুন শিক্ষাক্রমের পাঠ্যবই যুক্ত হবে। এর মধ্যে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণীর বই ১৫ অক্টোবরের মধ্যে ছাপার কাজ শেষ করার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আর নবম শ্রেণী বাদে অন্যান্য শ্রেণীর বই ৩০ অক্টোবরের মধ্যে ছাপার কাজ শেষ করার টার্গেট দিয়েছে এনসিটিবি।
এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরহাদুল ইসলাম জানান, প্রাথমিকের বই ছাপানোর সবগুলো টেন্ডার হয়ে গেছে। শিগগিরই বই ছাপানোর কাজ শেষ হবে। প্রাথমিকের সব বই ১৫ অক্টোবরের মধ্যে ছাপানোর কাজ শেষ করতে ইতোমধ্যে মুদ্রন শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

অন্যদিকে আমাদের টার্গেট হচ্ছে, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর বইগুলো ১৫ অক্টোবরের মধ্যে শেষ হবে। অষ্টম শ্রেণীর বই ছাপানোর শেষ সময় ধরা হয়েছে ৩০ অক্টোবর। আর নবম শ্রেণীর বই নভেম্বরের মধ্যে ছাপানোর কাজ শেষ করার পরিকল্পনা হয়েছে।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement