ঋণখেলাপিদের আবারো বড় ছাড়
- আশরাফুল ইসলাম
- ২১ জুন ২০২৩, ০০:১৩, আপডেট: ২১ জুন ২০২৩, ০৫:৪৭
-কিস্তির অর্ধেক পরিশোধ করলেই খেলাপি থেকে মুক্তি
-ব্যাংকের নতুন ঋণ দেয়ার সক্ষমতা কমে যাবে
-নগদ টাকার সঙ্কট বাড়ার শঙ্কা
ব্যবসায়ীদের আবারো বড় ছাড় দিলো বাংলাদেশ ব্যাংক। এবার বকেয়া কিস্তির ৫০ শতাংশ পরিশোধ করলেই খেলাপি হওয়া থেকে মুক্ত থাকবেন ব্যবসায়ীরা। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে গতকাল ব্যাংকগুলোর জন্য নতুন নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এমন সিদ্ধান্তে অনেকটা নাখোশ হয়েছেন ব্যাংকাররা। তারা বলেন, ব্যাংকের যে অর্থঋণ দেয়া হয় তা আমানতকারীদের অর্থ। নির্ধারিত মেয়াদ শেষে আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দিতে না পারলে ব্যাংকের বদনাম হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তিরস্কার গুনতে হয়। ফেলানো হয় ঝুঁকিপূর্ণ ব্যাংকের তালিকায়। কিন্তু যাদেরকে ঋণ দেয়া হয় তাদেরকে বারবার ছাড় দেয়া হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ ছাড়ের কারণে ব্যাংকগুলো ঋণ আদায় করতে পারছে না। এ পরিস্থিতি আমানতকারীদের অর্থ ব্যাংক কিভাবে ফেরত দেবে তাও কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে কোনো নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে না। একদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা মোতাবেক ব্যবসায়ীদের ছাড় না দিলে নীতিমালা অমান্য হয়, অপরদিকে আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দিতে না পারলে দুর্বল ব্যাংকের তালিকায় পড়তে হয়। এতে তারা উভয় সঙ্কটে পড়ে গেছেন বলে ব্যাংকাররা মনে করছেন। ব্যাংকাররা মনে করছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন সার্কুলারের কারণে ব্যাংকগুলোর নগদ টাকার সঙ্কট বেড়ে যাবে। কমে যাবে নতুন ঋণ দেয়ার সক্ষমতা।
ব্যাংকারদের শীর্ষ সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) সাবেক প্রেসিডেন্ট ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মাহবুবুর রহমান গতকাল এ বিষয়ে নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, সাধারণ মানুষের কাছ থেকে আমানত নিয়ে ব্যবসায়ীদের ঋণ দেয়া হয়। নির্ধারিত সময় শেষে আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দিতে হয়। কিন্তু ঋণ আদায় করতে না পারলে আমানত ফেরত দিতে ব্যাংকগুলো চাপে পড়ে যায়। একই সাথে ব্যাংকের নতুন ঋণ দেয়ার সক্ষমতা কমে যায়। তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এমন সিদ্ধান্ত আবারো চাপে পড়ে যাবে ব্যাংকগুলো।
জানা গেছে, ২০২০ সালে দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর ব্যবসায়ীরা চাপে পড়ে যান। ব্যবসায়ীদের ব্যবসা চালু রাখার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল, কোনো রকম ঋণ পরিশোধ না করলেও কাউকে খেলাপি করা যাবে না। আর এ নির্দেশনা টেনে নেয়া হয় ২০২১ সাল পর্যন্ত। গত বছর আংশিক এ সিদ্ধান্ত কার্যকর ছিল। অর্থাৎ ঋণের বকেযা কিস্তির ৫০ শতাংশ পরিশোধ করলেই খেলাপি মুক্ত থাকতে পারবেন ব্যবসায়ীরা। এ সময় ব্যাংকগুলোর ঋণ আদায়ে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। অনেক ব্যাংক আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দিতে হিমশিম খায়। বিশেষ করে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ভয়াবহ চাপে পড়ে যায়। এ চাপ আজ পর্যন্ত বহন করে যাচ্ছে অনেক প্রতিষ্ঠান। আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দিতে পারছে না অনেক আর্থিক প্রতিষ্ঠান। ব্যাংকাররা ধরে নিয়েছিল, জানুয়ারি থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ছাড় আর থাকবে না। এ সময়ে তারা ঋণ আদায় কার্যক্রম জোরদার করতে পারবেন।
কয়েকজন ব্যাংকার জানিয়েছেন, বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) ভালো টাকা আদায় হয়েছিল। তবে এ সময়ে খেলাপি ঋণও বেড়েছে। খেলাপি হলে ব্যবসায়ীরা নতুন করে ঋণ নিতে পারেন না। এ কারণে খেলাপি হওয়া থেকে মুক্ত থাকতে গ্রাহকরা ঋণ পরিশোধে যতœশীল হয়েছিলেন। আর এ কারণেই চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১০ হাজার ৯৬৪ কোটি টাকা। এতে করে দেশের ব্যাংক খাতে অবলোপন ছাড়াই খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৩১ হাজার ৬২০ হাজার কোটি টাকা। আর অবলোপন ধরলে প্রায় দুই লাখ কোটি টাকার কাছাকাছি হবে এ খেলাপি ঋণ। খেলাপির এ অঙ্ক এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ।
কিন্তু কিছু ব্যবসায়ী সংগঠন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাথে বিভিন্ন সময় বৈঠকে ঋণ পরিশোধ ছাড়াই খেলাপি মুক্ত থাকার আবদার করেন। আর তাদের এই আবদারের কারণেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে গতকাল আবারো বড় ধরনের ছাড় দেয়া হলো।
গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে দেয়া নতুন নির্দেশনায় বলা হয়েছে, চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের (এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত) মেয়াদি ঋণের কিস্তির অর্ধেক টাকা (৫০ শতাংশ) জুনের মধ্যে পরিশোধ করলে খেলাপি হবে না বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আর এ ছাড় দেয়ার কারণ হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচামালসহ বিভিন্ন উপকরণের মূল্য ও আমদানি ব্যয় বেড়েছে। ফলে ঋণগ্রহীতারা তাদের ঋণের বিপরীতে প্রদেয় কিস্তির সম্পূর্ণ অংশ পরিশোধে অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে উৎপাদন ও সেবা খাতসহ সব ধরনের ব্যবসা চলমান রাখা ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতিশীলতা বজায় রাখতে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
নির্দেশনা অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ এপ্রিল বিদ্যমান অশ্রেণীকৃত (খেলাপি নয় এমন) মেয়াদি ঋণের (স্বল্পমেয়াদি কৃষি ও ক্ষুদ্র ঋণসহ) বিপরীতে ২০১৩ সালের এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত প্রদেয় কিস্তির ন্যূনতম ৫০ শতাংশ জুনের শেষ কর্মদিবসের মধ্যে পরিশোধ করা হলে ওই ঋণগুলো ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে খেলাপি করা যাবে না।
এ সময়ে কিস্তির যেসব টাকা বকেয়া থাকবে, তা ঋণের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরবর্তী তিন মাসের মধ্যে সমকিস্তিতে অথবা এক কিস্তিতে পরিশোধ করতে হবে। নির্দেশনা মোতাবেক ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে ঋণগুলো যথানিয়মে শ্রেণীকরণের আওতাভুক্ত হবে।
এই সুবিধায় ঋণের কিস্তি পরিশোধের ক্ষেত্রে সুবিধাপ্রাপ্ত ঋণের ওপর চলতি বছরের ১ এপ্রিল থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত কোনোরূপ দণ্ড সুদ বা অতিরিক্ত ফি (যে নামেই অভিহিত করা হোক না কেন) আরোপ করা যাবে না।
পুনঃতফসিলের মাধ্যমে অশ্রেণীকৃত হিসেবে প্রদর্শিত ঋণের জন্যও এ সার্কুলারের আওতায় প্রদত্ত সুবিধা প্রযোজ্য হবে। ইসলামী শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলো তাদের প্রদত্ত বিনিয়োগের ক্ষেত্রে উপরোক্ত নীতিমালা অনুসরণ করে বর্ণিত সুবিধা প্রদান করতে পারবে।
এ সার্কুলারের আওতায় সুবিধাপ্রাপ্ত ঋণ বা বিনিয়োগের বিপরীতে যে পরিমাণ আরোপিত সুদ বা মুনাফা নগদে আদায় হবে তা আয় খাতে স্থানান্তর করা যাবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা