২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন

১৪ বছরে কোটিপতি ৫ গুণ বেড়েছে দেশে

সংখ্যা এখন ১ লাখ ১০ হাজার ১৯২ জন
-


দেশে অস্বাভাবিক হারে কোটিপতির সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে গত ১৪ বছরের (২০০৯-২৩ মার্চ) কোটিপতির সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৯২ হাজার, যা শতকরা হিসাবে প্রায় পাঁচগুণ। ২০০৮ সালের ডিসেম্বর শেষে এই সংখ্যা ছিল ১৯ হাজার। ২০২২ ডিসেম্বরে এসে এ সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ৯ হাজার ৯৪৭ জন। আর গত তিন মাসে এ সংখ্যা ২৪৫ জন বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার ১৯২ জন। তবে কোটিপতির সংখ্যা বাড়লেও ক্ষুদ্র আমনতকারীদের আমানত বাড়েনি, বরং তুলনামূলকভাবে কমে গেছে।
গতকাল মঙ্গলবার প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনটি প্রতি তিন মাস পরপর কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রকাশ করে থাকে।

দেশে শুধু কোটিপতির সংখ্যাই বাড়ছে না। বাড়ছে খেলাপি ঋণের পরিমাণও। ২২ হাজার কোটি টাকা থেকে বেড়ে এখন ১ লাখ ৩২ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গত মার্চ প্রান্তিকের এক পরিসংখ্যান হতে দেখা যায়, কোটিপতি আমানতকারীদের ১০টি ক্যাটাগরির মধ্যে ২টি ক্যাটাগরিতে আমানতকারী কমেছে। বাকি ৮টি ক্যাটাগরিতে আমানত বেড়েছে। ব্যাংকিং খাতে শুধু এক কোটি এক টাকা থেকে ৫ কোটি টাকার ওপরে মজুদ রয়েছে এমন অ্যাকাউন্টের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৭ হাজার ১০১ জনে। ৫০ কোটি টাকার বেশি আমানতকারীর সংখ্যা গত ডিসেম্বরে ছিল ১ হাজার ৭৬২ জন। গত মাসে তা ৪ জন কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৭৫৮ জনে।

বাকি ৮টি ক্যাটাগরির মধ্যে ৫ কোটির বেশি থেকে ১০ কোটি টাকা পর্যন্ত আমানতকারীর সংখ্যা গত ডিসেম্বরে ছিল ১১ হাজার ৯৪৫ জন। গত মার্চে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ হাজার ৪০ জনে। ওই সময়ে এই ক্যাটাগরিতে আমানতকারী বেড়েছে ৯৫ জন।
১০ কোটির বেশি থেকে ১৫ কোটি টাকা পর্যন্ত আমানতকারীর সংখ্যা গত বছরের ডিসেম্বরে ছিল ৩ হাজার ৮৪৫ জন। গত মার্চে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৮৭৫ জনে। আলোচ্য সময়ে বেড়েছে ৩০ জন। ১৫ কোটির বেশি থেকে ২০ কোটি টাকা পর্যন্ত আমানতকারীর সংখ্যা গত ডিসেম্বরে ছিল ১ হাজার ৮৩৩ জন। গত মার্চে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৮৭৪ জনে। আলোচ্য সময়ে বেড়েছে ৪১ জন।

একই সময়ের ব্যবধানে ২০ কোটি টাকার বেশি থেকে ২৫ কোটি টাকা পর্যন্ত আমানতকারীর সংখ্যা ১ হাজার ১৪৩ জন থেকে বেড়ে ১ হাজার ১৪৫ জন হয়েছে। আলোচ্য সময়ে বেড়েছে ২ জন। ২৫ কোটির বেশি থেকে ৩০ কোটি টাকা পর্যন্ত আমানতকারীর সংখ্যা ৮৮৭ জন থেকে বেড়ে ৯২৭ জন হয়েছে। তিন মাসে বেড়েছে ৪০ জন। ৩০ কোটির বেশি থেকে ৩৫ কোটি টাকা পর্যন্ত আমানতকারীর সংখ্যা ৪৭২ জন থেকে বেড়ে ৪৯৯ জন হয়েছে। আলোচ্য সময়ে বেড়েছে ৭২ জন। ৩৫ কোটির বেশি থেকে ৪০ কোটি টাকার আমানতকারীর সংখ্যা ৩১৫ জন থেকে বেড়ে ৩২৭ জন হয়েছে। তিন মাসে বেড়েছে ১২ জন। ৪০ কোটি টাকার বেশি থেকে ৫০ কোটি টাকা পর্যন্ত আমানতকারীর সংখ্যা ৫৭৭ জন থেকে বেড়ে হয়েছে ৬৪৬ জন। আলোচ্য সময়ে বেড়েছে ৬৯ জন।

অর্থনীতিবিদদের মতে, ক্ষুদ্র আমানতকারীদের সংখ্যা না বাড়ার অর্থই হলো দেশে অর্থনৈতিক বৈষম্য বেড়ে গেছে। এর ফলে ধনীরা আরো ধনী হচ্ছে। অপর দিকে গরিবরা আরো গরিব হচ্ছে। এ বৈষম্য দূরীকরণের জন্য দারিদ্র্য বিমোচনমুখী নীতি বেশি করে গ্রহণ করতে হবে।
ক্ষুদ্র আমানতকারীদের আমানতের পরিমাণ কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, ক্ষুদ্র আমানতকারীরা তাদের আয়ের সাথে ব্যয় সমন্বয় করতে পারছেন না। সবধরনের পণ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে। সেই সাথে বেড়েছে পরিবহন ব্যয়। এর পাশাপাশি বাসাভাড়াসহ বিদ্যুতের দাম। সবমিলে জীবন যাত্রার ব্যয় অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে। এর ফলে আগে একই আয় দিয়ে যে পরিমাণ পণ্য পাওয়া যেত, এখন তা দিয়ে কম পাওয়া যাচ্ছে। প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটানো হচ্ছে রেশনিং করে অর্থাৎ কম ব্যয় করে। আয়ের সাথে ব্যয় সমন্বয় করতে না পারায় তারা ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিচ্ছেন। এতে গরিব আরো গরিব হয়ে পড়বে বলে তারা আশঙ্কা করেছেন।

বিশ্লেষকদের মতে, ক্ষুদ্র আমানতকারীদের সংখ্যা তুলনামূলক না বাড়ায় সম্পদের বণ্টন ঠিকভাবে হচ্ছে না। এতে গরিবরা আরো গরিব হচ্ছে। পাশাপাশি এক শ্রেণীর মানুষ সম্পদশালী হচ্ছে। এর ফলে সমাজে ধনী-গরিবের বৈষম্য বেড়ে চলছে। এর কারণ হিসেবে তারা জানিয়েছেন, বিগত দুই বছরে ভোগ্যপণ্যের দাম সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। মানুষ আয়ের সাথে ব্যয় মেলাতে পারছে না। যে পরিমাণ আয় করছে সংসারের ব্যয় হচ্ছে তার চেয়ে বেশি। বাড়তি ব্যয় মেটাতে মানুষ তাদের সঞ্চয় ভেঙে খাচ্ছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement