তীব্র তাপদাহ রোধে সবুজায়নই সমাধান
- হাসান আলী
- ০৫ জুন ২০২৩, ০০:০৫
তীব্র গরমে অতিষ্ঠ নগরীর মানুষ। সময়ের হিসাবে গ্রীষ্মকালের শেষের দিক হলেও বৃষ্টির দেখা নেই। তীব্র গরমের কারণে নগরীর মানুষ পানিশূন্যতা, হিটস্ট্রোক, শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি, হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট, মাথাব্যথা, বমিভাব, ত্বকে ফুসকুড়ি এবং মানসিক স্বাস্থ্যঝুঁকিসহ নানান রোগেও আক্রান্ত হচ্ছে। যেখানে গাছ লাগানোকে সরকারিভাবে উৎসাহিত করা উচিত সেখানে উন্নয়নের নামে ঢাকার বুকে নির্বিচারে গাছ কাটা হচ্ছে। তাই পরিস্থিতি বিবেচনায় অন্যসব কর্মসূচির চেয়ে বৃক্ষরোপণই বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে পরিবেশবিদ ও সচেতন মহলের কাছে। এ দিকে আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব পরিবেশ দিবস। এবারের বিশ্ব পরিবেশ দিবসের মূল প্রতিপাদ্য ‘প্লাস্টিক দূষণের সমাধানে, শামিল হই সকলে’। তবে গরমের সমস্যা সমাধানে অধিক পরিমাণে সবুজায়ন তথা বৃক্ষরোপণের দিকেই মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন পরিবেশবিদরা।
এ বিষয়ে কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আরবরি কালচার সেন্টারের পরিচালক ও উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিহির লাল সাহার সাথে। তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, আমরা গত কয়েকদিন থেকে তীব্র গরমের একটা পরিস্থিতির মধ্যে আছি। গরম বেশি হওয়ার পেছনে একটা কারণ হলো পিচঢালা রাস্তা বা কনক্রিটের বাহুল্য। সে ক্ষেত্রে যদি সবুজ বেশি থাকে, গাছপালা বেশি থাকে আমরা কিছুটা হলেও গরমের হাত থেকে মুক্তি পেতে পারি। আমাদের উচিত যেসব এলাকায় জমি খালি পড়ে আছে সেসব এলাকায় পরিকল্পনামাফিক গাছ লাগানো। অনেকসময় আমরা গাছ লাগানোর পরে আর খোঁজ নিই না। যেই গাছ লাগানো হবে সেটির পরিচর্যাও করতে হবে। গাছ আমাদের ছায়া দেয়, ফল দেয়। গাছকে আমরা যতœ করলে তারা পরোক্ষভাবে আমাদের যতœ নেবে। সুতরাং পরিবেশ দিবসকে সামনে রেখে আমাদের ব্যাপক গাছ লাগানোর পরিকল্পনা হাতে নেয়া উচিত।
ঢাবির ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ভালনারেবিলিটি স্টাডিজ ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ জুয়েল মিয়া বলেন, ব্যক্তি-সমাজের অসচেতনতা, কাণ্ডজ্ঞানহীন কর্মকাণ্ড কিংবা তথাকথিত উন্নয়নের থাবায় নষ্ট হচ্ছে সবুজ পরিবেশ। আমরা নিজেরা সচেতন না হওয়ায় পরিবেশের বিনাশের সাথে সাথে নিজেদের বিনাশ ডেকে আনছি। বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে পরিকল্পনা করে আমরা ঘরের ভেতরটাও সবুজ করতে পারি, করতে পারি ছাদবাগান। সবুজে রাঙাতে পারি আমাদের আঙ্গিনা। পরিবেশ দিবস উপলক্ষে প্রিয়জনকে উপহার হিসেবে দিতে পারি চারাগাছ। পাশের রাস্তা, মাঠ-ঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আঙ্গিনা সবুজ করার দায়িত্বও নিতে পারি আমরা। চারাগাছ হিসেবে বেছে নিতে পারি দেশীয় প্রজাতির বিলুপ্ত-প্রায় গাছগুলো। পাশাপাশি খেয়াল রাখতে হবে, আমরা গাছের যে চারা রোপণ করলাম, তা সঠিকভাবে বেড়ে উঠছে কি না।
প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানোর ব্যাপারে জোর দিয়ে তিনি বলেন, পরিবেশ দিবসসহ আমরা নানা আয়োজনে পিভিসি ব্যানার ব্যবহার করে থাকি, যা অত্যন্ত মজবুত ও রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় তৈরি করা হয় এবং পরিবেশের জন্যে অত্যন্ত ক্ষতিকর হিসেবে স্বীকৃত। রাতারাতি তৈরি করা যায়, সময় লাগছে কম, এটাই সম্ভবত এটা ব্যবহারের বড় কারণ। পরিবেশ দিবসকে কেন্দ্র করে আমরা শত শত পিভিসি ব্যানার তৈরি করছি। অনুষ্ঠানের পর আর এই ব্যানারের হদিস পাওয়া যায় না, চলে যায় খাল-বিল-নদী-সমুদ্রে, মিশে যায় প্রাকৃতিক পরিবেশে। আমাদের উচিত হবে ব্যানারের ব্যবহার নিয়ে ভাবার। পিভিসি ব্যানারের বিকল্প যে নেই, তা কিন্তু নয়; বিকল্প অনেক, শুধু ইচ্ছেটা দরকার।
ঢাবির ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ভালনারেবিলিটি স্টাডিজ ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. দিলারা জাহিদ বলেন, অনেকসময় ছোট একটি ভাবনা সমাজকে বদলে দিতে পারে। পরিবেশ দিবস পরিবেশবান্ধব হোক, এটা যদি আমরা অনুধাবন করতে পারি এবং সত্যিকার অর্থে এই বিষয়টাকে মাথায় রেখে যদি ব্যক্তি ও সামষ্টিক জীবনে প্রয়োগ করতে পারি তাহলে বড় ধরনের ইতিবাচক প্রভাব তৈরি হতে পারে। এসি ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা হয়তো সাময়িকভাবে আরামে থাকছি; কিন্তু তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর এবং সামগ্রিকভাবে পরিবেশ ও জলবায়ুর ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। শুধু পরিবেশ দিবস নয়, সব আয়োজনই পরিবেশবান্ধব করার চেষ্টা করতে হবে। শিশুদের ভালো কাজ শেখালে, পরিবেশবান্ধব চিন্তা করতে শেখালে তারাই সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা