ভ্যাপসা গরম অসহনীয় আবহাওয়া
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ০৪ জুন ২০২৩, ০২:১৫, আপডেট: ০৪ জুন ২০২৩, ০৬:০২
ঘর থেকে বের হলেই মাথা চক্কর দিয়ে উঠে, মাথার উপর কড়া রোদ। জুনের এই অসহনীয় রোদের সাথে লোডশেডিং যোগ হয়ে বিপর্যস্ত অবস্থা মানুষের। মুহূর্তেই ঘামে ভিজে যাচ্ছে পরনের কাপড়। কড়া এই রোদে কিছুক্ষণ হাঁটলে এবং পানি পান করতে না পারলে যেকোনো সময় বিপদ ঘটে যেতে পারে, হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে পথেই অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে যে কেউ। বয়স্কদের ক্ষেত্রে বিপদটা একটু বেশি হতে পারে। সে জন্য এই গরমে রোদে হাঁটলে সাথে পানি নিয়ে যেতে পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। শুধু যে গরম আবহাওয়া তাই নয়, এ সময় কয়েকটি জীবাণু সক্রিয় হয়ে থাকে বলে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়ে যায়। ইতোমধ্যে হাসপাতালগুলোতে ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে যেতে শুরু করেছে। হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে আসার মানুষের ভিড়ও বাড়ছে।
এ অবস্থা চলছে গত এক সপ্তাহ থেকে। বাংলাদেশে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু না আসা পর্যন্ত এমন অবস্থা চলতেই থাকবে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বাংলাদেশে জুন মাস থেকে বৃষ্টি হয়ে থাকে এবং যতক্ষণ বৃষ্টি থাকে ততক্ষণ পরিবেশ ঠাণ্ডা এবং বৃষ্টিতে বিরতি হলে আবারও শুরু হয় প্রচণ্ড গরম বিশেষ করে ভ্যাপসা গরম।
ইতোমধ্যে জুনের ৩ দিন চলে গেছে, এখন পর্যন্ত দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বাংলাদেশের টেকনাফ থেকে অনেক দূরে অবস্থান করছে। আরো কমপক্ষে তিন দিন দেশব্যাপী মাঝারি থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ বিরাজ করতে পারে, আবার তা দীর্ঘায়িতও হতে পারে। আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, আগামী ৫ দিনের মধ্যে এই মৌসমি বায়ু টেকনাফ উপকূল পর্যন্ত অগ্রসর হতে পারে। সাধারণত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশের ভূখণ্ড মৌসুমি বায়ু স্পর্শ করে থাকে। এ বছর কিছুটা দেরি হতে পারে বলে আবহাওয়াবিদরা বলছেন। মৌসুমি বায়ু না আসা পর্যন্ত বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তীব্র গরম অব্যাহত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, প্রতি বছর জুন মাসের এ সময়ে মৌসুমি বায়ু প্রবেশের আগে বাংলাদেশে তীব্র গরম থাকে। কোথাও কোথাও তীব্র প্রবাহ অর্থাৎ সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৮ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠা-নামা করে। গতকাল শনিবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল রাজশাহীতে ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজশাহী ছাড়াও দিনাজপুর, সৈয়দপুর, ডিমলা, বদলগাছী, ঈশ্বরদী, খুলনা, মংলা, সাতক্ষীরা, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, কুমারখালী, টাঙ্গাইলে মাঝারি থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ বিরাজ ছিল। রাজধানী ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান বলেন, ‘সূর্য মাথার উপর খাড়াভাবে কিরণ দেয় বলে বাংলাদেশে এই সময়টাতে সূর্যের তাপ বেশি থাকে। এটা হয়ে থাকে বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে।’ ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে শুধু বাংলাদেশে নয় এশিয়ার কয়েকটি দেশের তাপমাত্রা অনেক বেশি। অন্যান্য বছর তাপমাত্রা বেশি থাকলেও মৌসুমি বায়ু জুন মাসের প্রথম সপ্তাহেই বাংলাদেশে প্রবেশ করে বলে বৃষ্টিপাত শুরু হয় এবং তাপমাত্রা কমিয়ে রাখে। এবার আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এবার হয়তো বৃষ্টিপাতের ধরনে যেমন পরিবর্তন হতে পারে আবার মোট বৃষ্টিপাতও কম হতে পারে।
আবহাওয়ার এই চরম অবস্থা, একনাগাড়ে দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হওয়ার পেছনে জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমান সময়ে এই অবস্থা শুধু বাংলাদেশেই বিরাজ করছে না- এশিয়া, আফ্রিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোতেও বিরাজ করছে। এ ব্যাপারে ওয়ার্ল্ড ম্যাটিওরোলজিক্যাল অর্গানাইজেশনের (বিশ্ব আবহাওয়া সংগঠন) সেক্রেটারি জেনারেল পেত্তেরি তা’রাস এক বিবৃতিতে বলেন, ‘সামনের মাসে একটি উষ্ণ এল নিনু গঠন হতে পারে। মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই এটা হতে যাচ্ছে। ফলে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে তাপমাত্রায় পরিবর্তন আসতে পারে।’ তিনি বিবৃতিতে বলেন, তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার ফলে এতে বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য, খাদ্য নিরাপত্তায়, পানি ব্যবস্থাপনায় ও জলবায়ু পরিবর্তনে প্রভাব ফেলবে।’ ‘সায়েন্স’ প্রকাশিত গবেষণায় বলা হয়েছে, ১৯৯৭-৯৮ সালের এল নিনুর কারণে বিশ্বব্যাপী ৫.৭ ট্রিলিয়ন (এক লাখ কোটিতে এক ট্রিলিয়ন) ডলারের অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছিল।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা