ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের কবলে দেশ
- আশরাফুল ইসলাম
- ০৩ জুন ২০২৩, ০০:০০, আপডেট: ০৩ জুন ২০২৩, ০৬:০৪
-ডলার সঙ্কটে কয়লা আমদানি ব্যাহত
-বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বিদ্যুৎকেন্দ্র
-জীবনযাত্রা দুর্বিষহ
গতকাল দুপুরে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১৩ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট। আর উৎপাদন হয় ১১ হাজার ৯৬০ মেগাওয়াট। লোডশেডিং করা হয়েছে এক হাজার ৪৭১ মেগাওয়াট। গতকাল পিডিবির দেয়া এ লোডশেডিংয়ের হিসাব আর বাস্তব অবস্থা যেন আকাশ-পাতাল ফারাক। খোদ রাজধানীতেই দিনে রাতে ৬ থেকে এলাকাভেদে ৮ বার লোডশেডিং হয়েছে। আর গ্রামের কোনো কোনো এলাকায় দীর্ঘ সময় লোডশেডিংয়ের পর কিছুক্ষণের জন্য বিদ্যুৎ আসে। আবার চলে যায়। ভয়াবহ এ লোডশেডিংয়ে জনজীবন অচল হয়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে। একে তো গ্রীষ্মের ভয়াবহ তাপদাহ, এরও পর লোডশেডিংয়ের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
রাজধানীর বনশ্রী এলাকা থেকে শামীম হোসেন জানান, সারা দিনে ৬-৭ ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। গরমে প্রাণ যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। সরকার নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুতের কথা বলে, কিন্তু আমরা তো দেখি না।
রামপুরা এলাকার তানভীর আহমেদ বলেন, রেকর্ড বিদ্যুৎ উৎপাদন করার কথা বলে গত কয়েক বছরে দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। ঘরে ঘরে বিদ্যুতের সংযোগের খবর ফলাও করে প্রচার করা হচ্ছে। কিন্তু এখন বিদ্যুতের এ কী হাল আমরা দেখছি। দিনে রাতে ৬ থেকে ৮ বার বিদ্যুতের লোডশেডিং জীবন যায় যায় অবস্থা। তিনি বলেন, ইটপাথরের ঘেরা রাজধানীতে এখন টিকাই দায় হয়ে পড়েছে।
রাজধানীর বাইরের অবস্থা তো আরো করুন। রাজবাড়ী থেকে একজন গৃহবধূ জানান, রাতের বেশির ভাগ সময় বিদ্যুৎ থাকে না। গরমে রাতে ঘুমানো যায় না। তিনি সম্প্রতি ঢাকা থেকে বাড়িতে এসেছেন। বেশ কয়েক দিনের জন্য জরুরি কাজে গ্রামে এসেছিলেন। এখন কাজ শেষ না করেই ঢাকায় ফেরার চিন্তা করছেন।
লোডশেডিংয়ের এ ভয়াবহ অবস্থার কারণ সম্পর্কে বিদ্যুৎ বিভাগের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রাথমিক জ্বালানির নিশ্চয়তা না করেই একের পর এক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। এখন ডলার সঙ্কটে জ্বালানি আমদানি করা যাচ্ছে না। আর এ জন্য একের পর এক বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রাখা হচ্ছে। তিনি বলেন, দেশের সবচেয়ে বড় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পায়রা আজকালের মধ্যে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে শুধু কয়লা সঙ্কটের কারণে। ১৩২০ মেগাওয়াটের এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৬৬০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎ ইউনিটটি গত ২৫ মে বন্ধ করা হয়। ৬৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বাকি আরেকটি ইউনিট আজকালের মধ্যে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। বলা হচ্ছে এক মাসের জন্য। কিন্তু তা আরো সময় লাগতে পারে চালু হতে। রামপালের একটি ইউনিট চলছে। সেটা থেকেও ৩০০ থেকে ৪০০ মেগাওয়াট পাওয়া যাচ্ছে। যেখানে উৎপাদন করত ৬০০ মেগাওয়াটের ওপরে। আরো কয়েকটি তরল জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ হয়ে গেছে।
চীন ও বাংলাদেশের যৌথ বিনিয়োগে ২০২০ সালে পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র বাণিজ্যিকভাবে কার্যক্রম শুরু হয়। কেন্দ্রটি চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় কয়লা কিনতে ঋণ দেয় চীনা অংশীদার চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট কোম্পানি (সিএমসি)। এপ্রিল মাস পর্যন্ত বকেয়া বিল দাঁড়ায় প্রায় ৩৯০ মিলিয়ন ডলার। এ বকেয়া বিল পরিশোধ না করায় সিএমসি কয়লা সরবরাহ বন্ধ করে।
জানা গেছে, তিন বছর আগে উৎপাদনে আসার পর এবারই প্রথম পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এর আগে ডলার-সঙ্কটে কয়লা কিনতে না পেরে দুই দফায় বন্ধ হয়েছিল বাগেরহাটের রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র।
পটুয়াখালীর পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রটির দু’টি ইউনিট মিলে উৎপাদনের সক্ষমতা এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট। এই কেন্দ্র দিনে গড়ে এক হাজার ২০০ মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ সরবরাহ করে আসছিল। তিন বছর ধরে পায়রা থেকে বিদ্যুৎ আসছে। এটি এক দিনের জন্যও বন্ধ হয়নি। কয়লা না থাকায় ২৫ মে এখানের একটি ইউনিট বন্ধ করা হয়েছে। এখন ৬৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বাকি ইউনিট থেকে দিনে ৪৫০ মেগাওয়াট করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছিল; যা আজ বা কাল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, পূর্ণ সক্ষমতায় চললে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের দু’টি ইউনিট চালাতে প্রতিদিন প্রায় ১৩ হাজার টন কয়লা প্রয়োজন হয়। আর বর্তমানে কর্তৃপক্ষের কাছে কয়লঅর মজুদ ফুরিয়ে আসায় তা পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে।
জানা গেছে, গত এপ্রিল মাস পর্যন্ত প্রায় ৩৯ কোটি লাখ ডলার (প্রায় চার হাজার কোটি টাকা) বকেয়া হয়েছে। গত বছরের নভেম্বরে তারা যে পেমেন্ট করেছে, সেটি শোধ করার কথা ছিল এই এপ্রিলে। এপ্রিলে ডলার সঙ্কটের কারণে তা পরিশোধ করা যায়নি। এই বকেয়া বিল পরিশোধ না করায় হলে সিএমসি আর কয়লা কেনার জন্য টাকা দেবে না। ফলে বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য কয়লাও কেনা সম্ভব হবে না।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা