০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ অগ্রহায়ন ১৪৩১,
`

নাগরিক সমাজের ওপর এনজিও ব্যুরোর প্রভাব উদ্বেগজনক

মানবাধিকারবিষয়ক জাতিসঙ্ঘের বিশেষজ্ঞ
-


স্বাধীনভাবে কাজে বিশ্বাসী নাগরিক সমাজের ওপর বাংলাদেশ সরকারের এনজিওবিষয়ক ব্যুরো ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের (ডিএসএ) নানাবিধ প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন চরম দারিদ্র্য ও মানবাধিকারবিষয়ক জাতিসঙ্ঘের স্পেশাল রেপোর্টিয়ার (বিশেষজ্ঞ) ওলিভিয়ার ডি শুটার। তিনি বলেছেন, স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকার চর্চার কারণে এ আইনে সাংবাদিক, মানবাধিকারকর্মী, বিরোধী রাজনীতিবিদ এবং শিক্ষাবিদদের আটক করা হয়েছে। এই বিষয়গুলো কেবল বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহীদের শঙ্কিত করবে না বরং দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক ও সামাজিক অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করবে। জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত না করলে যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা বা সামাজিক সুরক্ষা দেয়া সম্ভব না।
বাংলাদেশে ১২ দিনের সফর শেষে গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ওলিভিয়ার ডি শুটার এ সব কথা বলেন। সফরকালে তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে গিয়ে দরিদ্র মানুষদের সাথে কথা বলেছেন। আলোচনা করেছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমসহ সরকারি কর্মকর্তা, নাগরিক সমাজ ও এনজিও প্রতিনিধিদের সাথে।

জাতিসঙ্ঘের বিশেষজ্ঞ বলেন, স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) কাতার থেকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় উন্নীত হওয়ার পর অধিকারভিত্তিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে বাংলাদেশ সরকারকে সস্তা শ্রমের ওপর নির্ভরতা কমাতে হবে। বাংলাদেশের উন্নয়ন মূলত তৈরী পোশাক শিল্পের মতো একটি রফতানি খাত দ্বারা ব্যাপকভাবে চালিত, যা সস্তা শ্রমের ওপর খুবই নির্ভরশীল।
ডি শুটার সরকারকে ২০২৬ সালে এলডিসি থেকে উত্তরণের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তৈরী পোশাক শিল্পের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে আনার আহ্বান জানান। বর্তমানে এই শিল্প ৪০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি বাংলাদেশের মোট রফতানি আয়ের শতকরা ৮২ ভাগ অবদান রাখছে। তিনি বলেন, মানুষকে দারিদ্র্যের মধ্যে রেখে একটি দেশ তার আপেক্ষিক সুফল বা উন্নয়ন ভোগ করতে পারে না। বাংলাদেশ যত উন্নয়নের পথে এগোচ্ছে, ততই আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের ট্যাক্স-প্রণোদনা প্রদান এবং বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার প্রতি মনোযোগ দিচ্ছে। ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করা, কর্মীদের শিক্ষিত করা ও প্রশিক্ষণ দেয়া এবং সামাজিক সুরক্ষায় সরকারকে আরো বেশি সময় এবং সম্পদ ব্যয় করতে হবে। বাংলাদেশ সামগ্রিক আয় বৈষম্য হ্রাসে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করলেও এখনো বহুমাত্রিক দারিদ্র্য রয়ে গেছে, বিশেষ করে শহরাঞ্চলে আয় বৈষম্য বৃদ্ধি পেয়েছে। সরকারকে সামাজিক সুরক্ষাব্যবস্থা আরো যৌক্তিক করতে হবে।

ডি শুটার বলেন, বাংলাদেশে সামগ্রিক অর্থনৈতিক অগ্রগতি অসম হয়েছে। আদিবাসী, দলিত, বেদে, হিজরা এবং ধর্মীয় ও ভাষাগত সংখ্যালঘু, যেমন- বিহারীদের সুযোগ বঞ্চিত করা হয়েছে। সরকার উন্নয়নের নামে অনানুষ্ঠানিক বসতিগুলোতে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছে। এ ক্ষেত্রে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ না করে বা পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করে মানুষের বাসস্থানের অধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে কর-জিডিপি অনুপাত উল্লেখযোগ্য হারে কম। সামাজিক সুরক্ষার অর্থায়নে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ রাজস্ব আসে পরোক্ষ কর থেকে। আয়ের ওপর প্রত্যক্ষ কর থেকে আসে মাত্র এক-তৃতীয়াংশ। এই চিত্র উল্টো হওয়া উচিত। উচ্চ আয়ের মানুষ এবং বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে জনসাধারণের পরিষেবা এবং সামাজিক সুরক্ষার অর্থায়নে আরো অবদান রাখতে হবে।
প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দেয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে অভিবাদন জানানোর পাশাপাশি কক্সবাজারের আশ্রয় শিবিরগুলোতে বসবাস অনুপযোগী অবস্থার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন জাতিসঙ্ঘের বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন, প্রত্যাবাসনের শর্ত পূরণ না হওয়া পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের একটি স্বাচ্ছন্দ্য ও মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাপনের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়-উভয়েরই ইতিবাচক ভূমিকা পালন করতে হবে।

ডি শুটার বলেন, বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের জন্য ২০২৩ সালে আন্তর্জাতিক দাতাদের কাছ থেকে ৮৭৬ মিলিয়ন ডলার তহবিল চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু এ পর্যন্ত তহবিলের মাত্র ১৭ শতাংশ সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে। তহবিল সঙ্কটের কারণে গত মার্চ থেকে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচিকে রোহিঙ্গাদের জন্য খাদ্য ভাউচারের মূল্য প্রতি মাসে ১২ ডলার থেকে কমিয়ে ১০ ডলার করতে হয়েছে। আগামী জুনে তা আরো কমিয়ে আট ডলার করা হবে। এটা অনভিপ্রেত। এর কারণে পুষ্টির অভাবে বিশেষ করে শিশুদের পরিণতি হবে ভয়াবহ। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা পরিবারগুলো মরিয়া হয়ে উঠছে। বাংলাদেশ সরকার যদি রোহিঙ্গাদের কর্মসংস্থানের অধিকারকে স্বীকৃতি দেয় এবং মানবাধিকার আইন অনুযায়ী তাদের উপার্জনের সুযোগ করে দেয়, তবে তাদের কষ্ট কিছুটা লাঘব হবে।
ডি শুটার বাংলাদেশ সফরের ওপর তার প্রতিবেদন আগামী বছর জুনে জাতিসঙ্ঘ মানবাধিকার পরিষদে পেশ করবেন।


আরো সংবাদ



premium cement
সাভারে দাফন করা ব্যক্তিই হারিছ চৌধুরী তদন্ত প্রতিবেদনসহ আমু-কামরুলকে ১৭ ডিসেম্বর ট্রাইব্যুনালে হাজিরের নির্দেশ দেশের ৬৯ কারাগারের মধ্যে অতি ঝুঁকিপূর্ণ ১৭ : কারা মহাপরিদর্শক আমরা হিন্দু-মুসলমান একসাথে লড়াই করে দিল্লির দাসত্বকে খান খান করে দেবো : রিজভী আজমির শরিফ : খাজা মইনুদ্দিন চিশতির দরগাহের ইতিহাস জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদে রাশিয়া ও আমেরিকার বাকবিতণ্ডা ‘শেখ হাসিনা সরকার সবকিছু ধ্বংস করে গেছে’ পুলিশের ওপর হামলার মামলায় ১২ আসামির রিমান্ড মঞ্জুর দেনার দায়ে শক্ত অবস্থান হারাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র? বাংলাদেশ কঠিন সময় পার করছে : প্রধান উপদেষ্টা নতুন মামলায় আনিসুল-ইনু-রাশেদ-পলকসহ গ্রেফতার ৯

সকল