০৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ অগ্রহায়ন ১৪৩১,
`

রেকর্ড ব্যাংক ঋণনির্ভর বাজেট চূড়ান্ত

রেকর্ড ব্যাংক ঋণনির্ভর বাজেট চূড়ান্ত -

আগামী অর্থবছরের জন্য রেকর্ড ব্যাংকঋণনির্ভর বাজেট প্রণয়ন চূড়ান্ত করেছে সরকার। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটের আকার নির্ধারণ করা হয়েছে সাত লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। এই বাজেটের ঘাটতিই ধরা হয়েছে দুই লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। জিডিপির অংশ হিসেবে ঘাটতি পরিমাণ পাঁচ দশমিক ২ শতাংশ।

বিশাল পরিমাণ বাজেট ঘাটতি মেটানোর জন্য ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ঋণ (নিট) নেয়ার লক্ষ্য ধরা হয়েছে এক লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের (২০২২-২৩) বাজেটে যার পরিমাণ ছিল এক লাখ ছয় হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। ফলে এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ নেয়ার পরিমাণ বাড়বে ২৬ হাজার ৬১ কোটি টাকা। শতকরা হিসেবে যা ২৪ শতাংশ।

আগামী ১ জুন বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটটি জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করতে যাচ্ছেন। জানা গেছে, আগামী অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতার শিরোনাম করা হয়েছে, ‘উন্নয়নের দেড় দশক : স্মার্ট বাংলাদেশের অভিমুখে।’ ডাউস সাইজের এই বক্তৃতায় মোট অধ্যায় রয়েছে ১১টি। পুরো বাজেট বক্তৃতাজুড়ে সরকারের উন্নয়নের নানা ফিরিস্তি তুলে ধরা হবে।

সূত্র জানায়, আগামী বাজেটে জিডিপির প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন করা হয়েছে সাত দশমিক ৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে একই প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত ছিল। কিন্তু সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে ছয় দশমিক শূন্য তিন শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। অন্য দিকে, আগামী বাজেটে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে সাত দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরে জন্য মোট আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ লাখ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে আসবে চার লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। রাজস্ব খাত বহির্ভূত (নন-এনবিআর) থেকে আয় হবে ২০ হাজার কোটি টাকা এবং কর ছাড়া প্রাপ্তি ধরা হয়েছে (এনটিআর) ৫০ হাজার কোটি টাকা।

এডিপি : আগামী অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) আকার নির্ধারণ করা হয়েছে দুই লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে স্থানীয় মুদ্রায় থাকবে এক লাখ ৬৯ হাজার কোটি টাকা (৬৪.২৬ শতাংশ) এবং বিদেশী প্রকল্প সাহায্য হিসেবে আসবে ৯৪ হাজার কোটি টাকা (৩৫.৭৪ শতাংশ)।

অর্থ সংস্থান
বিদেশী ঋণ ও অনুদান : বাজেটে বিদেশ থেকে একটি বিশাল অঙ্কের ঋণ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। ফলে আগামী বাজেটে বিদেশী নিট ঋণপ্রাপ্তি ধরা হয়েছে এক লাখ ২৭ হাজার ১৯ কোটি টাকা। এর বাইরে অনুদান হিসেবে আরো আসবে তিন হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে বিদেশী ঋণের নিট লক্ষ্য ছিল ৯৫ হাজার ৪৫৮ কোটি টাকা।

অভ্যন্তরীণ অর্থায়ন : ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্য ধরা হয়েছে এক লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। এই ঋণের মধ্যে অধিকাংশ ঋণ নেয়া হবে স্বল্পমেয়াদি ঋণ। চলতি অর্থবছরে এ খাত থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্য ছিল এক লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা।

সঞ্চয়পত্র : আগামী অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে নিট ঋণপ্রাপ্তির প্রস্তাব করা হয়েছে ২৩ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে যা ছিল ৩৫ হাজার কোটি টাকা। সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে কড়াকড়ি আরোপ করায় এটির বিক্রিতে চলতি বছরের ধস নেমেছে। ফলে সংশোধিত বাজেটে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৫ হাজার কোটি টাকা।

জিডিপি : আগামী অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির লক্ষ্য ধরা হয়েছে পঞ্চাশ লাখ ছয় হাজার ৬৮২ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের বাজেটে এর পরিমাণ ছিল ৪৪ লাখ ৪৯ কোটি ৯৫৯ কোটি টাকা। পরবর্তীতে সংশোধিত বাজেটে তা কমিয়ে আনা হয়েছে।

জানা গেছে, আগামী অর্থবছরের জন্য আরো বড় বাজেট তৈরির পরিকল্পনা ছিল সরকারের। কিন্তু রাজস্বপ্রাপ্তির অনিশ্চয়তায় একটি উচ্চাভিলাষী বাজেট প্রণয়নপ্রক্রিয়া থেকে পিছু হটেছে সরকার। প্রথমে মনে করা হয়েছিল আগামী অর্থবছরের জন্য একটি সম্প্রসারণমূলক বাজেট প্রণয়ন করা হবে। যার আকার হবে পৌনে আট লাখ কোটি টাকারও বেশি। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন, অর্থবছরের শেষ দিকে এসে দেখা গেল বড় বাজেট তৈরি করার জন্য যে অর্থের প্রয়োজন সেই অর্থ সঙ্কুলান করা সম্ভব হবে না। বিশেষ করে নির্বাচনী বছরের বাস্তবতার নিরিখে তা করা সম্ভব হবে না। কারণ এই সময় শুল্ক হার বৃদ্ধি যতটা সম্ভব কম করা হবে। ফলে সরকারের জন্য অর্থ সংগ্রহের কাজটি যে সংস্থাটি করে থাকে সেই জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পক্ষে বড় বাজেটের অর্থ জোগান দেয়া আদৌ সম্ভব হবে না। তাই বাজেটে আকার কিছু কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement