০৫ অক্টোবর ২০২৪, ২০ আশ্বিন ১৪৩১,
`

ধ্বংসস্তূপ আর হাহাকার

-


-স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত কমিটি
-কোনো সংস্থার অবহেলা থাকলে ব্যবস্থা : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

দুই দিন আগেও ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁকডাকে যে বাজার ছিল জমজমাট, সেখানে এখন শুধু ধ্বংসস্তূপ আর হাহাকার। নতুন কাপড়ের গন্ধের বদলে সেখানে শুধুই পোড়া গন্ধ। চিরচেনা বঙ্গবাজারের এখন এই দৃশ্য। সর্বগ্রাসী আগুন কেড়ে নিয়েছে এখানের হাজার হাজার ব্যবসায়ী এবং কর্মজীবী মানুষের স্বপ্ন আর জীবন-জীবিকা।
মঙ্গলবারের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ভস্মীভূত পুরো বঙ্গবাজার এলাকার দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। গতকাল বুধবার সেখানে গিয়ে দেখা যায়, চারদিকে আগুনে পোড়া ধ্বংসস্তূপ। পানিতে একাকার হয়ে আছে পোড়া কাপড়ের ছাই।


পোড়াস্তূপে চলছে আহাজারি। অবশিষ্ট যদি কিছু থাকে এমন আশায় ক্ষতিগ্রস্তরা হাতড়ে বেড়াচ্ছেন পোড়াস্তূপ আর ছাই।
বঙ্গবাজার মার্কেটসহ আশপাশের মার্কেটে কুলির কাজ করতেন রহমত। বলেন, এখন ঈদের বাজার, এই সময় এসব মার্কেট মানুষে গমগম করত। সারা দেশ থেকে বিক্রেতারা পাইকারি মাল নিতে আসত। খুচরা বিক্রিসহ বিদেশী ক্রেতাদের আনাগোনা থাকত এসব মার্কেটে। সব দোকানে কাস্টমারদের ভিড় লেগে থাকত, আমরা তাদের মালামাল এক স্থান থেকে অন্য স্থানে এনে দিতাম। কিন্তু আজ সব থেমে আছে, চারদিক থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে। সবার মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ক্রেতা-বিক্রেতার কোনো ব্যস্ততা নেই। আমরাও আজ বেকার। এনেক্সকো টাওয়ারের পাশেই অস্থায়ী চায়ের দোকান ছিল সাহাবুদ্দিন মিয়ার। তিনি বলেন, প্রতিদিন সকাল থেকে মানুষের ভিড়, ব্যস্ততা লেগে থাকত। কিন্তু আজ সব পুড়ে গেছে, কিছুই নেই, নেয়ার মতো আর কিছু নেই। ক্রেতা-বিক্রেতা কারো ব্যস্ততাও নেই। আগুন সব শেষ করে দিয়েছে এখানকার সবার। ছাই আর ধোঁয়া ছাড়া আর কিছু নেই, ব্যবসায়ীরা পথে বসে গেছে আজ।


গতকালও বঙ্গবাজারের ধ্বংসস্তূপ থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখা গেছে। ধোঁয়া বন্ধ করতে পানি ছিটাচ্ছিলেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। পুড়ে যাওয়া অবশিষ্ট অংশগুলো থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছিল। এ ছাড়া পাঁচতলা ভবন এনেক্স মার্কেটের বিভিন্ন ফ্লোরে দোকানের ভেতর থেকে গতকালও ধোঁয়া বের হচ্ছিল। আগুন সম্পূর্ণ নির্বাপণের লক্ষ্যে ফায়ার সার্ভিসের বেশ কয়েকটি ইউনিট কাজ করে।


গতকালও উৎসুক জনতা ভিড় করেছেন বঙ্গবাজার এলাকায়। তাদের আলোচনায় বারবার ঘুরে ফিরে ছিল অগ্নিকাণ্ডের কথা। সকাল থেকে ভিড় জমায় উৎসুক জনতা। তাদের মধ্যে কেউ কেউ ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের পরিচিতজন। তবে উৎসুক জনতাকে আটকাতে কোনো বাধা দেয়নি পুলিশ। বঙ্গবাজারের উল্টো দিকের ফায়ার সার্ভিস হেড স্টেশনের সামনের রাস্তার দুই পাশে দেয়া হয়েছে ব্যারিকেড। কর্তব্যরত এক পুলিশ সদস্য জানান, অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা এড়াতে এখানে জনসাধারণের চলাচল সীমিত করার পাশাপাশি নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।


কোনো সংস্থার অবহেলা থাকলে ব্যবস্থা : বঙ্গবাজারে আগুনের ঘটনায় কোনো সংস্থার অবহেলা থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। গতকাল বিকেলে পুলিশ সদর দফতরের সামনে অনানুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।


আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, বঙ্গবাজারের আগুনের ঘটনায় কোনো সংস্থার যদি অবহেলা থাকে তবে তা তদন্ত কমিটির মূল্যায়নে উঠে আসবে। কমিটির মূল্যায়ন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং তাদের বিচার হবে। এ জন্য সবাইকে ধৈর্য ধারণ করতে হবে। রাজধানীর ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেট অপসারণ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাজ নয়, এই কাজটি করে রাজউক ও সিটি করপোরেশন। তবে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে রাজধানীর অনেক ভবনকে এরই মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে নোটিশ পাঠানো হয়েছিল। এসব ভবনের মধ্যে এ মার্কেটও একটি। যারা বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটে ব্যবসা করছেন তাদের সেসব স্থান থেকে সরে যাওয়ার আহ্বান জানাই।

ফায়ার সার্ভিস সদর দফতরে হামলার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হামলার ঘটনায় অবশ্যই ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে একটি মামলা হবে। মামলা হলে তার পর আমরা দেখব। তিনি বলেন, রাজধানীর ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটগুলো চিহ্নিত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মন্ত্রী বলেন, সকাল ৬টা ১০ মিনিটে যখন আগুন লাগে তার দুই-তিন মিনিটের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট এসে নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। কিন্তু চোখের সামনে আগুন নিমিষেই প্রসারিত হয়ে যায়। ফায়ার সার্ভিসের এক্সপার্ট কর্মকর্তারা এলেও নানা কারণে তারা প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েছেন। পাশে পুলিশ হেড কোয়ার্টারে আগুন লেগেছিল। কিছু ক্ষতি পুলিশ হেড কোয়ার্টারেরও হয়েছে। কিন্তু আগুনে চারটি মার্কেট সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে। আমাদের ফায়ার সার্ভিসের বেশ কয়েকজন সদস্য আহত হয়েছেন।


তদন্ত কমিটি গঠনের কথা উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আরেকটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে গঠন করা হয়েছে। তাদের সুপারিশ থেকে আগুনে কারো গাফিলতি ছিল কি না অথবা পরবর্তী সময়ে আমাদের কী করণীয় সেই দিক-নির্দেশনা পাওয়া যাবে। ভবিষ্যতে যাতে এমন বড় অগ্নিকাণ্ড না হয় সে ক্ষেত্রে সবাই ফায়ার সার্ভিসের নির্দেশনা মেনে চলবেন।
ব্যবসায়ীদের ক্ষতির বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আসন্ন ঈদ টার্গেট করে তারা বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়দের কাছ থেকে টাকা নিয়ে মালামাল তুলেছিলেন। আগুনে সব কিছু ধ্বংস হয়ে গেছে। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা প্রধানমন্ত্রী সব সময় মনিটর করছেন এবং কী করা যায় তার সিদ্ধান্ত তিনি দেবেন।


ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসন করবেন কি না জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এটার সিদ্ধান্ত হবে। সিটি করপোরেশন টেন্ডারও করেছিল। একজন কন্ট্রাক্টও করেছিল। তারপর ব্যবসায়ীদের অনুরোধে হাইকোর্ট স্থগিতাদেশ দেন। এখানে আধুনিক ও নিরাপদ মার্কেট হতে পারে, সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করবে সিটি করপোরেশন। তিনি আরও বলেন, ফায়ার সার্ভিস যেগুলো ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করেছে কিংবা করবে সেগুলো যেন ব্যবসায়ীরা পরিত্যাগ করেন। রাজধানীর ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটগুলো চিহ্নিত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে। অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত বঙ্গবাজারে আগেও ১০ বার নোটিশ দেয়া হয়েছিল।
পানি সঙ্কটের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ফায়ার সার্ভিসকে আমরা ঢেলে সাজাচ্ছি। পানির সরবরাহ না থাকলে ফায়ার সার্ভিস অসহায় হয়ে পড়ে। পানির ব্যবস্থা থাকার জন্য সিটি করপোরেশন ও রাজউক ব্যবস্থা নেবে।
বিনা সুদে ঋণ চান ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা : ব্যাংক ঋণ পরিশোধে সরকারের কাছে বিনা সুদে ঋণ সহায়তা চেয়েছেন বঙ্গবাজারের ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা। পাশাপাশি একই স্থানে পুনরায় ব্যবসা পরিচালনার ব্যবস্থা করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা। গতকাল পুড়ে যাওয়া বঙ্গবাজার মার্কেটের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় এ আহ্বান জানান ব্যবসায়ীরা।


ব্যবসায়ী দিদার মিয়া বলেন, আমার বাড়ির জমি দেখিয়ে ঈদের আগে ব্যাংক থেকে ১৫ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিলাম। অন্যান্য মালের সঙ্গে আগুনে আমার তিনটি দোকানের মালামাল পুড়েছে, আমি এখন নিঃস্ব, পথের ফকির। ব্যাংকের কিস্তি দেয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। সরকারের কাছে আবেদন, ব্যাংক ঋণ পরিশোধের জন্য আমাদের বিনা সুদে ঋণ দেয়া হোক। আর এখানে পুনরায় দোকান বসানোর অনুমতি দেয়া হোক। যাতে যেসব ব্যবসায়ীর গুদামে কাপড় আছে তারা অন্তত সেগুলো বিক্রি করতে পারেন।
১৯৯৭ সাল থেকে বঙ্গবাজারে ব্যবসা করে আসা জুয়েল হোসেন বলেন, জীবনের সব কিছু দোকানে বিনিয়োগ করেছি। সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এখন চলব কিভাবে জানি না। জমি বন্ধক রেখে ২৮ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিলাম। সেই টাকা দিতে না পারলে জেলে যেতে হবে। তাই সরকারের কাছে অনুরোধ, বিনা সুদে ঋণ দিন।


ব্যবসায়ী নূর আলম বলেন, বঙ্গবাজার ও ইসলামপুর মার্কেট মিলে আমার চারটি দোকান আছে। এখানে দুটি দোকান ছিল। ঈদ সামনে রেখে ৪৫ লাখ টাকার মালামাল কিনেছি। ব্র্যাক ব্যাংক থেকে ১১ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছি। এখন ঋণের এক টাকা দেয়ার মতোও অবস্থা নেই। সরকারের সহায়তা ছাড়া এ থেকে উদ্ধার পাব না।
রাফা গার্মেন্টসের মালিক ফারুক দিদার বলেন, আমার দোকানে ১০ লাখ টাকার বেশি মালামাল ছিল। নগদ ছিল ১ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। সব পুড়ে ছাই হয়েছে। ব্যবসায়ীদের বাঁচাতে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে, বিকল্প কোনো পথ নেই।


ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের তালিকা তৈরির কাজ শুরু : বঙ্গবাজারের অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। মার্কেটের ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষ থেকে উদ্যোগ নিয়ে এই তালিকা করা হচ্ছে। দীর্ঘ সারিতে দাঁড়িয়ে নাম তালিকাভুক্ত করাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা সরকারের তরফ থেকে সহযোগিতার পাশাপাশি মার্কেটের জায়গা বুঝে পাওয়ার দাবিও জানিয়েছেন।
গতকাল বেলা ১টার দিকে ফায়ার সার্ভিস সদর দফতরের পাশের রাস্তায় যাত্রাবাড়ী-গুলিস্তান ফ্লাইওভারের নিচে অস্থায়ী বুথ বসিয়ে নাম নিবন্ধনের এই কাজ শুরু করে বঙ্গবাজারের বিভিন্ন মার্কেটের ব্যবসায়ী সমিতি। সারিতে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করার জন্য তারা সকাল থেকে অপেক্ষায় ছিলেন। দুপুরের দিকে তালিকার কাজ করা শুরু হয়।


সরেজমিন দেখা গেছে, বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সের ভেতরে থাকা আদর্শ হকার্স মার্কেট, মহানগরী, বঙ্গ ও গুলিস্তান এই চার অংশের ব্যবসায়ীরা পৃথক সারিতে দাঁড়িয়ে নাম নিবন্ধনের কাজ করছেন। নাম তালিকাভুক্ত করার জন্য অনেককে হুড়োহুড়িও করতে দেখা গেছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, সব কিছু তো শেষ। এখন যদি কোনো সাহায্য সত্যিই আসে, তাহলে নাম নিবন্ধন করতে না পারলে তা থেকেও তারা বঞ্চিত হতে পারেন। সে জন্য সবাই চেষ্টা করছেন, যাতে কোনোভাবেই নাম বাদ না যায়। ব্যবসায়ীর নাম এবং মোবাইল নম্বরের সঙ্গে তালিকাভুক্তির সময় দোকানের নম্বর ও ভিজিটিং কার্ডও চাইছেন তালিকা তৈরির কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিরা। অনেক ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী দোকানের ভিজিটিং কার্ড দেখাতে পারেননি। বলছেন, সবই পুড়ে শেষ হয়ে গেছে।


মহানগরী মার্কেটের মাইমুনা গার্মেন্টসের মালিক আবুল কালাম আজাদ বলেন, এই মার্কেটের ছোট ব্যবসায়ীদের একজন আমি। আমারও পাঁচ লাখ টাকার মালামাল পুড়েছে। ঈদ উপলক্ষে বাকিতে মালামাল দিয়েছিলাম ১০ লাখের মতো। ওই খাতাও নেই। সম্পদ বলতে এখন আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। তালিকায় নাম লেখাতে এসেছি। দেখি কোনো সাহায্য-সহযোগিতা পাই কি না।
একই মার্কেটের আল মদিনা গার্মেন্টসের মালিক নেয়ামত উল্লাহ বলেন, দেড় বছরের মতো হলো ব্যবসাটা শুরু করেছিলাম। ভালোই চলছিল। কত স্বপ্ন ছিল ব্যবসা নিয়ে। এক নিমিষেই সব শেষ হয়ে গেল। সাহায্যের জন্য নাম লেখাতে হবে, এমন কখনো ভাবিনি। অথচ বাস্তবতা আমাকে সেখানেই নিয়ে এসেছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement