২২ নভেম্বর ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

গেজেট প্রকাশের পরও ফল বাতিলের ক্ষমতা পাচ্ছে ইসি

-

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) ভোট বাতিলের ক্ষমতাসংক্রান্ত সংশোধনী প্রস্তাবে আইন মন্ত্রণালয়ের সায় মিলেছে। সে সুবাদে ভোটে অনিয়ম করে কেউ জয়ী হলে এবং সেই নির্বাচন ফলাফলের গেজেট প্রকাশ হওয়ার পরও তা বাতিলের ক্ষমতা পেতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা বলেন, নির্বাচনে অনিয়ম হলেও ফলাফলের গেজেট হওয়ার পর আরপিওতে কিছু করার ক্ষমতা নেই কমিশনের। এই ক্ষমতা পাওয়ার জন্যই আমরা গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) ভোট বাতিলের ক্ষমতাসংক্রান্ত সংশোধনী প্রস্তাব দিয়েছিলাম। আইন মন্ত্রণালয়ের বৈঠক নির্বাচন কমিশনের জাস্টিফিকেশনে খুশি। তারা বলেছেন, কোনো অসুবিধা নেই। এখন মন্ত্রিপরিষদে যাবে। পরে পাস হবে সংসদে। এটাই ওনারা পাঠাবেন। ভেটিংয়ে আর বাদ যাচ্ছে না।’
রাজধানীর আগারগাঁওস্থ নির্বাচন ভবনে নিজ দফতরে গতকাল সোমবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা এসব তথ্য জানান।

রাশেদ সুলতানা বলেন, কমিশন এই ক্ষমতা পাওয়ার জন্যই আরপিও সংশোধনীর প্রস্তাবটা আমরা দিয়েছিলাম। এটা হলে ভোটের ফল ঘোষণার পরও তা বন্ধ করার ক্ষমতাটা কমিশনের হাতে থাকবে। কিন্তু ওনারা বললেন যে, ধারা ৯১ দিয়েই কভার হচ্ছে। তবে আমরা যতটুকু জানি ৯১ দিয়ে আসলে কভার হয় না। ওনাদের কাছে আমরা সেই যুক্তিটা তুলে ধরেছি।

ময়মনসিংহের দুর্গাপুরের একটি ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে এই কমিশনার বলেন, আমি জয়েন করার কিছুদিন পরই একটা ফাইল এলো। তাতে দেখলাম যে দুর্গাপুরে একটি নির্বাচনে বোধহয় ব্যালট ছিনতাই হয়ে গিয়েছিল। তখন কমিশন গেজেট হওয়ার পর ভোট বাতিল করে। কিন্তু হাইকোর্ট বলে দিল যে গেজেট হওয়ার পর কমিশনের করার কিছু থাকে না। আমরা এ জন্য কমিশনের হাতে ক্ষমতা যেন থাকে এই প্রস্তাব করেছিলাম। ওনারা জানতে চাইলে আমরা এই ঘটনাটি ব্যাখ্যা করেছিলাম।

রাশেদা বলেন, গেজেট হওয়ার পর তো ট্রাইব্যুনাল। গেজেট হওয়ার আগে তো কেউ ট্রাইব্যুনালে যেতে পারবেন না। যখন একজন হারবেন, তিনি আইনের আশ্রয় নিতেই পারেন। সেটা তার রাইট। তখন কোর্ট কমিশনের কাছে ব্যালট চাইল, এটি তো উদ্ধার হয়নি। কখন কার কাছে চলে গেছে। তো যেটা উদ্ধার হয়নি সেটা কিভাবে কোর্টকে দেবে। এ ক্ষেত্রে তো কমিশনের কিছু করার থাকবে না। তিনি বলেন, এ রকম পরিস্থিতি যদি সামনে আসে কমিশনের হাতে অবশ্যই একটা ক্ষমতা থাকা উচিত, যে ক্ষমতাবলে ওই নির্বাচনটা বন্ধ করে দেয়া যায়। কারণ যিনি ডিপ্রাইভড হলেন বলে মনে করেন, তার তো ক্ষতিপূরণের জায়গা নেই। এ কারণে আমরা সংশোধনী আনা প্রয়োজন মনে করেছি।

দুই-একটি জায়গায় আরো চিন্তাভাবনা করার জন্য আইন মন্ত্রণালয় বলেছিল জানিয়ে এই কমিশনার বলেন, তার মধ্যে একটি হলো- ইভিএমে আঙ্গুলের ছাপ না মিললে ১ শতাংশ ভোটারকে ভোট দেয়ার ক্ষেত্রে প্রিজাইডিং কর্মকর্তার আঙ্গুলের ছাপ ব্যবহারের বিষয়টি নির্ধারণ করে দিতে চাচ্ছিলাম। এটা আইনে চলে আসুক যে এক শতাংশের বেশি অ্যালাউ করব না। ওনারা (আইন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা) জানালেন যে এটা বিধিমালা দিয়ে কভার করা সম্ভব। এই একটা পয়েন্টে ওনারা আপত্তি করেছিলেন।

অপর প্রশ্নের জবাবে এই কমিশনার বলেন, প্রতিটি নির্বাচনে আমরা বলেই দেব যে কত শতাংশ ভোটারের আঙ্গুলের ছাপ না মিললে প্রিজাইডিং কর্মকর্তা তার আঙ্গুলের ছাপ ব্যবহার করে ইভিএমের ব্যালট ইউনিট ওপেন করতে পারবেন। কেননা, যার আঙ্গুল নেই তাকে তো ভোট দেয়ার সুযোগটা দিতে হবে। তবে আমরা এমন কিছু দেবো না, ১ শতাংশ একটি জাস্টিফাইড সংখ্যা। প্রতি নির্বাচনের আগে বিধি দ্বারা নির্ধারণ করে দেয়া হবে। অতীতে ৫ শতাংশও দেয়া হয়েছে- এমন অভিযোগ করেন অনেকে। কাজেই জাস্টিফাইড একটা সংখ্যা দিলে কেউ আর এ নিয়ে কথা বলতে পারবে না। তাই আমরা ১ শতাংশ দিতে চেয়েছিলাম।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ইসি রাশেদা বলেন, মন্ত্রণালয়ের আপত্তিতে আমরা সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসিনি। প্রত্যেক ভোটের আগে আমরা সার্কুলার দিয়ে দিতে পারব। কমিশন যখন সার্কুলার দেয় সেটাও কিন্তু আইন। আমরা আরপিওতে পাচ্ছি না, তবে বিধি দিয়ে করতে পারব। আমরা সার্কুলার দিয়েই আগে করেছি। একটা পরিপত্র দিলেই হবে।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার মো: শাহনেওয়াজ : এ ব্যাপারে সাবেক নির্বাচন কমিশনার মো: শাহনেওয়াজ বলেন, ইসি যেটা চেয়েছে আমার মনে হয় এটা করলে ভালো হয়। কারণ ইসির হাতে ক্ষমতা থাকলে তাতে করে মানুষের হয়রানিটা কম হয়। তিনি বলেন, অনেক সময় দেখা যায়, ভালো কিছু এভিডেন্স এসে গেছে ইসির হাতে। কিন্তু এর মধ্যে গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে, তখন ইসির দেখেও কিছু করার থাকে না। এই জন্য নির্বাচন কমিশনের হাতে গেজেট হওয়ার পরও অন্তত এক মাসের মতো একটা নির্দিষ্ট সময় ক্ষমতা থাকলে ভালো হয় বলে আমি মনে করছি।

ইকতেদার আহমেদ : নির্বাচনী ফলাফলের গেজেট প্রকাশের পর তা বাতিলের ক্ষমতা ইসিকে দেয়া প্রসঙ্গে সাবেক জজ, সংবিধান ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ইকতেদার আহমেদ বলেন, ইসি নিজেই তো সন্তুষ্ট হয়ে গেজেট প্রকাশ করেছে, সে আবার কিভাবে গেজেট বাতিল করবে? এটা তো সাংঘর্ষিক হয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ইসি কখন গেজেট করে, যখন সে ফলাফলের ব্যাপারে অভিযোগ পেলে তা তদন্ত করে যখন দেখে তা বস্তুনিষ্ঠ নয়, তারপর সে গেজেট করল। তার নিজের করা গেজেট নিজেই কিভাবে বাতিল করবে; এটা করবে আদালত। নির্বাচন কমিশনের গেজেট করার ব্যাপারে যদি কোনো অন্যায় হয়ে থাকে, তাহলে সেটা আদালতের এখতিয়ার। গেজেট করার পর ইসির কোনো এখতিয়ার থাকার কথা না।

আরপিওতে এই ক্ষমতা দেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা করা হলে সেটা হবে আদালতের ক্ষমতার উপর অনেকটা হস্তক্ষেপ করা। এই ধরনের আইন করা উচিত না। এ ধরনের আইন করা হলে তা হবে নীতি ও নৈতিকতার পরিপন্থী। সমতারও পরিপন্থী হবে এ ধরনের আইন। কারণ ইসি নিজেই তো সন্তুষ্ট হয়ে গেজেট করেছে। তাহলে সে নিজেই কেন তার গেজেট বাতিল করবে?

 


আরো সংবাদ



premium cement