রাজশাহী কলেজে টর্চার সেল ছাত্রলীগের
- রাজশাহী ব্যুরো
- ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০
ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে রাজশাহী কলেজ মুসলিম ছাত্রাবাসে টর্চার সেল গড়ে তোলার অভিযোগ উঠেছে। অবৈধ ওই টর্চার সেলে গত বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সংবাদকর্মীসহ অন্তত ২৫ জন সাধারণ শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই দিন সন্ধ্যার পর রাজশাহী কলেজ মুসলিম ছাত্রাবাসের ই-ব্লক ও বি-ব্লকে এ নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের অভিযোগ- ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে অংশ না নিলে ছাত্রাবাসে থাকতে দেয়া হবে না এমন হুমকিও দিয়েছেন ছাত্রলীগ নেতারা। এতে করে চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ নির্যাতন থেকে সংবাদপত্রের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিরাও রেহাই পাননি।
নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থী ও গণমাধ্যমকর্মীরা হলেন- কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নাজমুস সাকিব ও শরীফুল ইসলাম। তারা ক্যাম্পাসের সাংবাদিক সংগঠন রাজশাহী কলেজ রিপোর্টার্স ইউনিটির (আরসিআরইউ) সদস্য।
হামলাকারীরা হলেন- শাহরুখ, রাফি, ইমন, তরিকুল, রাজু, হাসান ও আহসান। তারা সবাই রাজশাহী কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি রাশিক দত্তের অনুসারী।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহী কলেজ ছাত্রাবাসে থাকা শিক্ষার্থীদের জোরপূর্বক মিছিল-মিটিংসহ দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচিতে নিয়ে যায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। যেতে না চাইলে শারীরিক নির্যাতনসহ নানা হয়রানির শিকার হতে হয়। নির্যাতন করা হয় টর্চার সেলে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজ বা অসুস্থ থাকলেও ছাড় পান না শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া রয়েছে সিট বাণিজ্যের অভিযোগ।
নির্যাতনের শিকার নাজমুস সাকিব গণমাধ্যমকে বলেন, ছাত্রলীগের কর্মীরা বিভিন্ন সময়ে তাদের দলীয় কর্মসূচিতে জোর করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে যায়। গত বুধবার বিকেলেও ছাত্রলীগের একটি কর্মসূচিতে যেতে হয়। সেখান থেকে ছাত্রলীগ নেতা রাফিকে (প্রোগ্রাম কনভেনর) মেডিক্যালে যাওয়ার কথা বললে ছাত্রাবাস ছেড়ে দিতে বলে। শেষ পর্যন্ত তাকে বুঝিয়ে আমি মেডিক্যালে যাই। পরে সন্ধ্যা ৬টায় হোস্টেলে ফিরলে ছাত্রলীগের শাহরুখ, রাজু, রাফি, হাসানসহ আট থেকে ১০ জন মিলে আমার রুমে ঢুকে মারধর করতে থাকে।
তিনি আরো বলেন, তারা আমার মোবাইল ফোনসহ বেশ কিছু দামি জিনিসপত্র কেড়ে নেয়। একপর্যায়ে সব শিক্ষার্থীকে ব্লকে আটকে রেখে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে, অনেককে মারধরও করে। পরে সবাইকে ধাক্কা দিতে দিতে গণরুমে নিয়ে যায়। সেখানে শাসানো হয় যে, কারো কাছে কোনো অভিযোগ করলে অবস্থা মারাত্মক হবে। বলতে গেলে ছাত্রাবাসে আমাদের কোনো নিরাপত্তা নেই। সাধারণ শিক্ষার্থীরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন।
আরেক ভুক্তভোগী শরীফুল ইসলাম জানান, আমি সকাল সাড়ে ৯টায় ব্যক্তিগত কাজে বের হয়ে যাই। সারা দিন ব্যস্ত ছিলাম। এরপর সন্ধ্যায় রুমে এসে নিউজ লিখছিলাম। এ সময় হঠাৎ করেই ছাত্রলীগ নেতা রাশিক দত্তের কর্মী শাহরুখ রুমে ঢোকে। কিছু না জিজ্ঞেস করেই অতর্কিত মারধর করতে থাকে।
তিনি অভিযোগ করেন, সাংবাদিক পরিচয় দিলে আরো মারতে শুরু করে। তার সাথে আরো ছেলেরা এসে আমাকে মেরে রুম থেকে বের করে দেয়। বকাবকি ও ধাক্কাধাক্কি করে অন্য ব্লকে নিয়ে যায়। সেখানে আরো অন্তত ৪০ জন শিক্ষার্থীকে দেখি, যাদের আটকে রাখা হয়েছে। পরে সবাইকে জোর করে নিয়ে যায় দলীয় কর্মসূচিতে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, ঘটনার পরে ছাত্রলীগ সভাপতি রাশিক দত্ত আমাদেরকে শাসিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ছাত্রলীগের কর্মসূচিতে নিয়মিত উপস্থিত থাকতে হবে। অন্যথায় ছাত্রাবাসে থাকতে দেয়া হবে না। এর আগেও বেশ কয়েকবার মা-বাবা তুলে গালিগালাজ ও বিভিন্নভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তিনি।
এ দিকে ক্যাম্পাস সূত্র জানিয়েছে, দায়িত্বে আসার আগে থেকেই নানা অপকর্মের কারণে সমালোচিত হন রাশিক দত্ত। বছর কয়েক আগে রাশিক দত্তের অনুসারী ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা কলেজ রিপোর্টার্স ইউনিটির কার্যালয়ে হামলা চালান। এরপর গত বছরের ৬ সেপ্টেম্বর কলেজ ছাত্রলীগের নেতৃত্বে আসেন রাশিক দত্ত ও আশরাফুল ইসলাম। এ ছাড়া সালাম না দেয়া, দেখে না দাঁড়ানো ও দলীয় কর্মসূচিতে না যাওয়ার মতো নানা ঘটনায় ক্যাম্পাসে ও ছাত্রাবাসে একাধিক শিক্ষার্থীকে মারধর করেন বলে ছাত্রলীগ নেতা রাশিক দত্ত ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে।
এ ব্যাপারে রাজশাহী কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি রাশিক দত্ত গণমাধ্যমকে বলেন, আমি ঘটনাটি শুনেছি; কিন্তু আমাদেরও তো রাজনীতি করতে হয়। বিভিন্ন সংগঠনের চার-পাঁচজন করে যদি ২০ জন ছেলে চলে যায়, তাহলে আমরা কিভাবে কর্মসূচি চালাব? আমাদেরকেও তো রাজনীতি করতে হয়। তবে এর পর থেকে আর এমন হবে না, তাদের সাথে বসে সমঝোতা করে নেব।
মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি নূর মোহাম্মদ সিয়াম গণমাধ্যমকে বলেন, ঘটনাটি তিনি শুনেছেন। তিনি বলেন, তাদের সাথে কথা বলে দেখি কিভাবে সমাধান করা যায়।
কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহা: আব্দুল খালেক জানান, এর আগেও রাশিক নেতৃত্বে এসে একবার এমন ঘটনা ঘটিয়েছে, সেটি একধরনের দফারফা হয়েছিল। সে এ ধরনের ঘটনা আর ঘটাবে না বলে আমাদের কাছে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল; কিন্তু সে হঠাৎ করে আবার এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে। এতে আমরা বিব্রত। এ ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘটাতে পারে সে ব্যাপারে আমরা ব্যবস্থা নেব।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা