২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ন ১৪৩১, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
`

ব্যাংকে নগদ ডলার সঙ্কটে বাড়ছে দাম

সরবরাহ বাড়াতে নীতিমালা শিথিল
-

ব্যাংকে হঠাৎ নগদ ডলারের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এর ফলে ব্যাংকে নগদ ডলারের মূল্য বেড়ে গেছে। সেই সাথে বেড়েছে খোলা বাজারেও। গতকাল ব্যাংকভেদে ব্যাংকে নগদ ডলার বিক্রি হয়েছে ১০৯ টাকা ৫০ পয়সা। আর খোলা বাজারে ১১৩ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১১৪ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। গত সপ্তাহে যা ছিল ১১২ টাকা ৫০ পয়সা। হঠাৎ চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় নগদ ডলারের মূল্য বেড়ে গেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সামনে রোজা। এজন্য অনেকেই আগেভাগে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাচ্ছেন। কেউবা বিদেশে পড়–য়া ছেলেমেয়েদের টিউশন ফিসহ অন্যান্য ব্যয় নির্বাহের জন্য অর্থ পাঠাচ্ছেন। এভাবে নগদ ডলারের চাহিদা বেড়ে গেছে। কিন্তু চাহিদা বাড়লেও সরবরাহ বাড়েনি, বরং আগের চেয়ে কমে গেছে। এরই প্রভাব পড়েছে বাজারে। যেভাবে খোলা বাজারে ডলারের দাম বাড়ছে তা অব্যাহত থাকলে সামনে তা আগের রেকর্ড অতিক্রম করতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে।
ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে পণ্য আমদানির ব্যাপারে কড়াকড়ি করা হয়েছিল। অতি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ছাড়া অন্য কোনো পণ্য আমদানির বিষয়ে নিরুৎসাহিত করা হয়। এজন্য তদারিক জোরদার করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তিন মিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানির জন্য এলসি খুললেই জবাবদিহি করতে হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে। আর এ কারণেই পণ্য আমদানির জন্য এলসি খোলার হার কমে যায়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, ২০২১ সালের ডিসেম্বরে পণ্য আমদানির জন্য এলসি খোলার হার বেড়েছিল প্রায় ৫৭ শতাংশ, ২০২২ সালের ডিসেম্বরে তা কমে হয়েছে ঋণাত্মক সাড়ে ২৮ শতাংশ। আবার গত অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) পণ্য আমদানির জন্য এলসি খোলার হার যেখানে বেড়েছিল প্রায় সাড়ে ৪৯ শতাংশ, চলতি অর্থবছরের ৬ মাসে তা না বেড়ে বরং কমে হয়েছে ঋণাত্মক ২.২০ শতাংশ। এভাবেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদারকির কারণে এলসি খোলার হার কমে যায়। এভাবেই ব্যাংকিং খাতে ডলারের চাহিদা কমানো হয়। কিন্তু নগদ ডলার চাহিদা তো কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। এটা বাজারভিত্তিক। চিকিৎসা, ভ্রমণ, বিদেশে ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার ব্যয় বহন করার জন্য নগদ ডলার চাহিদার প্রয়োজন হয়। যত মূল্যই হোক যাদের ছেলেমেয়ে বিদেশে পড়তে গিয়েছেন তাদের বিদেশে পড়াশোনার ব্যয় বহন করতেই হয়। কিন্তু ডলারের দাম বেড়ে গেলে ভ্রমণ ও চিকিৎসা ব্যয় আপনা আপনিই কমে যায়।

দেশের দ্বিতীয় প্রজন্মের একটি ব্যাংকের তহবিল ব্যবস্থাপক গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, হঠাৎ করে ব্যাংকে নগদ ডলারের চাহিদা বেড়ে গেছে। এর জন্য যৌক্তিক কারণ যেমন রয়েছে, তেমনি অযৌক্তিক কারণও থাকতে পারে। আর তা হলো দেশ থেকে যখন ডলার পাচার বেড়ে যায়, তখন খোলা বাজারে ডলারের দাম বেড়ে যায়। আর যৌক্তিক কারণ হলো ডলারের সরবরাহ কমে গেলে আর চাহিদা বেড়ে গেলে ডলারের দাম বেড়ে যায়। তবে তিনি বলেন, ব্যাংকে ক্যাশ ডলার দাম অনেকটা ম্যানেজড। কারণ, গ্রাহকের চাহিদা যখন ১ হাজার ডলার হয়, ব্যাংক তার সরবরাহের ওপর ভিত্তি করে ২০০ ডলার দেয়। কিন্তু নগদ ডলারের প্রকৃত মূল্য পাওয়া যায় কার্ব বা খোলা বাজারে। এখন খোলা বাজারেই ডলারের দামে বেড়ে যাচ্ছে। এ থেকেই বোঝা যায় বাজারে নগদ ডলারের চাহিদা বেড়ে গেছে।

এ দিকে ডলারের সরবরাহ বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিদ্যমান নীতিমালা শিথিল করা হয়েছে। এখন থেকে ঘোষণা ছাড়াই ২০ হাজার ডলার দেশে আনার সুযোগ দেয়া হয়েছে সেবা রফতানিকারকদের। আগে যেখানে ছিল ১০ হাজার ডলার।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে জারি করা গতকাল এক সার্কুলারে বলা হয়েছে, এত দিন সেবা খাতের বৈদেশিক মুদ্রার আয় ঘোষণা ছাড়া ১০ হাজার ডলার দেশে আনা যেত। এখন তা বাড়িয়ে ২০ হাজার ডলার বা সমতুল্য অন্য মুদ্রায় প্রাপ্ত আয় ঘোষণা ছাড়াই আনা যাবে। তবে বিদেশে কর্মরত প্রবাসীরা যতখুশি তত পরিমাণ রেমিট্যান্স দেশে পাঠাতে পারেন, এ জন্য কোনো প্রকার ঘোষণার প্রয়োজন হবে না।

বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এর আগে গত ১ ফেব্রুয়ারি এক নির্দেশনায় অনুমোদিত ডিলার (এডি) ব্যাংকগুলোকে বলা হয়, বিদেশী প্রতিষ্ঠানকে সেবা দিয়ে পাওয়া বৈদেশিক মুদ্রা বা ডলার দেশে আনার প্রক্রিয়া সহজ করতে। ওই নির্দেশনা অনুযায়ী, সেবার বিনিময়ে পাওয়া আয় আনতে কাগজের ফরম পূরণ (ফরম-সি নামে পরিচিত) করতে হবে না। ইলেকট্রনিক উপায়ে অনলাইনে ঘোষণা দিয়ে আনা যাবে। তবে নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, সি-ফরমে ঘোষণা ছাড়াই এখন থেকে সেবাখাতের ২০ হাজার ডলার বা সমতুল্য অন্য মুদ্রায় প্রাপ্ত আয় এখন থেকে আনা যাবে বলে জানায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সি-ফরমে ঘোষণা ছাড়াই দ্বিগুণ অর্থ দেশে আনার এই সুযোগ পাবেন সেবা রফতানিকারকরা। এ ক্ষেত্রে অহেতুক সময়ক্ষেপণ ছাড়াই প্রাপ্ত আয় নগদায়ন করতে পারবেন। এতে ডলারের সরবরাহ বাড়বে বলে মনে করছেন তারা।


আরো সংবাদ



premium cement