শক্তিশালী ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত হওয়ার আশঙ্কা
বিমবিহীন ভবন বাড়ছে- হামিম উল কবির
- ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০৫
বিমবিহীন ভবনের সংখ্যা বাড়ছে দেশে। খরচ কমাতে অনেকেই ঝুঁকছেন বিমবিহীন ভবন নির্মাণে। এ ধরনের ভবন ভূমিকম্পের ঝাঁকুনিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মেহেদী আহমেদ আনসারী। রাজধানী ঢাকায় বিমবিহীন ভবনের ছড়াছড়ি। ডেভেলপার কোম্পানিগুলোই বেশি বিম ব্যবহার না করে ভবন নির্মাণে আগ্রহী হয়ে থাকে বাড়তি মুনাফার আশায়। কিছু কিছু বাড়ির মালিক ও ফ্ল্যাটের অভ্যন্তরীণ সৌন্দর্য বৃদ্ধির দোহাই দিয়ে বিমবিহীন ভবন তৈরি করছেন। প্রকৌশলীরা বলছেন, ঢাকা ভূমিকম্পপ্রবণ একটি অঞ্চল। এখানে ভবন হতে হবে শক্ত ও মজবুত। অন্য দিকে ঢাকা শহরের বিশাল একটি অংশ বালি দিয়ে ভরাট করে গড়ে ওঠা বলে এখানকার মাটিও তুলনামূলক নরম। যথাযথ প্রক্রিয়াকরণ না করে যখন এই নরম মাটিতে বিমবিহীন ভবন নির্মাণ করা হয় তখন সেগুলো অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়।
প্রকৌশলীরা বলছেন, ভবন যত উঁচু হবে ভূকম্পনের সময় উপরের তলাগুলো তত বেশি কাঁপতে থাকবে। বিম (ভবনের পিলারের উপর ও ছাদের নিচে ঠেকনা) ভবনের কলাম বা পিলারের সাথে শক্তভাবে যুক্ত থেকে ভূমিকম্পের কম্পন কমাতে সহায়তা করে। ভূমিকম্পের ঝাঁকুনির মাত্রা বেশি হলে কলাম আর বিমের মাঝে ফাটল দেখা দিতে পারে। তখন ভবন ভেঙে পড়তে পারে। তবে বিম না থাকলে অনেকসময় কম কম্পনেই স্ল্যাব আর কলামের মাঝে ফাটল দেখা দিতে পারে। বিম যত চওড়া হবে ভবনটি ভূমিকম্পে তত বেশি সহনশীল হবে। কোনো কারণে ভবন নির্মাণে বিম বাদ দিতে হলে বিকল্প হিসেবে কলাম প্রশস্ত আর খুব পুরু স্ল্যাব দিতে হবে।
সিভিল ইঞ্জিনিয়ার আরাফাত ইসলাম জানান, ২০ ফুট বাই ২০ ফুট স্পেসে সাধারণত ২০ ইঞ্চি পুরু বিম লাগে। বিম বাদ দিতে হলে বিমের স্থানে অতিরিক্ত রড-সহ অন্তত ৮ থেকে ১৬ ইঞ্চি পুরু স্ল্যাব দেয়ার প্রয়োজন হয়। নিচের তলাগুলোতে স্ল্যাবের পুরুত্ব কম দেয়া গেলেও উপরের তলাগুলোতে স্ল্যাবের পুরুত্ব অনেক বেশি দিতে হবে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, উপরের তলাতেই ভূমিকম্পের কম্পন বেশি হয়ে থাকে। নয়া দিগন্তকে তিনি জানান, খরচ কমাতে ঢাকার অনেক ভবনেই মাত্র ৬ ইঞ্চি বা এরচেয়েও কম পুরুত্বের স্ল্যাব দেয়া হয়ে থাকে। ভবন বেশি ঝাঁকানো রোধ করতে হলে কলাম বড় করতে হবে আর বেশি রি-ইনফোর্সমেন্ট দিতে হবে। বাধ্য হয়ে বিমবিহীন ভবন নির্মাণ করতে হলে স্ল্যাবকে খুব শক্তিশালী আর পুরু করতে হবে, যেন স্ল্যাব নিজেই বিম হিসেবে কাজ করতে পারে। আরাফাত ইসলাম এ বিষয়ে আরো বলেন, ভূমিকম্পে পাতলা স্ল্যাবের বিমবিহীন ভবনগুলো ঝাঁকুনির ফলে নিজে ভাঙবে তাই নয়, সব নিয়ম মেনে পাশের উত্তম ডিজাইনের ভবনে হেলে পড়তে পারে এবং ওই সুপরিকল্পিত ভবনও ভেঙে পড়তে পারে। রাজধানী ঢাকায় এ ধরনের দুর্ঘটনা সবচেয়ে বেশি হওয়ার আশঙ্কা আছে। কারণ এখানে একটি ভবন থেকে আরেকটি ভবনের মধ্যে প্রয়োজনীয় দূরত্ব নেই। সে কারণে ঢাকায় ভূমিকম্প সহনশীল করে কোনো ভবন নির্মাণ করলেই তা নিরাপদ হবে না যদি সে ভবনের পাশেই থাকে পাতলা স্ল্যাবের কোনো বিমবিহীন ভবন। যারা ভূমিকম্প থেকে বাঁচতে নিরাপদ কোনো ভবনে বাস করতে চান অথবা কোনো নিরাপদ ভবন কিনতে চান তাদের উচিত বিমবিহীন ভবনে না থাকা অথবা বিমবিহীন ভবনের পাশের ভবন না কেনা।
বিমবিহীন ভবন ছাড়াও ঢাকার নরম মাটির কারণে অনেক ভবন হেলে পড়তে পারে অথবা উল্টে পড়ে যেতে পারে। বিশেষজ্ঞরা উদাহরণ হিসেবে মেক্সিকো শহরের ভূমিকম্পের কথা বলেন। মেক্সিকো শহর গড়ে উঠেছিল একটি লেকের উপর। লেকটি শুকিয়ে গেলে সেখানকার ভূমির উপর শহরটি গড়ে ওঠে। ঠিক যেমনটি আমাদের ঢাকা শহরের কিছু অংশ গড়ে উঠেছে জলাশয়ের উপর বালি ভরাট করে। ১৯৮৫ সালের ওই ভূমিকম্পে মেক্সিকো শহরে ১০ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। এ ছাড়া ৩০ হাজার বিল্ডিং ধসে পড়ে এবং আরো ৬৮ হাজার বিল্ডিং ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু ১৯৮৫ সালের ওই ভূমিকম্পে মেক্সিকো শহরের একটি ৪৪ তলা এবং একটি ৫৪ তলা ভবন অক্ষত ছিল বিল্ডিং কোড যথাযথ অনুসরণ করে নির্মাণ করার কারণে। প্রকৌশলী ও স্থপতিরা বলছেন, ভূমিকম্পের জন্য সহনীয় করে ভবন তৈরি করা হলে উচ্চ মাত্রার ভূমিকম্পে ভবন নড়াচড়া করলেও ভেঙে পড়ে না।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা