৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭ মাঘ ১৪৩১, ৩০ রজব ১৪৪৬
`

৫ মাসে সোয়া ৪ বিলিয়ন ডলার ঘাটতি বেড়েছে লেনদেনের ভারসাম্যে

-

চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের সার্বিক ভারসাম্যে ঘাটতি ৪.৩৬ বিলিয়ন ডলার বেড়ে ৬.৩৮ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। শুধু নভেম্বর মাসেই ঘাটতি বেড়েছে দেড় বিলিয়ন ডলারের উপরে। বিদেশী স্বল্পমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি ঋণ কমার পাশাপাশি নিট বিদেশী ঋণপ্রবাহ কমে যাওয়ার প্রভাব পড়েছে লেনদেনের সার্বিক ভারসাম্যে। এই অবস্থা এরপরও অব্যাহত থাকলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও বিনিময় হার দুটোকেই নেতিবাকভাবে প্রভাবিত করতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, তীব্র ডলার সঙ্কট সামাল দিতে আমদানি ব্যয়ের উপর কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে সরকার। ব্যাংক থেকে আমদানির ঋণপত্র স্থাপনের জন্য যেমন ডলার দেয়া হচ্ছে না। তেমনিভাবে পরিশোধ যতটা সম্ভব বিলম্বিত করে ডলার বাঁচানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এর ফলে চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে আমদানি ৪.৪১ শতাংশ প্রবৃদ্ধিতে এসে ঠেকেছে। একই সময়ে রফতানি আয় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৫.৬ শতাংশ। যদিও বিবেচ্য সময়ে সাড়ে ৩২ বিলিয়ন ডলার আমদানি ব্যয়ের বিপরীতে রফতানি আয় হয়েছে পৌনে ২১ বিলিয়ন ডলারের মতো। এর ফলে পাঁচ মাসে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১১.৮ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে রেমিট্যান্স খাত থেকে ৮.৮ বিলিয়ন ডলার আসে। রেমিট্যান্স সমন্বয়ের পরও তিন বিলিয়ন ডলার ঘাটতি থেকে যায়, যার প্রভাব পড়ে সার্বিক লেনদেনের ভারসাম্যে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, লেনদেনের চলতি হিসাবে বড় রকমের অবনতি গত অর্থবছর থেকেই শুরু হয়েছিল। বিগত অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে ৬.২২ বিলিয়ন ডলার ঘাটতি হয়েছিল চলতি হিসাবের বৈদেশিক লেনদেনে। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে হয়েছে ৫.৬৭ বিলিয়ন ডলার।
চলতি অর্থবছরে মূলধন স্থানান্তর পরিস্থিতিও ছিল খুবই নাজুক। আগের অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে যেখানে ৪.৮৩ বিলিয়ন ডলার আর্থিক হিসাব থেকে যুক্ত হয়েছিল এবার সেখানে ঘাটতি হয়েছে ১৫৭ মিলিয়ন ডলার। বৈদেশিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ এবার গত বছরের পাঁচ মাসের তুলনায় ১০০ মিলিয়ন ডলার বৃদ্ধি পেয়ে ১.৯৭ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়। এই প্রত্যক্ষ বিনিয়োগের বড় অংশ চীনা সূত্র থেকে আসা বলে জানা গেছে। পোর্টফোলিওর বিনিয়োগ গত বছর পাঁচ মাসে কমেছিল ৮৪ মিলিয়ন ডলার, আর এবার কমেছে ২১ মিলিয়ন ডলার।
অন্যান্য নিট বিনিয়োগের অবস্থা চলতি অর্থবছরে একেবারেই শোচনীয়। আগের বছর পাঁচ মাসে যেখানে ৪.০৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ এসেছিল এবার সেখানে আসে মাত্র এক মিলিয়ন ডলার।
চলতি অর্থবছরে নিট বৈদেশিক সহায়তার প্রবাহও কমে গেছে। আগের অর্থবছরে যেখানে পাঁচ মাসে ২.৩৪ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক সহায়তায় নিট প্রবাহ ছিল এবার তা নেমে এসেছে ১.৬৭ বিলিয়ন ডলারে। একই সময়ে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি (এমএলটি) বিদেশী ঋণ তিন বিলিয়ন ডলার থেকে ২.৩৫ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে। অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদি ঋণ ৫০০ মিলিয়ন থেকে ১৭৪ মিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। এ সময়ে স্বল্পমেয়াদি ঋণ এক বিলিয়ন ডলার থেকে ৪৭১ মিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। এতে সার্বিক নিট বাণিজ্য ঋণ গত বছর যেখানে পাঁচ মাসে ৫৬৯ মিলিয়ন ডলার কমেছিল এবার তা কমেছে ২.২৬ বিলিয়ন ডলার।
সব মিলিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেনের ভারসাম্যে ঘাটতি ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর। আগের বছর নভেম্বর শেষে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৪৫.১ বিলিয়ন ডলার; এবার নভেম্বর শেষে সেটি নেমে আসে ৩৩.৭৯ বিলিয়ন ডলারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বৈদেশিক খাতে এখন যে অবস্থা চলছে তার প্রভাব সার্বিক অর্থনীতিতে পড়বে। এতে এক দিকে ডলারের অন্তঃপ্রবাহ কমে যাওয়ার ফলে বিনিময় হারে টাকার দাম ডলারের বিপরীতে কমবে। অন্য দিকে পণ্য আমদানির খরচ বৃদ্ধি পাবে। ফলে জনজীবনে মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতির কারণে দুর্ভোগ অব্যাহতভাবে বাড়তে থাকবে।


আরো সংবাদ



premium cement