৩১ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭ মাঘ ১৪৩১, ১৮ রজব ১৪৪৫
`

চালের উচ্চমূল্যে ভাত খাওয়া কমিয়ে দিয়েছেন মানুষ

-


দেশে চালের উৎপাদন বাড়লেও মিলারদের (চালকল মালিক) অতিমুনাফার কারণে চালের বাজার ঊর্ধ্বমুখী। কেজিতে ৮-১৪ টাকা পর্যন্ত মুনাফা করছেন মিলাররা। এ দিকে দিনের পর দিন মূল্য বাড়ার কারণে মানুষ ভাত খাওয়া কমিয়ে দিয়েছেন।
গাজীপুরে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) বার্ষিক গবেষণা পর্যালোচনা কর্মশালায় গতকাল শনিবার এসব তথ্য উঠে আসে। গবেষণাপত্রটি উপস্থাপন করেন ব্রির সিনিয়র সাইন্টিফিক অফিসার ছিদ্দিকুর রহমান। বাজারে কেন চালের দাম কমছে না সে বিষয়ে গবেষণা করেছে ব্রি। চালকল মালিকেরা ও খুচরা বিক্রেতারা অতিরিক্ত মুনাফা করছেন বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। এ ছাড়া কৃষকের উৎপাদন খরচও বেড়েছে। অন্য দিকে করপোরেট গ্রুপগুলো চালের বাজারে প্রবেশ করে বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে বলেও কর্মশালায় উঠে আসে।
গবেষণাপত্রের শুরুতেই বলা হয়, বাংলাদেশে চালের বাজার আন্তর্জাতিক বাজারের চেয়ে সবসময়ই বেশি। কোভিড-১৯ শুরুর পর তা আরো বেড়েছে। পরে আন্তর্জাতিকভাবে চালের হ্রাস পেলেও বাংলাদেশে তা আর কমছে না। গবেষণাপত্র থেকে আরো জানা যায়, ২০২১ সালে গড়ে একজন মানুষ ৪১১ গ্রাম করে চাল খেয়েছেন। বিদায়ী ২০২২ সালে খেয়েছেন ৪০৯ গ্রাম। অর্থাৎ গড়ে ২ গ্রাম করে চাল কম খেয়েছেন। চালের উচ্চমূল্যের কারণেই মানুষ ভাত খাওয়া কমিয়ে দিয়েছেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।


দেশে প্রতিনিয়ত ধানের উৎপাদন বাড়ছে। কিন্তু এরপরও কেন চালের উচ্চমূল্য, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এ বিষয়টিও উঠে আসে গতকালের অনুষ্ঠানে। বিদায়ী ২০২২ সালে বোরোর উৎপাদন হয়েছে দুই কোটি চার লাখ টন এবং আউশে ৩০ লাখ টন। আর চলমান আমনের উৎপাদন এক কোটি ৬৩ লাখ টন হবে বলে মনে করছেন কৃষি সংশ্লিষ্টরা। সবমিলিয়ে দেশে ২০২২ সালে চালের মোট উৎপাদন হয়েছে তিন কোটি ৯৭ লাখ টন। ব্রির মহাপরিচালক শাহজাহান কবীর জানান, এবার আমনে বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রতিদিন জনপ্রতি ৪০৫ গ্রাম করে চালের চাহিদা হিসাব করলে ১৭ কোটি মানুষের জন্য চালের প্রয়োজন হবে দুই কোটি ৫১ লাখ ৩০ হাজার টন। অন্যান্য ভোগের (নন-হিউম্যান) ২৬.১২ শতাংশ হিসাব করে চালের প্রয়োজন আরো এক কোটি তিন লাখ ৭০ হাজার টন। আগামী জুন পর্যন্ত দেশে চালের কোনো সঙ্কট হবে না বরং ৪২ লাখ টন উদ্বৃত্ত থাকবে।


ব্রির গবেষণাপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ধানের উৎপাদন খরচ ছিল কেজিতে ১৯ টাকা ৫১ পয়সা, ২০২১-২২ অর্থবছরে এটা বেড়ে হয়েছে ২৭ টাকা ১০ পয়সা। অর্থাৎ গত চার বছরে কৃষকের প্রতি কেজি ধান উৎপাদনে খরচ বেড়েছে সাড়ে ৭ টাকারও ওপরে। উৎপাদন খরচ বাড়ার হার প্রায় ৩৯ শতাংশ। শ্রমিক, সার, সেচসহ নানা খাতে খরচ বাড়ার কারণে উৎপাদন খরচ বেড়েছে।
অন্য দিকে চালকল মালিক বা মিলারদের অতি মুনাফার কারণে চালের বাজার বরাবরই ঊর্ধ্বমুখী। গবেষণাপত্রে দেখা যায়, বাইপ্রডাক্ট ব্যতীত (তুষ/খৈল) মিলাররা প্রতি কেজি আমন চালে ৬.৫ টাকা এবং বোরোতে ৮.৪ টাকা করে লাভ করছেন। অর্থাৎ আমন ও বোরো ধানের চালে কেজিপ্রতি গড়ে বাইপ্রডাক্ট ছাড়া ৭.৪৫ টাকা লাভ করেন মিলাররা। অন্য দিকে বাইপ্রডাক্টসহ কেজিতে গড়ে ১৩.৭ টাকা বা প্রায় ১৪ টাকা পর্যন্ত লাভ করেন মিলাররা।


ব্র্রি আয়োজিত বার্ষিক গবেষণা পর্যালোচনা কর্মশালার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি কৃষিমন্ত্রী মো: আব্দুর রাজ্জাক বলেন, চালের বাম্পার উৎপাদনের পরও কেন দাম কমছে না, তার প্রকৃত কারণ খোঁজ করতে বস্তুনিষ্ঠ গবেষণা করতে হবে। ব্রির গবেষণায় আমরা অনেকগুলো কারণ খুঁজে পেয়েছি। ব্রির পাশাপাশি বিআইডিএস, সিপিডিসহ অন্যান্য গবেষণা প্রতিষ্ঠানকেও এ বিষয়ে গবেষণা করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার সবার জন্য পুষ্টিজাতীয় খাবারের নিশ্চয়তা দিতে কাজ করছে। বাণিজ্যিকভাবে বিভিন্ন ফল উৎপাদনেও জমির ব্যবহার বাড়ছে। এ অবস্থায় সব সংস্থা, বিজ্ঞানী ও কর্মকর্তাদের সমন্বিতভাবে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে আগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে।
সামনের দিনগুলোতে চালের চাহিদা আরো বাড়বে জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, এক দিকে জনসংখ্যা বাড়ছে, অন্য দিকে কৃষি জমি কমছে। ভুট্টা, শাকসবজিসহ অন্যান্য ফসলেও জমির ব্যবহার বাড়ছে।
বাড়িতে যেসব ফসল হতো যেমন চালকুমড়া-তাও এখন মাঠে হচ্ছে। এসবের ফলে ধান চাষের জমি কমছে। এই জটিল পরিস্থিতিতে চালের উৎপাদন বাড়াতে হলে গবেষণায় আরো জোর দিতে হবে। একই সাথে, উদ্ভাবিত জাতের দ্রুত সম্প্রসারণ করতে হবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক শামসুল আলম ও কৃষি সচিব ওয়াহিদা আক্তার। সম্মানিত অতিথি ছিলেন, বিএআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ মো: বখতিয়ার, বিএডিসির চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ সাজ্জাদ, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস।


আরো সংবাদ



premium cement