বছর শেষে আলোচনায় ছিল বাধ্যতামূলক অবসর
- শামছুল ইসলাম
- ০১ জানুয়ারি ২০২৩, ০০:০০
বিদায়ী ২০২২ সালের শেষের দিকে এসে সরকারবিরোধী আন্দোলন কিছুটা চাঙ্গা হলে গত ১৬ অক্টোবর তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: মকবুল হোসেনের বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠায় সরকার। এরপর বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তাকেও অবসরে পাঠানো হয়। চাকরির মেয়াদ থাকতে কর্মকর্তাদের অবসরে পাঠানোর ঘটনায় প্রশাসনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। প্রকাশ্যে ট্রফি ভাঙা, ‘ম্যাডাম’ না বলায় অশোভন আচরণসহ মাঠপ্রশাসনের কর্মকর্তারা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন। এসব কর্মকাণ্ডের ভিডিও ও খবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সারা দেশে সমালোচনার সৃষ্টি হয়।
প্রশাসনের শীর্ষপদ মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব, জনপ্রশাসন সচিবসহ কেন্দ্রীয় প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে পরিবর্তন এসেছে গত বছর। মাঠপ্রশাসনেও আনা হয়েছে রদবদল। ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, ময়মনসিংহ, রংপুর, ফরিদপুরসহ দেশের ২৩ জেলার জেলা প্রশাসক (ডিসি) পদে পরিবর্তন আনা হয়েছে। বিদায়ী বছরে তিন স্তরের প্রায় সাড়ে ৬০০ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দিয়েছে সরকার। ।
তবে বাধ্যতামূলক অবসরের বিষয়ে বিশ্লেষকরা বলছেন, আগামী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সরকার কোনো ঝুঁকি নিতে চাইছে না। এর মাধ্যমে সরকারের ওপর যাদের আস্থা নেই কিংবা বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর দিকে যারা ঝুঁকছেন তাদের প্রতি এটা সরকারের কঠোর বার্তা।
বিগত বছর সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনায় শাস্তি পাওয়া কুড়িগ্রামের সাবেক ডিসি সুলতানা পারভীনের দণ্ড মওকুফ করে যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতি দেয়ার ঘটনা ঘটেছে। লাইব্রেরির জন্য বই কিনতে সরকারি তালিকায় অতিরিক্ত সচিবের ২৯টি বই থাকার ঘটনা বেশ সমালোচনার জন্ম দিয়েছে প্রশাসনে। এ বছরই দেয়া হয়েছে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে বয়সে ৩৯ মাস ছাড়।
গত বছরের ১৮ অক্টোবর পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের এসপি (সিআইডি) মীর্জা আবদুল্লাহেল বাকী ও মো: দেলোয়ার হোসেন মিঞা এবং পুলিশ সদর দফতরের এসপি (টিআর) মুহম্মদ শহীদুল্লাহ চৌধুরীকে চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই অবসরে পাঠানো হয়। ৩১ অক্টোবর দুই অতিরিক্ত ডিআইজিকেও বাধ্যতামূলক অবসর দেয়া হয়। তারা হলেন ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি মো: মাহবুব হাকিম ও সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি মো: আলমগীর আলম।
১৬ নভেম্বর পুলিশ সুপার (এসপি) পদমর্যাদার কর্মকর্তা মো: আলী হোসেন ফকিরকে সরকারি চাকরি থেকে বাধ্যতামূলক অবসর দেয়া হয়। এর আগে তাকে খুলনা তৃতীয় এপিবিএনের অধিনায়ক হিসেবে কর্মরত অবস্থায় রাজশাহী রেঞ্জ ডিআইজি অফিসে সংযুক্ত করা হয়। এরপর ২১ নভেম্বর বাধ্যতামূলক অবসর দেয়া হয়েছে এসপি ব্যারিস্টার জিল্লুর রহমানকে।
২০ ডিসেম্বর অপরাধ তদন্ত বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার মো: মুনির হোসেনকে অবসরে পাঠিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
বছরজুড়ে আলোচনায় ছিল সরকারি কর্মচারীদের বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকাণ্ড। গত সেপ্টেম্বরে বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার চৈক্ষ্যং আদর্শ উচ্চবিদ্যালয় মাঠে ফুটবলের ফাইনাল খেলার প্রধান অতিথি ছিলেন ইউএনও মেহরুবা ইসলাম। হার-জিত নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে কথাকাটাকাটিতে বিরক্ত হয়ে প্রকাশ্যে পুরস্কারের ট্রফি ভেঙে ফেলেন ইউএনও। এ ঘটনা ভাইরাল হয়। বিষয়টি পরিণত হয় ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’তে। এর কয়েকদিন আগে বগুড়া সদরের ইউএনও সমর পালের বিরুদ্ধে উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয়ের নৈশপ্রহরী আলমগীর হোসেনকে লাঠি দিয়ে মারধর করার অভিযোগ ওঠে। আলমগীর জানান, ‘ইউএনও তাকে ডেকে নিয়ে তার কক্ষে লাঠি দিয়ে পিটিয়েছেন। এ সময় তাকে দুই আনসার সদস্য ধরে রেখেছিলেন। তার বাম হাত ভেঙে গেছে।’
গত ২১ জুলাই কক্সবাজারের টেকনাফে উপহারের ঘর নির্মাণ নিয়ে সংবাদ প্রকাশের জেরে স্থানীয় সাংবাদিক সাইদুল ফরহাদকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ কায়সার খসরু। ঘটনার তিন দিন পর ওই ইউএনওকে ওএসডি করা হয়। সাংবাদিকের সাথে ইউএনওর ভাষা ব্যবহারকে ‘মাস্তানদের চেয়েও খারাপ ভাষা’ বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট।
সরকারি কর্মকর্তাদের ‘জ্ঞানচর্চা ও পাঠাভ্যাস’ বাড়ানোর জন্য বই কিনতে ৯ কোটি ৫৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এ জন্য এক হাজার ৪৭৭টি বইয়ের তালিকা দেয়া হয়। এতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো: নবীরুল ইসলামের ২৯টি বই রয়েছে- এমন খবরে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে। প্রশ্ন ওঠে বই বাছাইয়ের প্রক্রিয়া নিয়েও। সমালোচনার মুখে গত ২৯ আগস্ট বইয়ের তালিকাটি বাতিল হয়।
বিদায়ী বছরে নানা অনিয়ম বা অপরাধের কারণে বিভাগীয় মামলায় শাস্তি পেয়েছেন বেশ কয়েক কর্মকর্তা। এর মধ্যে গত ২১ নভেম্বর মামলা তুলে নিতে হুমকি ও নারী নির্যাতনের অভিযোগে উপসচিব এ কে এম রেজাউল করিমকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠায় সরকার। অন্য দিকে এক নারীর সাথে অবৈধ সম্পর্ক এবং ওই নারীর নামে ব্যাংকে হিসাব খুলে লেনদেনের দায়ে সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের সাবেক ইউএনও আসিফ ইমতিয়াজকে বেতন গ্রেড কমানোর দণ্ড দেয়া হয়। যৌন হয়রানির দায়ে গত ১৩ অক্টোবর কুড়িগ্রামের চর রাজিবপুরের ইউএনও অমিত চক্রবর্তী শাস্তি পেয়েছেন। নীলফামারীর কিশোরগঞ্জের ইউএনও থাকার সময় অমিত চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাকে শাস্তি হিসেবে ‘তিরস্কার’ করা হয়। বিদায়ী বছর প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে বেশ কয়েকটি বড় পদোন্নতি দেয়া হয়। এর মধ্যে প্রশাসনে উপসচিব পদে ১ অক্টোবর পদোন্নতি পান ২৫৯ কর্মকর্তা। গত ২ নভেম্বর যুগ্মসচিব পদে ১৭৫ উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয় সরকার। এর আগে গত ২৯ জুন যুগ্মসচিব পদে ৮২ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয়া হয়। ৬ এপ্রিল অতিরিক্ত সচিব পদে ৯৪ যুগ্মসচিবকে পদোন্নতি দেয় সরকার। বিদায়ী বছর মাঠপ্রশাসনেও বড় ধরনের রদবদল হয়। গত ২৩ নভেম্বর রাতে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, রংপুর, কুমিল্লা, কক্সবাজার, ময়মনসিংহ জেলাসহ দেশের ২৩টি জেলায় জেলা প্রশাসক (ডিসি) পদে পরিবর্তন আনে সরকার। এর মধ্যে কয়েকটি জেলায় বদলির মাধ্যমে এবং বাকি জেলায় নতুন কর্মকর্তাদের ডিসি করা হয়।
বছরের শেষ দিকে এসে প্রশাসনের শীর্ষ পদ মন্ত্রিপরিষদ সচিব পদে নিয়োগ পেয়েছেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার। আগের সচিবের চুক্তিভিত্তিক মেয়াদ শেষ হওয়ায় এ নিয়োগ দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব আহমদ কায়কাউসের চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ায় ওই পদে নিয়োগ পান প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে নিয়োগ পান স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মোহাম্মদ মেসবাহ উদ্দিন চৌধুরী।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা