০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৮ মাঘ ১৪৩১, ১ শাবান ১৪৪৬
`

ভর্তুকির উচ্চ ঝুঁকিতে দেশের অর্থনীতি

আগামী অর্থবছরে ভর্তুকি খাতে ব্যয় বাড়ছে ৪০%
-


ভর্তুকির উচ্চ ঝুঁকিতে পড়তে যাচ্ছে দেশের অর্থনীতি। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে শুধু ভর্তুকি খাতেই ব্যয় বরাদ্দের প্রাক্কলন করা হয়েছে এক লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা, যা কি না চলতি অর্থবছরের জন্য রক্ষিত ভর্তুকির মূল বরাদ্দের ৪০ ভাগ এবং সংশোধিত বরাদ্দের ২৫ ভাগ বেশি।


আগামী অর্থবছরের জন্য প্রাথমিকভাবে বাজেট প্রাক্কলন করা হয়েছে সাত লাখ ৫০ হাজার ১৯৪ কোটি টাকা। এই হিসাবে বাজেটের ১৫ ভাগ অর্থই ব্যয় করতে হবে শুধু ভর্তুকি খাতে।
ভর্তুকি খাতে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়ের কারণে আগামীতে দেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আরো খানিকটা খারাপ হয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে। বলা হয়েছে, ভর্তুকি কমাতে হলে বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি ও সারের দাম বৃদ্ধি করতে হবে। অর্থ বিভাগের বিভিন্ন সূত্র থেকে এ তথ্যগুলো জানা গেছে।
সূত্র জানায়, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাজেটে ভর্তুকি, প্রণোদনা ও নগদ ঋণ খাতে বরাদ্দ দেয়া রয়েছে ৮১ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। কিন্তু বছর শেষে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে অতিরিক্ত চাহিদার কারণে ভর্তুকির পরিমাণ ২০ হাজার ৫১০ কোটি টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে। এর ফলে সংশোধিত বাজেটে ভর্তুকির পরিমাণ গিয়ে ঠেকেছে এক লাখ দুই হাজার কোটি টাকার ঘরে।


চলতি অর্থবছরের বাজেটে সবচেয়ে বেশি ভর্তুকি বরাদ্দ রয়েছে বিদ্যুৎ খাতে ১৭ হাজার কোটি টাকা। গেল অর্থবছরে যা ছিল ১১ হাজার ৯৬৩ কোটি টাকা। চলতি বছরে এলএনজি (আমদানিকৃত তরল প্রাকৃতিক গ্যাস) খাতে বরাদ্দ রয়েছে ছয় হাজার কোটি টাকা (গত বছর একই পরিমাণ অর্থাৎ ছয় হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল)। খাদ্য খাতে ভর্তুকি রয়েছে পাঁচ হাজার ৯৬৫ কোটি টাকা (গত বছর ৪ হাজার ৬৪১ কোটি টাকা)। কৃষি খাতে ভর্তুকি ১৬ হাজার কোটি টাকা (গত বছর ১৫ হাজার ১৭৩ কোটি টাকা)। টিসিবি ও অন্যান্য খাতে ভর্তুকি বরাদ্দ ১১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। প্রণোদনা (রফতানি ও রেমিট্যান্স) ১৫ হাজার ২২৫ কোটি টাকা (গত বছর ছিল ১৩ হাজার ২০০ কোটি টাকা) এবং নগদ ঋণখাতে এবার ভর্তুকি রয়েছে ১০ হাজার কোটি টাকা।


ভর্তুকির সামগ্রিক বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে গত বৃহস্পতিবার অর্থ বিভাগের এক কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে বলেছেন, গত ২০ ডিসেম্বর অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে বাজেট সম্পর্কিত সম্পদ কমিটির যে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়েছে, তাতে ভর্তুকি অতিরিক্ত চাপের বিষয় নিয়ে অনেকটা উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। ভর্তুকি কমানোর জন্য দ্রুত বিদ্যুৎ, সার ও পানির দাম বৃদ্ধির সুপারিশও করা হয়েছে। বলা হয়েছে, বিদ্যমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে ভর্তুকির এত চাপ অর্থনীতি সহ্য করতে পারবে না। সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে বিদ্যুৎ ও পানির দাম বৃদ্ধির বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখানো হলেও এই মুহূর্তে সারের দাম বাড়ানো সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, প্রতি বছরই ভর্তুকির পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। যেমন- ২০২০-২১ অর্থবছরে ভর্তুকি খাতে বরাদ্দ ছিল ৪৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ছিল ৪২ হাজার ১০০ কোটি টাকা।

২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৩৭ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরের (২০১৭-১৮) বাজেটে ভর্তুকি, নগদ সহায়তা, প্রণোদনা খাতে বরাদ্দ ছিল ২৮ হাজার ৪৫ কোটি টাকা, যা মোট জিডিপির ১ দশমিক ৩ ভাগ। তার আগের অর্থবছরের বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রাখা ছিল ২৬ হাজার ৭২৯ কোটি টাকা, যা মোট জিডিপির ১ দশমিক ২ ভাগ। যদিও সংশোধিত বাজেটে এ ভর্তুকির পরিমাণ ২৩ হাজার ৮৩০ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। এর আগে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দ রাখা হয়েছিল ১৪ হাজার ৪১৮ কোটি টাকা।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল