বাড়তি দাম ৭১ শতাংশ
২ লাখ ইভিএম কেনার প্রস্তাব : ব্যয় ৮ হাজার ৭১১ কোটি টাকা- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০০:০০
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ৭১ শতাংশ বেশি ব্যয়ে দুই লাখ ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) কেনার প্রস্তাব করেছে নির্বাচন কমিশন। প্রতিটি ৪ লাখ ৩৫ হাজার টাকা ব্যয়ে ২ লাখ ইভিএম কেনার জন্য মোট খরচ ধরা হয়েছে আট হাজার ৭১১ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে দেড় লাখ ইভিএম কেনার জন্য ব্যয় ধরা হয় তিন হাজার ৮২৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। এতে প্রতিটিতে গড় ব্যয় হয় ২ লাখ ৫৫ হাজার টাকার মতো। এতে প্রতিটি ইভিএমে চার বছরের ব্যবধানে খরচ বাড়ছে ৭১ শতাংশ।
নতুন ইভিএম কেনার পাশাপাশি বর্তমানে যেসব ইভিএম আছে সেগুলোর সংস্কার ও আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতিও কেনা হবে। নির্বাচন কমিশন নতুন এই ইভিএম কেনার জন্য প্রস্তাব পাঠাচ্ছে পরিকল্পনা কমিশনের কাছে। আর ইসির কমিশন সভায় বিরাট অর্থ ব্যয়ের এই প্রকল্প প্রস্তাবনা অনুমোদন পেয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ইভিএমের জন্য ওয়্যারহাউজও স্থাপন করা হবে বলে ইসি সূত্রে জানা গেছে।
রাজধানীর নির্বাচন কমিশন ভবনে গতকাল ইসির কমিশন সভা শেষে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান নির্বাচন কমিশনার মো: আলমগীর। তিনি বলেন, আজকের কমিশন সভা ইভিএম ব্যবহারের জন্য ৮ হাজার ৭১১ কোটি ৪৪ লাখ টাকার প্রকল্প অনুমোদন করেছে। পরিকল্পনা কমিশনের প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সুপারিশের পর সেটা চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য যাবে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় (একনেক)।
ইসি সূত্র জানায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৫০ আসনে ইভিএমে ভোট করতে নির্বাচনের আগে আরো দেড় লাখ ইভিএম মেশিন কিনতে হবে। বিকল্প হিসেবে কিছু ইভিএম রাখার জন্য ৫০ হাজার বাড়িয়ে দুই লাখ ইভিএম কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। এই দুই লাখ ইভিএম কেনার পাশাপাশি আনুষঙ্গিক ব্যয় মেটাতে মোট ৮ হাজার ৭১১ কোটি টাকার প্রকল্পে অনুমোদন দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। আনুষঙ্গিক ব্যয়ের মধ্যে রয়েছে মেশিনগুলো সংরক্ষণের জন্য ওয়্যারহাউজ স্থাপন ও প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগে খরচ।
ইসি মো: আলমগীর বলেন, সর্বোচ্চ ১৫০ আসনে ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। বর্তমানে ৭০টি আসনে ইভিএম ভোটগ্রহণের সক্ষমতা আছে কমিশনের। ফলে ১৫০ আসনে ইভিএমে ভোট হলে আমাদের আরো ইভিএম মেশিন লাগবে।
তিনি বলেন, এ লক্ষ্যে একটি প্রকল্প তৈরির জন্য সচিবালয়কে বলা হয়েছিল। সেটা তারা তৈরি করে গত সভায় উপস্থাপন করে। সেখানে আমাদের কিছু প্রশ্ন ছিল। সে প্রশ্নের উত্তরগুলো সঠিকভাবে দিতে পারেনি বলে আমরা তাদের বলেছিলাম এগুলো ঠিক করে নিয়ে আসার জন্য। তথ্যগুলো আজকের (সোমবার) সভায় যথাযথভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে সব তথ্য ঠিক আছে বলে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। ইসি আলমগীর বলেন, এখন আমরা পরিকল্পনা কমিশনে অনুমোদনের জন্য পাঠাব। এর আগে আরেকটি কাজ হচ্ছে, জনবলের জন্য মন্ত্রণালয়ের সাথে একটি সভা করতে হবে।
অন্য দিকে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অসীম কুমার দেবনাথ সাংবাদিকদের বলেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের দেড় শ’ আসনে ইভিএম ব্যবহার করার জন্য নতুন করে দুই লাখ ইভিএম কেনা, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের প্রকল্প চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, ২০১০ সালে এ টি এম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন তৎকালীন কমিশন দেশে ভোট ব্যবস্থাপনায় প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে ইভিএমের সূচনা করে। সে সময় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে এই ভোটযন্ত্র তৈরি করে নেয়া হয়েছিল।
কয়েক বছর ভালো ফল পাওয়ার পর ২০১৫ সালের রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচনের সময় একটি মেশিনে যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পড়ে। সেই মেশিনটি আর সারাতে পারেনি নির্বাচন কমিশন। কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন কমিশন ২০১৬ সালে বুয়েটের তৈরি মেশিনগুলো পরিত্যক্ত ঘোষণা করে নষ্ট করে ফেলে। একইসাথে নতুন এবং উন্নত মানের ইভিএম তৈরির নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়। ওই সিদ্ধান্তের ধারাবাহিকতায় বিগত কে এম নূরুল হুদা কমিশন প্রায় ২০ গুণ বেশি দামে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির কাছ থেকে ইভিএম তৈরি করে সরবরাহ নিচ্ছে। তখন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা এ বিষয়ে বলেছিলেন, এই ইভিএম আগেরগুলোর চেয়ে উন্নত মানের। কোনোভাবেই হ্যাক করা সম্ভব নয়। এ ছাড়া এগুলো ব্যবহারের ফলে দ্রুততার সাথে ফল প্রকাশ করা যাবে।
নতুন ইভিএম দিয়ে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে রংপুর সিটি করপোরেশন (রসিক) নির্বাচনে প্রথম ভোট নিয়ে সফল হয় নির্বাচন কমিশন। এরপর অন্যান্য স্থানীয় নির্বাচন ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যবহারের পর ভবিষ্যতে সব নির্বাচনেই এই ভোটযন্ত্র ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয় ইসি।
নির্বাচন কমিশন ইভিএম ব্যবহারের ব্যাপারে বিশেষভাবে উৎসাহী হলেও শাসক জোটের বাইরে অন্য দলগুলো ইভিএম ব্যবহারের বিরোধী। তাদের অভিমত হলো ইভিএমের মাধ্যমে এমন প্রোগ্রামিং করা সম্ভব যেখানে ভোটের ফলাফল পরিবর্তন করা যায়। এ ছাড়া এর কোনো লিখিত দলিল না থাকায় ফলাফলকে কার্যকরভাবে চ্যালেঞ্জ করাও সম্ভব হয় না।
নির্বাচন কমিশনার মো: আলমগীর বলেছেন টাকা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা গেলে ইসি ৩০০ আসনে ইভিএম ব্যবহার করতে চায়।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা