কমতে শুরু করেছে রেমিট্যান্স
মুদ্রাবাজারে অস্থিরতা বাড়ার শঙ্কা- আশরাফুল ইসলাম
- ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০০:০০, আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৬:৩৭
বিদেশ থেকে রেমিট্যান্স আনার সরবরাহসীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে সর্বোচ্চ ১০৮ টাকার বেশি মূল্যে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করা যাবে না। আর এর প্রভাব পড়েছে রেমিট্যান্সপ্রবাহে। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহের তুলনায় দ্বিতীয় সপ্তাহে রেমিট্যান্স কম এসেছে ১১০ মিলিয়ন ডলার। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গত মাসে যে পরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছে অর্ধেক করলেও গত মাসের তুলনায় চলতি মাসের ১৫ দিনে রেমিট্যান্সপ্রবাহ কমেছে। ব্যাংকাররা বলছেন, যে হারে রেমিট্যান্সপ্রবাহ কমছে এটা অব্যাহত থাকলে আগের মাসের তুলনায় রেমিট্যান্স কমে যেতে পারে। আর এটা হলে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারের অস্থিরতা আরো বেড়ে যাবে- এমনটাই শঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরামর্শে গত ১১ সেপ্টেম্বর ডলারের একক দর নির্ধারণ করে ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীরা। আর অভিন্ন দর কার্যকর করতে গিয়ে সে অনুযায়ী ওই দিন থেকেই প্রবাসীদের কাছ থেকে সর্বোচ্চ ১০৮ টাকা দরে ডলার কেনা হচ্ছে। রফতানি আয় নগদায়ন করা হচ্ছে সর্বোচ্চ ৯৯ টাকা দরে। আর আমদানিতে একক দর নির্ধারণ করা হয় সর্বোচ্চ ১০৪ টাকা ৫০ পয়সা। ১১ সেপ্টেম্বর থেকে একক দর কার্যকর করতে রেমিট্যান্স ও রফতানি আয়ের ডলারের মূল্য ১০৮ টাকা ও ৯৯ পয়সায় নামিয়ে আনা হয়েছে। কিন্তু আমদানি পর্যায়ে একক দর অর্থাৎ ১০৪ টাকা ৫০ পয়সা এখনো কার্যকর করা হয়নি। গতকালও ব্যাংকভেদে আমদানিতে ডলার লেনদেন হয় সর্বোচ্চ ১০৯ টাকা দরে।
যদিও করপোরেট ডিলিংয়ের নামে আরো বেশি মূল্যে ডলার লেনদেন করা হচ্ছে বলে সূত্র জানিয়েছে। করপোরেট ডিলিং হলো, যেমন কোনো একটি প্রতিষ্ঠানের এক সপ্তাহ পরে আমদানি দায় পরিশোধ করতে হবে। এজন্য এক সপ্তাহ আগেই কোনো একটি ব্যাংক প্রয়োজনীয় ডলার সরবরাহ করবে বলে চুক্তি করা হলো। এ জন্য বাজার দরের চেয়ে ৫ থেকে ৭ শতাংশ প্রিমিয়াম বা বেশি মূল্য নির্ধারণ করা হলো। এভাবে ১১০ টাকার ডলার ১১৫ টাকা থেকে ১১৭ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছে কোনো কোনো ব্যাংক। ডলার লেনদেনের এ পদ্ধতি আন্তর্জাতিক স্বীকৃত হওয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তেমন কিছু বলার থাকে না।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিধিনিষেধের কারণে ৩০ লাখ বা তার বেশি মূল্যের পণ্য আমদানি করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে রিপোর্ট করতে হচ্ছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ তদারকির কারণে ও কিছু পণ্য ছাড়া বেশির ভাগ পণ্য আমদানিতে শতভাগ মার্জিন বা আমদানিকৃত পণ্য মূল্যের শতভাগ গ্রাহক অগ্রিম বহন করার নীতিমালার কারণে পণ্য আমদানির ঋণপত্র স্থাপন বা এলসি খোলার হার কমে এসেছে। কিন্তু আমদানি বিলের বড় একটি অংশ বকেয়া থাকায় পরিশোধ করতে ব্যাংকগুলো এখনো হিমশিম খাচ্ছেন। এমনি পরিস্থিতিতে চলতি আমদানি ব্যয় ও বকেয়া আমদানি ব্যয় পরিশোধ করতেই হিশশিম খাচ্ছে কোনো কোনো ব্যাংক। এ কারণে কিছু ব্যাংক রেমিট্যান্স সংগ্রহ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছিল।
তারা বিদেশী গ্রাহকদের কাছ থেকে বেশি হারে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করতে মাঠে নেমেছিলেন। এতে একপর্যায়ে রেমিট্যান্স আনতে প্রতি ডলারে ১১৩ থেকে ১১৫ টাকা পর্যন্ত উঠে যায়। কিন্তু বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে স্থিতিশীলতা আনার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংকারদের সাথে কয়েক দফা বৈঠক করে। ওই বৈঠকের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ডলারের একক দর নির্ধারণ করে ওইসব ব্যাংকগুলো, যা ১১ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর করা হযেছে। সিদ্ধান্ত মোতাবেক কোনো ব্যাংক এখন থেকে ১০৮ ডলারের বেশি মূল্যে ১০৮ টাকার বেশি মূল্যে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করতে পারবেন না। এরই প্রভাব পড়েছে রেমিট্যান্সপ্রবাহে।
দেশে রেমিট্যান্স আসার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহ অর্থাৎ ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ৫২২ মিলিয়ন বা ৫২ কোটি মার্কিন ডলার। কিন্তু মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ৪১২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ৪১ কোটি মার্কিন ডলার। দেখা যাচ্ছে প্রথম সপ্তাহের তুলনায় দ্বিতীয় সপ্তাহে দেশে রেমিট্যান্স কম এসেছে প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলার।
ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, দ্বিতীয় সপ্তাহের রেমিট্যান্সপ্রবাহের ধারা তৃতীয় ও চতুর্থ সপ্তাহেও চললে মাস শেষে রেমিট্যান্সপ্রবাহ কমে যাবে। এতে ডলারের সরবরাহজনিত ঘাটতি দেখা দেবে। আর এ ঘাটতি বেড়ে গেলে বৈদেশিক মুদ্রাবাজারের চলমান অস্থিরতা আরো বেড়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন। সম্ভাব্য পরিস্থিতি এড়াতে রেম্যিান্সপ্রবাহ বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। এজন্য নতুন বাজার খুলতে হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা